আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সন্ত্রাস নয়ঃ শান্তি, সম্প্রীতি, উদারতা ও পরমত সহিষ্ণুতার ধর্ম ইসলাম



সন্ত্রাস নয়ঃ শান্তি, সম্প্রীতি, উদারতা ও পরমত সহিষ্ণুতার ধর্ম ইসলাম সন্ত্রাস নয়ঃ শান্তি, সম্পী্রতি, উদারতা ও পরমত সহিষ্ণুতার মহান ধর্ম ইসলাম । বিশ্ব নিয়ন্তা কতৃক স্বীকৃত শান্তি প্রিয় ধর্ম ইসলাম। এরশাদ হচ্ছে-‘আল্লাহ্র নিকট মনোনীত ধর্ম ইসলাম’। আর তিনি ইসলামে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ করতে বলেছেন। এরশাদ হচ্ছে ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইসলামে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ কর।

আর শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না। কেননা শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’। বিশ্ব প্রতিপালক মহান লক্ষ্য উদ্দেশ্য নিয়ে মানব ও জ্বিন জাতিকে সৃজন করে তিনি সর্বশেষ ধর্ম হিসেবে ইসলামকে মনোনীত করেছেন। কোন জিনিসের স্রষ্ঠা বা পরিচালক তার সৃজিত বিষয়ের/জিনিসের বিনষ্ট সাধন কোন ক্রমেই চান না। যেহেতু স্রষ্টা কর্তৃক স্বীকৃত ধর্ম ইসলাম, বিধায় ইসলামই সর্বোৎকৃষ্ট এবং সর্বোত্তম পালনীয় ধর্ম এতে কোন প্রকার দ্বিধা সংশয় নেই।

তাইতো তিনি তাঁর মনোনীত ধর্ম পুরোপুরিভাবে মেনে চলার প্রতি বিশেষ ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। সাথে সাথে ইসলাম বর্হিভূত সকল প্রকার ভ্রান্ত শয়তানি পথ পরিহার করার প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। সর্বজন বিদিত সৃজনশীল ধর্ম ইসলামে কোন প্রকার জোরজবরদস্তির সামান্যতম সুযোগ নেই। পবিত্র কুরআনে বিঘোষিত হয়েছে ‘ধর্মের ব্যাপারে কোন প্রকার বাড়াবাড়ি তথা জোর জবরদস্তি করা যাবে না’। যে সব উৎস থেকে সন্ত্রাস উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ লাভ করে তার মধ্যে জোরজবরদস্তি তথা বাড়াবাড়ি অন্যতম উৎস।

যেহেতু ইসলামে জোর-যুলুম বা বাড়াবাড়ির সামান্যতম সুযোগ নেই সেহেতু ইসলামে সন্ত্রাসেরও কোন প্রকার সুযোগ নেই। ইসলাম সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদকে কোন সময়ই প্রশ্রয় দেয়নি বরং সন্ত্রাস উৎপত্তি ও বিকাশলাভের সকল উৎসকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অন্যায়, অনাচার, দুর্নীতি, দুরাচার, যেনা, ব্যাভিচার, খুন, ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, যুলুম, নিপীড়ন, জোরজবরদস্তি, বাড়াবাড়ি, সীমালংঘন ইত্যাকার সকল বিষয়কে কেন্দ্র করে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংঘটিত হয়। আর ইসলাম এসকল অশালীন কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং এ সবের শাস্তি বর্ণনার পাশাপাশি এগুলো নির্মূলের চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সামান্যতম কৃপণতা প্রদর্শন করেনি। ইসলাম সন্ত্রাসীভাবে তথা জোরপূর্বক ভাবে কাউকে ধর্মান্তরিত করেনি।

তরবারির মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করেনি। ইসলামের মহান আদর্শ, উদারতা, মহানুভবতা, পরমত সহিষ্ণুতার প্রতি আকৃষ্ট হয়েই সকলে ইসলামের স্বর্গীয় সুধা পান করার গভীর প্রত্যাশায় দলে দলে ছুটে এসে ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়েছে। ইসলামের নবী কর্তৃক পরিচালিত সকল যুদ্ধই ছিল আত্মরক্ষা, প্রতিরক্ষা ও প্রতিরোধ মূলক। কোন একটি যুদ্ধও আক্রমোনাত্মক ছিল না। পবিত্র কুরআনে বিষয়টি এভাবে বিঘোষিত হয়েছে।

মহান আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ‘তাদেরকে যুদ্ধ (কিতাল) -এর অনুমতি দেয়া হলো যারা আক্রান্ত হয়েছে, কেননা তাদের উপর যুলুম করা হয়েছে’। আরো বলেন, ‘যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র রাহে যুদ্ধ করো, কিন্তু সীমালংঘন করো না। আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না’। আয়াতদ্বয়ে পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে ইসলাম স্রেফ আত্মরক্ষা মূলক যুদ্ধের অনুমতি দিয়েছে। সাথে সাথে সীমালংঘন (সন্ত্রাস) করা থেকে বিরত থাকার প্রতিও কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঐতিহাসিক আমীর আলী এ বিষয়টি চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন যা নিম্নে প্রদত্ত হলো- Islam seized the sword in self drfrence and held it in self defence, as it will ever do. But Islam never in the fered with the dogmas of any moral faith never persecuted, never established an Inquisition it never invented the rack or the stake for stifling difference of opinion, or strangling the human conscience, or exterminating heresy: অর্থাৎ ‘ইসলাম আত্মরক্ষার জন্য অস্ত্রধারণ করেছিল এবং ভবিষ্যতেও একই কারণে অস্ত্রধারণ করবে। কিন্তু ইসলাম কোন দিনই নৈতিক বিশ্বাস সংক্রান্ত মতবাদের সঙ্গে বিরোধিতায় লিপ্ত হয় নি; কখনো যুলুম করেনি, কখনো সরকারী তদন্ত স্থাপন করেনি। ইসলাম কখনো মতানৈক্যকে শ্বাসরুদ্ধ করে মারার কোন উপায় উদ্ভাবন করেনি, মানুষের বিবেককেও গলাটিপে মারবার বা বিরুদ্ধ মতবাদকে নির্মূল করার কখনো কোন চেষ্টা করেনি’। উপরোক্ত আলোচনা সামনে রেখে একথা দ্বিধা সংশয় ছাড়ায় দৃঢ় কন্ঠে বলা যায় সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের কোন প্রকার দূরতম সম্পর্ক নেই। বরং সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে নির্মূল করে তদস্থলে সুখ ও শান্তি প্রিয় সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের মহান লক্ষ্যেই ইসলাম আবির্ভূত হয়েছে।

