কাগু ক্যান স্টার্ট অ্যা ফায়ার ইউজিং জাস্ট টু আইস কিউবস
ছোট বইনের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা চলতাছে । সিট পড়ছে সোহরাওয়ার্দী কলেজে । প্রথম পরীক্ষার দিন ফোন করলাম । পরীক্ষার খবর জিগানির আগেই বইনে চিল্লাইয়া উঠলো, " আমার লগে যাওনের লাইগা কারো ব্যবস্থা কৈরা দ্যান, আমি বাবার লগে যামুনা আর পরীক্ষা দিতে " । ঘটনা কিতা, খুইল্যা কৈতে কৈলাম ।
ঘটনা হৈল , প্রথম পরীক্ষা দিতে হলে গেছে, হাজার হাজার মানুষের মধ্যে , গেটের ভিতরে বইনরে দিয়া আইসা বাইরে থেকে আব্বাজান চিল্লাইয়া চিল্লাইয়া কৈতাছে, " এরে মুক্তু, হিইন্দি কিল্লাই যঅরি, ইমুই আয় ইমুই আয়, ইইন্দি ছাবাইত্যে খাবঅ " (ঐ মুক্তা , ঐদিকে যাইস না, এদিকে আয় এদিকে ছায়ার মইধ্যে দাঁড়া) । সকলের উৎসাহী দৃষ্টির বাণে জর্জরিত বইনে কয় আমি পরীক্ষাই দিতে যামু না , আপনে কাউরে ব্যবস্থা কৈরা দ্যান আমার লগে যাওনের লাইগা । অগত্যা দুএক জায়গায় ফোন কৈরা ব্যবস্থা কৈরা দিতে হৈল ।
আঞ্চলিক ভাষা নিয়া লজ্জা মোটামুটি সব দেশেই টুকটাক আছে । যদিও এইটা নিয়া হাসাহাসির পরিমাণে একটু কম-বেশি আছে ।
তবে আঞ্চলিক ভাষাগুলার সাথে প্রমাণ-ভাষার একটা যোগসূত্র তৈরী থাকলে, লোকেরও বুঝার সুবিধা হয়, আর সাথে সাথে হিউমিলিয়েশনের পরিমাণও বোধহয় একটু কমে । এই ধারণা থাইকা ফেনী-চৌদ্দগ্রাম অঞ্চলের ভাষার সাথে প্রমাণ বাংলার অনুবাদজাতীয় এই ব্যাকরণ প্রচেষ্টা ।
আলাদাভাবে অস্তিত্বশীল বৈলা ধৈরা নেয়া যায় এইরকম আঞ্চলিক ভাষাগুলার সাথে প্রমাণ বাংলার মোটামুটি তিনমাত্রার পার্থক্য থাকে ।
১ > কিছু মৌলিক শব্দ
২ > একই শব্দের পরিবর্তিত উচ্চারণ বা বিবর্তিত রুপ
৩> কিছু মৌলিক ব্যাকরণবিধি
নোয়াখাইল্যা ভাষার সাথে প্রমাণ বাংলার পার্থক্যের এই লেখাতে এই তিনটি মাত্রা থাইকা আলোচনা হৈবে ।
কেবলমাত্র আঞ্চলিক শব্দের উচ্চারণের জন্য এই লেখার কমন নিয়ম
১ : সকল একক 'চ' এর উচ্চারণ , সাইকেল শব্দের 'স' এর মত হবে ।
যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে সাধারণভাবে প্রমাণ বাংলার নিয়মেই অর্থাৎ বাচ্চা কাচ্চা সাচ্চা এসবের উচ্চারণের মতই হবে । বিশেষ ক্ষেত্রে উল্লেখ করে দেয়া হবে ।
২ : বর্ণ বা সিলেবলের পরে হাইফেন (-) এর উচ্চারণ হবে : আগের সিলেবলের , স্বরবর্ণের দীর্ঘায়িত উচ্চারণ, আগের সিলেবলে স্বরবর্ণ না থাকলে দীর্ঘায়িত 'অ' এর উচ্চারণ হবে ।
যেমন "বা-ইলা " (মসুর) শব্দের উচ্চারণ হবে বা+ আ + ইলা (ব এর পরে দীর্ঘ আ)
"ব-লা" (অলক্ষি, বান্দর এইজাতীয় গালি অর্থে) শব্দের উচ্চারণ হবে ব+অ+লা (ব এর পরে দীর্ঘ অ)
১ : মৌলিক কিছু শব্দ : নোয়াখাইল্যা ভাষায় কিছু মৌলিক শব্দ আছে যেইগুলা বাংলাদেশের অন্য অঞ্চলে কিংবা প্রমাণ-বাংলায় নাই বা সাধারণত ব্যবহার করা হয় না । এইধরণের শব্দগুলার একটা আংশিক অভিধান নিচে যোগ করা হৈলো ।
