সাব্বির ভাইয়ের জন্য আরো দশ লাখ টাকা দরকার। মানবতার দিকে তাকিয়ে আছি।
অস্ট্রেলিয়ার মত একটা দেশে ফোন আর নেট কানেকশন নিতে যে এত ঝক্কি পোহাতে হবে, আমি স্বপ্নে দূরে থাক, জেগে জেগেও কখনো ভাবিনি। এখানে পা দেবার পরদিন থেকেই নানা কোম্পানীর অফার, আমার সাধ্য, প্রয়োজন সবমিলিয়ে সবচেয়ে ভালো প্যাকেজটা নেয়ার জন্য মার্কেট রিসার্চ শুরু করলাম। ইয়া গাফুরুর রাহীম।
হাজার রকমের প্যাঁচ অফারে। শুধু ইন্টারনেট নিলে এক রেট, আর সাথে হোমফোন কিংবা প্রি বা পোস্টপেইড মোবাইলের দু’বছরের কোন প্ল্যানে ঢুকে যেতে পারলে মাসিক হার ১০ ডলার কম। আবার হোমফোন, মোবাইল, ইন্টারনেট তিনটা মিলিয়ে রোমানার বাহার যতসব অফার। অনলাইনে কিনলে বাড়তি সুবিধা, একই ফোনসেট কোনো শো-রুমে আছে তো অন্যটাতে নেই, একটা সেট কানেকশনের সাথে ফ্রি তো অন্যটাতে বাড়তি চার্জ। হাজারো অপশনের সমুদ্রে আমি-মাসুম পটকা মাছের মত খাবি খাচ্ছি।
এর মধ্যে এক কোম্পানি হলে কথা ছিলো। সবগুলোর সাইট ঘেঁটে, ব্রশিউর নিয়ে পারিবারিক চারকোনা-টেবিল চললো প্রথম কিছুদিন। একদিন ক্রেজি হয়ে উঠলাম, আজই নিতে হবে ইন্টারনেট।
বন্ধুমুখে শুনেছি অপটাসের নেটওয়ার্ক আর সার্ভিস ভালো, এছাড়া আমাদের এলাকাতে শুধু অপটাসেরই নেটওয়ার্ক কাভারেজ আছে। বাসে চেপে অপটাস কোম্পানির সবচেয়ে কাছের সার্ভিস সেন্টারে গেলাম।
কামনা-বাসনা এসে থেমেছে পোস্টপেইড মোবাইল আর ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ডের প্যাকেজে। বেকহাম হেয়ার স্টাইলের ভাইজানের কাছে কানেকশন নেয়ার জন্য দরকারি সব কাগজ দিয়ে হাসিমুখে অপেক্ষা করছি। আজই ফোন আর নেট বাসায় পেয়ে যাচ্ছি, কী মজা! বেকহাম জানালেন সব কাগজই ঠিক আছে, কিন্তু ব্যাংকে কমপক্ষে ১০০০ ডলারের ডিপোজিট না দেখালে কানেকশন দেয়া যাবেনা। আমরা বললাম, ১০০০ ডলার তোমাকে নগদ দেখিয়ে দিচ্ছি, ব্যাংক ডিপোজিট স্টেটমেন্ট দেখে কী হবে? আমিতো এখনি ১০০০ কেনো আরো বেশি জমা দিয়ে স্টেটমেন্ট নিয়েই আবার উইথড্র করে নিতে পারি। কাজেই এই স্টেটমেন্ট কীভাবে প্রামাণ্য দলিল হয় যে আমি মাসে মাসে কিস্তি ঠিকমত পরিশোধ করবো? আমার আয়ের উৎসের নিশ্চয়তা যে কাগজ প্রমাণ করবে, সেটাই গ্রহণীয় হওয়া উচিৎ।
কোনভাবেই ব্যাংক স্টেটমেন্ট নয়। বেকহাম বিনয়ে গলে গিয়ে বললেন, তোমাদের যুক্তি অকাট্য, কোন ভুল নেই। কিন্ত এটাই কোম্পানির নিয়ম। এই ব্যাপারটা নিয়ে এত ক্যাফড়া করার কারণ হলো স্টেটমেন্ট নিতে গিয়ে আমাদের আরো ২ দিন অপেক্ষা করতে হবে। যেটা প্রায় অসহনীয় পর্যায়ে চলে গিয়েছে ততদিনে।
