আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাগুরছড়া ব্লো-আউটের একযুগ পূর্তি।। ক্ষতিপূরণ আদায়ে কী করা যাবে?

আমার সম্পর্কে বলার মতো কিছু নেই।

মাগুরছড়া ব্লো-আউটের একযুগ পূর্তি। । ক্ষতিপূরণ আদায়ে কী করা যাবে? ভূমিকাঃ বাংলাদেশের প্রধান এবং প্রায় একক জ্বালানী উৎস গ্যাস সম্পদ সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানীর নগ্ন থাবার কবলে। গ্যাস সম্পদ নিয়ে বাংলাদেশ এক মহা সংকটের সম্মুখীন।

উৎপাদন অংশীদারী চুক্তি’র নামে সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানীগুলো দেশীয় কমিশনভোগীদের সাহায্যে তেল-গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের নামে অধিক মুনাফা লুন্ঠনের যে উন্মতা চলছে, রপ্তানী আপাতত স্থগিত হলেও প্রতিটি কূপ থেকে তাদের ভাগের ৭৯ ভাগ গ্যাসক্রয় বাবদ শত শত কোটি টাকা ভর্তুকী দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ, দেশপ্রেমিক বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক শক্তি এইসব হাস্যকর পদক্ষেপ ও প্রতারণামূলক যুক্তির আসল চেহারা উন্মোচন করে দিলেও বিগত সরকারসমূহের আমলে আমলারা বেপরোয়াভাবে সাম্রাজ্যবাদী লুন্ঠনের খেদমতে নিযুক্ত ছিলেন। জনগণ এ ক্ষেত্রে অবশ্য বর্তমান মহাজোট সরকারকে ব্যতিক্রম হিসেবে দেখতে চায়। অক্সিডেন্টাল, ইউনোকল, নাইকো, শেভরণ, কেয়ার্ন, টাল্লো ইত্যাদি বহুজাতিক কোম্পানী সারা দুনিয়ার তেল-গ্যাস সম্পদ লুন্ঠনের এক উন্মত্ত খেলায় নিযুক্ত। পৃথিবীর অন্যতম তেল সমৃদ্ধ দেশ নাইজেরিয়াকে ডলার ও সমৃদ্ধির লোভ দেখিয়ে ভিখিরি বানিয়েছে।

ইন্দোনেশিয়াকে সর্বশান্ত করেছে। দেশ সর্বশান্ত হলেও লুটের ভাগ পেয়ে স্থানীয় শাসকরা ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে সাম্রাজ্যবাদী ব্যবস্থা দেশে দেশে এই লুটপাট নিশ্চিত করার জন্য সামরিক শাসন অথবা বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। নির্যাতনমূলক আইন করে, সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে লুটের বিরুদ্ধে যে কোন প্রতিরোধকে দমন করেছে। বাংলাদেশ এই লুন্ঠন প্রক্রিয়ারই শিকার।

গ্যাসের মজুদ যা দেশের জন্যই অতি সামান্য, সেটাও এরা লুটে নিতে চায়। বাংলাদেশের বিগত শাসকরা নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদের পাহাড় গড়ার জন্য এই লুন্ঠনের প্রত্যক্ষ সহযোগী। মাগুরছড়া ব্লো-আউটের একযুগ পূর্তি, জনমনে এখনো হাজারো প্রশ্ন ঃ ১৪ই জুন মাগুরছড়া দিবস। এবার মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের মাগুরছড়া ব্লো-আউটের ১২ বছর পূর্ণ হয়েছে। ১৯৯৭-২০০৯ সময়কালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিগত দলীয় সরকারসমূহ মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টাল-ইউনোকল-শেভরনের কাছ থেকে আদায় করতে পারে নি।

মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টাল-ইউনোকল-শেভরনের কাছ থেকে আদায়ে বর্তমান মহাজোট সরকার বিশেষভাবে তৎপর হতে পারেন। যদিও জনমনে নানা প্রশ্ন, উদ্বেগ-উৎকন্ঠা এখনো রয়েই গেছে। আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশে দিন বদলের অঙ্গীকারে ক্ষমতাসীন মহাজোটের পক্ষে মাগুরছড়ার তিপূরণ আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ ও ভূমিকা নেওয়া সম্ভব হবে। আমরা আরও বিশ্বাস করতে চাই যে, মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানী যতই শক্তিশালী না কেন, মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও ভূমিকা গ্রহণ করতে সক্ষম হবেন। মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ আদায়ে সরকারের পক্ষে যদি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সম্ভব না হয় তাহলে আধুনিক দুনিয়ার গণতান্ত্রিক যুগে স্বাভাবিকভাবে 'রাষ্ট্রে'র সংজ্ঞা ও সার্বভৌমত্ব, সরকারের ক্ষমতায়ন ও স্বাধীনতা নিয়ে সংশয় জাগবে।

আর জনমনে প্রশ্ন থেকে যাবে যে, ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মধ্য দিয়ে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের যুগ ও ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জাতিগত নিপীড়ন থেকে মুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও নতুন সংস্করণে সাম্রাজ্যবাদের মোড়ল আমেরিকার নেতৃত্বে নয়া ঔপনিবেশিক শোষণ-লুণ্ঠনের মহাতান্ডব থেকে আমরা মুক্ত নই। বিদেশী একটি কোম্পানী আমাদের দেশের গ্যাস সম্পদ, পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস করলো, তাও তাদের অবহেলা-ত্রুটির কারণে, তাতে আমাদের সরকার ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে না। সম্পদ ধ্বংসের জবাবদিহিতা চাওয়া যাবে না- পাওয়া যাবে না- এমন তো হতে পারে না। ক্ষতিপূরণ আদায়ে বর্তমান সরকারকে সফল হতেই হবে। এভাবে আর যাতে মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ-পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণের বিষয় নিয়ে লিখতে না হয়।

