ইমরোজ
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পেছনে নজরুলের অবদান অনেক বেশি। সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বস্তুত ১৯৪৭ সালে পরাধীন অবস্থায় রইল দুই বাংলা। একদল ইন্ডিয়ার হাতে আর আরেকদল পাকিস্তানের হাতে। ইতিহাস ঘাটলে দেখতে পাবেন, বাংলা চিরদিনই স্বাধীন ছিল।
কোন রাজা-মহারাজা, পরমশক্তিশালী সম্রাটও বাংলাকে পরাধীন রাখতে পারেনি। সেই বাংলা কীভাবে স্বাধীন না হয়ে থাকে?
সেটাই হলো ১৯৭১ সালে। ১৯৪১ সালের পরে আমরা কবি কাজী নজরুল হারিয়েছিলাম। কিন্তু অবাক হলেও সত্য তাঁর লেখা গান কবিতা বাঙ্গালীর মর্মে মর্মে বাজতে থাকে।
বস্তুত নজরুল বাংলার মানুষের ভেতর দাবানল জ্বালিয়ে গেছেন সেই তখনই।
তোরা সব জয়ধ্বনি কর,
ঐ নতুনের কেতন ওড়ে কালবোশাখী ঝড়,
তোরা সব জয়ধ্বনি কর,
আসছে এবার অনাগত,
প্রলয় নেশায় নিত্য পাগল,
সিন্ধু পাড়ের সিংহদ্বারে ধমক এনে ভাঙ্গল আগোল।
মৃত্যু গহীন অন্ধকূপে,
মহাকালের চন্ডরূপে,
ধুম্রধূপে,
বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর,
ওরে ও হাসছে ভয়ংকর, তোরা সব জয়ধ্বনি কর।
গানের কথায় ও সুরে, বাঙ্গালী শিখেছে তার নিজের পরিচয়। নিজে। ।
স্পর্ধা ও দুঃসাহস। সবরকম বন্দীত্ব থেকে বাঁধনমুক্ত হয়ে সারা পৃথিবীর বুকে শক্তিশালী একটি জাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার দৃপ্ত প্রয়াস।
নজরুল চর্চা একেক বয়সে একেক রকম। আমি যেমন বিদ্রোহের মন্ত্রে পরে পরে বিদ্রোহী কবিতার পরতে পরতে খুজে ফিরছি বিপ্লব, আবার প্রেমিক নজরুল আমাকে আন্দোলিত করছে, ভালোবাসার নতুন সব ডাইমেনসনে। এতটাই ভার্সেটাইল একজন লেখক তিনি।
কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট!
কী করে ঘরে আমাকে আটকে রাখবে কেউ?
এই বয়সে এসে, যখনই নজরুলের লেখা পড়তে বসি, আমাকে অবাক করে দেয়, তার অসীম ক্ষমতা। সেই ক্ষমতা পাঠককে আটকে রাখে, ধরে রাখে এক নতুন দিগন্তের পথের পাড়ে। এক আগামীর সম্ভাবনায়। নজরুল কোনদিন কী পুরান হবে? পারবে কেউ তাকে ছুতে? সম্ভব নয়।
আমি দুর্বার আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার,
আমি অনিয়ম উশৃঙ্খল,
আমি দলে যাই যত নিয়ম কানুন শৃংখল।
কোথায় নজরুলের শেষ?
আমি বিষ্ণুবক্ষ হতে ছিনিয়া আনিব যুগলকন্যা
আমি ভৃগু, ভগবান বুকে একে দেব পদচিহ্ন!
সারাক্ষণ মাথার ভেতর ঘুরপাক খায় এই সকল বিদ্রোহ মন্ত্রণা। আমি ঠিক থাকি কী করে। নিজেকে যখন দুর্বার মনে হয় তখন কী আর নিয়ন্ত্রণের কোন প্রশ্ন থাকে?
যা বলছিলাম। বাংলার মানুষেরা এইসকল চর্চা করে আসছে বহু বহু বছর। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তাদেরই শেষ আশ্রয়স্থল।
কোন জাতির এহেন আত্মিক শক্তি আছে? না ভারতের না পাকিস্থানের?
নেই, তাই যাবতীয় বিপ্লবে বাঙ্গালী উৎকন্ঠিত, যেন এক দাবানো আগ্নেয়গিরি। সেই আগ্নেয়গিরির সাথে যথাসম্ভব ভদ্র আচরণ করাই উচিৎ। আগ্নেয়গিরিকে উথলে দিলে কী হয়? বাঙ্গালী স্বাধীন হয়ে যায়, বার বার।
এই ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিকে পাকিস্তানিরা জ্বালিয়ে দেখতে চেয়েছিল। ফলস্রুতিতে আমরা নজরুল ব্যবহার করলাম অস্ত্র হিসেবে, ট্রাকে ট্রাকে গান বাজতে থাকল, নজরুলের বিপ্লব হতে শুরু করল ঘরে ঘরে, আন্দোলিত হতে থাকল, প্রতিটি জোয়ান, প্রতিটি তরুণ।
আর কে আটকে রাখে এই দেশের স্বাধীনতা...
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে,
মোর বুক হাসে, মোর মুখ হাসে,
টগবগিয়ে খুন হাসে,
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।