আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাজেটে পিপিপি :পাবলিক-মানি টু প্রাইভেট পকেট?- ১ম কিস্তি



কাঠালের যেমন আমস্বত্ব হয়না,দা আর কুমড়ার যেমন বন্ধুত্ব হয়না,ব্যাঙের যেমন সর্দি হয়না কিংবা শ্রমিক আর মালিক যেমন ভাই ভাই হওয়া সম্ভব নয় তেমনি অসম্ভব ও অবাস্তব চিন্তা হলো সরকারী-বেসরকারী অংশীদ্বারিত্ব বা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপির মাধ্যমে উভয়ের সমান সুবিধা অর্জন(উইন-উইন অবস্থা)। কেননা যেকোন পার্টনারশীপ বা অংশীদ্বারিত্বের প্রাথমিক শর্ত হলো পারস্পরিক সুবিধা বা মিচ্যুয়াল বেনিফিট যা পিপিপিতে একেবারেই অসম্ভব যেহেতু সরকারের কাজ হলো জনগণের স্বার্থ দেখা আর বেসরকারী কম্পানীর কাজ হলো পুজিপতির জন্য সবোচ্চ মুনাফা অর্জন করা। ফলে সরকার যদি বিনামূল্যে বা সর্বনিম্ন মু্ল্যে কোনকিছু জনগণের কাছে পৌছে দিতে চায় তাহলে তার তথাকথিত অংশীদার বেসরকারী মালিকের মুনাফা সর্বনিম্ন হবে আর বেসরকারী কোম্পানি যদি তার মুনাফা সর্বোচ্চ করতে চায় তাহলে জনগণকে তার প্রয়োজনীয় ইউটিলিটি সরকারী মুল্যের চেয়ে অনেক বেশী দিয়ে তা ক্রয় করতে হবে ফলে সে ইউটিলিটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্র মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এর মাঝামাঝি কোন কিছু কি সম্ভব নয় যার মাধ্যমে জনগণ ও পুজিপতি উভয়ের জন্য ব্যাপারটা লাভজনক হবে? এক কথায় এর উত্তর হলো না- কেননা প্রচলিত সরকারী মূল্যের চেয়ে বেশী মুল্য ধরতে না পারলে বেসরকারী কম্পানীর কাঙ্খিত মুনাফা অর্জিত হবে না আর যদি তা করা হয় অর্থাত প্রচলিত সরকারী মুল্যের চেয়ে বেশী মুল্য ধরা হয় তাহলে পাবলিক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর বাইরে আর যা কিছু বলা হয় তা সবই কথার ফুলঝুরি- কাঠালের আমস্বত্ব, কেন সে বিষয়টি পরিস্কার করার জন্যই এ লেখার অবতারণা।