আর যাতে আগামী বছর থেকে মাগুরছড়ার গ্যাস সম্পদ-পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংসের তিপূরণের দাবী নিয়ে জনগণকে আন্দোলন করতে না হয়। আশা করা যায় যে, মহাজোট সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। দেশের সম্পদের এতবড় ধ্বংসযজ্ঞের পর ক্ষতিপূরণ আদায় করতে না পারলে যে কোনো দেশপ্রেমিক নাগরিকের মর্মপীড়া ও অনুশোচনাবোধ সৃষ্টি হয় বলে আমাদের ধারণা। আমাদের দেশের তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদের এভাবে ধ্বংসযজ্ঞ ও লুণ্ঠন কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এজন্য প্রতিনিয়ত আমাদেরও মর্মপীড়া ও মনোকষ্ট হয়।

মাগুরছড়া ব্লো-আউট, গ্যাস সম্পদ, তদন্ত রিপোর্ট ও আমাদের পরিবেশ ঃ মৌলভীবাজার গ্যাসফিল্ডের মাগুরছড়া ১৪ নং গ্যাস ব্লকের অন্তর্গত একটি সমৃদ্ধ গ্যাসক্ষেত্র, এদেশের খনিজ সম্পদের মানচিত্রে পূর্ণিমার চাঁদের মতো রৌশন ছড়িয়ে জনগণের স্বার্থে স্বাবলম্বী অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটাতে পারতো। বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর বিনিয়োগের জন্য আগত বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী ও অংশীদারেরা ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন দিবাগত রাতে মাগুরছড়া ১নং অনুসন্ধান কূপে খনন চলাকালে বিস্ফোরণ ঘটায়। মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের পরপরই দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহফুজুল ইসলামকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি এক মাসের মধ্যে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে ১৯৯৭ সালের ৩০ শে জুলাই মন্ত্রণালয়ের সে সময়ের সচিব ড. তৌফিক-ই-এলাহি চৌধুরীর কাছে দু'টি ভলিউমে প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্টটি জমা দেয়। পরবর্তীতে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এ বিস্ফোরণের য়তি নিরূপণ, ক্ষতিপূরণ পাওয়া ও বিতরণের বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ক্যাপ্টেন (অব.) এ বি তাজুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের একটি সাব কমিটি গঠন করে।

কমিটির অন্য দু'জন সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের এমপি ইমরান আহমেদ ও জাতীয় পার্টির এমপি মুকিত খান। তদন্ত কমিটির একজন সদস্য সাব-কমিটিকে জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে অক্সিডেন্টালের ব্যর্থতার জন্যই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। কমিটির তদন্তে অক্সিডেন্টালের কাজে ১৫/১৬টি ত্রুটি ধরা পড়ে। অক্সিডেন্টালের কর্মকর্তা ২/৩টি ত্রুটির ব্যাপারে আপত্তি জানালেও বাকিগুলো স্বীকার করে নিয়ে তদন্ত রিপোর্টে স্বাক্ষর করে। তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মার্কিন কোম্পানী অক্সিডেন্টালের খামখেয়ালিপনার কারণেই ঘটে যাওয়া এ বিস্ফোরণে চা বাগান, বনাঞ্চল, বিদ্যুৎলাইন, রেলপথ, গ্যাসপাইপলাইন, গ্যাসকূপ, মৌলভীবাজারস্ট্রাক্চার, গ্যাস রিজার্ভ, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ভূমিস্থ পানি সম্পদ, রাস্তা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ।

তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ছোট বড় ২৯টি চা বাগানের ক্ষতির পরিমাণ ৪৬ কোটি ৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৩০টাকা। বনাঞ্চলের ৬৯.৫ হেক্টর এলাকার ২৫ হাজার ৬৫০টি পূর্ণ বয়স্ক গাছ আগুনে পুড়ে গেছে বলে হিসাব করা হয়, যার ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয় প্রায় ৩৩.৬১ কোটি টাকা। একটি বনের স্বাভাবিক উচ্চতার গাছ বাড়তে প্রয়োজন হয় ৫০ থেকে ৬০ বছর। এ বনের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে কমপক্ষে ১১০ বছর সময় লাগবে। প্রতি বছর ৮০.৩০ কোটি টাকা হিসাবে ১১০ বছরে বনাঞ্চলের পরিবেশগত ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয় ৮,৮৩৯ কোটি টাকা।

বনাঞ্চলের আংশিক ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ৮,১০০ গাছ এবং ২২.৫০ হেক্টর ভূমি ; উক্ত তি থেকে উদ্ধার পেতে সময় লাগবে ২০ বছর ; উক্ত ক্ষতি বাবদ ধরা হয়েছে ৫০৭.১২ কোটি টাকা। এছাড়া বনাঞ্চলের সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ধরা হয়েছে ৪০ হেক্টর ভূমি এবং ১৫,৪৫০ গাছ; উক্ত ক্ষতি থেকে পুনরুদ্ধার পেতে সময় লাগবে ১০ বছর এবং ক্ষতি বাবদ ধরা হয়েছে ৪৮৪.৫৮ কোটি টাকা । অর্থাৎ বনাঞ্চলের মোট তি ধরা হয়েছে ৯,৮৫৮ কোটি ৩১ লক্ষ টাকা। বিস্ফেরণের ফলে ২ হাজার ফিট রেলওয়ে ট্র্যাক ধ্বংস হয়েছে, এতে ক্ষতি দেখানো হয়েছে ৮১ লক্ষ ৫৪ হাজার ৩৯৫ টাকা (রাজস্ব ব্যতীত)। সড়ক পথ (রাজস্ব ব্যতীত ) বাবদ ক্ষতি ২১ কোটি টাকা।

