মৃত্যুর সু-শীতল ছায়াতলেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। । । আমি খুবই সাধারন একজন।
গ্রাম বাংলার উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় শতকরা ৭৭ জন গ্রামে বাস করে।
আর এদেশে গ্রামের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী এদেশে গ্রামের সংখ্যা প্রায় ৯২ হাজার। গ্রাম বাংলার রূপ নিয়ে তাই কবির কন্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল-
“আমাদের গ্রাম খানি ছবির মতন,
মাঠির তলায় এর ছড়ানো রতন। ”
অনেকের ধারনা, পল্লীর সেই রূপ লাবণ্য হারাতে বসেছে তার নিজস্বতা। মানুষ কেবলি “ইটের পর ইট মাঝে মানুষ-কীট, নেইকো ভালবাসা নেইকো মায়া” এমনি কৃত্রিম সুখের অন্বেষণে অন্ধের মতো ধাবিত হচ্ছে শহর মুখি।
অথচ কৃষি নির্ভর এই দেশের উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়, যদি না গ্রাম বাংলার উন্নয়ন নিশ্চিত করা যায়। এক কথায় পল্লীর উন্নয়ন মানেই দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন। আর গ্রামহীন বাংলাদেশ পঙ্গু এবং তথ্য প্রযুক্তিহীন জীবন অন্ধ। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী গ্রামে বাস করে এটা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি সত্য হল,এই বৃহত্তর জনগোষ্টীর বৃহত্তর অংশই দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে।
গ্রামীন জনগন সারা বছরই নাম জানা,না জানা হাজারো রোগে ভুগতে থাকে।
এর মধ্যে অপুষ্টিজনিত রোগ গ্রামীন মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। গ্রামের প্রায় ৭৫% শিশু অপুষ্টির শিকার। ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়, নিউমোনিয়া সহ হাজারো রোগে গ্রামের মানুষ সারা বছরই জর্জরিত থাকে। এরকম রোগের শিকার হয়ে প্রতিনিয়ত অকাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে শত শত গ্রামবাসী। আর্ষেনিক সমস্যায় জর্জরিত গ্রামের অধিকাংশ মানুষ।
এইডস এর মতো মরন ব্যাধি ঘাতক রোগ সম্পর্কেও গ্রাম বাংলার মানুষ অজ্ঞ। যদিও উন্নত স্বাস্থ্য শক্তিশালী জাতি গঠনে অগ্রনি ভুমিকা রাখে, কিন্তু আজ গ্রামবাসীর স্বাস্থ্যরক্ষা মারাত্মক হুমকির মুখে বলা চলে।
গ্রাম বাংলার অনগ্রসরতার মূলে অশিক্ষা ও কুশিক্ষাকে দায়ী করা যায়। শিক্ষার নিম্নহার অনেক সময় সব অভাবকে ছাড়িয়ে যায়। এটা বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে প্রধান বাঁধা হিসেবে কাজ করে।
কৃষি ক্ষেত্রেও আমাদের গ্রামীন কৃষকরা যথেষ্ট পিঁছিয়ে। আধুনিক বিশ্বের কৃষি উন্নয়ন থেকে তারা সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন। কুঠির শিল্পায়ন, পল্লী বিদ্যুতায়ন, মৎস চাষ, বিভিন্ন প্রকার খামার স্থাপন ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদের গ্রামীন জীবন এখনো অনেকখানি পিঁছিয়ে এবং একটা অসম দূরত্ব বজায় রেখেই এগিয়ে চলছে তার আপন গতিতে। দেশের এবং দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে গ্রাম বাংলার উন্নয়ন নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। গ্রামীন জনগনের জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল পরিকল্পনার ভিত্তিতে পারিবারিক ও গ্রামীন উন্নয়নের বিকাশ সাধনই পল্লী উন্নয়নের সাম্প্রতিক ভাবনা হওয়া উচিৎ।
এতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিৎকরন।
আদিকাল থেকেই দেশের প্রাণকেন্দ্র খ্যাত “গ্রাম বাংলা” এর উন্নয়নকল্পে তথ্য প্রযুক্তি এক বিশাল ভূমিকা রাখতে পারে। পল্লী গ্রামে যে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার একেবারেই অনুপস্থিত তা কিন্তু নয়। আমাদের অধিকাংশ গ্রামের দিকে তাকালে দেখা যাবে যে প্রযুক্তির হাওয়া ইতোমধ্যেই বইতে শুরু করেছে। গ্রামের মানুষের কাছে পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের জনপ্রিয়তা তাই প্রমান করে।
বিদ্যুতায়নও কিন্তু সমান তালেই হচ্ছে। গত শতক নাকি চিহ্নিত হয়েছে প্রযুক্তির উন্নয়ন, প্রসার ও ব্যবহারের জন্য। তার বিষ্ময়কর প্রভাব কিন্তু গ্রামাঞ্চলেও পড়েছে। মোবাইল ফোনের বিস্তৃত ব্যবহার তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে। মোবাইলের ব্যবহার আজ গ্রামাঞ্চলের দুরত্বকে করেছে সীমিত এবং জীবনকে করেছে সহজ বোধ্য।
