আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সন্ত্রাসীদের ফোন এবং একজন ইমতিয়াজের মরণদশা



স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কি সন্ত্রাসীদেরকে উৎসাহিত করছেন না? ইমতিয়াজ আহমেদ বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই আইন শৃংখলা পরিস্থিতির ব্যপক অবনতি ঘটতে থাকে। প্রথমে তাকে বলা হয়েছিল নির্বাচনোত্তর সহিংসতা। বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা, জখম, দিগ্বর করা, মহিলাদেরকে গণধর্ষণ, তাদের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, গরু-ছাগল-মুরগী লুটপাট ইত্যাদি ঘটেছে। পুলিশের আইজি বলেছিলেন, এটি স্বাভাবিক ঘটনা। প্রধানমন্ত্রী পল্টনের জনসভা থেকে জানিয়েছেন, এটি পত্র-পত্রিকার সৃষ্টি, আসল ঘটনা হচ্ছে, যাদেরকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছিল, তারা এখন তাদের নিজেদের বাড়ি-ঘরে ফিরে যাচ্ছে।

এরপর আমরা দেখলাম ঘাট, বাজার, টার্মিনাল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি দখল করতে গিয়ে সরকারী দলের বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ। প্রধানমন্ত্রী বললেন, এগুলো আসলে করছে ছাত্রদল আর ছাত্রশিবিরের ছেলেরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত ভিসিও একই কথা বললেন। সুতরাং অবিশ্বাস করার উপায় নেই। আমরা স্বার্থপর নাগরিকেরা এই সব ঘটনায় বিচলিত হবার তেমন কোন কারণ দেখিনি, কেননা, আমাদের নিজেদের গায়ে তখন কোন কিছু লাগেনি।

ব্যবসায়ীরা চুপ ছিলেন, সুশীল সমাজও হয় চুপ ছিল না হয় উল্টো ইনিয়ে বিনিয়ে এই সন্ত্রাসকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু সন্ত্রাসের অজগর বিরোধী দলের রাজনৈতিক কর্মীদেরকে গেলার পর এখন আমাদের মত নাগরিকদের দিকে ফনা বাড়িয়েছে। সম্প্রতি বিজিএমইএর নেতৃবৃন্দ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে সন্ত্রাসী ও চাদাবাজদের থেকে তাদের নিরাপত্তা প্রদানের দাবী জানিয়েছেন। এই ধরণের ২৫ টি সন্ত্রাসী ঘটনার কথা তারা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়েছেন। আমিও এই লেখাটা হয়তো লিখতাম না যদি আমি নিজে এই চাদাবাজির শিকার না হতাম।

আমার কোন ব্যবসা বাণিজ্য নেই, কাস্টমসের মত কোন ঘুষবহুল অফিসে চাকুরী করার ভাগ্যও হয় নি, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের নিতান্ত ছা-পোষা চাকুরীজীবি। এতো রাঘব-বোয়াল, শৈল-মাগুর, এমনকি চুনো-পুটি থাকার পরও আমার মত কাচকি মাছকে সন্ত্রাসীরা কেন পছন্দ করলো বুঝতে পারছি না। কয়েকদিন আগে বাসায় ফোন আসলো। বউ ধরেছে। একজন বয়স্ক ভদ্রলোক তার নাম বলে অতি ভদ্রভাবে জানালেন যে, তিনি আমার আগের অফিসের সহকর্মী।

আমার মোবাইল নন্বর এবং বর্তমান অফিসের নন্বর তার জরুরী দরকার। সরল বিশ্বাসে বউ তাকে নন্বর দিয়েছে। দুইদিন পরে আমার মোবাইলে ফোন আসে। বয়স্ক ভদ্র গলা। ‘ইমতিয়াজ সাহেব বলছেন?’ ‘জি, বলছি।

’ ‘একটু কথা বলা যাবে?’ ‘জ্বি, বলুন। ’ ‘স্যার একটু আপনার সাথে কথা বলবেন। ’ এরপর হালকা চাটগাইয়া টানে একজন বললো, ‘আমি সুব্রত বাইন বলছি ··। ’ এর পর থেকে যে কি আতঙ্কে দিন কাটছে তা ভূক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝতে পারবেন না। পরিচিত অনেকের সাথে পরামর্শ করছি।

কেউ বলছেন, টাকা কিছু হলেও দিয়ে দিতে। তাতে তারা ক্ষিপ্ত হবে না। কেউ বলছেন, একবার টাকা দেয়া শুরু করলে কিছু দিন পর পর দিয়ে যেতে হবে। কেউ বলছেন, থানায় জিডি করতে। আবার অন্যরা বলছেন, থানার সাথে সন্ত্রাসীদের অবশ্যই যোগাযোগ আছে।

জিডি করলে একদিকে যেমন সন্ত্রাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবে, অপরদিকে তেমনি পুলিশের মাধ্যমে তারা আপনার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য পেয়ে যাবে। একজন একটা দোয়া শিখিয়ে দিলেন। সে দোয়া পড়ে বাইরে বের হলে মৃত্যূ ছাড়া কোন বিপদ স্পর্শ করবে না। সমস্যা হলো, এই সন্ত্রাসীরা তো মৃত্যূর ভয়ই দেখায়। তাদের তো তো লাশ ছাড়া কোন কথা নেই।

ছেলে-মেয়ের স্কুল বন্ধ। অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি। চুল কাটানো দরকার। ভয়ে বের হতে পারি না। বাজার সদাই যা আছে, তা দিয়ে আর দুই-একদিন চলবে।