গ্যাস পাইপ লাইন (রাজস্ব ) বাবদ ক্ষতি ১৩ লক্ষ টাকা । বিদ্যুৎ লাইন (রাজস্ব ব্যতীত) বাবদ ক্ষতি ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ৯১৮৬ টাকা। খাসিয়া পানপুঞ্জির অধিবাসীদের পানের বরজ সমূহ (রাজস্ব ব্যতীত) বাবদ ক্ষতি ধরা হয়েছে ১৮ লক্ষ টাকা। বাস মালিকদের রাজস্ব ক্ষতি ধরা হয়েছে প্রতিদিন ৪৭,৭৫০ টাকা হারে মোট ১২ লক্ষ টাকা। ( তথ্যসূত্র: তদন্ত রিপোর্ট, ৩০ শে জুলাই, ১৯৯৭ ইং )।

তদন্ত রিপোর্টে মাগুরছড়া বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া ভূ-গর্ভস্থ গ্যাসের পরিমাণ ৪৮৫.৮৬ বিসিএফ এবং এর মধ্যে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের পরিমাণ ২৪৫.৮৬ বিসিএফ উল্লেখ করা হলেও আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি। এক্ষেত্রে বর্তমানে আন্তর্জাতিক দর অনুযায়ী প্রতি ১০০০ সিএফ গ্যাস ৮ মার্কিন ডলার হিসাবে বাংলাদেশী টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মাগুরছড়া বিস্ফোরণে পুড়ে যাওয়া ভূ-গর্ভস্থ উত্তোলনযোগ্য ২৪৫.৮৬ বিসিএফ গ্যাসের দাম ১৯৬,৬৮,৮০০০০ মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৪,৩৫৮,২২৪০০০০ টাকা (প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার উপরে)। তদন্ত রিপোর্টের ৮.৪.৬ ও ৮.৬ অনুচ্ছেদে যথাক্রমে ভূ-গর্ভস্থ পানি সম্পদ ও পরিবেশের ক্ষয়-ক্ষতির বিবরণ দেয়া হয়েছে, কিন্তু ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হয়নি। ভূ-গর্ভস্থ পানি সম্পদ ও পরিবেশের ক্ষয়-ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নিরূপণের সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী মাগুরছড়ার মোট ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। মাগুরছড়া গ্যাস কূপ এলাকায় দুর্ঘটনার সময় ৬ জন শ্রমিক, ৫ জন সিকিউরিটি ও ১ জন রিগম্যান কর্মরত ছিলেন। রাত প্রায় একটার দিকে গ্যাসকূপে প্রথম মৃদু ভূকম্পন, তারপর বিদঘুটে আওয়াজ শুরু হলে রিগম্যান দ্রুত রিগ থেকে নেমে পড়েন। কূপ খননের জন্যে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানী অক্সিডেন্টাল যে উপ-ঠিকাদার নিয়োগ করে গ্যাসকূপ খননে তাদের অভিজ্ঞতা ছিল আনকোরা। খননকাজে জার্মান ডয়টেগ-এর অভিজ্ঞ লোকবলের যেমন অভাব ছিল তেমনি পূর্ব কোন সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা ছিলো না।

ছিলনা কার্যোপযোগী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। কূপ খনন কাজে ডয়টেগের যন্ত্রপাতি ছিল পুরানো ও ত্রুটিযুক্ত। এর মান চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ছিল না। দায়িত্বরত রিগম্যানও ছিল সহকারী পর্যায়ের। উৎপাদন বণ্টন চুক্তির শর্তানুসারে কূপ খননের প্রকল্প এলাকায় অক্সিডেন্টাল থেকে একজন, পেট্রোবাংলা থেকে একজন খননবিদ সার্বণিকভাবে উপস্থিত থাকার কথা।

অক্সিডেন্টাল চুক্তির এ শর্তকে তেমন কোনো গুরুত্ব প্রদান করেনি। বিস্ফোরণকালে কূপ এলাকায় কোনো খননবিদ উপস্থিত ছিল না। দুর্ঘটনা এড়ানো ও খনন কাজ সহজ করার উদ্দেশ্যে কূপ খননের সময় যে কেসিং প্রতিরা বহিরাবরণ তৈরি করা হয় তার নকশায় ছিল মারাত্মক ধরনের ত্রুটি। অক্সিডেন্টাল ও ডয়টেগের আনাড়ি প্রযুক্তিবিদরা এ নকশা তৈরি করে। অক্সিডেন্টালের খনন কাজে আনাড়িপনা, অনভিজ্ঞতা, দায়িত্বে অবহেলা, উদাসিনতা, ত্রুটি, অযোগ্যতা দুর্ঘটনাকে অনিবার্য করে তোলে।

