নোয়াখালী। চারটি বর্ণের একটি নাম। একটি ইতিহাস। একটি বিস্ময়। অন্য জেলার হিংসুটে মানুষদের কাছে গা জ্বালার কারণও বটে।
বিরোধীরা যতই সমালোচনা করুক আর হিংসা করুক না কেন; নোয়াখালী তার স্ব-মহিমায়, স্ব-রূপে ভাস্বর এবং উদ্ভাসিত। আকাশে যে রকম তারকা জ্বলে, দিনে যে রকম সূর্য আলো দেয় সে রকম নোয়াখালীও প্রতিনিয়তই তার আলোর ছটা দিয়ে নোয়াখালীর প্রতিটি জনপদ থেকে পুরো বাংলাদেশ পর্যন্ত আলো বিতরণ করে চলছে। হাসি মুখে কথা বলা, পরিচিতি হওয়া, এলাকার মানুষদেরকে সহযোগিতা করা এগুলো নোয়াখালীর মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব। আর এই জন্যই নোয়াখালী জেলার মানুষ অনেক জেলার মানুষদের নিকট গাত্রদাহের করণ। যেখানে অন্য জেলার মানুষরা তাদের জেলার কোন মানুষকে ঢাকা শহরে কিংবা কোথায়ও দেখলে নিজের পরিচয় দিতে চায় না; সেখানে নোয়াখালীর মানুষ তার জেলার মানুষদের সাথে নিজ থেকে উদ্যোগী হয়ে কথা বলে, চা-নাস্তা খাওয়ায়, পারলে একটা চাকরিরও ব্যবস্থা করে দেয়।
আর প্রতিবেশীকে সহযোগিতা করার কথা তো আমাদের প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন।
অন্য জেলার মানুষ আর নোয়াখালী জেলার মানুষদের ভেতর বড় একটা পার্থক্য এই যে, নোয়াখালী জেলার মানুষ প্রতিবেশীর হক আদায় করছে অন্য জেলার মানুষ প্রতিবেশীর হক আদায় করছে না। নোয়াখালী জেলার মানুষদের মত অন্য জেলার মানুষরা যদি একে অন্যকে সহযোগিতা করত তাহলে আমাদের এই দেশ আরো অনেক অনেক দূর এগিয়ে যেত। আমার মতে নোয়াখালীর সমালোচনা না করে উচিত তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।
গত ১৫ অক্টোবর দৈনিক ইত্তেফাক নোয়াখালী জেলা নিয়ে বিশেষ একটি ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে; যা আমার দৃষ্টি কেড়েছে।
যার ফলে এই লেখাটি লিখতে বসলাম। আমি আমার লেখায় অন্য কোন বিষয় আলোকপাত করব না; শুধু নোয়াখালীর কয়েকটি গান আপনাদের জ্ঞাতার্থে এখানে তুলে ধরছি। গানগুলো নিখেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোঃ হাশেম।
১.“আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী রয়াল ডিস্টিক ভাই”
আঙ্গো বাড়ি নোয়াখালী
ওয়াল ডিস্টিক ভাই
হেনী-মাইজদী চোম্মুনীর
নাম কে হুনে নাই॥
টিকিট কাডি মানষ যে দিন
চাঁদে যাইবো ভাই
চাঁদের মা বুড়িরে দেইকলে
থাইবো যে ব্যাটকাই
দমকার বুড়ি নোয়াখাইল্যা
কতা কইবো মিটটিডাই॥
উলি-কুলি কোদালি আর
রেইল বাড়িতে
চৈদ্দ আনা নোয়াখাইল্যা
চামড়ার টেনারীতে
জজ-বারিস্টর, উকিল-ডাক্তর