যারা ইসলাম ও মুসলমানদেরকে সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত করতে চায় তারা নিছক অজ্ঞতা ও হীনস্বার্থ সিদ্ধির লক্ষ্যেই এরূপ হীনকর্মে নিজেদেরকে জড়িয়ে ফেলেছে। তারা ইসলাম ধর্মকে জাতির নিকট প্রশ্নবিদ্ধ করার হীন পরিকল্পনায় সদা ব্যাস্ত। তারা ইসলামের মহান আদর্শে ও মুসলামানদের নিদোর্ষ চরিত্রে সন্ত্রাসের কালিমা লেপন করে ইসলামের মর্যদা, আদর্শ ও অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখিন করে দিতে চায়। তারা অন্যান্য বাতিল মতাদর্শের সাথে ইসলামী জীবনাদর্শকে তালগোল পাকিয়ে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে চায়। অতীত ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শান্তির অগ্রদূত মহানবী (ছাঃ)-এর আবির্ভাব কালীন সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত যারা সদা-সর্বদা ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে শত্রুতা করেছে, ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি সাধনে সদা ব্যপৃত থেকেছে, সকল প্রকার হীন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদ্ধতি অব্যহত রেখেছে।

তারাই আজ ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম এবং মুসলমানদেরকে সন্ত্রাসী জাতি হিসাবে প্রমাণ করতে আদ-জল খেয়ে মাঠে নেমেছে। মুসলমানদের ক্ষতি সাধনই তাদের জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য। বিধায় একথা পরিষ্কারভাবে বলা যায় ইসলামের সাথে সন্ত্রাসের কোন প্রকার সম্পর্ক নেই বরং ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি, উদারতা ও পরমত সহিষ্ণুতার মহান ধর্ম। আলোচ্য প্রবন্ধে এ প্রসঙ্গে প্রামাণ্য আলোচনা উপস্থানের প্রয়াস পাব। সন্ত্রাসঃ সন্ত্রাস এমন একটি শব্দ যার প্রতি ঘৃণা, ধিক্কার ও ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া চলছে বিশ্বব্যাপি।

কিন্তু আশ্চর্যের বষিয় হলো এর সংজ্ঞা ও স্বরূপ সম্পর্কে সর্বসম্মত ব্যাখ্যা আজও নির্ণীত হয়নি। যে কারণে দেখা যায় যে, যা একটি গোষ্ঠীর কাছে স্বাধীকার আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম বা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, তা অন্যের ভাষায় চরম ধিকৃত বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাস। কারো বক্তব্যে যা মানবাধিকারের চরম লংঘন, অন্যের ভাষায় ঠিক তা-ই হলো আত্মরক্ষামূলক ব্যবস্থা। সন্ত্রাসের সর্বজন গ্রাহ্য একটি সংজ্ঞা নির্ধারণে চলছে বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা। তবে সব কিছুর আগে আভিধানিক অর্থে সন্ত্রাস কি? সেটাই ভেবে দেখা দরকার।

সন্ত্রাস শব্দ ত্রাস থেকে উদ্ভুত। ত্রাস হলঃ ভয়, শংকা, ভীতিকর। আর সন্ত্রাস হল আতঙ্কগ্রস্ত, অতিশয় ত্রাস বা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা। সন্ত্রাসিত-সন্ত্রাসযুক্ত, সন্ত্রস্ত। সন্ত্রাস হল কোন উদ্দেশ্যে মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা; অতিশয় শংকা বা ভীতি।

সন্ত্রাসবাদ হল রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের জন্য হত্যা, অত্যাচার ইত্যাদী কার্য, অনুষ্ঠান, নীতি। আর সন্ত্রাসী যে বা যারা কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য শংকা বা ভীতি সৃষ্টি করে। সন্ত্রাস শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ হল terror-exteremefear যৎপরো নাস্তি আতংক, সন্ত্রাস; dreadful object ভয়ংকর ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্ত্ত terrorism সঙ্গবদ্ধভাবে ভয় দেখিয়ে বশ মানানোর নীতি, সন্ত্রাবাদ। terrorist সন্ত্রাসী। terrorize সন্ত্রাসিত করা, ভয় দেখিয়ে শাসন করা।

