আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিপাইমুখী বাঁধ বাংলাদেশের মরণ ফাঁদঃ দেশের মানুষ হুশিয়ার সাবধান

কানাকে কানা, খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না, ইহাতে উহারা কষ্ট পায়

এলেখাটি ইমেইলে আমার একবন্ধু অষ্ট্রেলিয়া হতে পাঠিয়েছে, তথ্য ও বাস্তবতা এবং বিষয়ের গুরুত্ব মনে করে আমি হুবহু এটা তুলে দিলাম ব্লগের পাঠকদের উদ্দেশ্যে। আশা করছি আপনাদের অনেক প্রশ্নের জবাব মিলবে। সম্প্রতি আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত বরাক নদীর উপর বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ১০০ কিমি উজানে টিপাইমুখে একটি ড্যাম এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ২০০ কিমি উজানে ফুলেরতালে ব্যারেজ নির্মাণের সকল প্রস্তুতি নিয়েছে। উজান দেশের এরকম কার্যক্রমে আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা-সংকট নদী অববাহিকার মানুষের জীবন ও জীবিকার প্রতি একদিকে যেমন হুমকি, তেমনি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্বকেও বিপন্ন করে তুলবে। গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা ব্যারেজ, তিস্তা নদীতে গজলডোবা ব্যারেজ ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের অপরিসীম তিসাধন করেছে।

বাংলাদেশে উজান থেকে আসা পানির মোট ৭-৮ শতাংশ আসে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলের বরাক নদী থেকে। মৎস্য সম্পদ আহরণ ও চাষাবাদের জন্য বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা এ নদীর পানি প্রবাহের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, এ বাঁধ নির্মাণের ফলে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার ২৭৫ দশমিক ৫ বর্গ কিমি এলাকায় তাৎণিক ও দীর্ঘমেয়াদি কুফল দেখা দেবে। টিপাইমুখ ড্যাম পরিচালনার পূর্বে যখন রিজার্ভারটি পূর্ণ করা হবে তখন তা ভাটি অঞ্চলের স্বাভাবিক পরিবেশ ও ইকো-সিস্টেমকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং মৎস্য প্রজননে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। শুষ্ক মৌসুমে সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকায় প্লাবন ভূমির পরিমাণ শতকরা ৬০ ভাগ এবং ভরা মৌসুমে অন্তত ১২ ভাগ হ্রাস পাবে।

ঋঅচ-৬ এর গবেষণা মতে, বাংলাদেশের অমলসিধের কাছে বরাকের পানি প্রবাহ ভরা মৌসুমে অন্তত ২৫ শতাংশ হ্রাস পাবে, সেই অনুসারে ওয়াটার লেভেল ১ দশমিক ৬ মিটার নেমে যাবে। অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে (ফেব্র“য়ারি মাসে) বরাকের প্রবাহ অন্তত ৪ দশমিক ২ গুণ বৃদ্ধি পাবে এবং পানি সমতল বাড়বে প্রায় ১ দশমিক ৭ মিটার। এই অবস্থা সুরমা ও কুশিয়ারার প্রবাহকেও একইভাবে প্রভাবিত করবে। টিপাইমুখে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু হলে নিয়ন্ত্রিত প্রবাহের ফলে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পানি ছাড়া হবে। এর ফলে মাটির অভ্যন্তর দিয়ে পানির প্রবাহ প্রক্রিয়াও (নধংব ভষড়ি ঢ়ধঃবৎহ) পরিবর্তিত হবে।

সুরমা-কুশিয়ারা অববাহিকা নিচু জলাভূমি পূর্ণ, শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবাহ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হতে পারে। সেই সঙ্গে পাহাড়ি ঢলের পানি সহজে নামতে না পারার কারণে নিচু বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ বোরো ফসল বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাবে কালনী-কুশিয়ারা নদীর পলিভরাট (ঝবফরসবহঃধঃরড়হ) প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। ফলে নাব্যতা রায় অতিরিক্ত ড্রেজিংয়ের মতো ব্যয়বহুল পদ্ধতির প্রয়োজন হবে। সুরমা-কুশিয়ারায় বন্যার পরিমাণ কমে যাওয়ার ফলে পলল সমভূমিগুলো পলিমাটি বঞ্চিত হবে এবং নদী অববাহিকার মধ্যবর্তী সমভূমিগুলো নদীর সঙ্গে সংযোগহীন হয়ে পড়বে।

অন্তত চারটি প্রকল্প টিপাইমুখ বাঁধের প্রভাবে নিশ্চিতভাবে তিগ্রস্ত হবে। প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ আপার সুরমা-কুশিয়ারা রিভার প্রজেক্ট, সুরমা রাইট ব্যাঙ্ক প্রজেক্ট, সুরমা-কুশিয়ারা-বাউলিয়া বেসিন প্রজেক্ট এবং কুশিয়ারা-বিজনা ইন্টারবেসিন প্রজেক্ট। শুধু ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশই নয়, বরং এই প্রকল্পের ফলে খোদ ভারতেরই ২৭ হাজার ২৪২ হেক্টর বনভূমি বিনষ্ট হবে। আসাম, মনিপুর, মিজোরামের ৩১১ বর্গ কিমি ভূমি প্লাবিত হবে যার অধিকাংশই আদিবাসী অধ্যুষিত। ১ হাজার ৪৬১ হামর পরিবার এবং জিলিয়ানোগ্রং নাগা উপজাতিদের এক-তৃতীয়াংশ তাদের আবাসস্থল ছাড়তে বাধ্য হবে।

হামর আর নাগা উপজাতিদের ৬৭টি গ্রাম আংশিক বা সম্পূর্ণ তিগ্রস্ত হবে। বরাক প্রপাতের অনেক ধর্মীয় তীর্থস্থান তলিয়ে যাবে। আর এই সবকিছুই জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসী অধিকার ও স্বার্থ সংরণ নীতিমালার পরিপন্থী। ভারত সরকার টিপাইমুখে ড্যাম নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা শুরু করে ১৯৫৫ সালে। নির্মাণকাজ শুরুর প্রস্তাবটি আসে ১৯৯৩ সালের দিকে।

যদিও ২০০৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর টিপাইমুখ বাঁধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছে তথাপি ভারতীয় বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার মতে টিপাইমুখ প্রকল্পটি প্রয়োজনীয় পরিবেশগত ছাড়পত্র অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে কোনো দেশ অভিন্ন নদীর উজানে কোনো কাঠামো নির্মাণ করতে হলে অবশ্যই এর ভাটিতে বসবাসকারী জনপদের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবতে বাধ্য। উন্নত দেশগুলো যখন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি কুফলের কথা বিবেচনা করে বাঁধের মতো অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণের দুর্বুদ্ধি থেকে পিছিয়ে আসছে, সেখানে ভারতের এমন একটি বাঁধ নির্মাণের প্রস্তুতি আরো গভীর পর্যালোচনার দাবি রাখে। আর টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি ভারত আদৌ পুনর্বিবেচনা করবে কি না তা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে ভাটির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বাঁধটির সম্ভাব্য বিপর্যয়ের কথা কতটা বলিষ্ঠ ও তথ্যসমৃদ্ধভাবে আলোচনার টেবিলে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে পারছে এর ওপর।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.