কোন ডিপাটে আমরা নাই॥
কাতার-ডুবাই আবুধাবি
মিডেলিস্টে গেলে
শতে শতে নোয়াখাইল্যা
হঁতে-ঘাঁডে মিলে
দেশ-বিদেশে জগৎ জোড়া
নোয়াখাইল্যার রাজতাই॥
আমরা বালার-বালা একছার বালা
দুষ্ট লোকের যম
মোল্লা-মুন্সি, আলীম-জালীম
কোনটা আঙ্গো কম
ঊালা-বুরা হগল কামে
এক্কেবারে আগে থাই॥
২.“উড়ের হর্দার নোয়াখাইল্যা”
কোন মিছিলে নাই
৫২তে গুলি খাইছে
ঢাকা শহর যাই
নাম ওইছে সালাম
শহীদ ওইছে কইচ্ছে এককান
কামের মত কাম
জীবন দিও রাইকছে হেদিন
নোয়াখাইল্যার নাম॥
আগরতলা ষড়যন্ত্রের
মামলা তুলি নিলো
একে একে আসামিরা
খালাশ ও তো হাইলো
সার্জেন্ট জহুরুল হক মরি
তুঙ্গে নেয়, সংগ্রাম॥
মিছিল-মিটিং ব্যারিকেডে
আঙ্গো জুড়ি নাই
স্বাধীন বাংলার ফ্ল্যাগ উড়ায়
আ.স.ম রব ভাই
বীর শ্রেষ্ঠদের মধ্যে একজন
রুহুল আমিন নাম॥
৫২তে মনির চোদ্রি
কবর নাটক লেখলো
৭১ এ মোফাজ্জল ও মনির
চোদ্রি মইল্লো
জহির রায়হান শহীদ উল্যা
কায়সাররে আরাইলাম॥
মিছিল-মিটিং জমেনারে
নোয়াখাইল্যা বিদে
কামান-বন্দুক মানেনারে
টগবগ করে জিদে
মালেক উকিল-কমরেড তোহার
নামই তো সংগ্রাম
শহীদ অয় ন হেই কারণে
গাজী নাম দিলাম॥
৩.“নোয়াখালীত্ চোদ্রি বেশি”
ক’জনের নাম কমু
তাগো মধ্যে দুই-চারজনের
হরিচয় আইজ দিমু
বিসমিল্লাতে মনির চোদ্রির
নামটা আগে লমু॥
দুই নম্বরে কবির চোদ্রি
মনির চোদ্রির ভাই
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ওইছে
আরনি তারে হামু॥
ভি.সি মতিন চোদ্রি ভি.সি
মুজাফফরও চোদ্রি
ভিসি এ,কে, আজাদ আর
এফ রহমান চোদ্রি
আর কইতান্নি দরকার ওইলে
মেলা ভিসি হামু॥
তিনো ভাইয়ে চোদ্রি একজন
মোফাজ্জল হায়দার
বাংলা একাডেমীর সচিব
লুৎফুল হায়দার
এহতেশাম হায়দার চোদ্রির
নামটা এবার লমু॥
বদরুল হায়দার চোদ্রি আবার
মোহাহের হোসেন চোদ্রি
হাবিব উল্যা বাহার আর
ইকবাল বাহার চোদ্রি
জোহুর হোসেন, কাইয়ুম চোদ্রির
নামটা এবার লমু॥
এই গানগুলো নিঃসন্দেহে লেখকের গভীর উপলব্ধি এবং অনুসন্ধিৎসার ফসলও বটে। এই গানগুলোর ভেতর নোয়াখালীর ইতিহাস ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনের পরিচয় প্রতিপলিত হয়েছে।
তাই এই গানগুলোকে স্বার্থক আঞ্চলিক গান হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। এবং লেখককে এমন গভীর উপলব্ধির জন্য পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব করছি। গানগুলো প্রতিনিয়তই আমাদের হৃদয়ের গভীরে প্রতিধ্বনিত হতে থাকবে সব সময়। জয় হোক নোয়াখাইল্যার, জয় হোক বাংলাদেশের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।