নামের মাহাত্ম: নয়া উদারনৈতিক বিশ্বব্যাবস্থার মোড়লরা আর কোন কিছু পারুক আর না পারুক তাদের বেসরকারীকরণ, বাজার-উদারীকরণ ইত্যাদি এজেন্ডার বিভিন্ন বাহারি, গালভরা ও চটকদার নামকরণের মাধ্যমে জনগণকে ধোকা দেয়ার চেষ্টাটি ভালোই পারে। স্ট্রাকচারলাল অ্যাডজাস্টমেন্ট পলিসি(স্যাপ) বা কাঠামোগত সংস্কার কর্মসূচি, পোভার্টি রিডাকশন( আসলে রিপ্রডাকশন!) স্ট্রাটেজিক পার্টনারশীপ বা পিআরএসপি, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল বা এমডিজি ইত্যাদি নাম থেকে আপাতদৃষ্টিতে প্রথমে কে বুঝবে যে এগুলো সবই হলো বাজার উন্মুক্ত করণ আর বেসরকারীকরণের প্রকল্পেরই বিভিন্ন ছদ্মনাম। খেয়াল করলে দেখা যায় এরা এদের যেকোন কর্মসূচীর নামেই ডেভেলপমেন্ট, পার্টনারশীপ, পোভার্টি রিডাকশন ইত্যাদি পজিটিভ ভাবমূর্তির শব্দ রাখার চেষ্টা করে। পিপিপির ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি। সরকারী বেসরকারী অংশীদ্বারিত্বকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে এর নাম প্রাইভেট ফাইনান্স ইনিশিয়েটিভ বা পিএফআই প্রজেক্ট। নোভা স্কশিয়ায় পিপিপি স্কুলকে বলা হয় লিজব্যাক স্কুল। ওন্টারিওতে যে উদারনৈতিক সরকার একসময় পিপিপির বিরোধীতা করেছে,তারা ক্ষমতায় আসার পর এই জিনিসকেই অলটারনেটিভ ফাইনান্সিং এন্ড প্রকিউরমেন্ট প্রজেক্ট নামে চালিয়ে দিয়েছে। এভাবে পিপিপির ব্র্যান্ডিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেননা জনগণের মনে পার্টনারশীপ বা অংশীদ্বারিত্ব, ইনিশিয়েটিব বা উদ্যোগ, অলটারনেটিভ বা বিকল্প ইত্যাদি শব্দগুলোর একটা পজেটিভ ভাবমূর্তি আছে। যদি সরাসরি বলা হয় বেসরকারী করণ তাহলে বেশীর ভাগ লোকেই তার সরাসরি বিরোধীতা করবে।

ফলে এই সহজাত বিরোধীতা এড়ানোর জন্যই এধরনের নাম করণ। বাংলাদেশেই যদি এই পিপিপি বাজেটকে যদি বেসরকারী করণ বাজেট বলা হতো তাহলে আরো অনেক বেশী বিরোধ এবং সমালোচনার সম্মুখীন হতে হতো সরকারকে। বাংলাদেশ সরকারের পিপিপি বাজেটের পরিকল্পনা এবারের বাজেটে নতুন দিগন্ত উন্মোচন নামের একটা অংশ যুক্ত করা হয়েছে যার আওতায় সরকারী বেসরকারী খাতের অংশীদ্বারিত্বের বাজেট নামের উপশিরোনামে আর্টিক্যাল ৫৪ থেকে ৬৪ পর্যন্ত মোট ১১টি আর্টিক্যল এবং তার বাইরে পিপিপি সংক্রান্ত একটি অবস্থান পত্রের মাধ্যমে পিপিপি সম্পর্কে সরকারের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেটে পিপিপির যৌক্তিকতা দেখাতে গিয়ে বলা হয়েছে ২০১৩ সাল নাগাদ ৮% এবং এবং ২০১৭ সাল নাগাদ ১০% প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য যে বিপুল পুজিবিনিয়োগের(২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রয়োজন তা "সরকারের একার পক্ষে যোগান দেয়া অসম্ভব। সরকারের অভ্যন্তরীণ উতস থেকে ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে এই বিপুলপরিমাণ বিনিয়োগ-ব্যায় সংকুলান করতে গেলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা দূরহ হয়ে পড়বে।

অন্যদিকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাসমূহের কাছ থেকে সহজ শর্তে এই পরিমাণ সাহায্য পাওয়া সম্ভব নয়। "(বাজেট ২০০৯-১০, আর্টিক্যাল ৫৬) কাজেই প্রয়োজন হলো পিপিপির মাধ্যমে দেশি-বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধির দ্বার-উন্মোচন। এই দ্বার-উন্মোচনের জন্য বাজেটে ৩ টি নতুন খাত সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে- ১) পিপিপি প্রকল্পগুলোতে বেসরকারী খাতকে আহ্বানের পূর্বে প্রাক-সমীক্ষা সহ বিভিন্ন প্রস্তুতিমূলক কারিগরী সহায়তা ব্যায়নির্বাহের জন্য পিপিপি কারিগরি সহায়তা খাত যাতে বরাদ্দ দেয়া হয় ১০০ কোটি টাকা। ২) বাণিজ্যিক ভাবে অলাভজনক কিন্তু জনগণের সেবার জন্য প্রয়োজনীয় খাতে বেসরকারী বিনিয়োগ আকর্ষনের জন্য ভর্তুকী স্বরুপ Viability Gap Funding (বেসরকারী পুজিকে ভর্তুকী দেয়ার কি সুন্দর নাম VGF!) খাতে ৩০০ কোটি টাকা এবং ৩) অবকাঠামো বিনিয়োগ তহবিল যাতে প্রাথমিক ভাবে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এছাড়াও বেসরকারী বিনোয়গকে আকৃষ্ট করতে রাজস্ব প্রণোদনা অর্থাত ট্যাক্স মওকুফ ইত্যাদির প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে।

