আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুধুই পুলিশ...... নাকি মানুষও



: আচ্ছা, ঘটনার সময় সেখানে কারা ছিল? : ছয়জন মানুষ আর দু'জন পুলিশ। : আর কেউ? : পরে ফোন করে আরো তিনজন পুলিশ আনা হয়েছিল। ওপরের কথোপকথনটি কোন একটি নির্দিষ্ট ঘটনার বিষয়ে জবানবন্দী দিচ্ছিলেন একজন ভদ্রলোক। তার ভাষায় মানুষ হলে তো মানুষের মত পোষাক পড়বে, পুলিশের পোশাক কেন? ভারতের একজন মন্ত্রীর মিটিং। অনেকগুলো কাজের লোকের পাশপাশি নিরাপত্তার জন্য যথারীতি পুলিশ সদস্যও কয়েকজন।

বক্তৃতার ডায়াসে ওঠার সময় হোঁচট খেয়ে মন্ত্রীর পায়ের চটি মোবারক পা থেকে খুলে পড়ে গেছে। মহানুভব মন্ত্রী এক পুলিশ ইন্সপেক্টরকে আঙুল তুলে ইশারা করলেন জুতাটি হাতে রাখার জন্য। উপায়হীন পুলিশ জুতা হতে দাঁড়িয়ে রইলেন বক্তৃতা শেষ না করা পর্যন্ত। ঘটনাস্থল দিনাজপুর। ইয়াসমিনের মৃত্যুর অনেক পরে।

বিচার চেয়ে জনগণের সসস্ত্র শোরগোল শেষে মিটিং। মিটিংয়ে সবার মাঝে লিফলেট বিতরণও করা হয়েছে। অন্যান্য সবার পাশপাশি এক পুলিশ কনেস্টবলও সেই লিফলেট পড়ছে। তার চোখে পানি। কিছুক্ষণ পরেই তার মাথায় হঠাৎ কে যেন লাঠি দিয়ে সজোরে বসালেন এক বাড়ি।

রক্ত মাথায় হতভম্ব সেই পুলিশ। ঢাকা, ২০০৮। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিষম মারামারি। কে কার মাথা ফাটাবে তার মহোৎসব। ফার্স্ট ইয়ারে পড়া তিন অসহায় পড়েছে সেই মহোৎসবের মধ্যেখানে।

শশ্রুমন্ডিত পঞ্চাশোর্ধ এক পুলিশ তাদের মা সম্বোধন করে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিল। নিরাপদ জায়গায় তাদের এক বড় ভাইয়ের নজরে আসলে তিনি এসে পুলিশটির গালে এক রামথাপ্পর বসিয়ে দেন ছাত্রীদের হাত ধরে শ্লীলতাহানির অপরাধে। বড় ভাইয়ের মহৎ দায়িত্ব বলে কথা। ওপরের ঘটনাগুলো খুব অহরহই ঘটে। পুলিশেরা সাধারণভাবে বদমাইশ প্রকৃতির হয় এবং লাম্পট্য, ঘুষ খাওয়া এবং অন্যান্য সকল অন্যায়ের সাথে তাদের সম্পর্ক সরাসরি এবং তা মধুর।

তারা কোন মাটি এলাকার মাটি ফেটে বের হয়েই পৃথিবীর তাবৎ অপকর্মের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। তাদের বড়কর্তা, রাজনৈতিক নেতাদের ইচ্ছার সাথে তাদের কর্তব্যের রকমফের সবকিছুর পরও তারা পুলিশ অন্যায়কারী। সমাজ বিনির্মাণের এঞ্জিনিয়ার একজন শিক্ষক কয়েক বছরে লখোপতি হলে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা জায়েজ নয়, কিন্তু একটি(একজন নয় কিন্তু) পুলিশ কনেস্টবল সারাজীবনের জমানো টাকা আর পেনশন একসাথে করে একটি ছোট্ট বাড়ি করলেই তার দিকে প্রশ্নবাণ, সারাজীবনের ঘুষ-কামাইয়ের রংতুলির বাণ। সচিবালয়ের একজন পিয়ন ঢাকায় বাড়ি-গাড়ি-ফ্ল্যাট বানাতেই পারে, শিক্ষা বোর্ডের একজন কেরানী কোটিপতি হতে পারেন কিন্তু একটি পুলিশ ইন্সপেক্টর একটি মোটর সাইকেল চালালেই তার চেয়ে বড় ঘুষখোর থাকে না। মাত্র বিশভাগেরও কম মানুষের দুর্নীতির হুলের শিকার পুরো একটি জীব-পরিবার।

