অবতারণিকা
প্রায় সকল অফিসের বিলিং সেকশনরে দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে অপরাপর কর্মকর্তা বা কর্মচারীরা প্রায়শই উষ্মা প্রকাশ করে থাকে। কিন্তু , আমার অফিসের ‘আভ্যন্তরীন বিল’ সেকশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিটি ব্যতিক্রম। তিনি সৎ-কর্মঠো-সময়নিষ্ঠই শুধু নন, পরহেজগার- খোদাভীরুও বটে। কেউ কোন বিল নিয়ে গেলে তিনি তৎক্ষনাত সামনে সামনে কাজটি করে দেন এবং কাজটি করতে করতে কৌশলে ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব টি মুখে মুখে চালিয়ে জান। তার সাথে আমার সাম্প্রতিক কথোপকথন।
ঃ বিবাহ সাদির শুভকর্ম টি কি সম্পূর্ন হয়েছে?
ঃ সুবাহানাল্লাহ। সন্তানাদি?
ঃ দুই টি মেয়ে।
ঃ মাসাল্লাহ। নবী করিম (সাঃ) এর তো তিন মেয়ে ছিল। মেয়ের বাবা হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
ঢাকায় কি একা একা থাকা হয়?
ঃ না। বাবা-মার সাথে স্ত্রী-মেয়েদের নিয়ে ।
ঃ আলহামদুলিল্লাহ। পিতা-মাতার স্নেহের ছায়ায় থাকা তো আল্লাহর বড় নিয়ামতের বিষয়। তা কোথায় থাকা হয়?
ঃ কাকরাইল।
ঃ তাহলে নিশ্চয়ই নিয়মিত কাকরাইল তবলিগ মসজিদের সময় দেওয়া হয়?
ঃ জি না। কখনও যাওয়া হয়ে উঠে নি।
ঃ না ,না; এটা ভাল কথা নয়। এত কাছে থেকে দীনশিক্ষা নেয়ার এত উত্তম সুযোগ হেলায় হারাবেন না।
নবীজির শিক্ষাঃ
শিশুপাঠে নবীজি (সাঃ) জীবনের বহুল পাঠিত একটা কাহিনী প্রায়ই মনে পরে।
নবীজি (সাঃ) প্রত্যহ ভোরে যে পথে নামায আদায়ের জন্য যাতায়ত করতেন, সে পথে এক দুষ্ট বেদুঈন রমনী কাঁটা পুতে রাখতো , যাতে নবী জি (সাঃ) নামায আদায়ে বাধা পরে। নবীজি কাঁটার আঘাতে জরজড়িত হয়েও পথ হতে নিজ হাতে একে একে সে কাঁটা তুলে ফেলে পথ পরিস্কার করে রাখতেন যেন অন্য কোন পথচারী আঘাত না পায়। এ কাহিনী সকলের জানা তাই বাকি টুকু আর বললাম না।
তবলিগী শিক্ষা ঃ
বিকালে ফিরবার সময় অফিসের গাড়ি মৎস ভবনের মোড়ে নামিয়ে দিয়ে যায়। বাকি পথ টুকু রমনা পার্কের পাশের ফুটপাত ধরে হেঁটে বাসায় ফিরি।
রাস্তাটি ভিআইপি রোড বিধায় শীত-গ্রীস্ম , রোদ বৃষ্টি কিংবা কান্তি-শ্রান্তির মাঝেও পায়ে হেঁটে ফেরা ছাড়া কোন উপায় থাকে না। এত টুকু পথ হেঁটে ফিরতে কষ্ট তেমন একটা হয় না; বরং শেষ বিকালে গাছের ছায়া দিয়ে হেঁটে আসতে ভালোই লাগে। কিছুটা বিড়ম্বিত হই কাকরাইল তবলিগ মসজিদের কাছাকাছি এসে। বিশেষ করে প্রতি বৃহস্পতিবার বিড়ম্বনাটা চরম বিরক্তিতে পৌছে।