আঁনতা > খলুই / স্রোতের মুখের ছোট মাছ ধরার একটা খাঁচার মত যন্ত্র ।
বরগ > কলাপাতা
দোচ্ছা > টুকরিজাতীয় ধান বা চাল রাখার জিনিস
কোরা > টুকরির চাইতে কয়েকগুন বড় মূলত ধান রাখার শীতলপাটি যেই উপকরণে বানানো হয় সেই উপকরণে তৈরী পাত্র
বিচইন > হাতপাখা
নারা > বিচালি / ধান কাটার পরে খেতে ধানগাছের যেই অংশটুকু অবশিষ্ট থাকে সেই অংশ
দাইরগা > জ্বালানি কাঠ
চইচ্চা > ডোবা / ছোটপুকুর
বিডা > সবজি চাষের জমি (ধানক্ষেতের চাইতে তুলনামূলক উঁচু) (নোট : ঘরভিটির ভিটি শব্দের পরিবর্তিত রুপ, তবে ভিন্নার্থে ব্যবহার হয় বলে মৌলিক শব্দের তালিকায়)
উন্নাল > ঘরের চাল থেকে বৃষ্টির পানি যেইখানে পড়ে সেই জায়গা
মাইরা > ডাঁটাশাক
ডুইল্যাহাগ > লালশাক (নোট : হাগ শব্দটা শাঁক শব্দের বিবর্তিত রুপ)
লোয়াছঁই > বরবটি
গঁ-ই > লাঠির মধ্যে গোবর মাখাইয়া সেইটারে শুকাইয়া জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করার জন্য তৈরী দন্ড
বত্তন > বাসন
বিচা > পুরুষের যৌনাঙ্গ
হেডা, হাউয়া > নারীর যৌনাঙ্গ
হাঙ্গডি > প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পরে বিবাহ করা দ্বিতীয় স্ত্রী (নোট : একইসময়ে একাধিক স্ত্রী থাকলে, তারা পরস্পরের সতীন হিসাবেই বলা হয়)
রাঁ-ই > বিধবা
হেত্তিনি > নোংরা মানুষ
কাচরা > ময়লা
হালা > খুঁটি (বড়)
রাব > ঝোলাগুড় (খেজুর রস জ্বাল দিয়ে ঘন করে তৈরী করা কালো রঙের ভিসকাস তরল)
আলবা > ঘন তরল (নোট : আতপ থেকে বিবর্তিত আলবা অন্য অর্থে)
ড্যাগা > কচি
ক-ইয়া > পেঁপে
মুচি > কাঁঠালের অনিষিক্ত ফল
চুম্মা > বড়শির ফাৎনা
চিন > খড়ের স্তুপ
উগুইর > সাধারণত ধানের গোলা রাখার জন্য তৈরী করা নিচু ধরণের মাচা
বাইনদুয়ার > পিছনের দরজা (নোট : দুয়ার শব্দটা অপরিবর্তিত)
আগদুয়ার > সামনের দরজা
হান্দি > চিপা, দুইঘরের মাঝের গলি
ডেলা > ঘরের বেড়ার বাইরের ঘরভিটির উঁচু বর্ধিত অংশ
বেতরঙি মাছ > ভুতুম মাছ
মাল্তাই আম > ফজলি আম
বডইন > শীতলপাটি
দাঁইয়া মাছ > মলাঢেলা জাতীয় ছোট মাছ
ডি- কোম্বা > খেতে উৎপাদিত জালিকুমড়া (নোট : কোম্বা শব্দটা কুমড়ার পরিবর্তিত রুপ)
কুঁইয়ুঁর > আখ, গেন্ডারি
কাইড্যা হিম্বা > লাল পিঁপড়া (নোট : হিম্বা শব্দটা পিঁপড়া শব্দের পরিবর্তিতরুপ । কাইড্যা শব্দটা লালের সমার্থক শব্দ না । কেবলমাত্র পিঁপড়ার ক্ষেত্রেই এই ব্যবহার)
এলইচা হাগ > হেঁচিশাক
দু-নি > ফেন সরানোর জন্য ব্যবহৃত মাটির পাত্র
চঁ-ই > বড় পিঁড়ি (চৌকি থেকে বিবর্তিত চঅই, চৌকি অর্থেই ব্যবহৃত হয়)
হুরা > চাল মাপার জন্য ব্যবহৃত ছোট পাত্র (হুরা আবার ওজনের একক হিসাবেও ব্যবহৃত হয়, এক হুরা = মোটামুটি ২৫০ গ্রাম)
বইড্যা > ঢাকনা
চিবা > কাঠি
চটকা চিবা > সরু কাঠি (সাধারণত বাঁশগাছের ডালপালা)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।