"A little knowledge of science makes man an atheist, but an in-depth study of science makes him a believer in God." Francis Bacon.
দাক্ষিণাত্যের হিন্দুদের সর্ববরেণ্য গুরু রুদ্রমুনি স্বামী এবং শ্রোগানমূর্তিও তার গ্রন্হে সুষ্পষ্টভাবে লিখেছেন- 'দশম অবতার জগৎগুরু আর্বিভাব হয়ে গেছে । ' (শরণলীলা অমৃত, রুদ্রমণির বচন) ।
# ৩. শ্রীমদ্ভাগবতের ১২/২-১৯ এবং ২০ শ্লোকে উল্লেখ , কল্কি অবতার অষ্টগুণ সমর্থিত । । এ গুণগুলো হচ্ছে যথাক্রমে-
...(১). প্রজ্ঞা , (২.) কুলীনতা, (৩.) ইন্দ্রিয় দমন, (৪). শ্রুতি জ্ঞান, (৫). পরাক্রম,(৬). বাগ্মিতা, (৭.) দান, (৮.) কৃতজ্ঞতা ।
এ সমস্ত গুণ সম্পর্কে মহাভারতে উল্লেখ আছেঃ
"অষ্টেগুণাং পুরুষাং দীপযন্তি প্রজ্ঞা চ কৌলাং চ দমঃ শ্রুতং চ পরাক্রম চ বহুভাষিতা দানং যথাশক্তি কৃতজ্ঞাত চ" । [মহাভারত]
উপরোক্ত সকল গুণই যে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর মধ্যে বিদ্যমান ছিল, তা সুষ্পষ্ট ।
----*১. প্রজ্ঞাঃ অষ্ট গুণের প্রথম গুণ হচ্ছে প্রজ্ঞা । প্রজ্ঞা হল সমস্ত জ্ঞানের নির্যাস বা সারাংশ । যা মহাগ্রন্হ আল-কোরআনের ভাষায় 'হিকমত' ।
মহানবী (সাঃ) হিকমাতের আধাররূপে পৃথিবীতে আগমণ করেছিলেন এবং তিনি ছিলেন হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ এবং হযরত ঈসমাইল (আঃ) এর দোয়ার ফসল । (কোরআন; ২/১২৯) পবিত্র কুরআনের এ আয়াত নবীজীর পূর্বপুরুষদ্বয় আল্লাহর কাছে যে প্রার্থনা করেছিলেন তাতেও 'হিকমত' শব্দটি বিশেষভাবে সন্নিবেশিত আছে । স্বয়ং মহান আল্লাহ বলেনঃ
ক.
'যেমন আমি তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদেরই কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি যে আমার আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে তিলাওয়াত করে তোমাদেরকে পবিত্র করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় আর তোমরা যা জানতে না তা শিক্ষা দেয় । [২/১৫১]
খ.
