মানুষে মানুষে সমানাধিকারে বিশ্বাস করি
গত ২৫ মে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানার কারণে সাতক্ষীরা জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক প্রাণহানি ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক পরিসংখ্যানে সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুরা ইউনিয়ন সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ বলে প্রতীয়মান হয়। তীব্র জলোচ্ছ্বাসের ফলে এখানে ব্যাপক প্রানহানি, কাচা বাড়িঘর সম্পূর্ণরুপে ধ্বিস্ত, গবাদি পশুর মৃত্যু এবং মৎস্য ঘের প্লাবিত হওয়ায় এখানকার অধিবাসীদের জীবনে নেমে এসেছে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট। এতদসত্বেও ২৬ তাং সকাল থেকে আবহাওয়া পরিপূর্ণরুপে অনুকূল থাকার পরও সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশ মোতাবেক আক্রান্ত বন্দি মানুয়ের মাঝে তাৎক্ষণিক জরুরী ত্রাণ সরবরাহ না করে স্থানীয় প্রশাসন দুর্গত এলাকায় পানিবন্দী মানুষের মাঝে সময়মত জরুরী ত্রাণ পৌছে দিতে অস্বাভাবিক কালক্ষেপন করে। ফলশ্র“তিতে অসংখ্য অসহায় পানিবন্দী নারী-পুরুষ ও শিশু এসব এলাকায় ২৪ ঘন্টারও অধিক সময় সম্পূর্ণ না খেয়ে এবং কোন প্রকার সুপেয় পানি না পেয়ে এক অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়।
সরেজমিনে এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে ২৬ মে দুপুর ১টা পর্যন্ত সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ গাবুরা ইউনিয়নের কোথাও কোন প্রকার সরকারি ত্রাণ পৌছে নি বা সরকারের পক্ষ থেকে কেউ ঐসব দূর্গত মানুষদের পাশে গিয়ে দাড়াননি। যার সংবাদ ২৭ মে একাধিক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ পেয়েছে। একই সাথে ইন্টারনেটের
http://www.youtube.com/watch?v=gnVcbZ620vk
ঠিকানায় পাওয়া গাবুরা ইউপি চেয়ারম্যান, শফিউল আযম লেনিনের ভিডিও সাক্ষাতকারে দেখা যাচ্ছে ২৬ মে দুপুর ১২টার দিকে এলাকার মানুষ বিভিন্ন জায়গা থেকে জড়ো করা লাশ নিয়ে দাড়িয়ে আছে কিন্তু তখনও কর্তৃপক্ষ তাদের পাশে যায়নি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট নির্দেশ এবং খাদ্য ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর নিদের্শনা সত্ত্বেও সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে সেখানে কোন প্রকার ত্রাণ সহযোগিতা বা উদ্ধার তৎপরতা না চালানোয় বিবেকবান মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে যে, সাতক্ষীরা জেলা শহর থেকে সড়ক ও নৌপথ মিলিয়ে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ গাবুরা এলাকার দূরত্ব কোন মতেই গত ২৬ মের আবহাওয়ায় আড়াই ঘন্টার বেশি নয় এবং দায়িত্বশীল সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা নিজেরা সেখানে গিয়ে তার প্রমাণ পেয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হয়েছে যে, ভোর থেকে তাদের উদ্যোগে দূর্যোগ কবলিত এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চলছে।
কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে কাফনের কাপড়ের অভাবে মানুষ দুপুর পর্যন্ত লাশ নিয়ে বসে আছে কিন্তু তখনও তারা সংশ্লিষ্ট কোন সরকারি প্রশাসনের চেহারা তখনও পর্যন্ত দেখেননি। প্রশ্ন হচ্ছে দেশের দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত লক্ষ লক্ষ মানুষের অসহায়ত্বের প্রতি এমন ন্যাক্কারজনক ঔদাসীন্য কি অমানবিক নয়? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কি উচিৎ ছিলনা আবহাওয়া শান্ত হওয়ার সাথে সাথে ২৬ মে সকালের মধ্যে এই মানবিক বিপর্যয় কবলিত মানুষের পাশে দাড়ানো? কেন বুড়িগোয়ালিনী বাজার থেকে স্পীডবোডে মাত্র বিশ মিনিট সময় লাগে এমন একটি দূর্গত এলাকায় আবহাওয়া ও নদী শান্ত থাকা সত্বেও নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ২৪ ঘন্টার বেশি সময় না খেয়ে থাকতে হবে? বর্তমান সরকার একটি গণতান্ত্রিক সরকার যারা জনগণের প্রতি প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। সরকার প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করে অসহায় মানুষের জীবন রক্ষায় ঔদাসীন্য দেখানোর যে অভিযোগ স্থানীয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে উঠেছে সে বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বক্তব্য সাধারণ মানুষ দাবি করতেই পারে। একই সাথে দুর্যোগ কবলিত সাতক্ষীরার সকল ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণের খাদ্য, চিকিৎসা, পূণর্বাসন এবং সুপেয় পানির প্রাপ্ততা নিশ্চিত করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।