www.choturmatrik.com/blogs/আকাশ-অম্বর
“কিতা কইরা?” – কথাটা শোনার পর বুঝতে হবে সিলেটীতে কেউ আপনাকে এটা জিজ্ঞেস করছে। লন্ডন বা ডাবলিনে থাকলে ভাষার এই টান বা accent এর সাথে আপনাকে পরিচিত হতেই হবে। “বাংলার” এই রূপান্তর কেন এবং কিভাবে হল? প্রশ্নটা পুরোপুরি ভুল হলো মনে হচ্ছে। আমি জানতাম যে, এটা বাংলা ভাষার একটা আঞ্চলিক রূপমাত্র। আমি আসলে ভুল জানতাম!
সিলেটী শুধুমাত্র বাংলাভাষার একটি আঞ্চলিক রূপ নয় মোটেই।
এটাকে আসামী ভাষারও একটা উপভাষা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, সিলেটীকে কোন কোন ভাষাতত্ত্ববিদরা একটি আলাদা ভাষার মর্যাদা দিয়েছেন। বাংলা ও আসামী ভাষা থেকে সিলেটী অনেকাংশে আলাদা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক সমঝোতার অভাব। Linguistics এর কথা অনুসারে, lack of mutual intelligibility।
খ্রিষ্টীয় ৪র্থ থেকে ১২শ শতাব্দীতে সিলেট প্রদেশ ছিল ঐতিহাসিক কামাপুরা রাজ্যের অন্তর্গত। ঐ রাজ্যের অন্তর্গত অন্য ভাষার সাথে (যেমন আসামী ভাষা) সিলেটী ভাষার মিল থাকাটা অস্বাভাবিক নয় মোটেই। কিন্তু পূর্ব ইন্দো-আরিয়ান গোত্রের অন্য ভাষাসমুহের (যেমন বাংলা) সাথে সিলেটী ভাষার প্রধান পার্থক্য ঘর্ষ-ব্যঞ্জন ধ্বনি। সিলেটী ভাষায় এই ঘর্ষণজাত ধ্বনির (fricative sounds) প্রাধান্য অনেক বেশী কিন্তু breathy voice stops এর ঘাটতি বিরাজমান। রয়েছে আরবী, হিন্দি, ফারসী, বাংলা এবং আসামী ভাষা থেকে ধারকৃত প্রচুর শব্দ।
যদিও সিলেটী ভাষা এখন লেখা হয় বাংলা হস্তলিপি (Bengali script) অনুসারে, সিলেটী ভাষার কিন্তু ছিল নিজস্ব হস্তলিপি। এই হস্তলিপির নাম ছিল সিলেটী নাগরী (Sylheti Nagari)। এটা এখন বিলুপ্তপ্রায়। বলা হচ্ছে, এই হস্তলিপির উৎপত্তি বিহারের কাইথি হস্তলিপি (Kaithi script) থেকে। সিলেটী নাগরী জালালাবাদি নাগরী, মুসলমানি নাগরী, ফুল নাগরী ইত্যাদি নামেও পরিচিত।
এই হস্তলিপিতে ছিল ৫টি মুক্ত ও ৫টি অমুক্ত স্বরবর্ণ এবং ২৭টি ব্যাঞ্জনবর্ণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।