আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সন্ধ্যা নদী, শ্যামা নামের মেয়েটি এবং পনেরটি দিন



একটানা পনের দিনের মত আদিব বাড়িতে ছিল। গ্রামে ওর সব চেযে বড় অভাব হচ্ছে বন্ধুত্বের। ওর গ্রাম, এমনকি পাশের গ্রাম তন্ন তন্ন খুজে একটা মন মত বন্ধু পেল না। তাই সবসময় একা একাই রাস্তায় আনমনে হাটহাটি করে। একা একা গুনগুন করে, পা চলে না, আবার চলে এমন করে হাটে।

কোন চঞ্চলতা ন্ই যেন ওর হাটাচলায়। সারাদিন তো হাটাহাটি করা যায় না, বা বাড়িতে শুয়েবসে কাটানো যায় না। তাই বিকাল বেলাটা কাটাত সন্ধ্যা নদীর পাড়ে পাড়ে। এটা একটা মজার বিষয়: শুনুন ওর নিজের মুখেই: বিকাল বেলাটা কাটাতাম বাড়ির পাশের সন্ধ্যা নদীর পাড়ে পাড়ে। তিনটার দিকে যেতাম আর সন্ধ্যা অবধি থাকতাম।

রোজই এরকম চলছিল। ঘর থেকে কেউ জিজ্ঞাসা করতও না তুই কোথায় যাও কি করিস। যাক, একদিন সন্ধ্যার পর পর ঘরে গেলাম। রাতের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে ঘরের বিদ্যুতের আলো সহ্য হ চ্ছিল না চোখে। বড় আপু আমাকে দেখেই হেসে দিল।

তুই ছিলি কই এতক্ষণ? আমার চোখে তখন ঘোর লেগে গেল। বললাম, এই একটু হাটাহাটি করছি মাত্র। কি করব একা একা। মেজ আপু এতক্ষণ টিভির দিকে তাকিয়ে ছিল। টিভি থেকে মুখ ফিরিয়ে আমার দিকে হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে বলল, তুই নাকি আজকাল বাকাতেরা হয়ে হাটছ? কি যা তা বলছ।

বাকা তেরা হয়ে হাটব কেন। সোজ হয়ে হাটি। সটান সোজা, আমি বললাম। আরে না না তুই একটু আকাবাকা হাটিছ, ঠিক এই নদীটার মতই। আপু থামত, ভাল লাগছে না, ন্যাকামি বাদ দাও।

রাত হয়েছে। ক্ষুধা লেগেছে। কি আছে তাড়াতাড়ি দাও। আগে খেয়ে নিই। তারপর যা বলার বল।

আপুরা দুইজনেই সঙ্গে সঙ্গে হেসে দিল। তোর কিছু ভাল লাগছে না, তাই না, ভাল ত না লাগারই কথা। মন কি উদাস উদাস করে। বড় আপু এক চিলতে হাসি মুখে নিযেই বলল। আমার তখন বিরক্তি ধরে গেছে।

খিটমিটি করেই বললাম, কি হইছে, তোমাদের বলত, আমার সঙ্গে এরকম করছো কেন? কি আর হবে। তোর নাকি ঘর থেকে নদী পর্যন্ত যেতে সাতশ আট আশি পা লাগছে। প্যান্টের সামনের দিকে ছেড়া ছিল। একটু খোড়ানো হাটার ভঙ্গিতে পায়ে ভাজ দিয়ে হাটছস। হাটার সময় উপর দিকে চোখ ছিল।

শেকড়ে পা লেগে ব্যাথা পেয়েছিস। তাই না। অবাক হলাম। তোমরা এসকল তথ্য কই পেয়েছ বল তো। এবার তাদের হাসির মাত্রাটা বেড়ে গেল।

এভাবে কয়েক দিন চলছিল। নদীর পাড়ে গিযে কি করতাম। ঘরে এসে দেখতাম তারা সবই বলে দিচ্ছে। ছোট বোনটা ইদানিং ওদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। ও একটু মাত্রাতিরিক্ত চেচামেচি করে আমাকে খেপানোর সমুহ সুযোগ নিয়েছে।

একদিন বড় আপু বলল, তুই আজকের জীবনান্দের কবিতা আবৃত্তি করছিস, হাজার বছর ধরে পথ হাটিতেছি.................. চালতা গাছটার ডালের উপরে বসে ছিলি। আমি শুনতাম কিছুই বলতাম না। কারণ রহস্য উদঘাটনে আমি সম্পূর্ণই ফেল করেছি। ঢাকায় আসার পাচদিন আগে ছোটবোনকে নিয়ে বাজারে গেলাম। বললাম, তোর কি কি লাগবে বলতো, আজ তোকে সবই কিনে দিব।

ওর পিছনে বেশ কিছু টাকা খরচ করলাম। পথে পথে আসতে বললাম, এখন বলতো তোরা আমাকে জ্বালাস কেন? এই সব তথ্য কোথা থেকে পাস? ও হাসল, তারপর হাত থেকে ওর হাত সরিয়ে সোজা ছুট লাগাল। এত কিছু দিয়ে ওর কাছ থেকে কথা আদায করতে পারব না। আজ যা হয় একটা করবই। দৌড়ে গিয়ে ওকে একটা মাঠের ভিতরে ধরলাম।

তারপর বললাম, না বলা পর্যণ্ত তোকে আমি ছাড়ছিনা। ও হাসল, বলল, তোমার মত বোকারাম আর কোথাও দেখিনি। এতদিনে তুমি জানতে পারলে না, ওই শ্যামাটা তোমাকে রোজ অনুসরণ করে। তুমি কি কি কর, কোথায় যাও, সব বড় আপুকে বলে দেয়। ওর কথা শুনে সত্যি টাসকী খেলাম।

মেয়েটা আচ্ছা ত্যাদড় তো। এভাবে কারও পিছু নেযা তো ভয়ঙ্কর অপরাধ। তারপর নদীর পারে আর গেলাম না। তবে মাঝে মাঝে মেযেটাকে দেখতাম আমাকে দেখলেই ভুরু ভাজ করে হাসে। ওর চাদমুখের হাসি দেখলে আমি অন্য জগতে চলে যেতাম।

যে জগতটা বাস্তবতায় অলীক ছাড়া আর কিছুই না। খুব ভাল মেয়ে বৈকি। মনে হয়, সন্ধ্যার পাড়ে আবার চলে যাই। কিন্তু জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে থার্ড ফাইনাল হবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।