সন্ত্রাসের আরবী প্রতি শব্দ হলো ‘ইরহাব’ অর্থাৎ কাউকে ভয় দেখানো, সন্ত্রস্ত করে তোলা। পারিভাষিক অর্থে সন্ত্রাস হলোঃ যে কোন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অত্যাচার, হত্যা প্রভৃতি হিংসাত্মক ও ত্রাসজনক পথ বেছে নেয়া, রাজনৈতিক ক্ষমতালাভের জন্য সংঘবদ্ধভাবে ভয় দেখিয়ে বশ মানানোর নীতি অবলম্বন করা। সন্ত্রাসবাদী যে, সন্ত্রাসবাদের আস্থাশীল বা তদানুযায়ী কাজ করে। The illegal use of (threats of) violence to obtain political demands. আরবী ভাষায় ইরহাবিয়্যুন এমন একটা গুণবাচক নাম তাদের, যারা রাজনৈতিক লক্ষ্য সমূহ পূরণে শক্তি প্রয়োগ ও কঠোরতার পথ অবলম্বন করা বোঝায়। অদৃশ্যলোকের গ্যাং-এর নাম সন্ত্রাসী (Terrorist)।

কতো যে এরূপ নারী পাচারকারী, শিশু-কিশোর অপহরণকারী, জিম্মীকারী অবশেষে হত্যাকারী। খুব সম্ভব সেকালের গ্যাং সর্দারগণই স্বভাবে খাসলতে আজ গডফাদার রূপে পরিচিত নারী, শিশু-কিশোর অপহরণ, জিম্মীরূপে রাখা, মুক্তিপণ আদায়ে নানান ফন্দি-ফিকির, ধর্ষণ, শেষতক দুনিয়া থেকে সারিয়ে দেয়া। উত্তর আধুনিক যুগের আনন্দদায়ক তামাশা। এ সব তামাশাকারীর জাল দেশ থেকে দেশে বিস্তৃত। এগুলো সবই সন্ত্রাস।

১৯৯৮ সালে এপ্রিল মাসে আরব রাষ্ট্রগুলোর স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীদের এক সম্মেলনে সন্ত্রাস দমনে সম্মিলিত একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং এতে সন্ত্রাসবাদের নিম্নোক্ত সংজ্ঞা নির্ধারণ করা হয়। ‘সন্ত্রাস হলো ব্যক্তি বা সামষ্টিক অপরাধ মনোবৃত্তির হতে সংঘটিত নিষ্ঠুর কাজ বা কাজের হুমকি, যে প্ররোচনা বা লক্ষ্যেই তা হোক না কেন, যা দ্বারা মানুষের মাঝে ভীতি সঞ্চার করা হয় বা তাদেরকে কষ্টে ফেলার হুমকি দেয় হয় বা তাদের জীবন, তাদের স্বাধীনতা, তাদের নিরাপত্তাকে ধ্বংসের মুখে ফেলা হয় বা পরিবেশকে ক্ষতির মুখোমুখি করা হয়। অথবা প্রাইভেট বা সরকারী সম্পত্তি ছিনতাই করা, দখল করা, নষ্ট করা হয় অথবা কোন রাষ্ট্রীয় উৎস ধ্বংসের মুখে ফেলা হয়। সন্ত্রাসবাদের শ্রেণী বিন্যাসঃ সন্ত্রাসকে সাধারণতঃ দু‘ভাগে ভাগ করা যায়। (ক) জাতীয় সন্ত্রাস (খ) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস।

(ক) জাতীয় সন্ত্রাসঃ এটি হচ্ছে যে কোন দেশের অভ্যন্তরিন সমস্যা। সমাজের উঁচু-নীচু, ধনী-গরীব বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের মধ্যে মানবিক ব্যবধান বৈষম্য, অসহায়-দুর্দশাগ্রস্ত জীবন ব্যবস্থা ও মানুষের কুপ্রবৃত্তি। আর যখন মানুষের কুপ্রবৃত্তি গুলো প্রবল আকারে জাগ্রত হয় তখন স্বভাবতই মানুষের সুকুমার বৃত্তিগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে মানুষ তখন কান্ডজ্ঞান হারিয়ে অমানবিক আচরণ করতে সামান্যতম দ্বিধাবোধ করে না। সামাজিক শান্তি-শৃংখলা, ন্যায়-নীতির আসনে বিশৃংখলা, অন্যায়-অনাচার, দুর্ণীতি-দুরাচার আসন গেঁড়ে বসে।

শুরু হয় সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদের নতুন জগত। ঘুষখোর, চাঁদাবাজী, মাস্তানী, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, যেনা, ব্যাভিচার, খুন, ধর্ষণ, কালবাজারী ও অপহরণ সহ সকল প্রকার অনৈতিক কর্মকান্ড তারই নির্মম পরিণতি। আমাদের দেশে সন্ত্রাসের যে বীভৎস চিত্রমানুষ দিব-নিশি গলধকরণ করছে তার সম্পূর্ণটাই বলা যায় এর অর্মতভূক্ত। (খ) আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসঃ লোক বল, সমর অস্ত্রে সজ্জিত কোন শক্তিশালী রাষ্ট্র নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার কিংবা কায়েমী স্বার্থ হাসিলের জন্য কোন তদপেক্ষা দুর্বল রাষ্ট্রের উপর আক্রমণ করা। এই সন্ত্রাসী কর্মতৎপরতার বিরুদ্ধে দুর্বল দেশের মানুষ যখন জাতিগত অস্তিত্ব, স্বধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নিমিত্তে সকলে লড়াইয়ে আবর্তীর্ণ হয়, অত্যাচার-নির্যাতন, শোষন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে স্রেফ প্রররোধের প্রত্যাশায়, তখন ইয়াহুদী, খৃষ্টান তথা পাশ্চত্য জগত ও মিডিয়া সে গুলোকেই সন্ত্রাবাদ (Political violence or terrorism) বলে আখ্যায়িত করে।

