আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডিজিটাল বাংলাদশের নমুনা: হাজার কোটি টাকার মালিক এক নব্য আওয়ামী লীগার এমপির লোভ!!!



জাহাঙ্গীর আলম আকাশ, বাগমারা থেকে ফিরে: রাজশাহীর বাগমারায় বাংলাভাই বাহিনীর বর্বর নির্যাতনে নিহত হয়েছিলেন পাঁচজন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেয়া আর্থিক অনুদানের তালিকায় স্থান পেয়েছে মাত্র একজনের নাম। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা যে ২১জনের তালিকা করেছেন তাতে মাত্র ৫ জন নির্যাতিত ও একজন নিহতের নাম রয়েছে। বাকি ১৫ জনই অনির্যাতিত। আর নির্যাতিতদেরকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া আর্থিক সহায়তার টাকার ওপর স্থানীয় সংসদ সদস্যের মদদে কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা পার্সেন্টেজ নিতে গিয়ে পুরো ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।

‘প্রধানমন্ত্রী আবার টাকা দেবে। নতুন করে নির্যাতিতদের তালিকাও করা হবে’ এলাকায় এমন শান্তনার বাণী প্রচার করে এই কেলেংকারির হোতারা ন্যক্কারজনক ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে তৎপর। বাগমারায় মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল, ২০০৯) দিনভর সরজমিন ঘুরে নির্যাতিত ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাজশাহীর বাগমারায় বাংলা ভাই বাহিনীর নেতৃত্বে জামাআ’তুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ-জেএমবির জঙ্গিরা হত্যা-নির্যাতন শুরু করে। এই জঙ্গি অভিযান বিস্তৃতি লাভ করে রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁয়।

এই অঞ্চলের কতিপয় প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপি-প্রতিমন্ত্রী, মেয়রের প্রত্য মদদে এবং পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জঙ্গিরা চরম ভীতি, ত্রাস ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। জঙ্গি অভিযানে তিন জেলায় ২৫ জন নিহত, তিন হাজারের বেশি মানুষ নির্যাতিত হন। শত শত মানুষ এখনও নির্যাতনের দুঃসহ নির্যাতনের স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন। সূত্রমতে, নিহত ২৫ জনের মধ্যে ৫ জন রাজশাহীর বাগমারার। এরা হলেন বাগমারা কনোপাড়ার জাতীয় পার্টির সমর্থক ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী মুকুল, সাকোয়ার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াসিন আলী, খয়রার আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুর এবং জঙ্গিরা ধরে নিয়ে যাবার পর থেকে আজও নিখোঁজ সাজুরিয়ার আবু তালেব,বারুইহাটির শহিদুল ইসলাম।

সরজমিন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, স্বয়ং বাংলাভাইয়ের উপস্থিতিতে জঙ্গিরা গোলাম রব্বানী মুকুলকে তথাকথিত ইসলামী জলসা ও বিচারের নামে তাহেরপুর হাইস্কুল মাঠে হাজার হাজার জনতার সামনে প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। তাকে নির্যাতনের সময় তার আত্মচিৎকার মাইকে শোনানো হয়েছিল সেদিন। অথচ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের সহায়তা মেলেনি এই মুকুলের পরিবারের জন্য। জঙ্গি নির্যাতনের শিকার হাসানপুরের কৃষক ফজলুর পায়ে এখনও লোহার রড ঢুকে আছে। মাত্র ১২ হাজার টাকার অভাবে ফজলু সেই রড আজও বের করতে পারছেন না।

ফজলুর করা জঙ্গি মদদদান মামলায় তত্তাবাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপির প্রভাবশালী মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম,জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শীশ মোহাম্মদ ২৫ জনের ৩১ বছরের কারাদন্ড দেয় আদালত। হতভাগ্য এই ফজলুর নামও স্থান পায়নি সেই নির্যাতিতদের ২১ জনের তালিকায়। হোটেল কর্মচারী তক্তপাড়ার আবদুস সালামের নির্যাতনের কাহিনী ওই সময়ের সংবাদপত্রের আলোচিত ঘটনা। অথচ তার নামটিও মনে ছিল না আওয়ামী লীগ নেতাদের। দরিদ্র সাইকেল মেকার চাঁনপাড়ার শাহ আলম লেবু শুধু নির্যাতিতই নন, জঙ্গিরা তার বাড়িও ভাংচুর করে।