অবস্থানপত্রে পিপিপি উদ্যোগে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পগুলোকে ৩ টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে: জনগুরুত্বপূর্ণ অতি বিশাল প্রকল্প, জনগুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য প্রকল্প এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের প্রকল্প। অবস্থান পত্রে বলা হয়েছে, নিম্নোক্ত জনগুরুত্ব অতিবিশাল প্রকল্পগুলো ৫ থেকে ৭ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে: ঢাকা চট্টগ্রাম একসেস কন্ট্রোল হাইওয়ে (২২ হাজার ১০০ কোটি ৭০ লাখ টাকা), ঢাকা শহর ঘিরে একটা স্কাই রেল(১৯ হাজার ৩২০ কোটি টাকা), ঢাকা শহরেই একটা পাতালরেল ( ৮ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা), ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর-ঢাকা এলিভেটেট এক্সপ্রেসওয়ে( ১৩ হাজার ১১০ কোটি টাকা) ৪ টি ৪৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-ভিত্তিক অথবা ডিজেল ও গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত উতপাদন কেন্দ্র( ১২ হাজার ৪২০ কোটি টাকা) এবং গভীর সমুদ্র বন্দর(কোন ব্যায় প্রাক্কলণ করা হয় নি) ( সূত্র: প্রথম আলো ১২ জুন, ২০০৯)। কেমন করে কাজগুলো করা হবে? ঢাকা শহরে পাতাল রেলের কথাই ধরা যাক। পিপিপি পদ্ধতিতে সরকার দেবে এর মোট খরচের ৩০% আর বেসরকারী এক বা একাধিক উদ্যোক্তা দেবে বাকি ৭০% খরচ। গোটা কাজটি সম্পন্ন হবে মোট ৩ টি ধাপে- প্রথম ধাপে কোন বেসরকারী পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানি ফর ভ্যালু পদ্ধতিতে যাচাই করা হবে প্রকল্পটি লাভজনক কি-না, দ্বিতীয় ধাপে দেখা হবে সরকার কে কি পরিমাণ ভর্তুকী দিতে হবে।

কারণ বেসরকারী উদ্যোক্তা যখন বিনিয়োগ করবে তখন তার লক্ষ থাকবে মুনাফা সহ যত দ্রুত সম্ভব তার বিনিয়োগ তুলো নেয়া। ফলে বেসরকারী পুজিমালিক চাইবে যত বেশী ভাড়া/টোল/মাশুল ধার্য করা সম্ভব তার মাধ্যমে লাভ তুলে নিতে। ফলে সরকার তখন একটা ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়ে প্রস্তাবিত ভাড়া এবং নির্ধারিত ভাড়ার মধ্যে যে ব্যবধান তা ভর্তুকী হিসেবে প্রদান করার অঙ্গীকার করবে। তৃতীয় ধাপে সরকার প্রস্তাবিত বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড বা বিআইআইএফ এর মাধ্যমে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে বা পুজিপতিদের কাছথেকে ট্যাক্স মৌকুফের সুবিধার বিনিময়ে বা অন্যকোন ভাবে রাজস্ব বাজেট থেকে সংগ্রহীত টাকা থেকে তার নির্ধারিত ৩০% পরিশোধ করবে। এরপর বেসরকারী উদ্যোক্তা উক্ত রেলপথ নির্মান করে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এ রেলপথ পরিচালনা ও আয় সংগ্রহ করবে।