আর এই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে তথ্য সন্ত্রাস। তথ্য সন্ত্রাসঃ প্রসঙ্গত এখানে তথ্য সন্ত্রাস সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন। প্রথমতঃ তথ্য সন্ত্রাস এর সংজ্ঞা কি? তথ্যের আবহ এবং ধূম্রজাল সৃষ্টি করে এ দু‘য়ের সহায়তার টার্গেটকে ঘায়েল করে শিকার ধরার প্রক্রিয়ার নাম তথ্য সন্ত্রাস। অথবা বলা যায়, তথ্যের মাধ্যমে যে সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হয়, তাও তথ্য সন্ত্রাস। আরও অগ্রসর হয়ে বলা যায়, মিথা ও বানোয়াট তথ্য দ্বারা প্রবল ঝাড়ো হাওয়া সৃষ্টি করে দুশমনকে কাবু করার যে প্রক্রিয়া, এরই নাম তথ্য সন্ত্রা।

যার অপর নাম মিডিয়া সন্ত্রাস। কেউ কেউ আরো খোলামেলা ব্যাখ্যায় বলেন, মিডিয়া জগতে একচ্ছত্র আধিপত্য যারা বিস্তার করেছেন, তারা নিজেদের খেয়াল বিশেষ লক্ষ্য সামনে নিয়ে কোন না কোন ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন। অতঃপর সৃষ্ট ঘটনা থেকে বিচিত্র তথ্য বের করে নানা বর্ণে রঞ্জিত করে টার্গেটকে ধরাশয়ী করার জন্য বিশ্বময় ভীষণ হৈচৈ শুরু করে একথা বুঝাবার বা প্রমাণের চেষ্টা করেন যে, তাদের উদঘাটিত ও প্রচারিত তথ্যই সঠিক। এই প্রক্রিয়ার নামও তথ্য সন্ত্রাস। বলা যায় বর্তমান আধুনিক বিশ্বে প্রধানত দু‘ভাবে তথ্য সন্ত্রাস স্বীয হিংস্র ছোবল বিস্তার করেছে।

একঃ ইলেক্ট্রিক মিডিয়া বা যান্ত্রিক মিডিয়া তথা রেডিও, টেলিভিশন, সিডি, ভিসিডি, ইন্টারনেট, বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল প্রভৃতি ইলেক্ট্রিক প্রচার মিডিয়া এ শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত। দুইঃ প্রিন্ট মিডিয়া তথা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সান্মাসিক, ত্রৈমাসিক, দ্বিমাসিক, মাসিক সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকা, বই, লিফলেট, পোস্টার, ব্যানার, সাইনবোর্ড প্রভৃতি ছাপার হরফে প্রচারিত মিডিয়া সমূহ এ শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত। প্রকৃত সত্য হল অধুনা বিশ্বে ইলেক্ট্রিক মিডিয়া ও প্রিন্ট মিডিয়া এর মাধ্যমের তথ্য সন্ত্রাস দেশ ও জাতির জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। যা অল্প সময়ের মধ্যে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। কোন বিষয় যা সামান্য কিছু ঘটেছে অথবা আদৌ ঘটেনি এমন বিষয় তথ্য সন্ত্রাসের মাধ্যমে তিলকে তাল বানিয়ে তাদের হীনস্বার্থ হাসিলে আদাজল খেয়ে মাঠে নামে।

ফলে অনেক নিরপরাধ ব্যাক্তি, জাতি ও দেশ তথ্য সন্ত্রাসের স্বীকারে পরিণত হয়ে স্বীয় অস্তিত্ব, সম্ভ্রম, স্বধীনতা ও সার্বভৌমত্ত্ব হারাতে বাধ্য হয়। তথ্য সন্ত্রাস বর্তমান বিশ্বে ভয়ানক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। তথ্য সন্ত্রাসের কবর রচনার মিমিত্তে ইসলামের বাণী সুস্পষ্ট। এরশাদ হচ্ছে- ‘এমন কোন বিষয়ের পিছনে লেগো না যে সম্পর্কে তোমার (পরিষ্কার) জ্ঞান নেই। শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, ও অন্তঃকরণ সব কিছুর জন্যই জবাব দিহি করতে হবে’।

আল্লাহ অন্যত্র বলেন, ‘যে কথায় সে বলুক তার সংরক্ষণের জন্য একজন সদাপ্রস্ত্তত পর্যবেক্ষক তার নিকট নিযুক্ত আছে। আজ থেকে দেড় হাজার বছর পূর্বে মানব কল্যাণের মহা মানব হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) তথ্য সন্ত্রাস সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, عن ابى هريرة ان النبى صلى الله عليه وسلم قال كفى بالمرء كذبا ان يحدث بكل ماسمع- অর্থাৎ আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, কোন ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে (তার সত্যাসত্য যাচাই না করে) তাই বলে বেড়ায় বা প্রচার করে’। তিনি আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার নামে মিথ্যা হাদীছ বর্ণনা করে এবং জানে যে সে মিথ্যা বর্ণনা করছে, তাহলে সে মিথ্যাবাদীদের একজন’। ইসলামের দিক নির্দেশনা পরিষ্কার। উপস্থাপিতি আয়াত ও হাদীছ সমূহে বুঝা যাচ্ছে তথ্য সন্ত্রাসের সাথে ইসলামের কোন দূরতম সম্পর্কও নেই।