'তিনিই (আল্লাহ) নিরক্ষরদের মধ্যে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাদের মধ্যে থেকে যে তাদের কাছে আবৃত্তি করে তার (আল্লাহর) আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব এবং হিকমত । ইতিপূর্বে এরাইতো ঘোর বিভ্রান্তিতে ছিল ।
[৬২/২]
...সুতরাং ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন হিন্দু মিথলজীর অবতাররূপী জ্ঞান (ইলম) ও প্রজ্ঞার (হিকমত) মূর্ত প্রতীক ।
-----*২. কুলীনতাঃ কল্কির দ্বিতীয় গুণ 'কৌলাং অর্থাৎ 'কুলীনতা' বা বংশগত মর্যাদা । কল্কি পুরাণ বা ভবিষ্যপুরাণের মতে কল্কি জন্মগ্রহণ করেন শম্ভল দ্বীপে । আরব দেশের প্রধান পুরোহিতের ঘরে । ইসলামের নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আরব দেশের বিখ্যাত কুরাইশ বংশে এবং পৃথিবীর একমাত্র প্রথম ঘর ও প্রাচীন (ধর্ম মন্দির ) খানায়ে কাবার সেবাকারী বা মুতায়াল্লী আব্দুল মুত্তালিবের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ।
ফলে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বংশের দিক থেকেও অতি উচ্চ মর্যাদাশীল বা কুলীন ছিলেন ।
-----*৩. ইন্দ্রিয় দমনঃ কল্কি অবতারের তৃতীয় গুণ হচ্ছে 'দম' অর্থাৎ ইন্দ্রীয় দমন । জীব দেহীদের ইন্দ্রীয় মো্ট একাদশ । এ একাদশ ইন্দ্রীয়ের প্রধান হল মন । মন-ই অপরাপর ইন্দ্রীয়গুলোকে পরিচালিত করে থাকে ।
যা হোক, আঁ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ইন্দ্রিয় আসক্ত ছিলেন না । তিনি ছিলেন ইন্দ্রিয় দমন কারী একজন মহামানব ।
তিনি এমন একজন বিশ্বস্ত ও আমানতদার যে, তার পরম শত্রু তার কাছে কোন কিছূ গচ্ছিত রেখে ঠিক মতো তা ফেরত পেয়েছে । ধৈর্য, সহিষ্ঞুতা ও আল্লাহর উপর অটল বিশ্বাস তার চরিত্রের অন্যতম ভূষণ । শত্রুদের প্রতি মহানবী (সাঃ) এর ব্যবহার ছিল অত্যন্ত উদার ।
তায়েফের ময়দানে যারা তার পবিত্র দেহকে ক্ষতবিক্ষত করে তখন তাদের জন্য মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে যে প্রার্থনা করেছিলেন তার দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ।
-----*৪. শ্রুতি জ্ঞানঃ কল্কি অবতারের চতুর্থ গুণ হচ্ছে 'শ্রতং' । অর্থাৎ তিনি শ্রুতির মাধ্যমে বর্ণনা করেন । এ গুণের ব্যাখ্যা হল- তিনি আল্লাহর বাণী তার কাছে কোন মাধ্যমে পৌছলে তিনি তা শ্রবণ করেছেন এরপর অবিকল তা বর্ণনা করেছেন । আল্লাহর দূত হযরত জীবরাঈল (আঃ) আল্লাহর তরফ থেকে পবিত্র কুরআনের সমস্ত আয়াতগুলো ওহীরূপে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) শ্রুত করিয়েছিলেন এবং নবী করীম (সাঃ) তার সাহাবাগণকে তা আবৃত্তি করে শোনাতেন ।
কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ
' এবং তিনি [মুহাম্মদ (সাঃ] মগড়া কথাও বলেন না, এতো ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়" । [৫৩/৩-৪]
-----*৫.পরাক্রমঃ কল্কি অবতারের পন্চম গুণ হচ্ছে 'পরাক্রম' । এ কথা ইতিহাস খ্যাত যে, নবী করীম (সাঃ) ছিলেন বীর কেশরী এবং অমিততেজী । আরবের এক বিখ্যাত কুস্তীগীরকে তিনি হারিয়ে দিয়েছিলেন । জীবনে অনেক যুদ্ধে তিনি নিজে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছেন ।
তিনি ছিলেন যেমন আল্লাহর নবী, তেমনিভাবে সমগ্র মানব জাতির ধর্মীয় গুরু, সমাজ এবং রাষ্ট্রের মহান নেতা এবং বিশৃংখল আরব বাসীদের জন্য এক বিশাল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ।