এভাবে সে মুনাফা সহ বিনিয়োগ তুলে নিয়ে সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে( বিওটি- বিল্ড-ওন-ট্রান্সফার বা তা পরিচালনা( বিওও- বিল্ড-ওন-ওপারেট) করতে থাকবে। ( সূত্র: প্রথম আলো, পৃ:১৪, ২৫/০৫/২০০৯) পিপিপি'র জন্মস্থানে কি ঘটছে: পিপিপি প্রথম ব্যবহ্রত হয় ব্রিটেন এ ১৯৯২ সালে জন মেজরের নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল সরকারের আমলে। সেখানে পিপিপি কে বলা হয় পিএফআই বা প্রাইভেট ফাইনান্স ইনিশিয়েটিভ। এরপর সরকার পরিবর্তন হলেও পিএফআই টিকে গেছে- ২০০৭ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত মোট ৭৫০ টিরও বেশী পিএফআই কনট্রাক্ট হয়েছে। লেবার পার্টির সরকারের প্রথম ৮ বছরে নির্মিত ৬৮ হাসপাতালের মধ্যে ৬৪ টিই নির্মিত হয়েছে প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশীপের মাধ্যমে।

চলুন দেখা যাক প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশীপের জন্মস্থান ব্রিটেনের ইনডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা এ বিষয়ে কি বলে: পিএফআই এর মাধ্যমে সেবা পাওয়া যায় কিন্তু খুবই কমই মানেন যে এটা সরকারী খরচের তুলনায় কম খরচে পাওয়া যায়। -----এর বিরুদ্ধে সাধারণ অভিযোগ হলো: "এর মাধ্যমে ভবিষ্যতকে বন্ধক দেয়া হচ্ছে"- বর্তমানের রাজনৈতিকদের সুবিধার বিনিময়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের ঘাড়ে বিপুল দেনা রেখে যাওয়া হচ্ছে। পিএফআই এমনকি অনেক সময় নিজের দেয়া শর্তও পূরণ করে না- বেসরকারী কম্পানীগুলোর যেখানে সমস্ত ঝুকি নেয়ার কথা থাকে সেখানে তারা ঝুকি দেখলে স্রেফ কেটে পড়ে, ফলে সমস্ত বোঝা এসে পড়ে ট্যাক্স দাতা জনগণের ঘাড়ে ফলে জনগণ পিএফআই এর কথিত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয় আর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো উল্টো তাদের কে এর বিনিময়ে আর্থিক ক্ষতিতেও পড়তে হয়। কয়েক বছর আগে জারভিস পাবলিক.লি,কম্পানি রেলওয়ে খাতে ব্যবসা করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়লে রেলওয়ের সাথে একেবারেই অসম্পর্কিত বেশকিছু স্কূল নির্মানের পিএফআই প্রজেক্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেসরকারী খাতে রেভিনিউ এবং কাস্টমস বিল্ডিং নির্মানের ক্ষেত্রে ম্যাপলে প্রপার্টি কম্পানিকে বছরে ১৭০ মিলিয়ন স্টার্লিং এর বদলে গড়ে বছরে ৩০৭ মিলিয়ন স্টার্লিং প্রদানকরতে হয়।

