থেমে যাবো বলে তো পথ চলা শুরু করিনি। ১৯৭১ সালে একদল লোক হিংস্র হায়েনা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত মিলিয়ে পাকিস্তান রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। তারা পাকিস্তানিদের দোসর হিসাবে এহেন কুকাজ ছিল না যা করে নাই। সেই সবের প্রমান তাদেরই পত্রিকা সংগ্রামের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে। এখন তারা সবাই সাধু সেজেছে!
জাতির জনক সে সময়ে সরাসরি কুকর্মের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
সমস্ত কুকর্মের হোতা, তাদের নেতাজি, পালিয়েছিলেন দেশ ছেড়ে। আর সাঙ্গপাঙ্গগুলো লুকিয়ে ছিল দেশের ভেতরে। অনেকে আত্মপ্রকাশ করেছে ভিন্ন নামে, ভিন্ন পরিচয়ে। ওয়াজ করার নামে অনেকে নতুন ভেক ধরেছে।
জাতি এবং সমাজের সামনে পাহাড়সম সেই দেশ গঠনের কঠিন দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের সেই বিচার শেষ করতে পারেন নাই জাতির পিতা।
কেননা, যুদ্ধোত্তর একটি দেশের পুনর্গঠন সহজ কোন কাজ নয়। এক পর্যায়ে তাঁকে বাধ্যহয়েই অনেক পাকিস্তানপন্থী আমলাকে কাজে নিয়োগ করতে হয়েছিল। আমাদের দেশের সেই সময়ের বাস্তবতায় এছাড়া আর কোন উপায়ও ছিল না।
পরে জাতির পিতা সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করেছিলেন, আশা করেছিলেন যে যারা একাত্তরে দেশের বিরুদ্ধে গিয়েছে, তারা হয়ত পাপবোধ থেকে পুনরায় দেশের ডাকে পাপের অনুশোচনা থেকে অতীতের ভুল বুঝতে পারবে।
কিন্তু জাতির পিতা যা জানতেন না, তা হল একজন মুক্তিযোদ্ধা সব সময়ে মুক্তিযোদ্ধা না, কিন্তু একজন রাজাকার সব সময়েই রাজাকার।
এরপরে বাঙলাদেশের আধুনিকতার প্রবক্তা রাষ্ট্রপতি জিয়া জাতির পিতার পথেই অগ্রসর হলেন শুধু না, মুক্তিযোদ্ধা হয়েও সেইসব রাজাকারদের পুনর্বাসন করলেন। তাঁর রাষ্ট্র পরিচালনায় এই ভুলের মাশুল আজও আমরা দিয়ে যাচ্ছি।
তবে জাতি হিসাবে আমরা ভেবেছিলাম, এমন সুযোগ পাবার পরে হয়তো রাজাকাররা মাফ চাইবে। কিন্তু অনেক বছর পার হয়ে গেল তারা মাফ চাইলো না। মাফ চাইবার কথা আসলেই তারা আরো গর্ব করে বলতে শুরু করল একাত্তরে তারা কোন ভুল করে নাই!
এরপরে গণ-আদালত হল।
সেখানে অনেক তথ্য প্রমাণ আসলো যুদ্ধাপরাধের। কিন্তু তারপরেও সেই সব দুষ্কৃতিকারীরা, ভণ্ডরা তাদের মত থেকে এক চুলও নড়ল না। বরঞ্চ জাহানারা ইমামের উপরে তাদের সব রাগ উপচে গিয়ে পড়ল। ( ছোট্ট করে বলে রাখি, এই দেশে শহীদ জননী অনেক আছেন, তাই উনাকে আমি শহীদ জননী বলি না; তা হলে আরো হাজার খানেক শহীদ জননীকে হেয় করা হয় )
২০০১ সালে এই ভণ্ডরা বিএনপির কাঁধে চড়ে মন্ত্রী পর্যন্ত হয়ে গেল! দেশ ও জাতি অবাক হল ক্ষমতার লোভের সেই চূড়ান্ত প্রকাশ দেখে। এমন হবে কেন? কেন বিএনপি-র জামাত ছাড়া চলে না?
তাই তো ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ বর্তমান সরকারকে সেই রায় দিয়েই পাঠিয়েছে যেন একাত্তরের সেই অপরাধীদের ন্যায্য বিচার করা হয়।
পুরো জাতি আজকে তাকিয়ে আছে এই বিচারের দিকে। আর পাপের এই ফল যে ভোগ করতে হবে, তা কখনোই এই অপরাধীরা চিন্তা করতে পারে নাই।
আজ তাই তারা বাংলাদেশে ইসলাম গেল, ইসলাম গেল রব তুলেছে! ধর্ম তাদের ব্যবসার বস্তু, ধর্ম তাদের খাওয়া পরার নিশ্চয়তা দেয়। সেই ধর্মের দোহাই দিয়ে তারা দুনিয়ার সব কিছুই লুটে খেতে চায়। এই ভন্ডদের বিরুদ্ধে আজ জনগণ।
পাপের প্রায়শ্চিত্ত বলে একটা কথা আছে। দুনিয়াতেই আল্লাহ প্রায়শ্চিত্ত কিছুটা করিয়ে নেন। এরশাদ সাহেব তার একটা উত্তম উদাহরন। এখন শৌর্য-বীর্যে একদা গর্ববোধকারী ইসলামের ধর্ম ব্যবসায়ীরা জানে বাঁচার জন্যে মরিয়া হয়ে গেছে।
২০১২ সালের এই বিজয়ের মাসে, আসুন, আরেকবার আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নেই।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করবোই। ভলের মাশুল না দিয়ে জাতি এগোতে পারবে না। সময় এসেছে নিজেদের ভুলের প্রয়াশ্চিত্ত করার।
প্রতিজ্ঞা করি এই বিচার আমাদের দেশে মাটিতে হবেই হবে। ধরে নিন এইটাই আমাদের নতুন প্রজন্মের ছোটখাট মুক্তিযুদ্ধ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।