আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফিরে দেখা আঁতুর ঘর/১১



সন ১৯৮৭ । ইতিমধ্যে আমার বয়স হয়ে গেছে ঢের । আশির দশকটা আমার জীবনে অতীব ঘটনাবহুল । দৃশ্যের পর দৃশ্যের বদল । সব দৃশ্যেই সারি সারি মানুষ ।

মানুষের স্মৃতি । তাল মিলাতে কষ্ট হচ্ছিলো । ইতিমধ্যে আমার কিছু পরিবর্তন ঘটে গেছে । সেই সুবাদে ঘর সংসার নিয়ে পুরোপুরি মধ্যবিত্তের এক ঘেরাটোপ বানিয়ে ফেলেছি । মনে মনে সেখান থেকে আমি কামান দাগি ।

মনে মনে হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করি । মনে মনে বস্তুকে পৃথকরূপে দেখি । হাসি পায় । কান্না পায় । রাতে স্বপ্ন দেখি আমার বালক বয়স ।

ঘুরে বেড়াচ্ছি শ্রীমন্তপুর গ্রামে । শ্রীমন্তপুর আমার জন্ম গ্রাম । ওখানে এখন ইচ্ছে করলেই যাওয়া যায়না । একথা কি কাউকে বলা যায়? না । সত্যি আর বলা যায়না ।

অনেক দিন মনে মনে লেখার পর সত্যি সত্যি এবার কাগজে লিখতে শুরু করেছি । ছাপছিও । সহলেখক এখন অনেক । পত্রিকা প্রকাশ হচ্ছে । শহরটাকে আমরা সবাই মিলে তা দিয়ে মাঝে মাঝে ঝাঁকুনি দিচ্ছি ।

অনেকেই বলে এটা সাহিত্য আন্দোলন । আসলে ওটা ছিলো হাংরি আন্দোলনের একটা রেশ । হাংরি লেখকরা আমাদের মাধ্যমে অনেকেই ছড়িয়ে পড়লেন শিলিগুড়ি তথা উত্তরবঙ্গে । আমার ঐ সময়ে সময়ের খুব অভাব । রুন্টু অনেকদিন আমাদের আড্ডায় গিয়েও আমাকে তার কথাটা বলতে পারেনি ।

রুন্টু আমাদের কবি বন্ধু সমীরণ ঘোষের ভাই । নাম মলয় ঘোষ । নাট্যকার এবং অভিনেতাও বটে । যেহেতু ভাই এবং বয়সে ছোট তাই সে আমাদের সামনে তখন সিগারেটও খেতোনা । মাঝে মাঝেই বলতো ' রাজাদা কাইল বাড়িত যাইয়াম' ।

ভাষাটা শুনে আমার ব্যস্ততার মাঝেও মনে হতো যদি জমিয়ে ওর সাথে এমন করে কিছুক্ষণ কথা বলতে পারতাম ! অবশ্য ইতিমধ্যেই জেনে গেছি যে সমীরণরা আমাদের দেশের বাড়ীরও কাছাকাছির মানুষ । তারাও নেত্রকোনার । গ্রামের নাম 'বেতাডি' । তারপর কখন থেকে যেন রুন্টুর আমাদের বাড়ী আসা শুরু হলো । সময়টা সকাল আট'টার পর ।

রুন্টু বেকার । কিন্তু আমার চাকরি আছে । তবু কোনো কোনো দিন সব সময় ভেঙে আমরা আমাদের অমূল্যবান কথা বার্তা গুলো চালিয়ে যেতে থাকি । শহরটা তখন নাটকের একটা জোয়ারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে । রুন্টুর খুব নাম তখন ।

কিন্তু ঐ যে বললাম বেকার । টাকা পয়সার অভাব । তবু খরচ চালানোর জন্য রুন্টু বাড়িতে একটা ছোট্ট গ্রীলের কারখানা দিয়েছে । মালিক কর্মচারী জোগানদার বলতে সবই একা সে । রুন্টু খুব রসিক ।

রসিকতা ছাড়া কোনো কথা বলা ওর ধাতে ছিলোনা । ও মাঝে মাঝেই প্রস্তাব দিত গ্রীল বানানোর । আমার বাড়িতে নাকি অনেক গ্রীল দরকার । সেফ্‌টি সিকিউরিটি এবং সৌন্দর্যের কারণে । আমি তখন দুস্থ কর্মচারী ।

নুন আনতে পান্তা ফুরায় । অনেক কসরৎ করে তাকে আমার নিবৃত্ত করতে হতো । এই রুন্টুই একদিন আমার ভেতরে একটা আগুন জ্বালিয়ে দিলো । প্রস্তাব করলো যে বাংলাদেশ যেতে হবে । ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তার ।

আমাকে শুধু রাজি হতে হবে । আমি তৎক্ষণাৎ রাজি । কিন্তু যে মধ্যবিত্তের ঘেরাটোপ আমি বানিয়েছিলাম সেখান থেকেই আসতে লাগলো নানান বাধা । অবশ্য এইসকল নানাবিধ বাধা কাটাতে সময় লেগেছিলো মোট একটা বছর । ত্যাগ করতে হয়েছিলো শুধু আমার স্ত্রীর পাসপোর্টের আশা ।

কারণ তার পিতৃগৃহ থেকে এটার সায় মেলেনি । ফলে পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় তারা যা করার করে দিয়েছে যাতে পাসপোর্ট আর না হয় । কিন্তু ততদিনে আমরা যে আভ্যন্তরীণ জোয়ারে ভেসে পড়েছি তা আর রোধ করে সাধ্য কার । অর্থাৎ আজ হোক কাল হোক বাংলাদেশ আমরা যাচ্ছিই । (চলবে)


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.