.......... অন্যান্য বিতর্কিত প্রজেক্ট হলো: দ্য স্কাই রোড ব্রিজ, দ্য নরউইচ ও নরফোক হাসপাতাল, দ্য ন্যাশনাল ফিজিক্স ল্যাবরেটরি এবং দক্ষিণ ইংল্যান্ড এর কুইন এলিজাবেথ হাসপাতাল। সকলেই জানে যে কোন সরকারই স্রেফ বিনিয়োগের সমস্যার জন্য একটা স্কুল, হাসপাতাল কিংবা টিউব নিটওয়ার্ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার পর বন্ধ করবে না আর বেসরকারী কোম্পানীগুলোও তা জানে। আরেকটা সাধারণ সমস্যা হলো ব্রিটিশ গভর্মেন্ট যে নিম্নসুদের হারে ঋনকরতে পারে তা কখনই বেসরকারী ভাবে করা সম্ভব নয়। ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট সম্প্রতি বেসরকারী ঋণের রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টি প্রদানের জন্য "ক্রেডিট গ্যারান্টি ফাইনান্স" নামের একটা কর্মসূচী চালু করেছে। সূত্র: The Big Question: What is the PFI, and why is it in such trouble on the London Underground? By Sean O'Grady, Economics Editor, The Independent UK, Tuesday, 17 July 2007 আরেকটি পত্রিকা দ্য মানি উইক "হোয়াটস রং উইদ পিএফআই" শীর্ষক একটি রিপোর্টে পিএফআই সম্পর্কে লিখেছে: তত্বগত ভাবে পিএফআই এর কোন সমস্যা না দেখা গেলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যোগবিয়োগের ফলাফল ঠিক ট্যাক্স-দাতা পাবলিকের পক্ষে যাচ্ছে না।

বরং এই সব চুক্তিতে যেসব বেসরকারী কোম্পানী যুক্ত হয় তারা আখেরে চোখ ধাধানো মুনাফা করে আর সরকার আটকা পড়ে দীর্ঘ-মেয়াদী এবং নোংরা কিছু পেমেন্ট কমিটমেন্ট এর মাঝে। উদাহরণ স্বরুপ, এখন পর্যন্ত সরকারী হিসেবে ৫৪ বিলিয়ন স্টার্লিং অবকাঠামো এবং সেবা খাতে সরকার খরচ করলেও, দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন প্রতিজ্ঞার কারণে সরকারকে বাস্তবে পরিশোধ করতে হচ্ছে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন স্টার্লিং। সুতরাং এটা তো পরিস্কার কেন পিএফআই কন্ট্রাক্টররা খুব ভাল মুনাফা করছে। কিন্তু বর্তমানে তাদের মুনাফার পরিমাণ এত বেশী যে পরিস্কারভাবেই এর মাঝে কোন ঘাপলা আছে। পাবলিক একাউন্ট কমিটি( পিএসি) যার কাজ হলো তদারকি করা যেন সরকার ঠিকঠাক মতো ভ্যালু ফর মানি বা টাকার বিনিময়ে উপযুক্ত মূল্য(সেবা) পায় সে কমিটির সদস্য একজন একজন সাংসদ সরাসরি বলেছেন যে সরকারী আমলারা "নিয়মিতই বাণিজ্যিক ভাবে অনেক বেশী চালু বেসরকারী প্রতিনিধির কাছে মার খাচ্ছে " এবং এর ফলে জনগণের জন্য বাজে সব চুক্তি করছে।

সূত্র: What's wrong with PFI? By Simon Wilson, Money Week, May 30, 2007 ফলে ব্রিটেনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখছি পিপিপি'র ঘোষিত যেসব সুবিধা অর্থাত সরকারী অপচয়, সরকারী ব্যয় এবং সরকারী ঋণের ভার কমানোর সুবিধা খাতা কলমে দেখানো হয় তার প্রত্যেকটিই ব্রিটেন এ অর্জিত না হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে। কেননা পিএফআই এর মাধ্যমে যে সেবা পাওয়া যায় তার দাম বেশী, কোন প্রজেক্টের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রজেক্ট চলাকালীন পর্যায়ে গিয়ে বেড়ে যাওয়া এমনকি বেসরকারী খাত যে ঋণ নেবে সে ঋনের সুদের হার বেশী হওয়া এমনকি সে ঋণের গ্যারান্টি পর্যন্ত সরকারকে দিতে হচ্ছে। তাহলে সরকার নিজে কম সুদে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করলে সমস্যা কোথায়? দক্ষিণ আফ্রিকায় পিপিপি: পিপিপি তার জন্মস্থানে তার জন্মের ঘোষিত উদ্দেশ্যের বিপরীত কাজ কারবার করতে থাকলেও নয়া উদারনৈতিক বিশ্বব্যবস্থার মাতবর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের বহুল সমালোচিত বেসরকারীকরণের "বিকল্প" একটি নাম পেয়ে যায় যা তাদের আসল উদ্দেশ্য অর্থাত বাজর উদারীকরণ এবং সরকারী খাতের সংক্ষিপ্তকরণের কাজটিই করবে কিন্তু ভিন্ন একটি নামে। ফলে ৯০ এর দশকে বিশ্বব্যাংক আইএমএফ ইউএনডিপি ইউএসএইড সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক আন্তর্জাতিক সংস্থা উঠে পড়ে লাগে দেশে দেশে পিপিপি বাস্তবায়ন করতে যার ধারবাহিকতায় আমেরিকা, কানাডা থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা, ইতালি, চীন, ভারত ইত্যাদি দেশে পিপিপি বাস্তবায়ন শুরু হতে থাকে। এরই ধারবাহিকতায় বাংলাদেশ এবার পিপিপি বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে।

