আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মার ভগাঙ্কুরে বিরক্তিকর শৃঙ্গার

পাখি এক্সপ্রেস

প্রচলিত ধর্ম এবং সমাজ ব্যবস্থায় মানব মানবীর মধ্যকার ভালোবাসা নামক বিষয়টি মারাত্মক হুমকীর মুখে। একজন পুরুষ অথবা নারী রূপে আত্মা বা মনের কয়েকরকম প্রকাশ ঘটে এবং স্বকীয় অথচ বহুবিধ অস্তিত্বের সৃষ্টি হয়। একজন পুরুষ হিসেবে আমি যখন বাবা, তখন সন্তানের জন্য (কেবল সন্তানের জন্য) অত্যন্ত সৎ। উপার্জনের একটি বড় অংশ থেকে সন্তানের ভরন পোষনের ব্যবস্থা করি। যখন আমি একজন সন্তান, তখনও আমি আমার মা-বাবাকে নিয়ে অশ্লীল কোন ভাবনায় ভুগি না, উপরন্তু একজন অসৎ পিতার সন্তান হলেও পিতার পক্ষে ফাইট করি।

আবার যখন আমি একজন ভাই, তখনও আমি সৎ। কিন্তু যখনই আমি একজন স্বামী, তখনই ভেতরে বসবাস শুরু করে এক দৈত্য। যে কিনা আমাকে প্ররোচিত করে অন্যায় করতে। একই সাথে দু’মায়ের গর্ভে আমার জন্ম নেয়া সম্ভব নয় অথবা পিতার বর্তমানে অন্য পিতার বীর্যেও পুন:জন্ম নেয়া সম্ভব নয়। অথচ একই সাথে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ অথবা বিভিন্ন নারীর সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব।

মানলাম সন্তান, বাবা, ভাই... সম্পর্কগুলো জেনেটিক। কিন্তু এও সত্য যে, পৃথিবী প্রথম মানব মানবী আদম ও হাওয়া স্বামী এবং স্ত্রী হিসেবেই পৃথিবীতে পদার্পন করে। (ইসলামসহ অন্য ধর্মের দৃষ্টিতে) মানবের ইতিহাসের প্রথম সম্পর্কের রূপই আজ দুর্নীতিগ্রস্থ হলেও অন্য সব ঠিক। এটিই আমাদের দীর্ঘ চর্চা। অথচ প্রেম সম্পর্কিত এ সম্পর্কের চাইতে অন্য কিছু অধিক গুরুত্ব বহন করে না।

আমরা পুস্তক পড়ে জ্ঞানার্জন করে সনদপ্রাপ্ত হলে পুস্তক ভুলে সেই সনদের গালে চুমু খাই। বইয়ের পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা চিড়তে কষ্ট না হলেও সনদপত্রের কোন অমূল্যায়ন হতে দিই না। সনদপ্রাপ্তির পরই পুস্তকগুলো মূল্যহীন হয়ে পড়ে। একজন সন্তান হিসেবে যখন কারো কাছে মায়ের গল্প করি তখন মায়ের আদরের বিষয়টি হাইলাইট করার প্রয়োজনবোধ করি না। কারণ মায়ের আদর প্রাকৃতিক।

মা আদর করবেনই, এটাকে অত বড় করে দেখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু একজন স্ত্রী হিসেবে যখন স্বামীর গল্প করি তখনই অনেক দুর্নীতিপরায়ন বাক্য ব্যবহার করে থাকি। যেমন বিয়ের প্রথম রাতের পর কোন বান্ধবীর সাথে গল্প করতে গেলে “আমি প্রথমে তার সাথে আন্তরিকতার সাথে কথা বলিনি, সেই অনেক চেষ্টার পর মুখ ফোটাতে হয়েছে”। আবার অনেকদিন পর “জানিস বেচারা আমাকে অনেক ভালোবাসে, আমি অবশ্য আমার ভালোবাসা বুঝতে দিই না”। বিয়েটি যদি দীর্ঘ প্রেমের (বিবাহ পূর্ববর্তী সম্পর্ক) ফসল হয় তবে সংশ্লিষ্ট নারী অথবা পুরুষ এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে যে পরিমান কৌশল খাটিয়েছে, একটি সফল রাষ্ট্র কায়েম করতেও এতো কৌশল অবলম্বন করতে হয় না।