দায়িত্ব পালনে অক্সিডেন্টালের অযোগ্যতা ও খনন কাজের নিম্নমান হওয়ার প্রধান কারণ হলো টাকা বাঁচানোর উদ্দেশ্যে সস্তায় লোকবল নিয়োগ করা। উন্নয়ন অংশীদার আমেরিকার কোম্পানি অক্সিডেন্টাল এদেশের গ্যাসত্রে লুণ্ঠনে অত্যন্ত দতা ও যোগ্যতার সাথে বিনিয়োগ তত্ত্ব প্রয়োগ করেছে বৈকি। এ তত্ত্বকে কার্যকর করার জন্যে অক্সিডেন্টাল কোম্পানী সব সময় চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে পেট্রোবাংলার কাছে তথ্য গোপন করে যায়। চুক্তির শর্তানুসারে গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে তাদের গৃহীত যাবতীয় কর্মসূচি, পদক্ষেপ ও অত্যাবশ্যকীয় টেকনিক্যাল বিষয়ে জানাতে হলে অক্সিডেন্টাল তা পেট্রোবাংলাকে জানায় একেবারে শেষ মুহূর্তে অথবা কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর। নির্দিষ্ট তথ্যটি অবগত হওয়া ছাড়া পেট্রোবাংলার তখন আর কিছুই করার থাকে না।

গ্যাসত্রে উন্নয়নে অক্সিডেন্টালের তথ্য গোপন করার অভিযোগে অক্সিডেন্টালকে ইতিপূর্বে নাইজেরিয়া থেকে পাততাড়ি গুটাতে হয়েছে। লিবিয়া থেকেও তাড়া খেয়ে ফিরে যায়। তাদের অপকর্মে নাইজেরিয়ার গ্যাস-তেল সম্পদ নিঃশেষীকরণ, পরিবেশ ও উর্বর বন ভূমি ধ্বংস হয়েছে। মানুষ রোগে ভূগছে। পরিবেশ বিষাক্ত আকার ধারণ করেছে।

অনুসন্ধান কূপ খনন করার সময় বিস্ফোরণ ঘটাতে হয়। এ কাজে সাধারণত ডিনামাইট জাতীয় বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু অক্সিডেন্টাল চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে মাগুরছড়ার গ্যাস কূপ খনন কাজে বিস্ফোরক হিসেবে প্রাণঘাতী ও পরিবেশ বিনাশী তেজস্ক্রিয়যুক্ত 'রেডিও একটিভ সোর্স' ব্যবহার করে। পেট্রোবাংলা এ সংবাদ জানতে পারে গ্যাস কূপ বিস্ফোরণের কয়েক মাস পর। পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য খনন কাজ স্বল্পতম সময়ে সম্পন্নকরণ।

যত কম সময়ে কাজ সম্পন্ন করা যায় তত বেশী মুনাফা লাভ করা যায়। জনগণের স্বাস্থ্য, জীবন ও পরিবেশ রার দায়িত্ব নিয়ে আমেরিকার কোম্পানী অক্সিডেন্টালের বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসেনি। বহুজাতিক পুঁজির আগমন ঘটেছে বহুজাতিক তান্ডব ও লুণ্ঠনের আদর্শ নিয়ে আমাদের উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে নয়। মাগুরছড়া ব্লো-আউট, বিশেষজ্ঞদের প্রথম দিকের প্রাথমিক ধারণাঃ মূল গ্যাস জোনের আয়তন ছিল দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার এলাকা। এ কূপে এক ট্রিলিয়ন ঘনফুটেরও অধিক গ্যাস মজুদ ছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

এক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের বর্তমান বাজার মূল্য ছিল ৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলার অর্থাৎ বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫৮ হাজার ৪শ' কোটি টাকা। টাকার বারবার অবমূল্যায়নের কারণে এ মূল্য বর্তমানে আরো অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জীব বৈচিত্রে সমৃদ্ধ এ সংরক্ষিত প্রাচীন অরণ্য ভূমির পরিবেশের যে ক্ষতি হয়েছে তার অর্থনৈতিক মূল্যও হবে সমপরিমাণ। যদি প্রয়োজনীয় অর্থ বিনিয়োগ করা হয় তা হলেও ১৯৯৭ সালের ১৪ জুনের পূর্বেকার পরিবেশগত অবস্থা ফিরিয়ে আনতে লাগবে একশত বছরের অধিক কাল। গ্যাস সম্পদ ও পরিবেশ ও বন সম্পদের যৌথ ক্ষতির পরিমাণ ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৮শ' কোটির টাকারও বেশি।

বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি ) জাপানের ঋণ এবং এক দশকেরও অধিককাল ধরে জনগণের পকেট থেকে সংগৃহীত যমুনা সারচার্জের টাকায় নির্মিত যমুনা সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৩ হাজার ৬শ' কোটি টাকা। ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৮শ' কোটি টাকা দিয়ে একচেটিয়া ঋণমুক্ত স্বাধীন অর্থনীতির নীতিমালায় ৩২টি যমুনা সেতুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেত। মাগুরছড়ার ভূমিতে ও আকাশে বিলীন হয়ে যাওয়া সম্পদের বিনিময়ে ৪টি স্বাধীন জাতীয় বাজেট দেয়া যেত। এরফলে আমরা হয়তো চিরদিনের জন্যে অর্থনৈতিকভাবে সম্পূর্ণ স্বাধীন-স্বয়ম্ভর হতে পারতাম। গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের কারণে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিপরীতে ব্যয় দেখিয়ে অক্সিডেন্টাল ৩ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলারের মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের একটি হিসেব পেট্রোবাংলায় দাখিল করে।

যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২৬২ কোটি ৮০ লাখ টাকা দাঁড়ায়। গ্যাসকূপ খনন কাজে নিয়োজিত রয়েছে পেট্রোবাংলার অঙ্গ সংস্থা বাপেক্স। এ সংস্থার কর্মকর্তাদের ঘুষ-দুর্নীতি ইত্যাদি যুক্ত পেট মোটা করে হজম সম্পন্ন করার পরও সার্থকভাবে একটি কূপ খননে সর্বোচ্চ ব্যয় হয় ৪০ কোটি টাকা। কিন্তু বিদেশী বিনিয়োগের মন্ত্র ও পবিত্রতা রক্ষায় জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন আমলাদের আত্মঘাতী ভ্রাতৃত্বমূলক হস্তক্ষেপের হাত অক্সিডেন্টালের মাগুরছড়ার বন, পরিবেশ, জীব বৈচিত্র ও গ্যাস পোড়ানো হাতের দিকে ঘুষ দুর্নীতি-সুযোগ সুবিধা নগদ টু-পাইসের বিনিময়ে মোলাকাতের জন্যে এগিয়ে আসে। একযুগ পূর্ণ হলেও অক্সিডেন্টাল বা অক্সির উত্তরসুরী ইউনোকল পরবর্তীতে শেভরনের কাছ থেকে মাগুরছড়া বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ আদায় করা যায়নি।

মাগুরছড়া গ্যাসকূপ এলাকা পরিত্যাগকালে অক্সিডেন্টাল প্রচারণার সর্বোচ্চ মারণাস্ত্র প্রয়োগ করে। আড়াইশত বছরেরও অধিককাল ধরে ব্রিটিশ পুঁজিপতিদের নিয়ন্ত্রণ ও বহুজাতিক একচেটিয়া পুঁজির অধীনে শেকল টানা এ বিধ্বস্ত জনগোষ্ঠীর মুখে লেপন করে দেয়া হয় লুটেরা ও সন্ত্রাসীর কালিমা। জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের সচিব ও অক্সিডেন্টালের প্রচারণা বাস্তবতার সাথে যে সংগতিপূর্ণ নয় এ সত্যটি জনগণের কাছে অনেক আগেই পরিস্কার হয়ে যায়। প্রাচীনকাল থেকে মানুষ লক্ষণ দেখে বাস্তবতা উপলব্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। কোন তদন্ত কমিটির রিপোর্ট বা বিচারকের রায়ের ওপর নির্ভর না করেই ঘটনা জাত সম্পর্ক, পরিবেশ ও লক্ষণসমূহ বিশ্লেষণ করে সঠিক অনুমানে পৌঁছে যেতে পারে মানুষ।

অক্সিডেন্টালের প্রচারণা সত্ত্বেও শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ এলাকার জনগণসহ বৃহত্তর সিলেটবাসী অক্সিডেন্টালের বিরুদ্ধে আক্রোশে-আন্দোলনে মাগুরছড়া গ্যাস কূপের আগুনের মত জ্বলে উঠতে থাকে। ছয় মাসেরও অধিককাল ধরে আগুনের গ্যাস উদগীরনকারী গ্যাস কূপের উৎস মুখ সিল করার কাজ সম্পন্ন হয় ৯ জানুয়ারি ১৯৯৮। তারও আগে ২০ ডিসেম্বর ১৯৯৭ থেকে অক্সিডেন্টাল মাগুরছড়া থেকে রাতের আঁধারে প্রয়োজন ফুরিয়ে যাওয়া জিনিসপত্র আস্তে আস্তে সরাতে আরম্ভ করে। চোরের মতো অবস্থান পরিবর্তন করতে দেখে জনগণের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে কমলগঞ্জের রাস্তায় বড় বড় গাছ ফেলে ব্যারিকেড তৈরি করা হয়।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বামগণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, ন্যাপ, জাসদ, বাসদ, গণতন্ত্রী পার্টি, সিপিবি-এর উদ্যোগে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ-মৌলভীবাজার সমগ্র সিলেট বিভাগসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, পদযাত্রা আন্দোলন হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্রের কারণে অক্সিডেন্টালের বিরুদ্ধে জনগণের ক্রোধ-আন্দোলনেও জনগণের সম্পদ ধ্বংসের ক্ষতিপূরণ আদায় করা সম্ভব হয়নি। শেভরনের জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সরবরাহ, বছরে ভর্তুকী ৫,১৫৬ কোটি টাকাঃ মাগুরছড়া মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্গত শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে সংরতি বনাঞ্চলের একটি জায়গার নাম। ১৯৯৭ সালের জুন মাসে স্থানটি রাতারাতি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয়। এখনো প্রতি বছর 'মাগুরছড়া দিবস'- ছাড়াও মাঝে মাঝে সংবাদ শিরোনামে মাগুরছড়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে জনগণের সামনে আবির্ভূত হয়।

বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীর সাথে হিসেব-নিকেশ শেষে পিএসসি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পাচ্ছে তেল-গ্যাস সম্পদের ২১ ভাগ, আর বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানী লুটে নিয়ে যাবে গ্যাস-তেল সম্পদের ৭৯ ভাগ। আর বাপেক্স উত্তোলন করলে পুরোটার মালিক হতো দেশ। বিদেশী কোম্পানী গ্যাস অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে তারা আবার বড় বড় বিপর্যয় ঘটাতে পারে, যা ইতিমধ্যেই মাগুরছড়া ও টেংরাটিলা (ছাতক) গ্যাসকূপ সমূহের দুর্ঘটনায় প্রমাণিত। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, এক হাজার ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনে বাংলাদেশের উৎপাদন খরচ হয় ৫৮ টাকা, যা জনগণ কেনে ৬২ টাকায়। এক্ষেত্রে প্রতি হাজার সিএফটিতে ৪ টাকা লাভ থাকার কথা।

