মিলে মিশে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ!
আপনারা কি কেউ পাল্কিতে চড়েছিলেন? কার কার হয়েছিল সে অভিজ্ঞতা?
আমার হয়েছিল.........একবার নয়, দুইবার, তিনবার......।
প্রথমবার আমাদের গ্রামের বাড়িতে। বাড়িতে আমার দাদুর ঘরের পাশে বিশাল এক পুকুর। পুকুরের ওই পাড়ে অন্যদের বাড়ি, তারা আমাদের রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় নন, কিন্তু আত্মার সম্পর্কের আত্মীয় এবং অনেক গভীরই ছিল সে আত্মীয়তা। সবসময়ই এ বাড়ী ও বাড়ী আসা যাওয়া......।
সে বাড়ির দাদু আর আমার দাদু বলতে গেলে প্রায় প্রতিবেশী বান্ধবীই বলা চলে। তো সে বাড়ীর বড় ছেলের বিয়ে, আমি চাচা ডাকি।
আমার তো তখন রমরমা অবস্থা। আমার আব্বা বাড়ির সব ভাইদের মধ্যে মোটামুটি প্রথম সারির। তাই বেশীর ভাগ চাচা-ফুফুরাই স্কুল অথবা কলেজ ছাত্র।
আমি তাদের একমাত্র ভাতিজি। খালি আদ.........র আর আদ...র, আবদা.........র আর আবদা......র। আমার তখন বয়স কত?? তিন কি চার? কিন্তু সে স্মৃতি এখনো জ্বলজ্বল......। তখনকার গ্রামের বিয়েতে পাল্কির চল। তো, খোদ বরের পাল্কিতে বরচাচার কোলেই আমার আসন...।
পালকি মাটি থেকে তোলার সময় একটু ভয় ভয় লাগে, তারপরই বেহারাদের বিভিন্ন ছন্দ আর গানের তালে তালে যখন পালকি চলতে থাকে...............সে যে কি আনন্দ!!!!!! এটা ভাষায় প্রকাশ করা খুবই কঠিন।
দ্বিতীয়বার, তখন নব্বই-এর দশক। স্থান আমার মায়ের নানার বাড়ি। সেটাও গ্রাম। যথারীতি এক মামার বিয়ে......।
সে বাড়ির চলই হলো বিয়েতে বর-কনে পাল্কিতে চড়বে। বাকীদের জন্য যান্ত্রিক গাড়ির ব্যবস্থা। কিন্তু আমি কি আর পালকি সামনে দেখে গাড়িতে চড়ি?? মামাদেরও আদরের ভাগ্নী বলে কথা......ভিআইপি............হুমমমম......আবারো নানা রঙ-বেরঙে সাজানো খোদ বরের পালকিতে .........। রসিক জোয়ান(ব্যাচেলর) নানাদের নানা রঙ্গ.........এক সুযোগে দুটো বিয়ে হয়ে যাক......বারবার পালকি ভাড়া করতে হবে না.........কি বলো তুমি??? আমি তো রেগে মেগে.........হ্যাঁ, আমার বিয়ে? আমি কি বড় হয়েছি? আর, আপনাদের কেন বিয়ে করতে যাব??? আমার কি পাত্রের অভাব হবে নাকি?????..................... যত্তসব!!!!!!!!!!!!!!!
তৃতীয়বারও সেই একই বাড়িতে আরেক মামার বিয়েতে ঐতিহ্যবাহী পালকিতে চড়া.........। দোলটা সত্যিই খু-ব ভাল লাগে।
আজ শহুরে যান্ত্রিক সভ্যতার দাবড়ানিতে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছে আমাদের সেই ঐতিহ্য......।
সেদিন কোরিয়ান ভাষাশিক্ষা ক্লাসে এক লেসনে কোরিয়ার বিখ্যাত কিছু জায়গার নাম এসেছিল। কোন জায়গা থেকে সূর্যোদয় দেখা যায়, কোন জায়গা থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়। আলোচনাপ্রসংগে প্রফেসর আমাদের কাছে জানতে চান আমাদের নিজ নিজ দেশের বিখ্যাত জায়গাগুলোর নাম।
আমরা বাংলাদেশীরা যথারীতি বলতে লাগলাম কক্সবাজার, সুন্দরবন, কুয়াকাটা.........।
এক পর্যায়ে প্রফেসর প্রস্তাব দিলেন পরবর্তী একেক ক্লাশে একেক দেশের ছাত্ররা তাদের নিজেদের দেশের দর্শনীয় স্থান, কৃষ্টি-কালচার--এগুলোর উপরে প্রেজেন্টেশন রেডি করে নিয়ে আসবে , বর্ণনা করবে সবার সামনে। প্রথম দিনেই বাংলাদেশ.........।
যথারীতি শুরু হলো ইন্টারনেটে দেশের বিভিন্ন ছবি খোঁজা......। খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম এই পাল্কির ছবি......। আর কি, হয়ে গেলাম নষ্টালজিক.........।
।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।