আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আহুত সম্ভাবনার গল্প!

চোখ খুবলে নেয়া অন্ধকার, স্ফুলিঙ্গ জ্বেলে দাও!

আহুত সম্ভাবনার গল্প! আসিফ জাবির [শিক্ষার অধিকার ক্রমাগত বিত্তবানদের হাতে চলে যাচ্ছে। আগামীতে শিক্ষা ব্যবস্থা কি রকম হতে পারে তা নিয়েই এ অনুগল্পের প্লট] ০১. জনাব আনিসুর রহমান। বয়স ৪৫ এর কাছাকাছি। চাকির করেছেন বেসরকারী কোম্পানীতে। দারুন স্মার্ট ছিলেন একসময়।

চলনেও ছিল সাহেবি ভাব। কিন্তু বাস্তবতার কাছে সবকিছু নিঃসহায় হয়ে আসে হঠাৎ। নিজে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। ইতিহাসে অনার্স, মাষ্টার্স করে কিছুটা কষ্ট করে অর্থ যোগাড়, কারণ এম.বি.এ করতে হবে। এম.বি. ছাড়া বাজারে চাকরি নেই বলে প্রাইভেট সার্টিফিকেট কিনলেন।

অতঃপর চাকরিও জুটল। কিন্তু তিনি কি প্রস্তুত ছিলেন আজকের অবস্থা মোকাবেলার জন্যে! সংসার করছেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা মাত্র তিন। অথচ নিজ বেতেন সংসার চালাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। অফিসে সাহেবি ভাব ধরে রাখার চেষ্টা থাকলেও মোটেও ভালো না তারা।

অভাব, অভাব আর অভাবেই কাটে দিন। এরই মাঝে সন্তান এইচ.এস.সি. পাশ করলো। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে সর্বোচ্চ রেজাল্ট। এখন অনার্স ভর্তির পালা। আনিস সাহেব স্বপ্ন দেখেন ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ভালো বিষয়ে পড়ানোর।

ছেলেটা ছাত্র ভালো। তাই চান্স পেয়ে যাবার সম্ভাবনাই বেশী। তবে আরেক বাস্তবতা যে সামনে দাঁড়াবে অস্তিত্ব ছিনতাইয়ে, ভুলেও ভাবেননি কখনো। এ বাস্তবতায় এখন কেবল ধিকৃতই হচ্ছেন মনে মনে। ০২ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে এখন কোচিং করা আবশ্যক।

১৪,০০০ টাকায় ছেলেকে কোচিং করালো কোনভাবে, এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমের দাম দেখে তো চক্ষু চড়ক গাছ। ফরম বিক্রি হচ্ছে বিষয় ভিত্তিক। আবার ২৫০ টাকার ফরম যে এখন ২,০০০ টাকা। অর্থের অভাবে বেশি ফরম কিনাতে পারেননি। দুইটা কিনেছে মাত্র।

..........দুইটাতেই চান্স হয়ে গেলো। হিসাব বিজ্ঞান না পড়িয়ে আইনে পড়াবেন ভাবলেন। কিন্তু বেহিসাবের মারপ্যাঁচে আটকে গেছেন তিনি। কেবল ভর্তি ফি-ই এখন ১,৩০,০০০ টাকা। সন্তান যখন বাসায় এসে খরচপাতির বিবরণ করছিল, আনিস সাহেব বিশ্বাস করেননি তখনো।

পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়ে ভর্তি হতেও এত টাকা লাগে? নিজেই আসলেন তার পরিচিত পুরানো ক্যাম্পাসে। খোঁজ খবর নিয়ে জানলেন। কিন্তু অবাস্তবিক এ অবস্থাই সত্যি আজ। ০৩ .........মনটা ভারি হয়ে উঠল। ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন এখন অসম্ভব তার পক্ষে।

তিনি যখন চ.বি. ক্যাম্পাসে ছিলেন, কয়েকজন বন্ধুর মুখে শুনে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের চক্রান্তের কথা। অতটা পাত্তা দেননি নিজে। সেই উদ্বেগ আজ লীন হয়ে এলো আনিস সাহেবের চোখে-মুখে। কালো কাঁচের গাড়িগুলো সাঁই সাঁই উড়ে যাচ্ছে.....শাটল-ট্রেন কি আছে? আনিস সাহেবের মাথায় চিন্তাগুলো লাফালাফি করছে। ছেলে কি তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে মনে মনে- "পূর্ব প্রজন্ম কি রেখে গেলো আমাদের জন্য?"


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।