আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপার পালকি (অবৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী)!

বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !

ভূমিকা:-জটিল বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লেখেন আমাদের জাফর ইকবাল স্যার। অবৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নিয়ে কেউ মাথা ঘামান না ! বিজ্ঞানের এই যোগে 'অবিজ্ঞানের' ভাত নাই। বিজ্ঞানে আমি আবার বরাবরই অজ্ঞান...! তাই 'অবিজ্ঞান'-এর সাথে 'বাঁধিছিনু প্রাণ !' রূপার পালকি ! ফুলবল খেলার মাঠের মত গোলাকার ধবধবে সাদা উঠোনের দক্ষিণ-পূব কোণে আমাদের বয়স্ক ঝাকড়া জলপাই গাছ । জলপাই গাছের সাথে ঠেস দিয়ে পড়ে আছে একখানা চেয়ার। নকশী কাটা চন্দন কাঠের চেয়ার ।

দীর্ঘদিন ধরে চেয়ারখানার অবস্থান ওখানে । অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ওটার মরা কাঠের পায়াগুলুতে শেকড় গজিয়ে গেছে । ওটাকে ওখান থেকে সরানোও হয়না । দিনে কিম্বা রাতে যখনি যার সুযোগ মেলে ওখানটাতে গিয়ে আসন গড়েন ! জায়গাটা আমারও বিশেষ প্রিয়। বিশেষত শুক্লাপক্ষের রাতে আমাকে ওখানে বসতেই হয় ! নইলে রাতে ঘুম হয়না ।

মোহাচ্ছন্ন জোছনায় বসে সাধন করি । বেহালা বাদন সাধন । ওখানটাতে আমার বেহালায় ঝড় ওঠে । ঝড় থেমেও যায় একসময় । চারপাশে নেমে আসে পিনপতন নিস্তব্ধতা ।

ঝড়ের শেষে নেমে আসা এই নিস্তব্ধতাটুকু আমার ভীষণ প্রিয় । আমি নেশাগ্রস্ত হই । নেশায় বুঁদ হয়ে চোখ মুদে পড়ে থাকি বিমুগ্ধ নীরবতায়...! এভাবে প্রায়শ জলপাই গাছের নীচে আমার গভীর রাত কাটে । কখনও অস্বাভাবিক কিছুর মুখোমুখি হতে হয়নি । অস্বাভাবিক বলতে ভূত-প্রেতের কথা বলছি ।

ওনাদের নিয়ে আমাদের গ্রামে মুখরোচক সব গল্প চালু আছে । সেই সব গল্পে গল্পে আমাদের গ্রামের অন্য এক নাম চালু হয়েছে-'ভূতের গ্রাম !' গ্রামবাসীর দাবী এ গ্রামে এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুস্কর,চলতি পথে অন্তত একবার যার ভূতের সাথে মোলাকাত হয়নি । যেমন, কোন লোক হয়তো রাতে বাজার থেকে মাছের থলে নিয়ে ফিরছেন,তেমাথার বটগাছ তলার মোড়ে আসতেই কেউ একজন পেছন থেকে ডাকল,-এ্যাই মাছ দে ! মাছ দে ! মাছ দিয়া যা !!! আমার ধারণা,ভূতদের অপছন্দের পাত্র আমি । এ যাবত্ত ওনারা আমাকে দর্শন দেননি ! ওনাদের মোলাকাত আশাও করিনি কোনদিন ! কিন্তু গতরাতে হঠাতই এক অতি আশ্চর্য ঘটনা ঘটল ! গত রাতে ছিল দ্বাদশী জোছনা । আমাদের ধবধবে উঠোনের ওপর কেউ যেন রূপোলী এক চাদর বিছিয়ে দিয়েছে ! যথারীতি ঝড়ের শেষে নেশাগ্রস্ত হয়ে বসে আছি আমি ! আচানক তীব্র সুগন্ধির ঝাপটা এসে লাগল নাকে ! সুতীব্র ঘ্রাণে আমার দম বন্ধ হবার উপক্রম ! মুহূর্তের জন্য নিঃশ্বাস নিতে ভুলে গেলাম ! ফুলের ঘ্রাণের মতক সে সৌরভ পরক্ষণেই বদলে গেল ।

