আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘চীনা অস্ত্র বাংলাদেশ হয়ে নাগাল্যান্ডে নেয়ার পরিকল্পনা’

ব্যাংককে গ্রেপ্তার ওথিকর্ন নারুয়েনার্তনিচ ওরফে উইলি নামের এক চোরাকারবারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এ তথ্য পয়েছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।
তারা বলছেন, দক্ষিণ চীনের বিইহি বন্দর থেকে চীনা অস্ত্রের একটি বড় চালান বাংলাদেশর কক্সবাজার হয়ে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের নাগাল্যান্ডের বিদ্রোহীদের কাছে পাঠানোর পরিকল্পনার কথাও উইলি তাদের কাছে প্রকাশ করেছেন।
কীভাবে চীনা অস্ত্রগুলো বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নাগা বিদ্রোহীদের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে, তার বিস্তারিত বর্ণনাও উইলি জিজ্ঞাসাবাদে এনআইএ কর্মকর্তাদের দিয়েছেন।
নাগা বিদ্রোহী নেতা অ্যান্থনি শিমরের বিরুদ্ধে এনআইএর দেয়া অভিযোগপতত্রে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, সেগুলোও সঠিক বলে জিজ্ঞাসাবাদে তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন উইলি।
ওই অভিযোগে বলা হয়, চীনা অস্ত্রের একটি বড় চালান নিয়ে দক্ষিণ চীনের বিইহি বন্দর থেকে একটি জাহাজ শিগরিরই কক্সবাজারের দিকে যাচ্ছে।


শিমরেকে পাটনায় গ্রেপ্তার দেখানো হলেও এনআইএ স্বীকার করেছে যে, ২০১০ সালের ২ অক্টোবর নেপাল পুলিশের সহায়তায় কাঠমান্ডু থেকে তাকে ধরা হয়।
এনআইএর জিজ্ঞাসাবাদে শিমরে বলেছেন, চীনে এক অস্ত্র সরবরাহকারীর কাছ থেকে রকেট লঞ্চার, গ্রেনেড, অ্যাসল্ট রাইফেল ও গোলাবারুদ কিনে নাগাসহ উত্তরপূর্ব ভারতের অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর কাছে পাঠানোর জন্য ব্যাংককভিত্তিক একটি কোম্পানিকে গত এপ্রিলে ৮ লাখ ডলার অগ্রিমে দিয়েছেন তিনি।
৫০ বছর বয়সী শিমরে জানিয়েছেন, তিনি বেশ কয়েকবার বেইজিং সফর করেছেন এবং তার সঙ্গে চীনা গোয়েন্দাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।
এনআইএর অভিযোগপত্রে উইলি, শিমরে ও আরো দুজনকে অস্ত্র চোরাচালানের মামলায় আসামি করা হয়েছে। উইলিকে ভারতে ফেরত নিতে এনআইএর একটি প্রতিনিধি দল চলতি সপ্তাহেই থাইল্যান্ডে পৌঁছেছে।


এনআইএ কর্মকর্তারা বলছেন, অস্ত্রের ওই বিশেষ চালানটি ভিয়েতনামের কাছে দক্ষিণ চীন সাগরে বিইহি বন্দর থেকে বাংলাদেশের কক্সবাজারে পৌঁছানোর কথা। গভীর সাগরে ছোট মাছ ধরার ট্রলারে করে চালানটি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে নেয়া হবে। তারপরে সেগুলো ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলে বলে উইলি থাই পুলিশকে জানিয়েছেন।
উইলি বাংলাদেশে কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তা জেনে ঢাকার সহায়তায় নিয়ে অভিযান চালানোর ইচ্ছার কথাও এনআইএ কর্মকর্তারো জানিয়েছেন।
এনআইএর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটা সম্ভব হলে আমরা চোরাকারবারীদের এই চক্র ভাঙতে পারব।

আমরা এখন বাংলাদেশের কাছ থেকে ব্যাপক সহযোগিতা পাচ্ছি। ”
তিনি বলেন, এই অস্ত্রের চালান পৌঁছালে তার একটি অংশ জঙ্গিদের হাতে চলে যেতে পারে বলে বাংলাদেশ সরকার আশঙ্কা করছে।
“চীন থেকে ভারতে অস্ত্র পাচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহারে কারা জড়িত বাংলাদেশের পুলিশও তা জানতে চায়। ”
উইলিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এবং তাকে ফিরিয়ে নিতে এনআইএর একটি দল বর্তমানে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছে।
তারা জানান, ইন্টারপোলের মাধ্যমে উইলির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল।

গত বছর ভারত ও থাইল্যান্ড সরকারের মধ্যে বন্দি বিনিময় চুক্তি হওয়ার পর ভারতের অনুরোধে থাই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
এনআইএ কর্মকর্তারা বলছেন, থাই আদালতের মাধ্যমেই উইলিকে ভারতে ফেরত পাওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ তাদের হাতে আছে।
একে-৪৭ রাইফেল, মেশিনগান ও রকেট লঞ্চারসহ এক হাজার অস্ত্রের ওই চালানের দাম ২০ লাখ ডলার থেকে ১০ ডলারে নামিয়ে আনার বিষয়ে ন্যাশনালিস্ট সোশ্যালিস্ট কাউন্সিল অব নাগাল্যান্ড (এনএসসিএন-আইএম) নেতাদের সঙ্গে ও উইলির দর কষাকষির মেইলগুলো এনআইএর হাতে আছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কর্মকর্তারা বলছেন, অস্ত্র কেনার জন্য উইলি যে একটি চীনা কোম্পানিকে সাত লাখ ডলার পরিশোধ করেছিলেন, তার প্রমাণও তাদের হাতে রয়েছে।
শিমরেসহ এনএসসিএনের অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে উইলির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন যে মধ্যস্থতাকারী, তাকে এ মামলার সাক্ষী করা হয়েছে।


এনআইএর এক কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের বিশ্বাস, আমাদের হাতে থাকা প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা তাকে ফেরত নিতে পারব। ”
এনআইএর অভিযোগপত্র অনুযায়ী, চীনা কোম্পানি টিসিএলের প্রতিনিধি ইয়ুথনার সঙ্গে এনএসসিএনের নেতাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন উইলি। এনআইএর সন্দেহ, টিসিএল চীনা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নরিনকোর মধ্যস্ততাকারী।
ওই চুক্তি অনুযায়ী, ২০০৯ সালের মে মাসে উইলিকে এক লাখ ডলার দিয়েছিলেন শিমরে। পরে ওই অর্থ টিসিএলের কাছে পাঠানো হয়, যার ইলেক্ট্রনিক রসিদ এনআইএর কাছে রয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।


পরে আরো ৭ লাখ ডলার উইলির মাধ্যমে টিসিএলকে পরিশোধ করা হয়। আরো এ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয় ইন্টারমেরিন শিপিং কোম্পানি অব ব্যাংককের প্রতিনিধি কিত্তিচাইকে।
আফ্রিকার একটি দেশের একটি ব্যাংক শাখার মাধ্যমে ওই অর্থ লেনদেন করা হয় বলে এনআইএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।