কিন্তু সেই গ্যাস বিদেশী কোম্পানীর কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে ৮ ডলারে অর্থাৎ ৫৮৪ টাকায় এবং সেটা কিনতে হবে বিদেশী মুদ্রায় বা ডলারে। সরকার ভর্তুকী দিয়ে কেনার ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে এবং এরই বিষময় ফল হচ্ছে জনগণকে বেশী দামে গ্যাস ও বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের দেশের মাটির তলার সেই গ্যাস শেভরন কোম্পানীর কাছ থেকে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাস ৫৮৪ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এতে দেশ অচিরেই বিরাট বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। শেভরন এমবি-২ ও এমবি-৩ কূপ থেকে ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দৈনিক জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করছে।

প্রতিদিনের উত্তোলন খরচ ৩২ লক্ষ ৭ হাজার টাকা। বাপেক্স উত্তোলন করলে তা জনগণ কিনতে পারতো ৪৩ লক্ষ ২৮ হাজার টাকায়। কিন্তু জাতীয় গ্রীডে সরবরাহকৃত দৈনিক ৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যে তাদের ৭৯ ভাগ অর্থাৎ ৫৫.৩ মিলিয়ন গ্যাস শেভরন কোম্পানীর কাছ থেকে ৩,২২,৯৫২০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে এবং বছরে তা দাঁড়াচ্ছে ১,১৭৮ কোটি টাকা। এতে বাংলাদেশকে শেভরন কোম্পানীর স্বার্থে মুনাফা যোগান দিতে গিয়ে প্রতিদিন ভর্তুকী দিতে হচ্ছে ২ কোটি ৯০ ল ৮৮ হাজার টাকা এবং বছরে ভর্তুকী ১,০৬১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা। এমবি-২, এমবি-৩, এমবি-৪ ও এমবি-৫ কূপগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলন করে জাতীয় গ্রীডে দৈনিক ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

তাতে জাতীয় গ্রীডে সরবরাহের জন্য দৈনিক ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুটের মধ্যে তাদের অংশ ৭৯ ভাগ অর্থাৎ ১১০.৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস শেভরন কোম্পানীর কাছ থেকে ৬ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকায় কিনতে হচ্ছে এবং বছরে তা দাঁড়াচ্ছে ২,৩৫৭ কোটি টাকা। এতে বাংলাদেশকে শেভরন কোম্পানীর স্বার্থে মুনাফা যোগান দিতে গিয়ে প্রতিদিন ভর্তুকী দিতে হচ্ছে ৫ কোটি ৮১ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা এবং বছরে ভর্তুকি ২,১২৩ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসত্রে থেকে গ্যাস উত্তোলন করে জাতীয় গ্রীডে দৈনিক ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ শুরু করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশকে শেভরন কোম্পানীর স্বার্থে মুনাফা যোগান দিতে গিয়ে প্রতিদিন ভর্তুকী দিতে হচ্ছে ৮ কোটি ৩১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা এবং বছরে ভর্তুকি ৩,০৩৩ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। তাতে বাংলাদেশের তি পুষিয়ে নিতে হলে সরকারকে জনগণের জ্বালানী গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি করতে হবে।

এর ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দামও চক্রবৃদ্ধিহারে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। তেল-গ্যাস উত্তোলনের জন্য বাংলাদেশের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে বাপেক্স। বাংলাদেশের জাতীয় প্রতিষ্ঠান তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কয়েকগুণ বেশী সাফল্য দেখিয়েছে। বিদেশী কোম্পানীর কাছে তেল-গ্যাসক্ষেত্র ইজারা দেয়ায় বাপেক্সের ৩০০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড়ছে, ১৩০০ দক্ষ কর্মকর্তা বেকার হচ্ছে ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হচ্ছে। বিদেশী কোম্পানীকে ইজারা দেয়ায় গ্যাস আবিষ্কারের খরচ দিতে হচ্ছে আমাদের।

অথচ তেল-গ্যাস অনুসন্ধান-উত্তোলনে বাপেক্সের খরচ বিদেশী কোম্পানীর চেয়ে অনেক অনেক কম। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের সকল গ্যাসক্ষেত্র দেশীয় কোম্পানী বাপেক্সকে দিয়েই কূপ খনন-উত্তোলন-বিপণন করা যেত। এজন্য বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানীকে শেয়ার দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আর্থিক অনটনের প্রশ্ন অবান্তর। হাজার হাজার কোটি টাকার গ্যাস উত্তোলনের জন্য মাত্র ৪০ কোটি টাকা দিয়ে কূপ খনন করা যায়।

দেশের বর্তমান চাহিদা অনুযায়ী প্রতিবছর মাত্র ৪ টি কূপ খননের জন্য ১৬০ কোটি টাকা করা দরকার হয়। এছাড়া প্রতিবছর পেট্রোবাংলা ২,০০০ কোটি টাকার উপরে সরকারকে প্রদান করে, এর শতকরা ১০ ভাগ অর্থাৎ ২০০ কোটি টাকা অন্তত গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে ব্যয় করা হলে তেল-গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন খাতে বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন হয় না। কারিগরি দক্ষতার প্রশ্নও অবান্তর। ইতিমধ্যে বাপেক্স ফেঞ্চুগঞ্জ, সালদা নদী ইত্যাদি গ্যাসত্রে আবিষ্কার করে উৎপাদন চালু রেখেছে। তাহলে মাগুরছড়া, ছাতক-টেংরাটিলাসহ সকল গ্যাসকূপ খনন করতে বাপেক্সের পক্ষে কোনো অসুবিধা ছিল না।

