ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো
আজকাল উলটা সিধা লেখা দেখলেই ঝারি পিটানি বদঅভ্যাসে পায়া বসছে আমার। পাব্লিকও ক্ল্যাপ দেয়।
আজকে ডিবাংক করবো জাহাজ শিল্প নিয়া লেখা সরকারি সহায়তা পেলে বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভবএই লেখাটা। এই টাইপ লেখা গুলান পেপার পত্রিকায়ও দেখে থাকবেন পাঠক। আমি আনন্দ শিপইয়ার্ডের একজন সাবেক ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে এই তেলবাজি ডিবাংক করা নাগরিক দায়িত্ব মনে করি।
বাই দা বাই,আনন্দ শিপইয়ার্ডের সাথে আমার একটা পুরান হিসাব বাকি রইয়া গেছে...
লেখক হয়তো কোন খান থিকা কপি পেষ্ট করছেন লেখাটা। পুরা লেখাতেই আনন্দশিপ ইয়ার্ডের বিজ্ঞাপন, সাথে একটা সাক্ষাতকারো আছে।
লেখক বলেছেন "১ জন চেয়ারম্যান (ডঃ বারি স্যার, সাবেক বুয়েট শিক্ষক), ১ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৪ জন পরিচালক রয়েছেন। "----হাসাইলেন মিয়া। চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী, (স্ত্রী পাস করেছেন ইডেন থেকে) , ৪ পরিচালকের ৩ জনই তাদের স্নেহ ধন্য মেয়ে যারা বিদেশে থাকেন, অপর পরিচালকটি বড় মেয়ের জামাই, উনিও দূরপরবাসী।
চমেতকার ব্যবস্থাপনা। কি কন?
আরো বলেছেন "এসব শিপইয়ার্ডের মধ্যে আনন্দ শিপইয়ার্ডের নির্মাণ কৌশল আলাদা। এই শিপইয়ার্ডের কাজ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে করা হয়। এখানকার কর্মকর্তারা জানালেন, আমাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এত বড় ও আধুনিক যন্ত্রপাতিতে সুসজ্জিত শিপইয়ার্ড আর দ্বিতীয়টি নেই। "- লেখক নিজে কি দেখে লিখেছেন নাকি শুনে লিখেছেন? জাহাজশিল্পে কি কি যন্ত্রপাতি থাকা উচিত বলে উনার ধারনা? ২/৪টার নাম কইতে পারলে আরাম পাইতাম।
"প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানালেন, বিশ্ববাজারে আমাদের তৈরি জাহাজ রফতানিতে সুনাম অর্জনের একমাত্র কারণ প্রতিষ্ঠানের মালিক, কর্মচারী ও শ্রমিকদের পরস্পরের অতি শ্রদ্ধাবোধ ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করা। "---আহা...সুনাম দেখি টপটপায়া ঝইড়া পড়তেছে। উক্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তারে জিগান গত ৫ বছরে কয়বার বেতন বাড়ানো ও নিয়মিত করার দাবিতে ইঞ্জিনিয়াররা আন্দোলন করছে। মোট কয় জন ইঞ্জিনিয়ার চাকরী ছাড়তে বাধ্য হইছে। সঠিক কইতে পারলে লেবান চুস!
আপ্নাগো আমি কিছু ইনফো দেই- ক্লিয়ার কইরা শুইনেন
১।
আনন্দ শিপিয়ার্ড ফুলে ফেপে বড় হয় বাংলাদেশ কোষ্ট গার্ডের ১২৯টি ছোট পল্টুন বানায়া- অই প্রজেক্টে মোট লাভ হয় ১০০কোটি। যাগা মত ঘুষ দিতে যান্তে হয় দাদা! এই লাভের টাকা গুলান তো আপনার আমার পকেটের টাকা। জিডিপির ৫.৮% সামরিক ব্যয় কেমতে হয় বুঝলেন?