বরং প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বেই মহানবী (ছাঃ) তথ্য সন্ত্রাসকে ঘৃণা করে এর ভয়াবহ পরিণতির কথা মুসলিম হৃদয়ে রোপণ করে গেছেন। মৌলবাদ সন্ত্রাসঃ মৌলবাদ শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ হল Fundamentalism । এ শব্দটি ১৯২০ সালে আমেরিকার খৃষ্টান সমাজে প্রথম উদ্ভূত হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, মৌলবাদ শব্দের উদ্ভব ঘটেছিল উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খ্রিষ্ট ধর্মের একটা বিশেষ আন্দোলন চিহ্নিত করার জন্য। মৌলবাদ শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দে হল, Fundamentalism যার অর্থ হচ্ছে Belief in something only because it is mentiond in religion, irrespective of what science says about it. অর্থাঃ ‘একমাত্র কোন কিছুর প্রতি বিশ্বাস থাকা কারণ এটা ধর্মের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যা বিজ্ঞানের নিরপেক্ষতা সম্পর্কে বলে’।

আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞানের সাথে মতপার্থক্য হওয়ার কারণে খ্রীষ্টান ধর্মের চরম বিভক্তির মুখে একদল গোঁড়াপন্থি নিজেদেরকে মৌলবাদী বলে আখ্যায়িত করে। এই শব্দটির সাথে মুসলমান তথা ইসলামের কোনরূপ সংশ্রব কোন কালে ছিল না, আজও নেই। কজেই ইয়াহুদী খৃষ্টান চক্র তাদের একটা বহুল প্রচলিত (Fundamental) পরিভাষাকে অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এ চাপানোর পিছনে আছে এক সুদূর প্রসারী গভীর ষড়যন্ত্র। তাহ’ল এক দিকে বিশ্বের দরবারে মুসলিম জাতিকে ঘৃণিত জাতি হিসাবে চিহ্নিত করা, অন্যদিকে ইসলামের প্রকৃত ও নিঃশর্ত অনুসারীদেরকে ‘মৌলবাদী’ আখ্যা দিয়ে ইসলামের মূল আদর্শ থেকে বিচ্যুত করে মুনাফিক তৈরী করার মাধ্যমে সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানো এবং প্রতারণা, ভন্ডামী ও আত্মহননের পথ বেছে নিতে উস্নুদ্ধ করা।

মৌলবাদ সম্পর্কে পাশ্চাত্য ভাবধারা সম্পন্ন মনীষীদের দেওয়া সংজ্ঞা বিশ্লেষন করলে পরিষ্কার বোঝা যায় যে, মৌলবাদের সাথে ইসলাম তথা মুসলমানদের কোন সম্পর্ক নেই। Websters Dictionary তে মৌলবাদের পরিচয় দেওয়া হয়েছে এভাবে- A belief that the Bible is to be accepted literally as an inherent and inffallide spiritual and historical document; an early 20th century US protestant movement stressin this belief. অর্থাৎ ‘মৌলবাদ হচ্ছে একটি বিশ্বাস, যার দৃষ্টিতে বাহির থেকে আক্ষরিক অর্থে বিশুদ্ধ ও ত্রুটি যুক্ত আধ্যাত্মিক ও ঐতিহাসিক দলীল হিসাবে গ্রহণ করতে হবে। এই বিশ্বাসের উপর গুরুত্ব প্রদানকারী বিশ শতকের প্রথম দিককার যুক্তরাষ্টের একটা প্রটেস্ট্যান্ট আন্দোলন। Oxford Dictionary of current English (A.S. Hornby) এ Fundamentalism এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে- Mainten ance of literal interpretation of the traditional beliefs of the christian rewligion (such as the accuracy of every thing in the Bible) in opposition more modern teachings. অর্থাৎ ‘তুলনামূলকভাবে বেশী আধুনিক শিক্ষার মোকাবেলায় খৃষ্ট ধর্মের সনাতন বিশ্বাস সমূহ আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা (যেমন: বাইবেলে বর্ণিত সবকিছু যথার্থ) তাই মৌলবাদ। আর এটা যারা গ্রহণ করে তাদেরকে মৌলবাদী হিসাবে অভিহিত করা হয়।

তাছাড়া আরো অনেকেই মৌলাবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, সকল মনীষীই তাঁদের সংজ্ঞাতে যে মত প্রকাশ করেছেন তাতে মৌলবাদের সাথে ইসলামের তথা মুসলমানদের কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। রাশিয়ার উত্তর ককেশাসের মুসলিম প্রধান স্বায়ত্বসাসিত অঞ্চল আদিগেনয়া’র প্রেসিডেন্ট আসলাম জারিমভ ভেপেসিন গ্রামের একটি নতুন মসজিদ (মহানবী (ছাঃ)-এর জন্ম দিনে, ১ অক্টোবর ১৯৯৪) উদ্বোধন করতে গিয়ে বলেন, ‘ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং কর্ম-কান্ডের পুনরুজ্জীবনের অর্থ মৌলবাদের বিকাশ নয়। হাজার হাজার বছর ব্যাপী ইসলাম এই অঞ্চলে যে ঐতিহ্য, আধ্যাত্মিকতা এবং নৈতিক মূল্যবোধের প্রসার ঘটিয়েছে সেদিকে ফিরে যাওয়া যদি মৌলবাদ হয় তাহলে আমরা মৌলবাদ’’। মৌলবাদের নামে বিশ্বব্যাপী যে তথ্য সন্ত্রাস চালানো হচ্ছে এর মূল লক্ষ্যই হল ইসলামের পুর্নজাগরণ রোধ করা এবং ইসলামের বাস্তব প্রয়োগ থেকে মুসলমানদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা এবং তাদেরকে অবদমিত করা।

