আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাওয়া যাচ্ছে জয়ের সুবাস

নিজেদের মাটিতে জিম্বাবুয়ে শক্তিশালী দল, এটা সবাই জানে। কিন্তু কতটা? টেস্টের শেষ দিনে হাতে ৬ উইকেট নিয়ে ২৬৩ রান করে ফেলার মতো? চতুর্থ ইনিংসে নিজেদের সর্বোচ্চ রানই শুধু নয়, হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠের এই রেকর্ডটাও যে করতে হয় তাহলে! সঙ্গে এ মাঠে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতার এবং চতুর্থ ইনিংসে নিজেদের সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডও। বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ৪০১ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে টেস্ট সিরিজটাকে ২-০ করতে জিম্বাবুয়েকে পাড়ি দিতে হবে রেকর্ডময় এক পথ। পারবে তারা?
সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টটা আজ শেষ দিনে যেখানে থেকে শুরু হবে, তাতে রেকর্ডের খাতা থেকে কোনো আত্মবিশ্বাসই তুলে নিতে পারছে না জিম্বাবুয়ে। হারারে স্পোর্টস ক্লাবের রেকর্ডই বলুন, কিংবা বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে দ্বৈরথ—অতীতের কোনো ইতিহাসই পক্ষে নেই স্বাগতিকদের।

সাকিব-নাসিরের ফিফটির সঙ্গে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ৯৩ রান দ্বিতীয় ইনিংস শেষে ৪০০ রানের লিড এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম জয়ের জন্য প্রতিপক্ষকে ৪০০ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিতে পারল বাংলাদেশ। এখানে অবশ্য লক্ষ্যটা আরও ১ রান বেশি। চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের স্মৃতি তাই ফিরে ফিরে আসছে হারারেতে। ২০০৫ সালে ওই মাঠেই বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়।

সেটি যে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই, সেটি বোধ হয় পাঠকদের কারও অজানা নয়। সেবার বাংলাদেশ ৩৮১ রানের টার্গেট দিয়েছিল জিম্বাবুয়েকে। জিম্বাবুয়ে করতে পেরেছিল মাত্র ১৫৪।
জিম্বাবুয়ের বাইরে না গিয়ে শুধু হারারের রেকর্ডের খাতা উল্টালেও আশাবাদী হতে পারছে না স্বাগতিকেরা। এ মাঠে তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ভারতের বিপক্ষে ১৫৭।

তা ছাড়া হারারেতে চতুর্থ ইনিংসে জিম্বাবুয়ের সর্বোচ্চ ইনিংসই মাত্র ৩১০ রান, সব মাঠ মিলিয়েও রেকর্ডটা ৩৩১। কাজেই বাংলাদেশকে হারাতে হলে আজ সব রেকর্ডই লিখতে হবে নতুন করে।
তা ছাড়া টেস্টে ৪০০ রান তাড়া করে জয়ের ঘটনাই আছে মাত্র চারটি। অসাধ্য সাধনকারী সেই তালিকায় জিম্বাবুয়ের নাম লেখানোটা এমনিতেই কঠিন ছিল, কালই ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলায় এখন সেটা কঠিনতর। লাঞ্চের এক ঘণ্টা পর জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিং করতে পাঠিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।

এই ৪ উইকেটের মধ্যে প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে প্রায় একাই হারিয়ে দেওয়া ব্রেন্ডন টেলরও আছেন।
চতুর্থ দিনের উইকেটে দুই স্পিনার সাকিব আর সোহাগের ভালো বোলিং করাটা প্রত্যাশিতই ছিল। সেটি তাঁরা করেছেনও। এটা কোনো বিস্ময় নয়। বিস্ময়কর হলো, এই উইকেটে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে পেসার জিয়াউরের বোলিংও।

টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর নিরীহদর্শন মিডিয়াম পেস কতটা কার্যকর হয়, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন ছিল। অথচ সাকিব দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর জিয়াই হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের উৎসবের মধ্যমণি। টেলরকে এলবিডব্লু করে জয়ের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটাটা তুলে নিলেন। পরে উপড়ে ফেললেন ওয়ালারের স্টাম্পও। দিন শেষে জিম্বাবুয়ের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে অপরাজিত কেবল হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।

সঙ্গে ছিলেন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে তাঁরই ছোট ভাই শিঙ্গিরাই মাসাকাদজা। ৩৩.৩ ওভারের সময় চতুর্থ উইকেট পড়ার পর দুই ভাই মিলে খেলেছেন দিনের শেষ ১০.১ ওভার।
লাঞ্চের পর বাংলাদেশের রানের চাকা সেভাবে ঘুরছিল না। তার পরও এক ঘণ্টা ব্যাট করে ৪০০ রানের লিড নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমও হয়তো এই অঙ্কটারই অপেক্ষায় ছিলেন।

৯ উইকেটে ২৯১ রানে তাই অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান নাসির আর রবিউলকে ডেকে পাঠান তিনি।
এর আগে মুশফিকুর ফিরেছেন আশাভঙ্গের বেদনা নিয়ে। সকালে নাসিরকে সঙ্গী করে বাংলাদেশকে আস্তে আস্তে জয়ের স্বপ্ন দেখার জায়গায় নিয়ে গেছেন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিটা যখন দৃষ্টিসীমায়, তখনই বাধা হয়ে দাঁড়ালেন হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। আগের দিন সাকিবের উইকেট তুলে নিয়ে ভেঙেছিলেন সাকিব-মুশফিকের ৮৪ রানের জুটি, কাল আরেকবার ব্রেক থ্রু দিলেন মুশফিককে ফিরিয়ে।

গুড লেংথের বলটা হঠাৎ করেই লাফিয়ে উঠে ব্যাটের কানায় লেগে চলে যায় গালিতে সিবান্দার হাতে। কাকতালীয়ভাবে এবারও মাসাকাদজা জুটিটা থামিয়ে দিলেন ৮৪ রানেই। সোহাগ-রবিউলদের নিয়ে লিডটাকে ৪০০ পার করে নেওয়ার কাজটা করেছেন পর পর দুই ইনিংসে ফিফটি করা নাসির হোসেন। প্রথম ইনিংসে ৭৭ রানে আউট হয়েছিলেন, এবার নাসির অপরাজিত ৬৭ রানে।
রবিউলের ৫ উইকেট, সাকিব-মুশফিকুর-নাসির তিনজনেরই দুই ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি—হারারে টেস্ট জিতলে বাংলাদেশ দলের জন্য সেটা দলীয় প্রচেষ্টায় পাওয়া সাফল্যের অনন্য এক স্মারক হয়েই থাকবে।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।