এই ব্লগের সব লেখা সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
আজকাল কেন জানি আম্মুর সাথে ঘটে যাওয়া পুরোনো স্মৃতিগুলো বার বার ঘুরেফিরে সামনে আসছে একের পর এক ... এমনই একটা অঘটন ভরা ঘটনা ছিল এই রকম -------
কোন এক ছুটির দিন দুপুর বেলার ঘটনা ... তখন (খুব সম্ভব) ক্লাস ৩ তে পড়তাম ... এমনিতেই ছোটবেলা থেকে কম ঘুমাই ... এ জন্য সেদিন আম্মু আমাকে তার সাথে জোর করে শুইয়ে ঘুম পাড়াতে গিয়ে একসময় ক্লান্ত হয়ে নিজেই ঘুমিয়ে পড়লেন ..... কিছুক্ষন পরে আম্মুর নড়াচড়া নেই দেখে আমিও চুপচাপ ঘটনা পর্যবেক্ষন করে আস্তে আস্তে নেমে পড়লাম বেড থেকে ... পা টিপে টিপে ঘরের বাইরে গিয়ে ভাবলাম আম্মু ঘুমিয়ে আছে এই সুজোগে আপুনির সাথে খেলা করলে মন্দ হয় না ... এবার ওর ঘরে গিয়ে দেখি সে ও ঘুমে একেবারে পানি হয়ে আছে ... কি করা যায় ভাবতে ভাবতে বারান্দার গ্রিল ধরে কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলাম ... ৩ তলার উপরে থাকতাম বলে আমার খেলাধুলা মোটামুটি ঘরের ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকতো ... বিকেলে সবাই মিলে যেতাম ছাদে ... এছাড়া ছাদে যাওয়া আমার জন্য নিষেধ ছিল ... প্রথমে ভাবলাম একলা একলা ঘরে ফুটবল খেলি , কিন্তু একদিকে ঘুমিয়ে থাকা আম্মু জেগে গেলে বকা দিতে পারে অন্যদিকে আমাদের বাড়ীওয়ালা (২য় তলায় থাকতেন) আবার হাই প্রেশারের রোগী ছিলেন, উনি চিল্লালে তো বাসায় আগুন ধরে যাবে ... এ জন্য চুপচাপ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলাম আকাশের দিকে তাকিয়ে .... কি করি কি করি করতে করতে একসময় চোখ পড়লো আব্বুর সাইকেলের উপরে ... এই সেই সাইকেল যেটা তখন আব্বু ব্যবহার করতেন না কিন্তু ঘরে এনে রেখে দিয়েছিলেন ... একসময় এইটাতে চড়ে আমি আব্বুর সাথে সারা শহরে ঘুরে বেড়াতাম ... অনেকটা আনমনেই গ্রিলের সাথে হেলান দেয়া সাইকেলের উপরে চড়ে বসতেই নিজের মাঝে কেমন আব্বু আব্বু ভাব এসে গেল .... পা ঝুলিয়ে চেষ্টা করলাম প্যাডেলে ছুতে , কিন্তু না পেয়ে হাতের কাছে পেলাম সাইকেলের বেল .... আর কৈ যাবে ... শুরু হলো ক্রিং ক্রিং ক্রিং ....
একটু পরে ঐ শব্দে আম্মুর ঘুম ভেঙ্গে গেলে আম্মু বেডরুম থেকেই বলে উঠলেন -- এ্যাই অনন্ত সাইকেলের বেল বাজায়ো না ...
আম্মুর কথা একবারে আমার কখনোই শুনতে ইচ্ছা হয় না (এখনো) বলেই সেবার কোনো উত্তর না দিয়ে আমি আমার মত বেল বাজাচ্ছিলাম, ক্রিং ক্রিং ক্রিং ...
আম্মু আবার বললেন --- এই অনন্ত শব্দ কোরো না ....
আমি আবারো উত্তর না দিয়ে আম্মুর রাগ আরো বাড়ানোর জন্য মনের খুশিতে আরো জোরে জোরে আর যত দ্রুত সম্ভব ক্রিং ক্রিং ক্রিং বাজিয়ে চললাম ...
এবার আম্মু সত্যি ভীষন রেগে বলে উঠলেন --- অনন্ত শব্দ বন্ধ না করলে কিন্তু মাইর দিবো
কথাটা তখন আমার এমন মজা লেগেছিল যে আম্মুর গলা নকল করে বার বার বলতে লাগলাম --- অনন্ত শব্দ বন্ধ না করলে কিন্তু মাইর দিবো .... অনন্ত শব্দ বন্ধ না করলে কিন্তু মাইর দিবো .... অনন্ত শব্দ বন্ধ না করলে কিন্তু মাইর দিবো
এর মধ্যে আপুনির ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল, ও এসে দাড়িয়েছে আমার পাশে ... হঠাৎ দেখি আম্মু গটমট করে হেটে আসছেন আমাদের দিকে ... বুঝলাম আজকে আমার মাইর আছে কপালে ... সুতরাং পালাবার জন্য আমি অন্য বারান্দার সাইডে আস্তে করে সরে যেতে থাকলাম .... ওদিকে আম্মু চরম রাগে আমাদের কাছে আসতেই আপুনির গালে বসিয়ে দিলো এক রাম-থাপ্পড় .... আর রাগী রাগী গলায় বললেন --- আমার গলা নকল করে ভেঙচি দিচ্ছিলা কেন ?
আমার আপুনিটা চড় খাওয়া গালে হাত দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো ঘটনা কি হইছে
আর ততক্ষনে আমি দাত কেলিয়ে ১০০ মিটার দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হতে দৌড় শুরু করতেই আম্মু একটু থতমত করে আপুনিকে জিজ্ঞেস করলেন -- কিরে , ঐ বান্দর এমন করে হেসে দৌড় দিলো কেন ?
অতঃপর ......
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।