২। এই পর্যন্ত একটা জাহাজও আনন্দ শিপইয়ার্ড সময় মতো ডেলিভারী দিতে পারে নাই। কারন দক্ষতার অভাব।
কাজের কাজ দেশের অন্যান্য শিপ বিল্ডারের রেপুটেশন নষ্ট করছে।
৩। নদী দখল করে বানাইছেন স্লীপ ওয়ে। নদী ভরাট করে জায়গা দখল করছে। ( স্লীপ ওয়ে হইতাছে একটা বড় রেল লাইন যেটার উপর দিয়ে জাহাজ নদী থেকে ঊঠানো ও নামানো হয়)
৪।
পরিবেশ ক্ষতি করে 'র'স্টিলে স্যান্ড ব্লাস্ট করেন উনারা নদীর পাড়ে, যা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ ও ভয়াবহ ক্ষতিকারক।
৫। যে ৭০ হাজার কোটি টাকা মোহ দেখায়া সরকারের কাছ থিকা ইন্সেন্টিভ চাইতেছেন ডঃবারি সাহেব, তাই কি আস্লেই পাওয়া সম্ভব? শিপের অর্ডার এর সাথে বিল্ডিং স্পেসিফিকেশন নামের বিশাল একটা কিতাব থাকে, যেখানে লেখা থাকে কোন জিনিস্টা কোন কম্পানি থেকে কিনে জাহাজে দিতে হবে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে দেশের জাহাজ মালিক সেই দেশের কম্পানির নাম সেখানে থাকে। প্রতিটা জিনিসের জন্য সাপ্লায়ার কম্পানির নাম উল্লেখ থাকে।
তার মানে আপনি যার টাকায় জাহাজ বানাবেন তার দেশের জিনিস কিনতে বাধ্য...সুত্রাং অর্ডারের মিলিয়ন ডলারের মূলার ৮০-৯০% চলে যাবে বিদেশে...বাকিটা থাকবে ডঃ বারি সাহেবের পকেটে। এখন বলেন এই জন্য কি এটাকে পোশাক শিল্পের মতো ইন্সেন্টভ দেয়া উচিত?
আরেকটা জিনিস কমেন্ট থিকা যোগ করি। ডঃবারির অযোক্তিকভাবে ৭০হাজার কোটি টাকার মূলা দেখায়া সরকারি ইনসেন্টিভের দাবি করছেন। উনি বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের কাছে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি চেয়েছেন।
তাহলে উনি আবারো পুরান খেলা খেলতে পারেন।
আগেও তিনি মোজাম্ববিক সরকারে টাকায় জাহাজ বানিয়ে উনাদের ডেলিভারি দেরি করান। ক্রেতাপক্ষ (মোজাম্বিক সরকার) ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ভেঙ্গে নিয়া যাবার ভয়ও দেখালে তিনি নির্বিকার। কারন তত দিনে স্টিলের দাম বাড়ার জন্য জাহাজের মার্কেট ভ্যালু ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির চেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছিল। মানে বাজারে নিজে বিক্রি করলে সেটা ব্যাংক গ্যারান্টির চেয়ে বেশি পাবেন। শেষ পর্যন্ট নানান দেন দরবারের পর মোজ্ববিকের সেই জাহাজ শিডিউল টাইমের বছর খানেক পর ডেলিভারি হয়।
এই ঘটনার পুনরাবৃতি হইলে প্যাচে পড়বে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক (গ্রান্টার)।
এর চেয়ে গুরুত্বপূর্ন কৃ্ষি, যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করতে সরকারকে কেউ বলে না। ক্ষেতের লোকের কথা পত্রিকাওয়ালারাও শুনে না। আর সরকারতো থাকে চাঙ্গের উপরে।
--------------------------------------------------------
অন্যান্য লেখা
হস্তীভক্ষন ও বিদ্যুৎখাতের স্টিকী পোষ্টঃ ডিবাংক
ব্যানানা বাংলাদেশ-৩ (গডফাদারের স্টিমুলাস মূলা)
ব্যানানা বাংলাদেশ-২ (প্রথম আলোর ইহুদীডিম্ব!)
ব্যানানা বাংলাদেশ-১ (ইকোনমিক হিটম্যান)
কন্সপিরেসি থিওরী-পারট ৩ (সিউডো-জ়ঙ্গি রাষ্ট্রের ছায়া)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।