গ্রামীন জীবনের অচলায়তন ভাঙ্গতে মোবাইল ফোনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। এই মুটো ফোনের বদৌলতে কৃষকরা জেনে নিতে পারছে প্রতিদিনকার বাজারদর এবং প্রয়োজনীয় সব তথ্য। এই মোবাইলের মাধ্যমেই স্বাবলম্বী হচ্ছে গ্রামের অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষ। এক কথায় প্রযুক্তির আশির্বাদ এই মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হচ্ছে চাষাবাদে, ব্যবসা-বানিজ্যে, শিক্ষা ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্য সেবায়, দেশ বিদেশে থাকা আত্মীয় স্বজনদের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় এবং আরো নানা ভাবে দৈনন্দিন কাজে। তথ্য প্রযুক্তির এই আবিষ্কার গ্রামীন জীবনে এক অভূতপূর্ব সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে।
বিদ্যুতায়নের দিক দিয়েও আমাদের গ্রাম বাংলা আজ অনেকটা এগিয়েছে। যেখানে সরকারী বিদ্যুত পৌঁছায় নি, সেখানে ব্যবহৃত হচ্ছে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামবাসী এখন ২৪ ঘন্টা বিদ্যুতের সুবিদা ভোগ করছে। তাছাড়া এই সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করে এখন গ্রামের মানুষ বিভিন্ন ধরনের খামার, তাঁত শিল্প, মৃৎ শিল্প সহ ইত্যাদি উন্নয়ন মূলক কাজে সফলতার স্বাক্ষর রাখছে।
গ্রামের মানুষের কাছে এখন ইন্টারনেটও ধীরে ধীরে পরিচিতি লাভ করছে। অনেক গ্রামেই এখন গড়ে উঠছে সাইবার ক্যাফে সহ আরো অনেক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র যেখানে প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্মক ধারনা দেয়া হয়।
রেডিও, টেলিভিশনের সাথে সাথে বর্তমানে কম্পিউটারও গ্রামবাসির নিত্য ব্যবহারিক প্রয়োজনীয় যন্ত্রের তালিকায় স্থান করে।
যে সব গ্রামে দৈনিক পত্রিকার অস্থিত্ব কল্পনা করা যেত না, সে সব গ্রামেও এখন দৈনিক পত্রিকা পৌঁছায়। এর সাহায্যে খুব সহজে গ্রামের মানুষ জানতে পারছে বহির্বিশ্ব সম্পর্কে যা গ্রামীন উন্নয়নের ধারক ও বাহক। যাদের রেডিও, টেলিভিশন কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সামর্থ নেই, তারা অতি সহজে দৈনিক পত্রিকা থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে হয়তো নিজে পড়ে অথবা অন্যের কাছ থেকে শুনে।
প্রকৃতপক্ষে, প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা যেমন- শিক্ষা, চিকিৎসা,খাদ্য,বস্ত্র,বাসস্থান ইত্যাদি পূরনে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা অনস্বিকার্য, সেটা গ্রামে হউক কিংবা শহরে।
বর্তমান আধুনিক বিশ্ব পরিবারের সদস্য হতে হলে তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে সম্মক ধারনা থাকা আবশ্যিক।
তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষি ক্ষেত্রেও রাখতে পারে অসীম ভূমিকা। এর সাহায্যে কৃষকরা হতে পারে লাভবান। কৃষক মানেই যে গ্রামের অজ্ঞ, মুর্খ্যদের বুঝায় তা কিন্তু নয়। একজন শিক্ষিত কৃষকই পারে লাভজনক শষ্য উপহার দিতে।
শিক্ষাহীন জাতী মেরুদন্ডহীন মানুষের মত। আর প্রযুক্তিহীন শিক্ষা অন্ধ্য। স্বয়ংসম্পূর্ণ কৃষি ব্যবস্থার উপরেই নির্ভর করছে গ্রামীন উন্নয়ন তথা দেশের উন্নয়ন।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, গ্রাম বাংলাকে আধুনিকায়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে এবং বিশ্ব পরিবারের সদস্য হতে হলে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। কেননা, তথ্য ও প্রযুক্তি ছাড়া যেমন আধুনিকায়ন সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি গ্রাম বাংলার উন্নয়নও অসম্ভব।
অপর পক্ষে, গ্রামকে তুচ্ছ করে যারা শহর মুখি তাদের অবশ্যই গ্রামীন মূল্যবোধ বুঝতে হবে। মানুষকে সচেতন করে তুলতে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। প্রাকৃতিক সম্পদ এবং সোভামন্ডিত গ্রাম বাংলাকে বাঁচাতে আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। নিঃসন্দেহে বলা চলে, দেশের পঙ্গু অর্থনীতিকে সজীব ও জীবন্ত করতে হলে পল্লীগ্রামকে সবার আগে জীবন্ত করতে হবে। ড. লুৎফর রহমান যথার্থই বলেছেন-
“জাতিকে বড় করতে হলে পল্লীর মানুষকে সবার আগে জাগাতে হবে”।
একবিংশ শতাব্দীর প্রান্তি লগ্নে এসে গ্রাম আর শহরের পার্থক্য নির্ণয় না করে, তথ্য-প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামকে গড়ে তোলার প্রত্তয় নিয়ে সামনে এগিয়ে চলাই হোক আমাদের সবার লক্ষ্য। তাহলে কবির সাথে আমরাও আমন্ত্রণ জানাতে পারব-
“তুমি যাবে ভাই,
যাবে মোর সাথে,
আমাদের ছোট গাঁয়?”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।