ব্রিটেনের অবস্থা তো দেখলাম। এবার দেখা যাক ব্রিটেন থেকে আমদানীকরা পিপিপি বাস্তবায়নের কাজ হয়েছে এরকম একটি তৃতীয় বিশ্বের দেশ দক্ষিণ আফ্রিকায় পিপিপির কি অবস্থা! নব্বইয়ের দশকে দক্ষিণ আফ্রিকা সেদেশের ব্যাপক গৃহায়ন সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধানের লক্ষে একটা পিপিপি প্রজেক্ট চালু করে যার আওতায় ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত পাচ বছর সময় কালে ১০ লক্ষ বাসস্থান তৈরীকরে গৃহহীনদের মাঝে সর্বরাহ করার কথা। এক্ষেত্রে প্রত্যেক নিম্নআয়ের পরিবারের জন্য সরকার থেকে ১৭,০০০ র্যান্ড সাবসিডি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যে সাবসিডি সরাসরি পরিবারগুলোর কাছে না দিয়ে সরকার ডেভেলপারদেরকে প্রদান করবে যেন তারা কমদামে বাড়ি বিক্রি করে। দেখাগেল তৈরীকৃত বাড়িঘরের মূল্য এমন রাখা হয়েছে যে বেশীরভাগ দরিদ্রমানুষই তা পরিশোধ করার সামর্থ রাখে না এমনকি সরকার আইনকরে ব্যাংক ঋণের ব্যাবস্থা সহজ করার পরও এবং শুধু তাই নয় এগুলোর সংখ্যা এবং কোয়ালিটি দুটোই পরিকল্পনার তুলনায় কম/নিম্নমানের হয়েছে। ঘরগুলোর কোয়ালিটি এত খারাপ যে অনেক পরিবারই তাদের বস্তিবাড়ি ছেড়ে সেগুলোতে থাকতে আপত্তি করলো, তাদের আরো একটি আশংকা ছিল যে এসব ভীষণ দূরবর্তী স্থানে বানানো বাড়িতে উঠলে তাদের পক্ষে কর্মস্থলে যাতায়ত দুরহ হয়ে পড়বে।

ডেভেলপারদের বক্তব্য হলো সরকারের সাবসিডি এত কম ছিল যে তাদের নির্ধারিত মুনাফা হিসেব করার পর যে অর্থ থাকে তাতে এরচেয়ে ভাল বাড়ি বানানো সম্ভব নয়! এভাবে পিপিপি প্রজেক্টে আফ্রিকান বেসরকরী ডেভলপারদের মুনাফাবাজীর কারণে শেষ পর্যন্ত অবস্থা দাড়িয়েছে এমন যে এখন সে দেশে গৃহায়নের ঘাটতি হলো ৩০ লক্ষ ইউনিট। সূত্র: Public-Private Partnerships:The Trojan Horse of Neoliberal Development? by Faranak Miraftab Click This Link (আগামী কিস্তিতে সমাপ্য)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.