প্রথমে বলে রাখি স্বামী এবং স্ত্রীর মাঝে কোন জেনেটিক সম্পর্ক নেই। বন্ধনটি ধর্মীয় অথবা সামাজিক। আবার ধর্মে সেই সম্পর্কের বিচ্ছেদের পথও খোলা রাখা আছে। সৃষ্টির আদিযুগ থেকে এখন পর্যন্ত একধরনের ধর্মের চর্চা করে আসছি। সেই গন্ডি থেকে এখনো বের হতে পারি নি।

একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদেরকে বাধিত হতে হয়। হয় জীবের কোষিক গঠন অথবা ধর্মের নিয়ম এই দু’ই আমাদেরকে বাধ্য করে। মায়ের সাথে সন্তানের সম্পর্ক অথবা বাবার সাথে সন্তানের সম্পর্কে জেনেটিক অর্গান কাজ করে। একজন স্বামী এবং স্ত্রীর মাঝে যতদিন সম্পর্ক টিকে থাকে ততদিনই ধর্মের কারণে টিকে থাকে। আবার বিচ্ছেদও হয় ধর্মের দেখানো পথে।

এখানে বিবেক অথবা আত্মার আত্মীয়তা সম্পর্কিত কোন বিষয় কাজ করে না। ধর্মে বিচ্ছেদের পক্রিয়াটা এতোটাই সহজ যে, একটি শব্দ অথবা বাক্য উচ্চারণেই তা সম্পন্ন হয়ে যায়। কতোটা ছোট করে ভাবা হয় একটি সম্পর্কের অস্তিত্বকে! বিবর্তনের কথা বলি। সেই এক কোষী অ্যামিবা থেকে শুরু করে আজকের বিচিত্র প্রাণী জগত। অনেক কিছুই ত্যাগ করেছি, আবার ভিন্ন কিছু গ্রহণ করেছি।

আদি যুগে অবাধ যৌন দেহমিলনের পাশাপাশি বর্তমান কুকুর বা বিড়াল জাতীয় প্রাণীর মতো ময়লাযুক্ত খাদ্যও গ্রহণ করতো মানুষ। এখনো কুকুর বা বিড়ালেরা ময়লাযুক্ত খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি অবাধ যৌন মিলনে অভ্যস্ত। আমরা মানুষরা খাদ্য গ্রহণে ময়লামুক্ত হয়েছি, এমনকি ঝকঝকে প্রসাধনে মলত্যাগে আরাম বোধ করি আবার যৌন মিলনে বহুগামিতাতেও সুখবোধ করি। মাটিতে পড়া মাংসের টুকরো খেতে গা চুলকালেও অন্যের স্ত্রী অথবা নিজ অনভ্যস্ত নয় এমন নারীর সাথে যৌন মিলনে খুব কমই কামিচ্ছা নিরোধিত হয়। একদিকে আমরা মানুষ মানুষ বলে চিৎকার করি আবার অন্যদিকে বন্ধুর স্ত্রীর ঠোটে বন্ধুরই লালা লাগার কথা ভুলে যাই।

আবার যারা ধর্ম বিরোধী, তাদের কাউকে কাউকে (অনেককেই) দেখা যায় আত্মার উদারতার সাথে সাথে যৌনতার উম্মুক্ততাকেও মিলিয়ে ফেলেন। আমি আমার জীবনকে যদি দুই অথবা আড়াই দিনের না ভেবে দীর্ঘ সময়ের ভাবি তবে জীবন খুবই কর্মমূখর হওয়ার কথা। ধার্মিকদের মতো দু’আড়াই দিনে লুটেপুটে খাওয়ার বিষয়টি আসে না যে যৌনতা দিয়ে জমজমাট করে রাখবো স্বল্প সময়ের জীবনটাকে। মানুষ বাদে প্রতিটি প্রাণী সাদৃশ্য ভিন্নজাতের প্রাণীর অস্তিত্ব থাকলেও থাকলেও মানুষের কাছাকাছি দ্বিতীয়টি নেই। অংগ প্রত্যংগের সংখ্যা বিচার বা আকৃতির কিঞ্চিত সাদৃশ্যের কথা বললেও সেখানে আবার মানুষ সৃষ্টির বিবর্তন সম্পর্কও রচিত আছে।

আমি কুকুর এবং শিয়ালের কথা বলবো। পার্থক্য শুধু একটির লেজ উর্দ্ধগামী অন্যটির নিম্নগামী। শিয়ালের ডাক কুকুর অপেক্ষা সুরেলা। না হয় ভিন্নতা নেই তেমন। কিন্তু একটি কুকুর অন্যটি শিয়াল।