কিন্তু তিনিও প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা পাননি। প্রায় ৫বছর ধরে নিখোঁজ সাজুরিয়ার আবু তালেবের বৃদ্ধা মা রাবেয়া বেওয়া এখন ভিা করে জীবন চালাতে বাধ্য হয়েছেন। জঙ্গিরা সেদিন তার ছেলেকে ধরে নিয়ে যাবার সময় পায়খানার স্লাবের ভেতর ঢুকিয়ে মারতে চেয়েছিল। এই ভিুকের আর্থিক সহায়তার ভাগ্য খোলেনি। বাংলাভাই বাহিনীর হাতে নির্যাতিত-তিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস চৌধুরীর নামও নেই তালিকায়।

সূত্র মতে, গত ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকা থেকে রাজশাহীর বাগমারায় জঙ্গি নির্যাতনের শিকার ২১ জনকে (নিহত ও নির্যাতিতসহ) এক লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তার চেক প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। পরদিনই অর্থাৎ ১৬ এপ্রিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (নব্য আওয়ামী লীগার কোটিপতি ব্যবসায়ী) ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হকের ঘনিষ্ঠজনেরা চেক পাওয়া ২১ জনকে চেকসহ ডেকে পাঠান এমপির প্রতিষ্ঠান সালেহা-ইমারত কোল্ড স্টোরেজে। ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেন দরবার বাবদ অনেক টাকা খরচ হয়েছে এজন্য প্রতি চেকে উল্লিখিত টাকার অর্ধেক এমপিকে দিতে হবে’ এই কথা বলে চেকগুলো ফেরত নেন এমপির লোকেরা। কিন্তু বেঁকে বসেন নির্যাতিত কালুপাড়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী পরিজান, হামিরকুৎসার আতাউর রহমান ও ঝিকড়ার মানিক। তারা চেক ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানালে বিষয়টি কানাকানি করতে করতে এক পর্যায়ে ফাঁস হয়ে পড়ে।

১৯ ও ২০ এপ্রিল রাজশাহীর এডিসি (শিা ও উন্নয়ন) সত্যেন্দ্রনাথ বাগমারায় গিয়ে এসব অভিযোগের তদন্ত করেন। তিনি অভিযোগের কিছু কিছু সত্যতা পেয়েছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। তবে তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি আনুষ্ঠানিক কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। নির্যাতিত ফজলুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতারা আমাকে প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক সহায়তা দেয়া হবে এবং এজন্য প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেক তাদেরকে (এমপির লোকজনকে) দিতেহবে বলে জানিয়েছিলেন। তাদের সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তারা তালিকায় আমার নামটি রাখেননি।

কিন্তু তালিকায় স্থান পাওয়া ২১ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জন বাংলা ভাই বাহিনীর হাতে নির্যাতিত বলে তিনি দাবি করেন। সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপি এনামুলের ঘনিষ্ঠ বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমান, তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম, এমপির ব্যক্তিগত সহকারী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আবদুস সালাম এমপির সঙ্গে পরামর্শ করে নির্যাতিত ২১ জনের তালিকাটি প্রণয়ন করেছিলেন। তবে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম সান্টু দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ২১ জনের সকলেই বাংলা ভাইয়ের হাতে নির্যাতিত। পার্সেন্টেজ দাবি করার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। উল্টো তিনি অভিযোগ করে বলেন, বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুস সোবহান চৌধুরী ২১ জনের তালিকার বিষয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

তাছাড়া কেবল যারা আবেদন করেছিলেনতাদেরই তালিকা করাহয়। অভিযোগ সম্পর্কে আবদুস সোবহান চৌধুরী বলেন, তারা এখন দ্বিমুখী সংকটে পড়ে পুরো ঘটনাটিকে ধামাচাপা দিতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমি প্রশ্ন করি, কি করে এবং কেন মুকুল, ইয়াসিন, শহিদুল এমনকি আমার নামটি বাদ পড়লো তালিকা থেকে? উল্লেখ্য, জঙ্গি নির্যাতনে নিহত ও সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত পরিবারের সদস্যদের মাঝে চরম ােভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। বাংলা ভাই বাহিনীর নির্যাতনে নিহত গোলাম রব্বানী মুকুলের বড়ভাই ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তফা বাবলু অত্যন্ত ােভ প্রকাশ করে বলেন, মুকুলদের মতো মানুষদের রক্তের বিনিময়ে বর্তমান মহাজোট রাজশাহীর ৬টি আসনই নিজেদের দখলে নিতে পেরেছে। অথচ সেই মুকুলদের নিয়ে নোংরা মনের পরিচয় দিচ্ছে বাগমারার আওয়ামী লীগ নেতারা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে রাজশাহী-৪ বাগমারার এমপি এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যারা আবেদন করেছিলেন কেবল তাদেরই নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন যে, আরও অনুদান দেয়া হবে। কাজেই বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম ও পার্সেন্টেজ গ্রহণের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ’ http://www.humanrightstoday.info


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.