"আমার রঙ্গীন পাল নীল সাগরে, ভেসে যায় তরী আমার ঢেউ এর তরে, চলো স্বপ্ন বুনি নীল দরিয়ায়, অসীম নীলে তরী আমার যায় উড়ে যায়!" তাড়াহুড়ো করে বাসে উঠেই ওমনি দেখলাম সিট একটা ফাকা । কিন্ত ওটা ছিলো জানালার পাশের সিট! অন্য সীট টা তে একটা মেয়ে বসা! আমি জিজ্ঞেস করলাম,কেউ কি আছে? মেয়েটি ইতঃস্তত করে মাথা নাড়ালো! আমি তাকে ওই জানালার পাশের সীট টাতে সরে যেতে বললাম! মেয়েটি অনেক অনিচ্ছা সত্তেও সরে বসল,আমি তার পাশে বসলাম! পরক্ষণেই মেয়েটি বলল,দেখুন পাশের ব্যাগটি আমার! ওটার দিকে একটু নজর দেবেন যদি হারায় তাহোলে কিন্ত আপনাকেই কিনে দিতে হবে! আমি চোখ বড় করে তার দিকে তাকালাম,মেয়েটির তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ হলো বলে মনে হয়না! পাচ মিনিট পর পর মেয়েটি আমার সাইডে ব্যাগ আছে কিনা তা দেখার চেষ্টা করে আর আমাকে জিজ্ঞাসা করে ব্যাগ টা আছে কি না! আমি ও পাচ মিনিট পর পর ব্যাগের দিকে তাকাই আর তাকে আশ্বস্ত করি যে,হ্যা,ব্যাগটি আছে! সত্যি বলতে কি ,আমি আমার নিজের ব্যাগ ও কোনোদিন এভাবে পাহারা দেইনি!!!!!!!!!!!! হঠাত করে মেয়েটির একটা ফোন আসলো,অনেক্ষণ কি যেনো ফিস ফিস করে কথা বললো! এরপর ফোন টা রাখার পর আমি তাকে নিঃশব্দে কাদতে দেখলাম! পাচ মিনিট পর অনেক সংকোচ নিয়ে তাকে বলেই ফেললাম,আপনার কি কোনো সমস্যা হয়েছে? মেয়েটি প্রথমে কোনো উত্তর দিলোনা! কিছুক্ষণ পর সে বলল,সে বাড়ি থেকে পালিয়ে একজন কে বিয়ে করেছে! আর সেই ছেলে নাকি এক রাত পর তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে গেছে! এরপর মেয়েটি আধা ঘন্টা ধরে শুধু কাদলো! আমি সত্যি মিথ্যা যাচাই করার সুযোগ পাইনি! আমি তার মায়াবী চোখের কান্নাটা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি! আমি তাকে শুধু একটা কথাই বললাম,আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন! সে মায়াবী চোখে আমার দিকে একটু তাকালো! বিশ্বাস করেন,আগে কোনো মেয়ে আমার দিকে এভাবে তাকায় নি! আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম,আপনি কোথায় যাবেন? সে জানালো,বাড়ীতে সে আর ফিরে যেতে পারবে না! কোন এক আত্মীয়ের বাসায় যাবে! আমি আর কথা বাড়ালাম না! তার ব্যাগটার দিকে তাকালাম! তাকে বললাম,ব্যাগটা কেউ নেয় নি! সে আমার কথায় কোনো কান দিলো বলে মনে হলো না! নিঃশব্দে কান্নার যে হু হু আওয়াজ আমি সেটা স্পস্ট টের পেলাম! বাইরে জানালার দিকে তাকালাম! মেয়েটির স্কার্ফের এক অংশ বাতাসে উড়ছে! আমি আনমনা কিছুক্ষণ তা দেখলাম! মেয়েটির চোখে কাজল! যেই ছেলেটি এমন মেয়ের সাথে প্রতারণা করতে পারে তার কথা চিন্তা করে মনে এক রাশ ঘৃণা জন্মালো! আমি আমার স্টপেজের কাছে যেতে লাগলাম! কেনো যেনো অদ্ভূত এক মায়া তৈরী হলো তার জন্য! বিশেষ করে আমাকে সে যেভাবে তার ব্যাগ তা দেখতে বললো,সেই বলাটাতে কি যেনো একটা অধিকারের আভাস পেলাম! তবুও আমি আমার গন্তব্যে পৌছে গেলাম! জীবনে প্রথম বারের মত কেনো জানি নিজের বাড়ির স্টপেজে নামতে ইচ্ছে করলোনা! অনেক কষ্টে উঠে দাড়ালাম! তার কাছ থেকে বিদায় ও নিলাম না! জাস্ট সোজা বাস থেকে নেমে গেলাম! তারপর একটু দাড়ালাম! বাস টা চলে যাচ্ছে,জানালার ফাক দিয়ে অদ্ভূত মায়াবী চোখে সে আমার দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে!
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।