অনেকক্ষণ কথা চালাচালির পর উনি কথা দিলেন যে পরের সপ্তাহেই হেড অফিসের মিটিং এ তিনি আমাদের মতামত পেশ করবেন কিন্তু নতুন নিয়ম না আসা পর্যন্ত আমাদের জন্য আপাতত কিছু করার নেই। ওর করণীয় কিছু ছিলোনা। অপটাসের নীতিনির্ধারকদের গ্রে-ম্যাটার স্বল্পতা নিয়ে হতাশা ঝাড়তে ঝাড়তে সেদিন বেজারমুখে বাসায় আসলাম।
দু’দিন পর সব কাগজ নিয়ে আবারো ওই সেন্টারে গেলাম। সেদিন বেকহাম নেই।
স্থূলাঙ্গিনী আপামণি খাতির করে সব কাগজ রেখে জানালেন, যে সেট আমরা চাচ্ছি সেটা এখন আর ফ্রি দেওয়া হচ্ছেনা। মাসিক একটা বাড়তি চার্জ যুক্ত হয়েছে। আমাদের চান্দিতে হাত। দু’দিনেই একটা অফার চেঞ্জ! সেদিন ডিপোজিট নিয়ে বেকহাম ঘ্যাঁচাঘ্যাঁচি না করলে ওইদিনই অফারটা নেয়া যেতো। আবারো ফেল মারলাম।
ভাগ্য প্রসন্ন হচ্ছেনা, তাহলে অন্য লাইনে চেষ্টা করা যাক। হোমফোন আর এডিএসএল ঘাটের জল খেয়ে দেখি কেমন। অল-ফোন নামে একটা প্রতিষ্ঠান আছে, যেখান থেকে মোটামুটি প্রথমসারির সব ফোন কোম্পানির সার্ভিস নেয়া যায়। অল-ফোনের আলগা ভাবধারী আংকেল কীবোর্ডের সাথে যুদ্ধ শেষে জানালো আমাদের বাসা যে জায়গায় সেখানে অপটাসের হোমফোন দেয়ার ক্ষমতা পূর্ণ হয়ে গেছে। এই তথ্য নিয়ে চুপ মেরে রইলাম কিছুদিন।
পরে মনে হলো ঘটকের কাছে ধর্না না দিয়ে অপটাসের নিজস্ব দোকানেই খোঁজ নিয়ে আসি, আসলে ঘটনা কী। ওরা জানালো হোমফোন দেয়া যাবে, লোকেশন কোন সমস্যা না। হায়রে তথ্যের ঘাটতি! যার যেরকম খুশি বোঝাচ্ছে। এপ্লিকেশন করে আসলাম, দশদিন পর কানেকশন দিবে। খুবই ভালো কথা।
প্রেমিকাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ফলাফল জানার জন্য অনন্তকাল অপেক্ষা করার চেয়ে একটা সময় বেঁধে দিলে প্রেমিকের যে কত জ্বালা জুড়ায়, সম্যক উপলব্ধি হলো। সামনে মরূদ্যান থাকলে দশদিন তবু কাটানো যাবে। মরীচিকার ভুল ইশারায় একদিনও অনেক দীর্ঘ মনে হয়!
২৪ তারিখ ১২ টা থেকে ৫ টার ভেতরে আসার কথা কানেকশন দেয়ার জন্য। কেউ এলোনা। অস্ট্রেলিয়ার যে সার্ভিস দেখেছি এতদিনে, তাতে এটাই স্বাভাবিক।
পরদিন এনজ্যাক হলিডে। মুখের জ্বালা মেটানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফোন দিলাম অপটাসে।
কীরে, তোদের কেউ তো কাল এলোনা!
আমি খুবই দু;খিত বড়আপা। প্লিজ তোমার বৃত্তান্ত বলো।
বল, কী কী জানতে চাস?