-----*৬.বাগ্মিতাঃ মহানবী (সাঃ) একজন বাগ্মী পুরুষ ছিলেন । নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিনি অহরহই ইসলামের দাওয়াতী কার্যে নিয়োজিত ছিলেন । এ জন্য তিনি যথেষ্ঠ নির্যাতন - অত্যাচার সহ্য করেছেন । যেখানে লোকজন জমায়েত দেখতেন, সেখানে-ই তিনি বক্তৃতা আরম্ভ করতেন ।
তাছাড়া তিনি সাফা পাহাড়ের শিখরে উঠে মানুষদের আহ্বান করতেন । বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণ আজও ইতিহাস এ রয়ে গেছে । ফলতঃ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর বাগ্মিতায় এত বেশি মানুষ আকৃষ্ট হয়েছিল যে, পৃথিবীর অন্য কোন নবী বা ধর্ম প্রবর্তকের পক্ষে তা আদৌ সম্ভব হয় নি ।
-----*৭.দানঃ কল্কি অবতারের সপ্তম গুণ হল 'যথা শক্তি দানং' । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানকারী ।
তার যাবতীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে গরীব-দুঃখীদের মধ্যে বিলিয়েছিলেন ।
রাসূলে করীম (সাঃ) এর দান খয়রাতের ঘটনা এত বেশি যে, এগুলো পূর্ণরূপে বর্ণনা করার সাধ্য কারও নেই । তার দানশীলতার জন্য কিছু মওজুদ থাকাও জরুরী ছিল না । অভাবগ্রস্তদের জন্য কর্জ করে ব্যয় করা তার সাধারণ নিয়ম ছিল । জনৈক ব্যক্তি হযরত বেলাল (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল, নবী করিম (সাঃ) এর ব্যয় নির্বাহের কি উপায় ছিল ? বেলাল (রাঃ) বললেন, তার কাছে তো কিছুই থাকতো না ।
এ ব্যাপারে শেষ অবধি আমি-ই ব্যবস্হাপক ছিলাম । তার অভ্যাস ছিল তিনি যখন কেউ মুসলমান হয়ে খেদমতে হাজির হত এবং তিনি তাকে বস্ত্রহীন দেখতেন, তখন আমাকে এর ব্যবস্হা করতে আদেশ দিতেন । আমি কারও কাছ থেকে কর্জ করে তার বস্ত্র তৈরী করতাম এবং খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্হা করতাম ।
-----*৮.কৃতজ্ঞতাঃ কল্কি অবতারের অষ্টম গুন হচ্ছে কৃতজ্ঞতা ।
মহানবী (সাঃ) ছিলেন সকল গুণের আধার এবং কৃতজ্ঞতাজাপনকারী মহামানব ।
এ সম্মন্ধে একটা ঘটনা একবার তিনি মা আয়েশা (রাঃ) এর সাথে থাকাকালীন উনি দেখেন যে, মহানবী (সাঃ) রাত জেগে নামাজ পড়ছেন , দীর্ঘসময় দাড়িয়ে থাকার দরূণ উনার পা মোবারক ফুলে গেছে । আর দীর্ঘক্ষণ মোনাজাত করছেন , তখন চোখের পানিতে উনার দাড়ি মোবারক ভিজে যাচ্ছে । নামাজ শেষে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! মহান আল্লাহপাক আপনার পূর্বের এবং পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন , তারপরও আপনি কেন এত পরিশ্রম করছেন ? তিনি তখন উত্তর দেন- আমি আল্লাহর একজন শোকরগোজার (কৃতজ্ঞ) বান্দা হব না ?
ফলতঃ এ আলোচনায় প্রমাণিত হয় কলিযুগের শেষ অবতার , (খাতামুন নাবীঈন) হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় ।
........চলবে ।
সূত্রঃ
১. জগৎগুর মুহাম্মদ (সাঃ) [১ম খন্ড] রেনেসাঁ পাবলিকেশন্স
২. বেদ - পুরাণে আল্লাহ ও হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) - ধর্মাচার্য অধ্যাপক ড. বেদপ্রকাশ উপাধ্যায়, ইসলামী সাহিত্য প্রকাশনালয়, ৪৫, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০.
৩. আল-কুরআন ।
৪. মাসিক মদীনা, মার্চ-২০০৯
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।