এ মানচিত্র জ্বলছে জ্বলুক এই দাবানল পোড়াক চোখ আমার কাছে দেশ মানে এক লোকের পাশে অন্য লোক........
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় অয়নের, অয়ন চৌধুরীর, অয়ন চৌধুরী বাংলা সাহিত্যের উদিয়মান তারকা অথবা যার সব বই হটকেকের মত বিক্রী হয়,
নতুন উপন্যাস টা শেষ করার জন্য অথবা যান্ত্রিক নগর জীবনের ক্লান্তিকর অভিনয় থেকে সাময়িক মুক্তিপেতে এক আধা মফস্বলের ডাক বাংলো তে পরে আছে বেশ কয়েকদিন, ভালোই কাটছে বেশ অভিনব সে চিরকালের শহুরে ছেলে এখানে ঝিঝির ডাক, শেয়ালের আনাগোনা, খাটাশ নামক প্রাণীর দেখা পেয়ে ভালোই কাটছিলো।
কিন্তু গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় অয়নের, পাশের হাত ঘড়ি তখন রাত দুটো বেজে সাতাশ মিনিট নির্দেশ করে আচ্ছা এখন রাত্রি কয় প্রহর, ঝিঝির ডাক নেই, বাতাসের ফিসফাস কেই , আছে গুমোট অন্ধকার আর ছমছমে নিরবতা, না নিরবতা নয় কান্নার শব্দ, কে কাঁদে?
কান্নাটা বড় পরিচিত; তার নতুন অসমাপ্ত উপন্যাস বৃহন্নলা স্বপ্নের নায়িকা রূহীর মত করে কাঁদছে মেয়েটা ; নিঃশব্দ কান্না, রাতের বিছানায় মাঝে মাঝে চুড়িপরা হাতে চোখমোছার চেষ্টায় চুড়ির রিনিরিনে কান্না অথবা মধ্যদুপুরে বাথরুমের দড়জা আটকিয়ে জলের কলছেড়ে কান্না যে কান্নায় শুধু জলের কলকল শব্দ শোনা যায়...............................
মাঝরাতে অয়নের ঘুমভেঙে যায় একরাশ নৈঃশব্দ্যের ঝংকারে, অয়ন অনুভব করে সে একা নয় কে যেন আছে তার পাশে, কে যেন তার ভ্যাবলা চোখে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অয়নের দিকে যেমন করে তাকিয়ে থাকে বৃহন্নলা স্বপ্নের খুচরো চরিত্র জাহিদ অন্যার দিকে কেবল তাকিয়েই থাকে কোনদিন কিছু বলতে পারে না, সমস্ত উপন্যাস জুড়ে সে এক নগণ্য চরিত্র, সে তার অসহায় দৃষ্টি দিয়ে অয়নকে বলতে চায় আমাকে অসামান্য করেতোল হে স্রষ্টা, আমি এই নগণ্য চরিত্র হয়ে উপন্যাসের জগতে থাকতে চাই না.................
ক্রুদ্ধ দৃষ্টি দিয়ে অয়নের দিকে তাকিয়ে থাকে বৃহন্নলা স্বপ্নের নায়ক অনল; সে শুধু তাকিয়ে থেকেই খান্ত হয় না, তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চিৎকার করে ওঠে-- ঐ শালা তুই কি পাইছস? ফাজলামি পাইছস শালা? রূহীরে তুই ঐ পাঠা সেলিমের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবার চিন্তা করস? শালা আমার ব্রিলিয়ান্ট রেসাল্ট দেখাস আবার চাকরী দেস না তোর ব্রিলিয়ান্ট রেসাল্ট ধুইয়া আমি পানি খামু? তুই এক্ষনি তোর লিখা চেন্জ কর শালা কবে তোর মৌলী তোরে ছাইড়া গেছে তুই যুগ যুগ ধইরা সবার প্রেমিকারে অন্যের সাথে বিয়া দিবি?কেন তুই বোঝার বয়ষ হওয়ার আগে আমার বাপরে মাইরা ফেলবি, আমার মারে......
অয়ন ভীত চোখে তাকিয়ে থাকে উপন্যাসের চরিত্র গুলোর দিকে,
সবাই সমস্ত অনুযোগ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে, কেউ ই খুশি নয়, পাঠা সেলিমো তার হলুদ দাঁতের দেতো হাসি হেসে বলে রুহির সাথে তার বিয়েটা ভালো কিন্তু মাঝখানে অনলের সাথে প্রেমের দরকার নেই প্রেম পর্বটাও আমার সাথে করে দেন বস।
অয়ন; অয়ন চৌধুরী প্রানপণ চেষ্টা করে দু:স্বপ্ন থেকে যেগে উঠতে আর তখনি রূহী এসে বসে তার বিছানার পাশে অশ্রুহীন কান্নায় অনুযোগের চোখে তাকিয়ে থাকে অয়নের দিকে ঠিক যেমন করে দশ/পনের কিংবা এগার বছর আগে তাকাতো মৌলী কিংবা যে চোখে যুগ যুগ ধরে মৌলীরা তাকিয়ে থাকে .......................
সেই চোখ যেন নিঃশব্দে বলে যায় অয়ন কে তোমাদের এত অভিযোগ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে আর ঈশ্বরের সমান ক্ষমতা নিয়ে তুমিও কি ঈশ্বরের মত আচরণ করছো না? কি হয় আমাকে না কাঁদালে? কি হয় আমাদের সুন্দর এক্টা জীবন দিলে, কী হয় আমাদের জীবনটা তোমাদের জীবনের মত জটিল না হলে..........
অয়ন চৌধুরীর ঘুম ভেঙে যায় সীমাহীন নৈঃশব্দ্যে।
একজন অয়ন চৌধুরী ঈশ্বরের সমান ক্ষমতা নিয়ে ততোধিক অক্ষমতায় সিগারেট পুড়িয়ে যায় আর সেই ছাই পরে থাকে অসমাপ্ত বৃহন্নলা স্বপ্নের পাতায় পাতায়................
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।