মসজিদের সীমানা প্রাচীরের পাশে সংকীর্ণ ফুটপাতে ( তিন-সাড়ে তিন ফুট প্রস্থ) রাস্তায় নানা রকম পসরা সাজিয়ে রীতি মত বাজার বসে যায়।
ক্রেতারা হচ্ছেন দীনশিক্ষা নিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে আসা খোদ ভীরু মানুষ । সংকীর্ণ ফুটপাতে ক্রেতা বিক্রেতার ভিড় ঠেলে অগ্রসর হতে ব্যর্থ হয়ে , বাধ্য হয়ে ব্যস্ত ভিআইপি রোডে নামা ছাড়া বিকল্প থাকে না।
ইমাম বোখারী (রঃ) এর শিক্ষা ঃ
হযরত ইমাম বোখারী (রঃ) এর অক্লান্ত পরিশ্রমে সংকলিত হয়, সবচেয়ে প্রামাণ্য হাদিস সংকলন গ্রন্থ ‘বুখারী শরিফ’। হাদিস সংকলনের বিশুদ্ধতা রক্ষায় ইমাম বোখারী (রঃ) এর প্রয়াস সংক্রান্ত নজির পাঠকরে জন্য উপস্থাপন করতে চাই।
বোখারী (রঃ) সংবাদ পেলেন যে , এক দূরবর্তী প্রত্যন্ত অঞ্চলে 'হাবিবুল্লাহ’ নামক (নামটি আমার কাল্পনিক) এক ব্যক্তির একটা হাদিস জানা আছে।
বোখারী (রঃ) অনেক ক্লেশ স্বীকার করে উক্ত ব্যক্তির গ্রামে পৌছালেন। গ্রামে প্রবেশ করে দেখলেন , এক ব্যক্তি তার গাধা কে খাবার খাওবার শূণ্য ঝাঁকাটি দেখিয়ে তার গাধাটিকে কাছে আনার চেষ্টা করছে। “আয়, আয় সোনা। দেখ তোর জন্য কত মজার ছোলা এনেছি। খেয়ে যা বাচা, খেয়ে যা।
” বোখারী (রঃ) কে দেখে সে বলল , ‘কাকে খুজছেন?’ তিনি উত্তর বললেন“আমি ‘হাবিবুল্লাহ’ নামক এক ব্যক্তি কে অনুসন্ধান করছি। ” লোকটি উত্তর বলল,“ আমিই ‘হাবিবুল্লাহ’। কি প্রয়োজন বলুন তো?” বোখারী (রঃ) বলেন,“ তিনি যদি আপনি হন, তবে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। ”বোখারী (রঃ) তাঁর নিজ স্থানে হাদিসটি সংগ্রহ না করে , এমন কি না শুনেই ফিরে এলেন।
উপসংহারঃ
হযরত ইমাম বোখারী (রঃ) বিবেচনা করেছিলেন, যে ব্যক্তি তার অন্ন সংস্থানকারী গাধার সাথে শূণ্য খাবার পাত্র দেখিয়ে প্রতারনা করতে পারে, সে নির্দ্বিধায় একটি বিকৃত হাদিসকে সহি বলে চালিয়ে দিতে পারে।
একটি সহি হাদিস হারিয়ে যাওয়া চেয়ে অনেক বেশি ভয়ংকর একটি বিকৃত হাদিস সংকলিত হওয়া।
জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে ‘নবীজির যে শিক্ষা’ গৃহিত ও স্বীকৃত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে, সে শিক্ষা অবহেলা করে ‘দীনশিক্ষা’ প্রচারকারী কাকরাইল তবলিগ মসজিদের লৌহ ফটক অতিক্রম করে ভিতরে প্রবেশের ইচ্ছাশক্তি আমার মত অনেকের হয়তো কাজ করে না। কারণ মনে শুরুতেই একটা বিরাট প্রশ্নবোধক চিহ্ন জেগে উঠে পার্শ্ববর্তী রাস্তা টি অতিক্রম করতে করতে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।