ট্রুথ নট সেইড টুডে, কুড টার্ন টু আ লাই টুমোরো
পেপার-পত্রিকা পড়লে যে কারো মনে হবে, এইমূহূর্তে দেশের সব চেয়ে গুরূত্বপূর্ন ঘটনা হইলো আমাদের নেত্রীদ্বয়ের বাড়ি নিয়া টানাহেচড়া। অথচ দেশের মানুষ কারেন্ট-পানি পায় না দিনের অর্ধেক সময়। সারা দুনিয়া চিক্কুপাক্কু করতেছে "মন্দা" আর মন্দা কাটাইতে নানান কিসিমের স্টিমূলাস মুলা নিয়া। মূলা বলার করন হইলো উন্নত দেশের সরকারগুলান নিজেরাই নিশ্চিত না এই স্টিমুলাস প্রজেক্ট আসলেই মন্দা কাটাইতে কোন কাজে আসবে কিনা। এখন পর্যন্ত যা কাজের কাজ হইছে, পাব্লিকের ট্যাক্সের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার কিছু হোমড়াচোমড়া কম্পানীর পকেটে গেছে।
(ব্লগঃ পাললিক মন) অতীতেও এইসব বেইল আউটের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার শিল্পপতিদের পকেটে গেছেঃ উদাহরন রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া। (সূত্রঃ Globaliziation and Its Discontents: Joseph Stiglitz(Former Cheief Economist,Word Bank)পেজ ২২১)
দেশের ছবি
প্রথম আলোয় প্রকাশিত এই ছবিটি যেদিন ছাপানো হয়, মাঝের পাতার খবর...আমেরিকান দুধে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ।
পরদিনও(৬এপ্রিল ২০০৯) আবারো খামারিদের দুধ রাস্তায় ঢালার ছবি...
কেন? কারন ভারত থেকে কম দামি গুড়াদুধে বাজার ছেয়ে গেছে...নেসলে ডানোতো আছেই। ফলে আড়ং, প্রান, মিল্কভিটা দুধ সংগ্রহ কমাচ্ছে...খামারিরা কমদামেও দুধ বেচতে পারছে না। আমার প্রশ্ন নিজের দেশের দুধ...আমরা রাস্তায় ফেলে...বাইরের গুড়াদুধ(কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিকরও!) আমরা খাচ্ছি কেন? কারন বিদেশী দুধ বাজার দখল করেছে।
ইউরোপিয় ও আমেরিকার সরকার ডেইরী খাতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দেয়। বাংলাদেশ নাইজেরিয়ার মতো গরীব দেশে দুধ মাখন বেচার জন্য বিটিশ সরকারের কাছে ১২৬ মিলিয়ন পাউন্ড নিয়েছে নেসলে, ডেইরী ক্রেস্ট ২০০৫,২০০৬ সালে। (দ্য গার্ডিয়ান)
আমেরিকান ডেইরী ফার্ম গুলো ১৯৯৫-২০০৫ সালে মোট ৩.৬বিলিয়ন পেয়েছে। তাই দেশীয় খাত বাচাইতে শক্ত ট্রেড ব্যারিয়ার দিতে হত, মোটা অংকের আমদানী ট্যাক্স বসায়ে। করছে উল্টা.কমাইছে।
এখানে আরেকটা জিনিস খেয়াল রাখতে হবে...ব্যাপক মুনাফাকারী দেশী ডেইরী গুলান সবাই দুধ সংগ্রহ কমাইছে, খামারিদের কম দাম দিচ্ছে। কিন্তু তারা কি প্রফিট মার্জিন কমাইছে...উহু...২৭টাকায় কিনা দুধ- ৪৭টাকায় বিক্রি করতেছে। ফলে যা হচ্ছে, খামারিরা আগ্রহ হারাচ্ছে, তারা হয়তো অন্য পেশায় যাবে। যেমন ধানের দাম না পেয়ে কৃষক তামাক চাষ করছে। (ব্লগঃসাহারা তুষার)
এখন আসেন একটা মুভি দেখে আসি, LIFE & DEBT(১৫-২৫তম মিনিট দেখুন) কলছেড়ে ড্রামের পর ড্রাম দুধ মাটিতে ফেলার দৃশ্যটা জামাইকার।
জামাইকার এই পরিনতির কারন তারা আইএমএফ এর ঝণ নিতে গিয়া কিছু উন্নয়নমুখী(!) শর্ত হজম করছে। আমরাও কি তাইলে একি পথে!
নিচের ভিডিওতে যে বুড়োকে দেখছেন উনি সাবেক জামাইকান প্রধানমন্ত্রী, আর কোট পড়া ভদ্রলোকটা Stanley Fischer আইএমএফ এর সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর, বর্তমানে ব্যাংক অফ ইসরায়েলের গভর্নর!
আইএমএফ গডফাদারের প্রেস্ক্রিবশন
১। বাজেট কর্তন। (মুহিত সাহেব একাধিক বার এই বিষয়ে হু হা করেছেন) এর পিছনের উদ্দেশ্য স্বাস্থ্য,কৃ্ষি,শিক্ষা খাতে ব্যয় কমানো। কিন্তু কখনই বলবে না সরকারী গাড়ি বাড়ির, সামরিক কেনাকাটার পিছনে টাকা ঢালা যাবে না।
ফলাফল অসামাঞ্জস্যপূর্ণ সম্পদের বন্টন, সামাজিক অস্থিরতা।
"The best time to buy is when the blood on the streets sticks."-Dr. Mark Moebius, President, Templeton Emerging Markets
বাংলাদেশ আর্মির ব্যয়ের বহর দেখেন----
৬০৬.৮ মিলিয়ন USD (২০০৩) CIA World Fact Book, 2004
$৮৩৬.৯ মিলিয়ন USD (২০০৭) CIA World Factbook
১.৫ % of GDP : ২০০৬ Wiki
৫.৭% of GDP: ২০০৮ Wiki
এত খরচ করে কি উৎপাদন হইলো? এমনই করিতকর্মা এক সেনাবাহিনী উৎপাদিত হইলো, যারা ডজন ডজন কল এসএমএস পাইয়াও পিলখানা থিকা নিজেদের অফিসারদের রক্ষা করতে পারলো না। অথচ কয়েক কিমি দূরেই ঢাকা আর সাভার ক্যান্টনমেন্ট!