এবার পেলাম আগরবাতির ঘ্রাণ ! মৃতদেহের পাশে যেন আগরবাতি জ্বালিয়ে সুগন্ধি করেছে কেউ ! যেন পাশেই মৃতদেহের সত্কার হচ্ছে,ফিসফাস কথা বলছে কেউ ! প্রচন্ড সে ঘ্রাণের খনিতে বসে লক্ষ্য করলাম আমার চারাপাশে ধোঁয়ার কুন্ডলী ! অদূরে কিছু লোক যেন খাটিয়াই করে বয়ে নিচ্ছে শবদেহ ! ওদের পায়ের শুকনো পাতা মাড়ানোর মর্মর শব্দ আসছে কানে ! সেই শব্দ স্পস্টতর হলো আরো ! হৃত্তপিন্ড জমে গেলে আমার । প্রাণ পাখি খাঁচা ভেঙ্গে উড়াল দিতে চায়লো ভয়ে ! শক্ত হয়ে চেয়ারের সঙ্গে সেঁটে রইলাম । নড়ন-চড়নের শক্তি নেই তখন । আকস্মিক শুকনো পাতা মাড়ানোর মর্মর শব্দ আর ফিসফাস কথার আওয়াজ বন্ধ হলো ! আগরবাতির ঘ্রাণও রইলোনা আর । আচমকা উঠোনের ঠিক মাঝখানে চোখ আটকে গেল আমার ।

সেখানে জ্বলজ্বল করছে একটি রূপোর পালকি ! সফেদ ঝিকিমিকি জরিতে অর্ধাবৃত পালকি চাঁদের আলোয় ঝিলিক মারছে । পালকি থেকে নেমে দাঁড়াল এক অপূর্ব সুন্দরী ! তার অবতরণের সঙ্গে সঙ্গে মাথার উপর থেকে ডানা ঝাপটিয়ে ঝমাঝম শব্দ তুলে উড়ে গেল এক ঝাঁক পাখি । বাতাস ভরে গেল গন্ধরাজের সুঘ্রাণে । অপরূপ সুন্দরী পায়চারি করছে পালকির চারপাশে । ভয় ভুলে গিয়ে তার রূপে মুহিত হলাম ।

রূপচাঁদা রঙ্গের শাড়ী গায়ে জড়ানো তার । খোঁপায় গোজা একথোকা গন্ধরাজ । পায়চারি বন্ধ করে আমার দিকে ফিরে তাকাল সে । চোখের পলকে সামনে এসে দাঁড়াল । ভয়ে চোখ মুদে ফেললাম ।

'চোখ খোলো !' সুস্পষ্ট আদেশ সুন্দরীর ! পিটপিট করে তাকালাম । 'তোমার হাতের যন্ত্রটার নাম কি ?' 'ভায়োলিন !' ভয়ার্ত কন্ঠে সুধালাম । 'এটা থেকে যন্ত্রণা দায়ক সুর বেরোয়,জানো ?' 'জানিনাতো !' 'জেনে নাও এবং দয়া করে ওটা আর বাজাবে না !' 'এটা কি তোমার ক্ষতির কারণ ?' 'আলবত্ত ! এটার সুরে আমার কান্না পাই !' 'আশ্চর্য ! তোমাদের অনুভূতিও কি মানুষের মত ?' 'আমি যদি বলি,আমাদের অনুভূতি আরো প্রখর...!' 'জানতে পারি,তুমি কোন সম্প্রদায়ের ?' 'না,জানানোর নিয়ম নেই । এটা নাও !' একটি সাদা গোলাপ বাড়িয়ে দিল সে ! 'এটা কেন ?' 'এজন্য যে,এ ফুল যতদিন সাথে রাখবে ততদিন ভায়োলিনের প্রতি তোমার আকর্ষণ থাকবে না । ' অনিচ্ছাসত্ত্বেও যন্ত্রমানবের মত বড়ালাম হাত ।

মোয়াজ্জিনের সুললিত আযান ভেসে এলো ! বিস্ময়ের ঘোর কেটে গেল আমার । আশপাশে তাকিয়ে দেখি,কোথাও কেউ নেই । রূপালী সুন্দরী নেই,রূপার পালকি নেই ! পড়ে আছি আমি এবং আমার বেহালা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।