তারপর কি হবে? শুক্রবারে জুম্মার নামাজটা তো পড়তে বাসার বাইরে যেতে হবে। এই ঘটনার পর থেকে পত্রিকার পাতা খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ছি, টিভির সংবাদ পারতপক্ষে বাদ দিচ্ছি না। অবচেতন মন আশা করছে, জনগণের সরকার নিশ্চয় সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জনগণকে বাচাবার জন্য দ্রুত কোন ব্যবস্থা নিবে। কিন্তু সংবাদ মাধ্যমের খবরে দেখা যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম দিন দিন বাড়ছে। চলমান পাজেরো গাড়ীতে গুলি করে ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হচ্ছে।

চাদার দাবীতে প্রতিদিনই ব্যবসায়ীদের দুই একটা লাশ পড়ার খবর আসছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর (মন্ত্রীকে ততোটা দেখা যাচ্ছে না) খবর থাকছে প্রতিদিন। অনেক প্রত্যাশা আর মনোযোগ দিয়ে তাঁর খবর দেখি। নিশ্চয় তিনি সন্ত্রাসীদেরকে দমনের ব্যাপারে তার কঠোর অবস্থানের কথা বলবেন। মাটির নীচ থেকে হলেও তাদের খুজে বের করার ঘোষণা দিবেন।

১২ই মার্চের টিভি নিউজের হেডলাইন ছিল, জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা দিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। সেদিনই সকালে চাদাবাজদের গুলিতে একজন গার্মেন্টস মালিক নিহত হয়েছিলেন। আগ্রহী হয়ে বিস্তারিত খবর যখন শুনলাম, তখন দেখা গেলো, তিনি যে সন্ত্রাসীদের কথা বলছেন তারা এইসব চাদাবাজ খুনীরা নয়, সন্ত্রাসী বলতে তিনি বুশের সংগা অনুসরণ করছেন। পরদিনের খবরে তিনি আরও চমকপ্রদ কথা বললেন। চাদাবাজদের হাত থেকে বাঁচতে সকলে যখন র‌্যাবের সেই সোনালী দিনগুলোর কথা স্মরণ করছে, তখন তিনি ঘোষণা করলেন যে, আগের মত সন্ত্রাসীদেরকে শুধু যে মারা হবে না তাই নয়, বরং যারা আগে তাদেরকে কঠোরভাবে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে দমন করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এরপর সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজীরা যে আরও বেপরোয়া হয়ে যাবে, তা বলাই বাহুল্য। এই লেখাটা সন্ত্রাসীদের প্রতি সরকারের অবস্থানের কোন পরিবর্তন ঘটাবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগ সব সময়েই সন্ত্রাসকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। জয়নাল হাজারী, হাজী সেলিম, শামীম ওসমান, হাজী মকবুল, ডা· ইকবাল - এদের কথা হয়তো অনেকেই ভুলে যায়নি। এ সরকারও শুরু থেকেই সন্ত্রাস সপক্ষ অবস্থান নিয়েছে খোলাখুলি ভাবে।

তবে লিখছি এ জন্যই যে, মরে গেলেও একটা সান্তনা থাকবে যে, একজন সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বের কথা কিছু মানুষকে অন্ততঃ জানিয়ে মরতে পারলাম। পাঠকের মন্তব্য: বাংলাদেশ থেকে ইকবাল লিখেছেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে সন্ত্রাসীদের দল। সারা দেশে তারা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এই দলের নিকট হতে এর থেকে বেশী কিছু কিভাবে আশা করলেন? United States of America থেকে Mohammad Gani লিখেছেন, Is this big mouth, I mean Sohel Taj a son of Sree Tajuddin, one of the 4 kings in "Mujibnagar" Government? Sohel Mia should stop drinking to much before flipping his lips like a disoriented and violent gang member. Does he know that his aunt and our "original" national role model Hasina is the biological single parent that breeded all violences in the name "democratic rights" like "Hartals", Lagathar Hartals, "Aborodh", burning and killings.............? গাজীপুর, বাংলাদেশ থেকে আরাফাত রহমান লিখেছেন, কমেন্টের মাধ্যমে সর্বশেষ আপডেট জানাবেন দয়া করে। আমরাও উদ্বিগ্ন।

কানাডা থেকে শাহীন সিদ্দিকী লিখেছেন, খুবই আতঙ্কের কথা! এমন পরিস্থিতি যে কিভাবে মোকাবেলা করতে হয় তার উপায় মনে হয় সত্যি বাংলাদেশে নেই? কি আশ্চর্য্য আমাদের দেশ! লেখাটা পড়ে ভীষণ খারাপ লাগছে! বুঝতেও পারছিনা কি প্রতিক্রিয়া জানাবো। আওয়ামী লীগের আমলে সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তারা বুঝে গেছে স্বরাস্ট্রমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী এর দায় চাপাবেন বুশের সংগানুসারে জংগীদের উপর। আল্লাহ আপনার উপার সহায় হউন, এই মহাআপদ থেকে আপনাকে ও আপনার পরিবারবর্গকে রক্ষা করুন। America থেকে Golam Ahmed লিখেছেন, I am worried about you and all the people of Bangladesh. But I have nothing to say. Who knows, I may lose my life if I say something. Also, people will call me anti-Awami-Leager if I want to give some suggestion to this Govt. May Allah help us all. সূত্র: Click This Link


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.