আশ্চর্য দেশ। পৃথিবীর সব দেশেই যখন সরকার বসচেয়ে বেশি বেতন দেয় পুলিশকে তখন আমাদের সরকার ঝাড়ুদার লেভেলের বেতন দিয়ে পোষে রাস্তা পাহারা দেয়া কুকুর। অন্যান্য বিভাগের দুর্ণীতি দেশকে চ্যাম্পিয়ন বানায় আর পুলিশ ঘৃণার শীর্ষেই থেকে যায় সারাজীবন। এরা আসে কোথা থেকে? এদের কি কোন পরিবার আছে? আমাদের মাঝেও কি কেউ এদের সন্তান, পিতা, কিংবা ভাই? আমার মনে হয় না। কারণ আমরা মানুষ, তারা পুলিশ।

একটি ঘটনা বলে শেষ করি। ২০০৩ সাল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। মন্নুজান হলের সামনে। যারা জীবনে কোনদিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন তারা বোধকরি সবাই জানেন যে সেখানে মুরগী আইন প্রচলিত (সন্ধা মানেই হাঁস-মুরগীর মত মেয়েদের ঘরে তুলতে হবে)।

সেই সময়টিতে প্রতিটি হলের সামনেই চলে ছাত্র-ছাত্রী উভয়েরই একরাত্রের বিরহের আকূলতা প্রকাশে ব্যস্ত থাকে। আর ভর্তি পরীক্ষার সময় হলে তো কথাই নেই। সারা ক্যাম্পাস ঘুরে কাউকে না পেলেও পশ্চিমপাড়ায় যাবেন সবাইকে পাবেন। এরকমই এক সন্ধায় প্রচন্ড ভীড়ের মধ্যে দু'জন ছাত্র দেখলাম বয়স্ক এক দাড়িঅলা পুলিশের সাথে বিতন্ডায় রত। পুলিশটি প্রায় মারা খাওয়ার জোগাড়।

আমি একটু এগোলাম। জানতে চাইলাম কি হয়েছে। ছাত্র দুজন জানালো সেই পুলিশ কনেস্টবল তাদের তুমি সম্বোধন করার মত দুৎসাহস দেখিয়েছে। মাত্র মেট্রিক পাশ একজন মানুষ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া একজনকে কেন তুমি বলবে এজন্য সবার সামনে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। পুলিশটি স্যরি বলেছে কিন্ত সেভাবে বললে হবে না, সবার সামনে বলতে হবে যে সে অন্যায় করেছে।

পুলিশটির বক্তব্য হল ছেলে দু'টি ভীড়ের মধ্যে অকারণে দৌড়াদৌড়ি করেছে, সেটা যেন না করে সেজন্য সে তাদের তুমি বলে সম্বোধন করে বারণ করেছে। বেচারা এখন বেশ বিপদে। কারণ তুমি বলার অধিকার তার সত্যিই নেই। আমি ছেলে দুটিকে চলে যেতে বললাম এবং পুলিশটির হয়ে মাফ চাইলাম। তারা অপমানিত বোধ করে আমাকে চ্যলেঞ্জ করলে আমার এক ক্যাডার বন্ধুর হস্তক্ষেপে সেখান থেকে চলে যায়।

পুলিশটি আমাকে এক দিকে ডেকে নিয়ে বলে বাবা আমার ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসীতে পড়ছে থার্ড ইয়ারে। ওই ছেলে দুটি আমার ছেলেও জুনিয়র। গলা ভেঙ্গে আসছিল তার প্রচন্ড অপমানে, চোখে একটু পানিও বোধ হয় দেখলাম। আমকে জিজ্ঞাসা করল, বাবা আমরা কি মানুষ না? আমি উত্তর দিতে পারিনি। উত্তর জানা ছিল না, আজও নেই।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।