এই, সেই, হেন, তেন, ওই, হই সব বলো।
বললাম।
ইয়ে মানে, তোমার কোন এপ্লিকেশন তো খুঁজে পাচ্ছিনা। কোথাও কোন ভুল হয়েছে। তুমি আবারো তোমার হেনতেন বলো।
বললাম।
উফ, আপামনি। দুঃখে আমার চোখে পানি এসে যাচ্ছে। কিন্তু তোমার কোন তথ্যই ডাটাবেসে নেই। তুমি কি সত্যি এপ্লাই করেছিলে?
[ওই বেটি, ভড়ং রাখ(মনে মনে)] আমি লাইনে আছি খুঁজে দেখো।
ইউরেকা, ইউরেকা, পাওয়া গেছে।
মনে হচ্ছে তলপেটের চাপমুক্ত হলেন আপামনি। ২০ মিনিটের মাথায় আমার তথ্য, মহাসমুদ্র থেকে আপামনির মনিটরে নোংগর ফেললো।
ইস, কেনো যে টেকনিশিয়ান গেলোনা, দুষ্ট কোথাকার। কাল তো বন্ধ, তুমি সোমবার ঠিক ঠিক কানেকশন পেয়ে যাবে।
সোমবার ঠিক তো? মিস হবে নাতো?
যাহ, কী যে বলোনা! ভদ্রলোকের এক কথা।
সোমবার ১২-৫ ঘরে থাকা হলো। কেউ এলোনা। মাসুম সবচেয়ে ভদ্র ভাষায় ব্যবহার করে অপটাসে ফোন করে যা বললো তার সারমর্ম, তোমাদের দেশের কালচার কী এটা? মানুষের সময়ের দাম দাওনা তোমরা? পরপর দু’দিন একটা লোককে ঘরে বসিয়ে রাখলে। আমি লিখিত অভিযোগ করছি তোমাদের এই দায়িত্বহীনতার জন্য। আমাকে এখনি বলো তোমরা কাল আসবে কিনা, নাহলে আমি এপ্লিকেশন ক্যান্সেল করছি।
ঝাড়ি পরমৌষধ। কারিগরী বিভাগের প্রধান বললো, সে নিজে কাল আসবে। অধীনস্তের পক্ষ থেকে সে ক্ষমা চাচ্ছে। পরদিন একদম ঠিক সময়ে হাজির। বেশ ভাব নিয়ে শুরু করলো খাঁটি মিথ্যা কথা।
আমাদের লোক এসেছিলো ঠিকই, তোমার বাসা খুঁজে পায়নি।
তাই? খুঁজে না পেলে ফোন দিতে পারলোনা?
আসলেই ভুল করে ফেলেছে।
পরপর দু’দিন একই কাহিনী হলো দু’জনের ক্ষেত্রে?
আমাকে তো ওরা এরকমই জানালো।
আমরা নেহায়েত ভদ্রলোক। বললামনা যে, কুক্কুরীর জ্যেষ্ঠ সন্তান, পিছলামি বাদ দে।
বরং বললাম,
কিছু মনে করোনা। না আসার জন্য কৈফিয়ত টা খুব দুর্বল হয়ে গেছে। আশা করি তোমার কর্মচারীরা ভালো কোন কারণ দেখাতে পারবে আমাকে। তুমি আজ এসেছো, ধন্যবাদ। কিন্তু আমাকে দু’দিন যে হয়রানি করলো তার জন্য আমি ক্ষতিপূরণ চাইবো আর তোমার অধীনস্ত দু’জন কর্তব্যে অবহেলার জন্য সশরীরে বা ফোনে আমাকে সরি বলবে, এটা তুমি নিশ্চিত করবে।
সাদা চামড়া একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। নাম দেখেই ভেবেছে গরীব দেশের লোক। ভুজং ভাজং কিছু বুঝিয়ে পার পেয়ে চলে আসবে। সে যা বলবে আমরা তা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেবো, এমনটা আশা করেছিলো হয়ত। চরম অপমানের জ্বালা গায়ে গতরে মেখে বিদায় নিলো।
অবশেষে আমাদের ইন্টারনেট আর হোমফোন সংযোগ প্রাপ্তি হলো। আমরা ইহাকে বাস্তবিকই পাইলাম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।