তেমনি বাঘ-মেছো বাঘ-বিড়াল। গরু-মহিষ-ছাগল-ভেড়া। আমরা আমার দ্বৈত এবং স্ববিরোধী (ধর্ম এবং ধর্মছাড়া) আচরণের মাধ্যমে বোধহয় নারী এবং পুরুষকে দু’টি ভিন্ন প্রাণীজাতে ভাগ করতে যাচ্ছি। ধার্মিকরা (বেশিরভাগ) সবকিছুকেই ধর্ম এবং সমাজ দিয়ে বিবেচনা করি। কাউকে ১টাকা দান করার সময় বিসমিল্লা পড়ে দিই একটুখানি সওয়াবের আশায়।

আবার দানের ইচ্ছাও জাগ্রত হয় সওয়াবের আশায়। রমজান মাস আসলে স্রষ্টার ভান্ডারে সওয়াবের টানাপোড়ন লাগে। অপেক্ষাকৃত কম দরিদ্রতেও সোৎসাহে দানের হিড়িক লাগে। কিন্তু কেবল কারো উপকারের উদ্দেশ্যে আমরা দান করি না। আমরা পূণ্য করি স্বর্গ পাওয়ার আশায় পাপ করি না নরকে যাওয়ার ভয়ে।

আবার যখন ধর্মেই তওবার পথ আছে তখন একজন ধার্মিক হয়ে আমরা খুন, ধর্ষন পর্যন্ত করতে পারি। কারণ আমরা জানিনে কালেমায় বিশ্বাসী লোক একদিন না একদিন বেহেশতে যাবেই। বেহেশতে যাওয়ার জন্যতো কালেমা আর এক লাইলাতুল কদরই যথেষ্ট (মুসলমানদের জন্য)। কিন্তু যদি আমরা নিজের মনের ভেতরই একজন ঈশ্বর অথবা মান্য সৃষ্টি করে নিই; যার ভিত হবে আমার বিবেক, মনুষ্যত্ব এবং ভালো কাজের প্রদায়ক-তবে কি আমরা নিরর্থক মানুষে রূপান্তরিত হবো? ধর্মে বৈধতা আছে এমন অনেক কিছুকেইতো আমরা অপছন্দ করতে শিখে ফেলেছি। যেমন বহু বিবাহ।

এরকম আরো অনেক কিছু। এটা কি আমাদের জন্য বিপ্লবসূচক নয়? মা’কে দেখলে একজন পুরুষের যৌন ক্ষুধা আসে না, এমনকি নগ্নাবস্থায় দেখলেও। বোনের বেলায়ও তা। কিন্তু স্ত্রী নয় এমন কোন রমনীর অধিক রূপাশ্রয়ী বা সাধারণ হলেও যৌনক্ষুধার সৃষ্টি হয়। স্ত্রীর প্রতি অধিক ভালোবাসা থাকলেও একজন পুরুষ একাকী নির্জনতায় একজন রূপসীকে এড়িয়ে যেতে পারে না, যদিও তা বৈধ নয়।

এখানে তাকে ধর্মও আটকে রাখতে পারে না। কারণ ধর্মই তাকে ক্ষমা করার পথ খোলা রেখেছে। ধর্মে বিভিন্ন কঠিন গুনাহকে মায়ের সঙ্গে যৌন মিলনের মতো কর্মের সাথে তুলনা করলেও স্ত্রী নয় এমন রমনী সম্পর্কীয় মিলনের সাথে তুলনা করা হয়নি। প্রেমিক-প্রেমিকা অথবা স্বামী স্ত্রী’র সম্পর্ক নিয়েই যতো জোচ্চুরি এবং জালিয়তি। একই সাথে একাধিক নারী/পুরুষের সাথে যৌন অথবা শীতল প্রেম সম্পর্ক আমাদের বিবেকবোধে নূন্যতম যন্ত্রতার সৃষ্টি করে না।

“অনেকেই করে” এমন একটি চর্চার ওপর ভিত্তি করে আমরা সেই হীন কাজ করেই যাচ্ছি। নারীকে কেউ ভোগ্য আবার কেউবা উপভোগ্য বলে আখ্যায়িত করে। ভোগ্যইবা কেন? উপভোগ্যইবা কেন। ভোগ্য হলে সে অন্যান্য ভোগ্যপণ্য যেমন- খাদ্রদ্রব্যের সমকাতারে অবস্থান করে। আর উপভোগ্য হলে সে বিনোদনের অংশ হলো।

