আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংকট ও বাংলাদেশ



সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় যে সংকট শুরু হয়েছিল, তা ক্রমেই ঘনীভূত হচ্ছে। বিশ্বমন্দার এই ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশেও। এর আঘাতের শিকার প্রধানত পোশাকশিল্প, নিটঅয়্যার, জনশক্তি রফতানি ও হিমায়িত মৎস্যশিল্প খাত। এই চারটি খাতই এখন এক ধরনের হুমকির মুখে। পোশাক, হিমায়িত মৎস্য ও নিটঅয়্যার রফতানির পরিমাণ দিন দিন কমতে শুরু করেছে।

জনশক্তি রফতানির সুযোগও ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এর ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ কমে আসছে ও আসবে। ভাটার টান পড়বে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের ভান্ডারে। টালমাটাল অবস্থার সম্মুখীন হবে দেশের অর্থনীতি। সরকারের পক্ষ থেকে এর আগে আশার বাণী শোনানো হয়েছিল যে, মন্দায় বাংলাদেশ তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।

তবে বাস্তবে তা সম্ভব হচ্ছে না। এরই মধ্যে বিশ্বমন্দার একটি বড় ধরনের আঘাত এসে লেগেছে জনশক্তি রফতানি খাতে। হঠাৎ করেই মালয়েশিয়া সরকার ৫৫ হাজার ১শ ৪৭ বাংলাদেশির ভিসা বাতিল করে দিয়েছে। মালয়েশিয়া ১০ মার্চ এই ঘোষণা দিয়েছে। অথচ আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তাদের প্রায় ৫ লাখ কর্মী নেওয়ার কথা ছিল।

তারা আরও জানিয়ে দিয়েছে যে, মন্দার কারণেই বাংলাদেশি কর্মীদের নেওয়া সম্ভব হবে না। তাদের এখনকার নীতি হচ্ছে আগে দেশের লোকের কর্মসংস্থান, পরে বিদেশিদের। মালয়েশিয়া সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এয়ারলাইনগুলোকে চিঠি দিয়ে বলেছে ১০ মার্চের পর কোনও বাংলাদেশি কর্মী যদি তারা নিয়ে আসে এবং কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থি'তির সৃষ্টি হয় তবে তার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সকেই নিতে হবে। এই পরিস্থি'তিতে মালয়েশিয়াস্থ' বাংলাদেশের হাইকমিশনার ও বায়রার সভাপতিকে চিঠি দিয়ে কোনও শ্রমিক না পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। উদ্ভূত এই পরিসি'তিতে বাংলাদেশ সরকার স্পষ্টতই বিব্রত।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখার জন্য মালয়েশিয়াকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে চলছে কূটনৈতিক তৎপরতা। তবে এ থেকে কতটুকু ফল পাওয়া যাবে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যায় না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণেই মালয়েশিয়া বিদেশি শ্রমিক নিচ্ছে না- এটি বাসত্মবতা। হঠাৎ করে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিকের ভিসা বাতিলের ঘটনায় 'প্যানিক' বা আতঙ্ক তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থি'তি সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না।

তার বক্তব্য হচ্ছে, এজন্য নতুন শ্রমবাজার খুঁজতে হবে, যে বাজারগুলো এখনও হাতে রয়েছে সেগুলো ধরে রাখতে হবে। তিনি যতই সান্ত্ব্বনার বাণী শোনান না কেন, এ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন মহলে, বিশেষত জনশক্তি রফতানির সঙ্গে জড়িত মহলগুলোতে আতঙ্কের সঞ্চার হয়েছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার পরিস্থি'তি সম্পর্কে যতটুকু জানা গেছে তাতে মনে হচ্ছে, আগামী এপ্রিলের আগে অবস্থার কোনও পরিবর্তন ঘটবে না। মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থি'তি খুব একটা ভালো নয়। ক্ষমতাসীন ইউএমএন (ইউনাইটেড মালে ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন) সরকারবিরোধী দলের চাপের মুখে।

বিদেশি শ্রমিক আমদানি নিষিদ্ধ করার জন্য বিরোধী দল তাদের চাপ অব্যাহত রেখেছে। একসঙ্গে ৫৫ হাজার ভিসা বাতিল হয়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছে জনশক্তি রফতানিকারক এজেন্সিগুলোও। ভিসা বাতিল হয়ে যাওয়ায় সংশিস্নষ্ট কর্মীকে তাদের প্রায় ১১শ' কোটি টাকা ফেরত দিতে হবে। অথচ এরই মধ্যে তারা ভিসার জন্য মালয়েশিয়ায় বহু টাকা খরচ করে ফেলেছে। যারা দু' লাখ আড়াই লাখ টাকা খরচ করে ভিসা জোগাড় করেছে তাদের অবস্থা আরও দুর্বিষহ।

এজেন্সির কাছ থেকে তাদের দ্রুত টাকা ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা বলতে গেলে নেই। চাকরির সুযোগও হাতছাড়া। যারা ভিটামাটি বিক্রি করে বা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে এজেন্সিকে টাকা দিয়েছে তাদের একূল-ওকূল দুকূলই গেছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে শুধু মালয়েশিয়া নয়, মরিশাসও বহু বাংলাদেশি শ্রমিক ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে। দুবাইয়েও প্রায় ৩০ হাজার শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে।

তাদের মধ্যে বাংলাদেশি বহু কর্মী রয়েছে। মন্দার কবলে পড়ে কুয়েতের বেসরকারি ৮০ ভাগ প্রকল্পের কাজ চলছে ঢিমেতালে। ছাঁটাই অথবা ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিদেশি শ্রমিকদের। চাকরি হারিয়ে মালদ্বীপ থেকেও বাংলাদেশি শ্রমিকরা দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে। সিঙ্গাপুর থেকেও চাকরি হারিয়ে গত ৩ মাসে প্রায় এক হাজার শ্রমিক দেশে ফিরেছে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.