ইসলাম একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ জীবন বিধান। যেখানে অন্য কোন ধর্মের উপর হস্তক্ষেপ করা হয়নি। এ মর্মে আল্লাহ বলেন, ‘‘দ্বীনের (ধর্ম) ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই’’। তাহলে আলোচনায় পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে মৌলবাদ সন্ত্রাসের সাথে ইসলাম ও মুসলমানদের কোনরূপ সম্পর্ক নেই। বরং এটি পাশ্চাত্য ইয়াহুদী-খৃষ্ট চক্রের সুদূর প্রসারী গভীর ষড়যন্ত্র।

জিহাদ সন্ত্রাসঃ মিডিয়া সন্ত্রাসের বর্তমান এ বিভিষিকাময় সময়ে ইসলামের পবিত্র জিহাদকে নিয়ে চলছে ব্যাপক ষড়যন্ত্র। পশ্চিমা জগত জিহাদকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসাবে প্রমাণ করার জন্য আদাজল খেয়ে তথ্য সন্ত্রাসী শুরু করেছে। তাদের দৃষ্টিতে জিহাদ মানেই সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদ আর মুজাহিদ মানেই সন্ত্রাসী। কিন্তু জিহাদ ও সন্ত্রাস দু‘মেরুতে অবস্থানকারী দু‘টি বিষয় বিধায় জিহাদ ও সন্ত্রাসের মধ্যে তালগোল পাকানো নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। সাথে সাথে ষড়যন্ত্রের বিশাল বহিঃপ্রকাশও বটে।

জিহাদ جهد ধাতু হতে উৎপন্ন যার অর্থ কষ্ট ও চূড়ান্ত প্রচেষ্টা। اذا استفرغ و سعه وبذل طاقته و تحمل المثاق فى مقاتلة العدو و مدافعته- অর্থাৎ যখন কেউ শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রতিরোধের জন্য তার চুড়ান্ত শক্তি ও ক্ষমতা ব্যয় করে ও কষ্ট সমূহ সহ্য করে, তাকে আভিধানিক অর্থে জিহাদ বলে’। ইসলামী পরিভাষায় জিহাদ অর্থ আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আল্লাহর দ্বীনকে সর্বতোভাবে বিজয়ী করার স্বার্থে বাতিলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলার চুড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা। মোল্লাআলী ক্বারী বলেন, কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োজিত করা অথবা মাল দ্বারা, বুদ্ধি দ্বারা, বিপুল জন সমাবেশ দ্বারা কিংবা অন্য কোন পন্থায় কুফুরী শক্তির বিরুদ্ধে সাহায্য করা। ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, الجهاد شرعا بذل الجهد فى قتال الكفار- অর্থাৎ শারঈ পরিভাষায় জিহাদ হল; কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োজিত করা।

এর দ্বারা নফস, শয়তান ও কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদকেও বুঝানো হয়েছে। জিহাদ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর জন্য জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত’। এখানে জিহাদ প্রবৃত্তি ও অন্যায় কামনা বাসনার বিরুদ্ধে জিহাদ করা বুঝানো হয়েছে। ইসলামে জিহাদ ও কিতাল দু’টি শব্দের ব্যবহার লক্ষণীয়। সসস্ত্র সংগ্রামকে জিহাদ হিসাবে গণ্য করা হচ্ছে যা প্রকৃত অর্থে কিতাল।

যা দু’ধরণের (১) আত্মরক্ষামূলক জিহাদ। (২) আক্রমোণাত্মক জিহাদ। বর্তমান সময়ে যেখানেই প্রতিরোধ আন্দোলন করছে মুসলমানগণ তা আত্মরক্ষামূলক জিহাদ ছাড়া কিছুই নয়, যার অধিকার প্রতিটি জাতিরই রয়েছে। অথচ পাশ্চাত্য জিহাদ শব্দের ভুল প্রয়োগ করছে যত্রতত্র। মুসলমানগণও জিহাদের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে তা পুরোপুরি পালন করছে না।

যিনি কিতাল তথা সশস্ত্র জিহাদের ডাক দিবেন সে ধরণের কোন নেতৃত্ব মুসলিম বিশ্বে অনুপস্থিত কাজেই প্রয়োজন জিহাদ ও কিতাল শব্দের প্রয়োগিক ব্যাখ্যার উপলব্ধি। জায়িদ ইয়াছিন জিহাদের অর্থ এভাবে তুলে ধরেছেন- Jihad in its trust and purest form, the form to which all muslims aspire, is the determination to do right, to do justice even against your own interests. It is an individual struggle for personal moral behavior. Especially today it is a struggle that exists on many levels: Self-purification and awareness. Public service and social justice, on a globle scale. It is a struggle involving people of all ages, colors and creeds, for control of the bigdecisions. অর্থাৎ জিহাদ এমন একটা বিশ্বাস এবং পবিত্রতম রূপ যা সকল মুসলমানগণ (পাওয়ার জন্য) আকাংখা করে। জিহাদ হচ্ছে নিজেদের স্বার্থের বিরুদ্ধে ন্যায় বিচার করা এবং সঠিক অধিকার আদায় করার জন্য সংকল্প বা প্রতিজ্ঞা। আর এটা হচ্ছে স্বীয় নৈতিক চরিত্রের জন্য একটা ব্যক্তিগত সংগ্রাম। বিশেষ করে বর্তমানে এটা এমন একটি সংগ্রাম যা অনেক সমতার উপর বিদ্যমান।

