সবাইকে আমার নিজস্ব ব্লগ ভিজিট করার আমন্ত্রন রইলঃ www.islameraalo.wordpress.com হিন্দু ধর্মে ভবিষ্যতবাণীকৃত ‘কল্কি অবতার’ই কি শেষ নবী হজরত মুহাম্মাদ(সা) ?
হিন্দু ধর্মে ভবিষ্যতবাণীকৃত ভগবানের দূত বা দেবতাদের মধ্যে কল্কি অবতার হলেন সবচেয়ে জনপ্রিয়। হিন্দু ধর্ম গ্রন্থ গুলোর মধ্যে ভগবৎ পূরাণ, কল্কি পূরাণ ও আরও অনান্য গ্রন্থ গুলিতে কল্কি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এই সব ভবিষ্যবাণী গুলিতে কল্কির বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্ম স্থান, চারিত্রিক ও অনান্য বৈশিষ্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এই আলোচনা শুরু করার আগে একটা কথা পরিস্কার করে নেওয়া যাক যে, যদি কেউ নিজেকে বা অন্য কাউকে কল্কি বলে দাবি করে আর তার সাথে ভবিষ্যবাণী গুলো মিলে যায় তাহলে তাকে কল্কি বলে স্বীকার করতে আমাদের কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আর কেউ যদি তাকে স্বীকার না করে তবে তো সে হিন্দু ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ গুলোকেই অস্বীকার করল।
তাই নয় কি?
এবার মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে কয়েকটি কথা বলা যাক। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে যুগে যুগে আল্লাহ বিভিন্ন জাতি, দেশ, গোষ্টি বা সম্প্রদায়ের কাছে নবী বা দূত পাঠিয়েছেন। আমরা হাদিস থেকে জানতে পারি যে ১ লক্ষ্য ২৪ হাজার নবী ও রাসুল আল্লাহ তা’ আলা পাঠিয়েছেন ইসলাম প্রচারের জন্য। তার মধ্যে মুহাম্মাদ (সা) হলেন শেষ নবী বা শেষ দূত। এই কারণেই হয়ত পৃথিবীর প্রধান ধর্ম গুলির ধর্মগ্রন্থে মুহাম্মাদ (সা) সম্পর্কে ভবিষ্যবাণী দেখা যায়।
যেমন, বেদ, পুরান, উপনিষেধ, বাইবেল, তাওরাত, জেন্দা আবেস্তা, গস্পেল অব বুদ্ধা প্রভৃতি।
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে কল্কি অবাতারই হলেন বিশ্বনবী মুহাম্মাদ(সা)। তবে আসুন আমরা যাচাই করে দেখি কল্কি অবতারই কি শেষ নবি মুহাম্মাদ(সা) এবং কল্কি সম্পর্কে যেগুলো ভবিষ্যবাণী করা হয়েছে সে গুলো কি মুহাম্মাদ(সা) এর সাথে মিলে যাচ্ছে।
@ ভবিষ্যবাণী ১
ভাগবত পুরাণ; ১২ খন্ড; দ্বিতীয় অধ্যায়, ১৮-২০ শ্লোকে কল্কি সম্পর্কে বলা হয়েছে, “বিষ্ণুয়াস নামে একজন ঘরে যে মহৎ হৃদয়ের ব্রাহ্মন এবং সাম্বালা নামের একটি গ্রামের প্রধান, তাঁর ঘরে জন্মাবেন কল্কি। তাকে ইশ্বর দেবেন উতকৃষ্ট গুনাবলী আর ইশ্বর তাকে দেবেন আটটি অলৌকিক শক্তি।
তিনি চড়বেন একটি সাদা ঘোড়ায় এবং তার ডান হাতে থাকবে তরবারি”।
মুহাম্মাদ(সা) এর সাথে মিলঃ