সেই ভোগ্য বা উপভোগ্য’র কাতারে যেতে ক’জন পুরুষ রাজি আছে? এখানে ভোগ্য বা উপভোগ্য রূপায়নে নারীর রূপ স্ত্রী অথবা স্ত্রী আকৃতির। কেন স্ত্রী অথবা প্রেমিকা ভোগ্য অথবা উপভোগ্য হতে যাবে? সহজ করে বলতে গেলে- স্বামী এবং স্ত্রীর মাঝে যদি সন্তানের অস্তিত্ব থাকে এবং সেই সম্পর্ক বিচ্ছেদ পরবর্তী সন্তানকে নিয়ে টানা হেঁচড়া হয়। স্বামী তার সন্তানকে নিয়ে টানার সময় ভুলে যান, স্ত্রী এই সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছে এবং একটি কষ্টকর প্রসবসময় পার করে এসেছেন। আবার স্ত্রীও ভুলে যান এই সন্তানটি তার স্বামীর বীর্য সহায় নিয়েই এসেছে। স্বামী এবং স্ত্রীর মাঝে বেশিরভাগ ঝগড়াই হয় নিজ অস্তিত্বের পক্ষে লড়াই করতে গিয়ে।

কে কিভাবে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করবে এমনই প্রতিযোগিতা চলে। কিছু কিছু নাস্তিককে দেখা যায় বিবাহ এড়িয়ে বিভিন্ন নারীমত্ত থাকতে। বিষয়টির যদি এভাবে ব্যাখ্যা করি- আমি নাস্তিক, আমারতো পরকাল নেই। স্বর্গ নেই। বিবিধ উপহার নেই।

বিশেষত নারী নেই। তবে জীবদ্দশায় আমি কিছু স্বর্গ বানিয়ে নিই। যেখানে আমি লটকিত বিভিন্ন উপহারের বাস্তব স্বাধ নিবো। এক্ষেত্রে আমি ভুলে যাই ঝকঝকে টয়লেটে মলত্যাগ করেই আমি অন্য প্রাণী (জন্তু) থেকে আলাদা হই। কিন্তু যৌনতার বিষয়ে বরাবরই আমি কুকুর বা অন্য প্রাণীর মতো থাকতে চাই।

আর ধার্মিকদের কথা বলা আর না বলাতে কিইবা আসে। কথা হচ্ছে- স্ত্রী অথবা পরস্ত্রীর সাথে সেক্স আগ্রহ স্বাভাবিক। আর আমি বলবো- না, এটি একটি দীর্ঘ চর্চার বিষয়। বলছি আত্মার শুদ্ধতার কথা। বিবেক ঈশ্বরের কথা বলছি।

ইন্দ্রয় নিয়ন্ত্রনের কথা বলছি। সন্তান হিসেবে মায়ের স্তনে দুগ্ধপান বৈ অন্য কর্ম দেখিনা। মায়ের যোনী মাধ্যমে জন্ম ছাড়া ভিন্ন কর্ম দেখি না। কেন দেখি না? এটি মোটেও প্রাকৃতিক নয়। কারণ এক সময় মা’ ছেলেও সেক্স হতো।

এখন হচ্ছে না। এটিই বিবর্তন। আমার বিবর্তন সিগারেট খাওয়ার স্টাইলেও প্রভাব ফেলছে। কিন্তু বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীর সাথে যৌন সম্পর্কের বিষয়ে কতটুকু প্রভাব ফেলছে, অথবা প্রভাবিত হতে আমরা কতটুকু আন্তরিক? প্রতিটি সম্পর্কেরই একধরনের শুদ্ধতা প্রয়োজন। মা সন্তানের সম্পর্কের শুদ্ধতা কি আমরা জানি এবং মানি।

ভাই বোনের বেলায়ও তা (অন্তত যৌন ক্ষেত্রে)। কিন্তু স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্কের মাঝে শুদ্ধতা কি? তা জানলেও মানতে আমরা অপারগ। কারণ বীর্য ত্যাগ অথবা গ্রহণের সুখের চাইতে মনে হয় বড় সুখ আর নেই। মায়ের কপালে অথবা শিশুর গালে চুমু খাওয়া অথবা একজন চিত্র শিল্পীর নতুন চিত্রকর্ম সৃষ্টির চাইতেও নয়। এটি একটি পরীক্ষামূলক লেখা।

এ টপিকসের কোন লেখা কারো পড়া থাকলে লেখক এবং বই’র নামটা জানাবেন।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।