সেই সমতা গুলো হচ্ছে: আত্মসংশোধন, সতর্কতা, জনগণের সেবা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার। আর এটা এমন একটি সংগ্রাম যা সকল বয়সের, সকল বর্ণ ও ধর্মের মানুষকে শামিল করে। বড় বড় সিদ্ধান্তকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য’। বিধায় পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে জিহাদের সাথে সন্ত্রাসের কোন প্রকার সম্পর্ক নেই। পাশ্চাত্য জগত এক শ্রেণীর কায়েমী স্বার্থবাদী মহল হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার নেশায় জিহাদ ও সন্ত্রাসকে একাকার করে ফেলেছে।

প্রকৃতপক্ষে তারা জিহাদকে সন্ত্রাসবাদে পরিণত করে ইসলাম ও ইসলামের নবী, ধর্মগ্রন্থ আল-কুরআনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়। পানি ঘোলা করে মাছ শিকারের ন্যায় মুসলিম শক্তি তছনছ ও মুসলমানদের ঈমান আক্বীদা হরণ করতে চায়। তাই তারা জিহাদকে সন্ত্রাসের মধ্যে তালগোল পাকাতে পাগল পারা। তবে স্বার্থবাদী কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি ও মহল জিহাদের অপব্যাখ্যা করে সরলমনা মুসলমানদের হৃদয় তন্ত্রীতে দ্বিধা-সংশয়ের সৃষ্টি করছে। জিহাদের নামে বর্তমান যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তাদের ব্যাপারেও আমাদের সোচ্চার হওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ পাশ্চাত্য বিশ্ব ও এই কুচক্রী মহলটির মুল টার্গেট একই তথা ইসলাম ও মুসলমান। সন্ত্রাস প্রতিরোধে ইসলামের পদক্ষেপঃ মহানবী (ছাঃ)-এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবদের অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। এমন কোন হেন কাজ নেই যা তারা করত না। সর্ব প্রকার অন্যায় তথা সন্ত্রাস সে সমাজে বিরাজমান ছিল।

সন্ত্রাস নির্মূলের মহান লক্ষ্যেই ইসলামের আবির্ভাব ঘটে। আর এই ফিতনা/ফাসাদকে ইসলাম সামান্যতম প্রশ্রয় দেয়নি। বরং ফিতনা তথা সন্ত্রাস নির্মূল করে সন্ত্রাসমুক্ত সুশৃংখল সমাজ বিনির্মানে ইসলাম বহু কার্যকর সুদৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সন্ত্রাস সম্পর্কে মহান আল্লাহ পরিষ্কার ভাষায় বলেন, ‘ফিতনা (সন্ত্রাস) হত্যা অপেক্ষা জঘন্য অপরাধ’। অত্র আয়াতে ফিতনা অর্থাৎ সন্ত্রাসকে হত্যার চেয়েও নিকৃষ্ট অপরাধ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

আর এই ঘোষণা আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে ইসলামের প্রাথমিক যুগের ঘোষণা। পবিত্র কুরআনে কুফর, শিরক এবং মুসলমানদের ইবাদত-বন্দেগীতে বাধা প্রদান ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকে ফিতনা (সন্ত্রাস) বলা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য হল ‘আর আল্লাহ্র পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা এবং কুফুরী, মসজিদে হারামের পথে বাধা দেয়া এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে বহিস্কার করা আল্লাহ তা‘আলার নিকট বড় ধরণের পাপ। আর ধর্মের ব্যাপারে ফিতনা সৃষ্টি করা, নর হত্যা অপেক্ষার মহাপাপ’। যুগে যুগে ইসলামের অনুসারীদের উপর বাতিলপন্থীদের প্রতাপ ও জোর-যুলুম, নিপীড়ন ও নির্যাতন ফিতনা হিসাবে গণ্য।

পবিত্র কুরআন তাই বলেছে-‘যদি শত্রুপক্ষে চতুর্দিক থেকে নগরে প্রবশ করে তাদের সাথে মিলিত হত, অতঃপর (ফিতনার) বিদ্রোহ করতে প্ররোচিত করত, তবে তারা অবশ্যই বিদ্রোহ করত এবং মোটেও বিলম্ব করত না’। যে ধরণের শাসন ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় প্রশাসনিক ক্ষমতাকে মহৎ উদ্দেশে ব্যবহারের পরিবর্তে যুলুম, অবিচার ও লুটতরাজের কাজে ব্যবহার করা হয় তাকে আল-কুরআন ‘ফাসাদ’ (অনর্থক সন্ত্রাস) নামে অভিহিত করেছে। আল্লাহ তা‘আলার সুস্পষ্ট ঘোষণা: ‘ আর যখন যে শাসকের আসনে বসে তখন সে পৃথিবীতে ফাসাদ (অকল্যাণ) সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয় এবং ফসল ও প্রাণকুলে ধ্বংস করতে প্রবৃত্ত হয়, অথচ আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ ও দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করেন না’। পৃথিবীর বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সংস্কার সাধনের পর তাতে অনর্থক বিপর্যয় সৃষ্টিকে আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন পবিত্র কুআনের ভাষ্য: ‘পৃথিবীকে কুসংস্কারমুক্ত ও ঠিক করার পর তাতে অনর্থক সৃষ্টি করো না’।

পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে ‘ফিতনা’ ও ‘ফাসাদ’ দ্বারা যা বুঝানো হয়েছে তা হল: কুফর, শিরক এবং মুসলমানদের ইবাদত বন্দেগীতে বাধা প্রদান ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, দুর্বলের উপর অত্যাচার করা, তাদের ন্যায় অধিকার হরণ করা, তাদের ঘরবাড়ি জবরদখল করা এবং তাদেরকে বিভিন্ন পন্থায় কষ্ট দেয়া, জবরদস্তি মূলক সত্যকে দমন করা এবং সত্য গ্রহণ থেকে মানুষকে বাধা দেয়া, মানুষকে বিভ্রান্ত করা, বিপথে চালিত করা, এবং সত্যের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ধোঁকা, বিশ্বাসঘাতকতা ও বল প্রয়োগের চেষ্টা করা। যুগে যুগে ইসলামের অনুসারীদের উপর বাতিল পন্থীদের প্রতাপ ও জোর-যুলুম, নিপীড়ন ও নির্যাতন, প্রজা সাধারণের মাঝে শ্রেণী ও বর্ণ গত পার্থক্য সৃষ্টি করা এবং স্বৈরাচারী শাসন চালান, দুর্বলদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা এবং তাদের সম্পদ লুট করা, সত্য ও ন্যায় নিষ্ঠ ভাবে জীবন-যাপনের পরিবর্তে বিকৃত পথে জীবনকে চালিত করা, পর-রাজ্য গ্রাস করা, প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করা ইত্যাদি। বর্তমান সময়ের সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ বলতে যা বোঝায় তার সবই পবিত্র কুরআনের আয়াত সমূহে বিধৃত হয়েছে ফিতন ও ফাসাদ হিসাবে। সন্ত্রাস প্রতিরোধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠার মহান লক্ষ্যে ইসলাম প্রয়োজন মাফিক কার্যকারী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার নমুনা স্বরূপ উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপের আলোচনা তুলে ধরা হল। ১.মানুষ হত্যাঃ অধুনা বিশ্বে যত প্রকার সন্ত্রাস রয়েছে তন্মধ্যে অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করা অন্যতম।

আর অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করাকে ইসলাম কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞাতসারে কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম। চিরকাল সে সেখানে থাকবে। তার প্রতি আল্লাহ্র গযব এবং লা‘নত। তার জন্য ভয়াবহ শাস্তি প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে’।

অন্যত্র বলেন, ‘আল্লাহ যাদেরকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাদেরকে ন্যায়তঃ ছাড়া হত্যা করবে না’। মানুষ হত্যা এড়ানোর জন্য ইসলামে কিছাছ ও দিয়াত তথা হত্যার বদলা ও প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যবস্থা রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কিছাছ গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায়, দাস দাসের বদলায়, এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কাউকে কিছুটা মাফ করে দেওয়া হয়, তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে।

এটা তোমাদের পালন কর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এর পরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে, তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। হে বুদ্ধিমানগণ! কিছাছের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার’। অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যার প্রতিরোধ করার জন্য ইসলাম চমৎকার বিচার ব্যবস্থার উদ্ভাবন ঘটিয়েছে। এই কিছাছের মধ্যে জীবন নিহিত আছে বলা হয়েছে অর্থাৎ কিছাছ পদ্ধতির মাধ্যমে যে হত্যা এড়ানো যায়, মূলত: সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।

আজকের বর্তমান পরিস্থিতিতেও খুনী যেই হোক না কেন কিছাছ পদ্ধতি চালু করা হয় তাহলে অন্যায় হত্যা বন্ধ হতে বাধ্য হবে। আর সন্ত্রাস প্রতিরোধই ইসলামের এই কার্যকারী ভূমিকা। যা রাসূল (ছাঃ) স্বীয় জীবনীতে প্রতিষ্ঠা করে বিশ্ববাসীর জন্য চিরন্তন সত্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে গেছেন। ২. ব্যাভিচারঃ যেনা, ব্যাভিচার, ধর্ষণ এগুলো সন্ত্রাসী কর্ম-কান্ডের সাথে সম্পৃক্ত। আর এসব থেকে হুঁশিয়ারী বাণী উচ্চারণ করে আল্লাহ বলেন, ‘ব্যাভিচারের ধারে কাছেও যেওনা।

নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ এবং অত্যান্ত খারাপ পন্থা’। ব্যাভিচারকে নিকৃষ্ট বলার সাথে সাথে তা প্রতিরোধের জন্য শাস্তির বিধান ও বলে দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘ব্যাভিচারী নারী ও পুরুষ প্রত্যেককে একশ বেত্রাঘাত কর’। এ বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ব্যাভিচারী অবিবাহিত নারী-পুরুষকে একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন করতে হবে। আর বিবাহিত নারী-পুরুষকে রজম করতে হবে তথা প্রস্তর নিক্ষেপের মাধ্যমে হত্যা করতে হবে’।

৩. সুদঃ সুদ আদান-প্রদান উভয়ই ইসলামে গর্হিত অপরাধ। সুদ আদান-প্রদানকে কেন্দ্র করে মানুষ অনেক সময় সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ সুদ সম্পর্কে বলেন, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন’। তিনি আরো বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ খেয়ো না। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার’।

রাসূল (ছাঃ) সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেন, ‘সুদের পাপের ৭০টি স্তর রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে সধারণ হচ্ছে মাতাকে বিবাহ করা’। ৪. ঘুষঃ এটিও সুদের মত গর্হিত কাজ। ইসলামে ঘুষ আদান-প্রদান উভয়ই নিষিদ্ধ। কারণ ঘুষ আদান-প্রদানের ফলে সমাজ থেকে ন্যায় বিচার লোপ পায়, তখন স্বভাবতই অবিচার ছড়িয়ে পড়ে।

ফলশ্রুতিতে প্রকৃত অপরাধী অর্থ ও বাহুবলে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় এবং নিঃস্ব, অসহায়, নিরপরাধ মানুষকে সাজা ভোগ করতে হয়। তাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.