আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিবহণ সন্ত্রাস

অনেকের মাঝেও একা থাকা যায়, নি:সঙ্গতায় কারো অনুভব ছুঁয়ে যায় ...

ক'দিন আগে সকাল বেলা আম্মাকে নিয়ে বার হলাম গুলশান ল্যাব এইডে আসব বলে। আম্মার কিছু ডাক্তারী পরী ক্ষা করানো দরকার ছিলো। বাসা থেকে বার হয়ে সি.এন.জি. স্কুটারগুলোকে জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু তারা গুলশান যেতে যাইল না। খানিকটা হেঁটে সামনে এসে সি.এন.জি ছাড়াও হলুদ/কালো/নীল ক্যাবগুলোকে জিজ্ঞেস করলে তারাও অসম্মতি জানাল। ভাবলাম রিকসা নিয়ে মিরপুর-10 এর দিকে যাই, পথে হয়ত পেয়েও যেতে পারি।

যেতে যেতে আমার মেজাজটা প্রতি সেকেন্ডে তিরিক্ষি হতে থাকল। মাঝ পথে রিকসা থামিয়ে জিজ্ঞেস করেও লাভ হলো না। মিরপুর-10 আসার একটু আগে আগে একটা হলুদ ক্যাবওয়ালা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে আবদার করল যে, তাকে বিশ টাকা বেশী দিতে হবে। এ রকম আবদার আমাদের দেখে নতুন নয়। উপায় না দেখে এসব আবদার রক্ষাও করে থাকি, কিন্তু তখন মাথা গরম আমার।

ইচ্ছে হচ্ছিল সব ক্যাব ড্রাইভারদের কষে দু'টা চটকানা মারি আর ক্যাব স্কুটারগুলো উল্টে, ভেঁঙ্গে দেই (ছেলে হলে এতদিনে সত্যি সত্যিই করে ফেলতাম)। মিরপুর-10 এ এসেও ক্যাব/ট্যাক্সি কোনটাই গুলশানে আসতে চাইল না। ভাবলাম আবার রিকশা করে ক্যান্টটমেন্ট দিয়ে যেতে যেতে পেয়ে যাব। মিরপুর-14 তে এসেও লাভ হলোনা। মিশুকে চড়া হয়না অনেক দিন, ইচ্ছে করেই।

মিশুকওয়ালা সেটারই প্রতিশোধ নিল কি না কে জানে, রাজি হলো না। ক্যান্টনমেন্ট এরিয়ার শেষ পর্যনত্দ রিকশাযোগে এসে রাসত্দা পার হয়ে বনানীতে প্রবেশ করে ওখান থেকে 30 টাকা ভাড়ায় ল্যাব এইড আসলাম শেষ পর্যন্ত। এত লম্বা গল্পের কারণ হলো আমার কাছে মনে হয় আমাদের দেশের পরিবহণ ব্যবস্থা যাত্রীদের পুরোপুরি জিম্মি করে রেখেছে। নূন্যতম যাত্রী সেবা টুকুও নেই। বাহির্বিশ্বে ক্যাবে উঠে চালককে গনত্দব্য এলাকার নাম বললেই যাত্রা শুরু হয়।

আর আমাদের এখানে জিজ্ঞেস করতে হয়, এমুক জায়গায় যাবেন কি না। যদি তাদের মর্জি হয় তো ভাল কথা নয়তো যাত্রীরাই আজকাল 10/20 টাকা বাড়িয়ে দেয়ার কথা বলেই ফেলে নিজে থেকে। আমাদের দেশের বাসগুলোর যে আকৃতি, ভেতরে সিটগুলো এতো চাপাচাপি যে ভালভাবে যাওয়ার উপায় নেই। শীতাতপ বাসের প্রচলন নিত্যদিনের রূটে কেন সম্ভব নয় তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। কোন সরকারের সুনজর এই পরিবহণ ব্যবস্থার উপর ছিলনা।

তাই দিন দিন এর অবনতিই হয়েছে। অনেক বারই সরকার ও পরিবহণ মালিক সমিতির আলোচনা হয়েছে। আর ফলাফল হিসেবে শুধু ভাড়াই বেড়েছে, যাত্রী সেবা বাড়েনি এতটুকুও। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও এখনো তার ব্যতিক্রম কিছু দেখলাম না। মোবাইল কোর্ট এর মাধ্যমে খাদ্যের মান যাচাই হচ্ছে, সোনার গহনার খাদ যাচাই হচ্ছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না তাও দেখা হচ্ছে, কিন্তু যাত্রীরা যে এভাবে হয়রানির শিকার সেটা সবাই বুঝেও না বোঝার ভান করে আছে বলে মনে হচ্ছে।

এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড কিংবা দূর্ণীতি সংক্রানত্দ ব্যপারে আজকাল অভিযোগ বাক্স রাখা হয়েছে। কিন্তু এই যে যাত্রীরা পরিবহণ ব্যবস্থার কাছে জিম্মি হয়ে আছে সেই অভিযোগ কোথায় করব? মিটার লাগানোর পরও এই- সেই অযুহাতে 10/20 টাকা বেশী দিতে হয় ক্যাব চালকদের। আমরা আসলেই মগের মূল্লুকে আছি। এদেশে থাকতে হলে যদি নিজের বাড়ী -গাড়ী থাকে তবেই হয়তো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যনত্দ এরকম উটকো ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যেতে পারে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে সবাই অনেক আশা নিয়ে আছে।

এই সরকার কি পরিবহণ ব্যবস্থাটাকে সহনশীল পর্যায়ে নিতে পারবে? নূন্যতম যাত্রীসেবা নিশ্চয়তা চাই আমরা। অনেক রকম দূর্ণীতি, সন্ত্রাসের পাশাপাশি এই সেক্টরও দূর্ণীতিগ্রস্থ। আমরা এই পরিবহণ সন্ত্রাস থেকে রেহাই চাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.