আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেভাবে দারিদ্রের দুষ্টচক্র ভাঙ্গতে পারি (রি-পোস্ট)

জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই

আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে সরকারের শাসনের দিন ফুরিয়েছে। সরকার এখন শাসক নয়, ব্যবসায়ী তো নয়ই, বরং সেবাদাতা ও জনগণের দুর্বল অংশের সহায়তাকারী। ইউরোপের সুইটজারল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, প্রভৃতি দেশকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলে ধরা হয়। এসব দেশের সরকার ধনী ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে সম্পদের ভারসাম্য রাখার জন্য ধনীর ওপর অতিরিক্ত কর এবং দরিদ্রদের ভাতা দিয়ে থাকে। যে যত ধনী সে তত বেশি কর দেয় এবং যে যত দরিদ্র সে তত বেশি ভাতা পায়।

তাছাড়া প্রতিটি নাগরিকের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বীমা করা আছে , যাতে করে কোন নাগরিক বিপদে পড়লে টাকার সমস্যায় না পড়ে। আমার এক আত্মীয় থাকেন নরওয়েতে। তার থেকে শোনা। নরওয়েতে একজন শিশু গর্ভে আসার সাথে সাথে তার রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশন করার পর সরকার সেই শিশুটির মাকে গর্ভকালীন ভাতা দিতে শুরু করে।

শিশুটি জন্মানোর সমস্ত খরচ সরকার বহন করে। শিশু জন্মানোর পর তাকে স্কুলে ভর্তি করানোর খরচও সরকার দেয়। নরওয়েতে শিক্ষা সম্পূর্ণ ফ্রি। যোগ্যতা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়াশোনা করা যায়। পড়াশোনার জন্য তেমন কোন খরচ হয় না।

পড়াশোনা শেষ করার পর সরকারের কর্মসংস্থান কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। যত দিন পর্যন্ত কর্মসংস্থান না হয়, ততদিন পর্যন্ত সরকার তাকে বেকার ভাতা দেয়। কর্মসংস্থান কেন্দ্রের কাজ হল, ভালো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। শুধু কর্মসংস্থান নয়, কর্মক্ষেত্র বদলানোর ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থান কেন্দ্র চাকুরিপ্রার্থীদের সহায়তা করে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পর এবার শুরু হয়, পরিশোধের পালা।

গর্ভে আসার পর থেকে কর্মসংস্থান পর্যন্ত তার পেছনে সরকার যত অর্থ ব্যয় করেছে, তা পরিশোধ করতে হবে। এজন্য প্রতি মাসে সরকার তার বেতন থেকে নির্দিষ্ট অঙ্ক কেটে রাখে। তাছাড়া তার নামে রাষ্ট্রীয়ভাবে যে বীমা করা হয়েছে, তার প্রিমিয়ামও কেটে রাখা হয়। অন্য দিকে বুড়ো বয়সে তাকে যে সরকার দেখাশোনা করবে তার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে কিছু অর্থ সঞ্চয়ও করতে হয়। সরকারী কিংবা বেসরকারী সব ধরনের চাকুরির েেত্র এই নিয়ম।

ফলে গর্ভে আসার পর থেকে কর্মসংস্থান পর্যন্ত সরকারের দেয়া সমস্ত অর্থ সে পরিশোধ করতে পারে এবং পরবর্তী জীবন নিয়ে তাকে টেনশন করতে হয় না। বৃদ্ধ বয়সে তাকে কে খাওয়াবে, তা নিয়ে তাকে ভাবতেই হয় না। তার সঞ্চয় থেকেই সরকার তাকে বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনা করবে। এই ধারণাটি আমাদের দেশে কিভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব সেই আইডিয়াটি এবার শেয়ার করা যাক। আমাদের দেশে একেবারে হতদরিদ্রদের মধ্যে এই আইডিয়াটি প্রয়োগ করা যেতে পারে।

তার জন্য যা করতে হবে ....... ১.প্রথমে হতদরিদ্র দম্পতিকে জানিয়ে দিতে হবে, একটি সন্তান গ্রহণ করবেন বলে যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা এই সুবিধা পাবেন। ২.সন্তান গর্ভে আসার পর সরকার তার সন্তানকে ভাতা দিতে শুরু করবে। প্রতি ইউনিয়ন বা পৌরসভায় ২ থেকে ৩ জন হতদরিদ্র দম্পতি এ সুযোগ পাবে। এ সুযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে বিয়ের পর পরই। ৩.গর্ভের সন্তানের জন্মের পর তার উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সমস্ত খরচ সরকারের।

এই সন্তানের শিক্ষা এমন দেয়া হবে, যাতে করে তাকে কর্মমুখী করে গড়ে তোলা যায়। সে যেন বেকার না থাকে। বর্তমানে বহুল প্রচলিত কর্মসংস্থানমূলক কাজ তাকে শিখতে হবে। কর্মসংস্থানের দায়িত্ব সরকারের। এর জন্য আলাদা কর্মসংস্থান কেন্দ্র করতে হবে।

কর্মসংস্থান হওয়ার আগ পর্যন্ত সরকার তাকে বেকার ভাতা দেবে। ৪.কর্মসংস্থান হওয়ার পর তার পেছনে ব্যয়িত অর্থ তার বেতন থেকে কেটে রাখা হবে। তার জন্য বীমা করা হবে এবং তার বৃদ্ধ বয়সের খরচের জন্য সঞ্চয় করে রাখা হবে। এরকম একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে পারলে অসংখ্য দরিদ্র মানুষ যারা জীবনে স্বচ্ছলতার মুখ দেখত না, তারা স্বচ্ছল হয়ে উঠবে। এ কল্যাণমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা দারিদ্রের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।

প্রয়োজনে এ ধারণাটি আরও বিশ্লেষণ করে আমাদের দেশের উপযোগী করা সম্ভব। মূল ধারণাটি হচ্ছে একজন মানুষ তার শৈশব ও বৃদ্ধকালে আয় করে না। এ সময় সরকার তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করবে। সরকারের এ সহায়তার বিনিময়ে যৌবনকালে সে তার আয় থেকে সরকারের এ ঋণ পরিশোধ করবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.