সরকার যদি শেভরন কোম্পানীর স্বার্থে মুনাফা যোগান দিতে গিয়ে মৌলভীবাজারের ২টি কূপের গ্যাস ক্রয় বাবদ ১,০৬১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা অথবা ৪টি কূপের গ্যাস ক্রয় বাবদ ২,১২৩ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা অথবা হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসেক্ষেত্রের গ্যাসক্রয় বাবদ ৩,০৩৩ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা বছরে ভর্তুকি দিতে পারে। তাহলে প্রতিবছর পেট্রোবাংলা যে উদ্বৃত্ত ফান্ড সরকারকে প্রদান করে, এর শতকরা ১০ ভাগ তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের মাধ্যমে গ্যাসক্ষে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেয়া সম্ভব নয় কেন ? গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নের নামে এ কোন শুভঙ্করের ফাঁকি! শেভরনের কাছ থেকে ২টি কূপের গ্যাস ক্রয় বাবদ ১,০৬১ কোটি ৭১ লক্ষ টাকার ভর্তুকী দিয়ে বাপেক্স ২৬টি অথবা ৪টি কূপের গ্যাস ক্রয় বাবদ ২,১২৩ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকার ভর্তুকী দিয়ে ৫৩টি গ্যাসকূপ অথবা হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসেক্ষেত্রের গ্যাসক্রয় বাবদ ৩,০৩৩ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা বছরে ভর্তুকি দিয়ে ৭৫টি গ্যাসকূপ প্রতি বছরে উন্নয়ন ও উত্তোলন করতে পারতো। তাহলে গ্যাসত্রেগুলো শেভরনসহ অন্যান্য বিদেশী কোম্পানীকে দেওয়া হলো কেন? অক্সিডেন্টাল কোম্পানীর ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ কোটি মার্কিন ডলার লাভঃ মাগুরছড়া থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেওয়ার সময় নব্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর উত্তরসূরী অক্সিডেন্টাল এলাকার প্রতিবাদকারী জনগণের সামনে বিছিয়ে দেয় ষড়যন্ত্রের জাল। কূপ এলাকায় কর্মরত শ্রমিকদের বলা হয় তারা ইচ্ছে করলে পরিত্যক্ত মালামাল কুড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে। নব্য ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির মহানুভব অনুমতি পেয়ে শত শত বছর ধরে শ্রম ও সম্পদ শোষণের ফলে পুরুষানুক্রমে দরিদ্র শ্রমিকরা হাতুড়ি শাবল নিয়ে পরিত্যক্ত মালামাল কুড়ানোর সংবাদ আশপাশে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় নেতৃত্বে জনগণের একটা অংশও এ মালামাল সংগ্রহে শরিক হয়ে যায়।

এ দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করার জন্যে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিল অক্সিডেন্টালের ষড়যন্ত্রের ভিডিও ক্যামেরা। কয়েকদিন ধরে অক্সিডেন্টালের ফেলে যাওয়া মালামাল সংগ্রহের উদ্দীপনা-কামড়া-কামড়ি চলে। প্রশাসনের আমলাতান্ত্রিক রাজনৈতিক কাঠামোতে জনগণের চিন্তা ও আচরণ অক্সিডেন্টালের স্থানান্তর কার্যক্রমকে করে তোলে প্রতিরোধহীন, নির্বিঘ্ন। লুটপাটেরও ভিডিও দেখিয়ে অক্সিডেন্টাল বীমাকৃত মালামালের বিপরীতে বীমা কোম্পানিকে লোকসানের হিসাব বাড়িয়ে দেখাতে সক্ষম হয়। বিস্ফোরণের কারণে অক্সিডেন্টাল কোম্পানি ক্ষতিপূরণ বাবদ লাভ করেছে ১০ কোটি মার্কিন ডলার।

যা বর্তমানে বাংলাদেশী মুদ্রায় ৭৩০ কোটি টাকা। মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ, ইউনোকলের এক ভূতুরে হিসাবঃ মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যাপারে এক হিসাব দিয়েছে মার্কিন কোম্পানি ইউনোকল। তারা বলছে, ক্ষতিপূরণ হিসাবে পেট্রোবাংলাকে ১৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। পেট্রোবাংলার তৎকালীন চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেছেন, 'পেট্রোবাংলা এ ধরনের কোনো টাকাই পায়নি। মাগুরছড়া গ্যাস কূপ বিস্ফোরণের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ, ক্ষতিপূরণ পাওয়া ও বিতরণের জন্য গঠিত সংসদীয় সাব-কমিটির জন্য পেট্রোবাংলা ইউনোকলের কাছে কাগজপত্র চাইলে তারা এব্যাপারে যে কাগজপত্র সরবরাহ করেছে, তাতেই ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়।