২। মুদ্রা অবমূল্যায়ন, মাইনে হলো টাকার মূল্য কমানো, যা কিনা রপ্তানি বাড়াবে। আসলে হবে উল্টা।
৩। ব্যাপক মাত্রায় বেসরকারীকরন। এইটা হইতেছে ফাইনাল ট্রিক। এটার জন্যই এত পেচঘোচ। যেহেতু আপনার মূদ্রার দাম কম, উনারা সহজেই আপনাকে কিনে নিবেন।
এই বেসরকারীকরন, বিদেশী কম্পানি গুলারে সহজভাবে আমাদের জাতীয় সম্পদের মালিক করে দিবে। যেমন আমাদের মোবাইল কম্পানি গুলান নাম মাত্র মূল্যে লাইসেন্স নিয়া, সরকারকে কোন শেয়ার না দিয়া দৈনিক কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করতেছে। একই পথে হাটবে আপনার তেল গ্যাস পানি সহ অন্যান্য খাত। আশংকা অলীক মনে হবার কোন কারন নাইঃ বলিভিয়াতে একটা আমেরিকান কম্পানিকে ওদের ওয়াসার দায়িত্ব দেয়া পর তারা দাম বাড়ায়া দিছিল---ফলাফল রায়ট। ইন্দোনেশিয়াতে একই কাহিনী গ্যাস নিয়া।
এরা সবাই আইএমএফের শর্ত মানতে গেছিল।
৪। ট্রেড ব্যারিয়ার উঠানো-- অর্থনৈ্তিক সমঝোতার ভিত্তিতে উন্নয়নের জন্য নাকি এটা দরকার। এর ফলাফল উপরে ডেইরী শিল্পের আলোচনায় উল্লেখ্য। কুল কুল করে বিদেশী পণ্য দেশে ঢুকবে, দেশের মানুষ নিজের উৎপাদিত জিনিসটা নিজের বাজারে বেচতে পারবে না!
"এইটাই হইলো একুশ শতকের নীলচাষী বানানোর খসড়া"
আপনে ভোট দিবেন, খাজনা দিবেন, রাজা যাবে রাজা আসবে।
কোন পার্থক্য নাই। কারন আসল রাজা আরেকজন, যে আপনার খাজনা ঘরে তুলছে। ঝণের, সুদের শতাংশ হিসাব কিতাবের আড়ালে।
খবরঃ "পৃথিবী খুলে যাচ্ছে, আমরা দ্বার বন্ধ করে থাকতে পারি না: প্রধানমন্ত্রী"(এশিয়ান হাইওয়ে সম্পর্কে )
১৯৯৭ সালের ইস্ট এশিয়ার সংকটে একমাত্র মালয়শিয়াই আইএমএফকে না বলেছিল। প্রতিবেশী ইন্দোনেশিয়ার সরকার গরম টাকার লোভ সামলাইতে পারে নাই।
ফলাফল ১২ বছর পরে দেখেন, কোথায় মালয়শিয়া আর কই ইন্দোনেশিয়া।
যা করতে হবে
১। দেশীয় সম্পদ (তেল,গ্যাস, কয়লা, পানি) যেকোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। (ব্লগঃ দিনমজুর )
২। বেহুদা খরচ (সরকারী গাড়ি বাড়ি, শতশত বেতনখোর ওএসডি, সামরিক কেনাকাটা) কমাতে হবে।
৩। বিদ্যুৎ,কৃ্ষি, যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে সরকারী ইনভেস্টমেন্ট বাড়াইতে হবে। খালি ঝণ, ভর্তূকি দিয়া কয় দিন? সার উৎপাদন কয় ছটাক বাড়াইছেন ১০ বছরে?ক্যাপ্টিভ প্ল্যান্ট দিয়া কয় মেগাওয়াট কারেন্ট হবে?
৪। আজাইরা ঘর বাড়ির দখল নিয়া লগি বৈঠা কাস্তে নিয়া মাইরপিট করতে চাইলে, রাজধানী ছাইড়া চরে যান। চরের মাটিতে রক্ত তাড়াতাড়ি শুকায়!
৫।
আইএমএফ, ওয়ার্ল্ড ব্যাংককে না বলতে হবে। পাব্লিক প্রটেস্টের মাধ্যমে গার্মেন্টস মালিকদের ৬০০কোটি টাকার খায়েস মিটাইতে হবেক। আগে আপনারা গাড়ি বাড়ি বেচেন, তখন বুঝবো আসলেই মন্দার কি রং!
(চলছে চলবে)
------------------------------------------------------
অন্যান্য লেখা
ব্যানানা বাংলাদেশ-২ (প্রথম আলোর ইহুদীডিম্ব!)
ব্যানানা বাংলাদেশ-১ (ইকোনমিক হিটম্যান)
কন্সপিরেসি থিওরী-পারট ৩ (সিউডো-জ়ঙ্গি রাষ্ট্রের ছায়া)
তুমি অধম হইলে আমি ততোধিক অধম হইব!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।