পেট্রোবাংলা যথারীতি সরবরাহকৃত কাগজপত্র সাব-কমিটির কাছে দিলে বিষয়টি সর্ব প্রথম কমিটির নজরে পড়ে। সাব কমিটি বলেছে, ইউনোকলের দেয়া এ টাকা গেল কোথায়? সাব-কমিটি ইউনোকলের কাগজপত্রে মাগুরছড়ার ব্যাপারে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ১৭৪ কোটি ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১১৫ টাকা পরিশোধের তথ্য পেয়েছে। কাগজপত্রের আরেক স্থানে ২০০০ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ৩৩২ কোটি ৩২ লাখ ৮৮ হাজার ৯০০ টাকা প্রদানের কথা উল্লেখ আছে। সংসদীয় সাব-কমিটি ইউনোকলের তিপূরণ প্রদানের বিষয়টিকে 'বিভ্রান্তিকর' বলে অভিহিত করেছে। অত্যন্ত গোপনে আমলাদের সহযোগিতায় অক্সিডেন্টাল চূড়ান্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে ইউনোকলের কাছে ১২, ১৩, ১৪ নং গ্যাস ব্লকের মালিকানা '৯৮ সালে বিক্রি করে আরো কয়েক হাজার কোটি মার্কিন ডলার লাভ করে।

অক্সিডেন্টালের মালিকানাধীন গ্যাসক্ষেত্র লুণ্ঠনের ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত ও প্রচারিত হয় অক্সিডেন্টালের উন্নত ও সভ্য দেশের প্রচার মাধ্যমে । বাংলাদেশের সংবাদপত্রেও সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হয় অক্সিডেন্টালের মালামাল লুটপাটের। ১৮৭২ সালের চুক্তি আইন অনুযায়ী জাতীয়স্বার্থ বিরোধী সকল 'পিএসসি' চুক্তি বাতিল করা সম্ভবঃ দেশের জনগণের ও জাতীয়স্বার্থ রক্ষায় জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমান সরকারকে এ ব্যাপারে সজাগ হতে হবে। বর্তমান সরকারকে বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে।

দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা প্রজাতন্ত্রের তথা জনগণের সম্পত্তি। সংবিধানের ১৪৩ (১)নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- 'ক. বাংলাদেশের যে কোনো ভূমির অন্তঃস্থ সব খনিজ ও অন্যান্য মূল্যসম্পন্ন সামগ্রী; খ. বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জলসীমার অন্তর্বর্তী মহাসাগরের অন্তঃস্থ কিংবা বাংলাদেশের মহীসোপানের উপরিস্থ মহাসাগরের অন্তঃস্থ সকল ভূমি, খনিজ ও অন্যান্য মূল্যসম্পন্ন সামগ্রী; ...', প্রজাতন্ত্রের সম্পত্তি- প্রকৃত অর্থে জনগণ এর মালিক। কাজেই তথাকথিত রয়ালটির নামে জনগণের সম্পত্তি কোনো বিদেশি কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে গ্যাস ও কয়লা বা গ্যাস-কয়লাজাত কোনো পদার্থ বিদেশে রফতানি করা যাবে না। যদি করা হয়, তবে জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

অতীতের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী বিভিন্ন মহল জ্বালানি খাতের প্রস্তাবগুলোতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থির সময় বেছে নেয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০০১ সালে গ্যাস রফতানি প্রস্তাব, একই বছরে আগে আবিস্কৃত ও কিছুকাল উৎপাদনরত টেংরাটিলা-ছাতক গ্যাসক্ষেত্র, ২০০৫ সালে টাটার বিতর্কিত বিনিয়োগ প্রস্তাব এবং এশিয়া এনার্জি কোম্পানির ফুলবাড়ী কয়লাখনি প্রস্তাবগুলো। এগুলো তো নেহাত কাকতালীয় ব্যাপার না। হিসাব করা ঝুঁকি দেশের জন্য। বিগত সরকার কি একবারও ভেবেছিল, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশে জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতা কি চরম আকার ধারণ করতে পারে? একটা কথা সাম্রাজ্যবাদী ও বহুজাতিক কোম্পানীর তথাকথিত বিনিয়োগ প্রস্তাবকারীরা ভালোভাবেই প্রচার করে থাকে যে, যেনতেন প্রকারে একটি চুক্তি হয়ে গেলেই- সম্পাদিত চুক্তির শর্ত যতই দেশের মানুষের স্বার্থবিরোধী হোক না কেন তা নাকি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মেনে নিতে সরকার বাধ্য থাকবে।

সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমানও ফুলবাড়ী কয়লা খনি সংক্রান্ত এশিয়া এনার্জির সঙ্গে চুক্তিকে দেশের... স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়েও চুক্তি বাতিল করা যাবে না বলে বক্তব্য দিয়েছিলেন! আসলে দেশের স্বার্থবিরোধী হলে চুক্তি বাতিল করা যাবে না কথাটা ঠিক নয়। কারণ ১৮৭২ সনের চুক্তি আইনে চুক্তির সংজ্ঞা, চুক্তি গঠন বা সম্পাদনে অত্যাবশ্যকীয় যেসব উপাদানের কথা বলা হয়েছে, বিদেশী কোম্পানীগুলো সেইসবের অনুসরণ করতে দেয় নি বলে সম্পাদিত চুক্তিই তার প্রমাণ। Under Section 2 (h) of the Contract Act, 1872, “An agreement enforceable by Law is a Contract”. According to Sir Salmond, “A Contract is an agreement creating and defining obligations between the parties”. Sir Frederic Pullock defines, “Every agreement and promise enforceable at Law is a Contract.” According to Sir Anson, “A Contract is an agreement enforceable at Law made between two or more persons by which rights are acquired by one or more to act or forbearance on the part of the other.” Essential elements necessary for the formation of a valid Contract: “1. Offer and Acceptance, 2. Agreement, 3. Legal Relationship, 4. Lawful Consideration, 5. Capacity to Contract, 6. Legality of the Object, 7. Free Consent, 8. Certainty, 9. Possibility of Performance, 10. Must not be in abuse of Legal Process, 11. Contract not expressly declared void b।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.