কল্কির বাবার নাম বিষ্ণুয়াস। বিষ্ণু কথার অর্থ ইশ্বর এবং ইয়াস কথার অর্থ দাস। অর্থাৎ ইশ্বরের দাস। বিষ্ণুয়াস কথাটি আরবিতে করলে হবে আব্দুল্লাহ।
আর সবাই জানি যে রাসুল(সা) এর পিতার নাম আব্দুল্লাহ ছিল।
কল্কির জন্ম সাম্বালা গ্রামে। সংস্কৃত ভাষায় সাম্বালা শব্দের অর্থ প্রশান্ত বা শান্তির জায়গা। মক্কায় রাসুল(সা) জন্মগ্রহন করেছিলেন, আর আমরা জানি মক্কাকে দারুল আমান বা শান্তির জায়গা বলা হয়।
কল্কির বাবা গ্রামের প্রধান।
আমরা হাদিস এবং ঐতিহাসিকদের কাছ হতে জানতে পারি যে রাসুল(সা) মক্কার প্রধান বংশের ঘরে জন্ম গ্রহন করেছিলেন।
কল্কিকে ইশ্বর দেবেন উতকৃষ্ট গুনাবলী। মাইকেল এইচ হার্ট তাঁর বইয়ে বিশ্বের সৃষ্টির সময়কাল থেকে যত মহান মনীষির জন্ম হয়েছে তাঁদের মধ্যে শ্রেষ্ট ১০০ জনকে বাছতে গিয়ে মুহাম্মাদ(সা)কে প্রথম স্থানে রেখেছেন। নবীজী(সা) এতই উতকৃষ্ট গুনাবলীর অধিকারী ছিলেন যে আজও বিশ্বের ২০০ কোটিরও বেশি মানুষ তাঁর জীবন আদর্শ অনুসরণ করে চলেন।
কল্কিকে ইশ্বর দেবেন অটটি অলৌকিক শক্তি।
হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী এই আটটি শক্তি হল ১.জ্ঞান ২.সংযম ৩.জ্ঞান বিতরণ ৪.অভিজাত বংশ ৫.সাহসিকতা ৬.কম কথা বলা ৭.মহানুভতা ৮. পরোপকারিতা। এই আটটি গুনের সবগুলো হুবহু মুহাম্মাদ(সা) এর মধ্যে ছিল। যারা মুহাম্মাদ(সা) সম্পর্কে জানেন বা তাঁর জীবনি পড়েছেন তারা সহজেই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন।
কল্কি চরবেন একটি সাদা ঘোড়ায় এবং তাঁর ডান হাতে থাকবে তরবারি। আমরা জানি যে মুহাম্মাদ(সা) বোরাকে চড়েছিলেন, যখন তিনি মিরাজে গিয়েছিলেন।
তাঁর ডান হাতে যুদ্ধের সময় তরবারি থাকত। তিনি বেশ কয়েকটি যুদ্ধ করেছিলেন। সবগুলো যুদ্ধই ছিল আত্মরক্ষার জন্য।
@ ভবিষ্যবাণী ২
২ নং ভবিষ্যবাণীর মতই কল্কি পূরানের দ্বিতীয় অধ্যায়, মন্ত্র ৪ এ ভবিষ্যবাণী করা হয়েছে।
@ ভবিষ্যবাণী ৩
কল্কিকে সাহায্য করবেন চার জন সহচর পাপীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য।
(কল্কি পূরান, দ্বিতীয় অধ্যায়, মন্ত্র-৫)
মুহাম্মাদ(সা) এর সাথে মিলঃ
মুহাম্মাদ(সা) কেও চার জন সাহাবী, সাথী বা সহচর সাহায্য করেছিলেন জালিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য। পরে তাঁরা এক এক করে খলিফাও হয়েছিলেন। তাঁরা হলেন- আবু বক্বর(রা), ওমর(রা), ওসমান(রা) ও আলী(রা)।
@ ভবিষ্যবাণী ৪
কল্কি বিষ্ণুয়াস নামে এক ব্যক্তির ঘরে জন্ম নেবে সুমতির গর্ভে। (কল্কি পূরাণ, দ্বিতীয় অধ্যায়, মন্ত্র-১১)
মুহাম্মাদ(সা) এর সাথে মিলঃ
সুমতি শব্দের সাংস্কৃত অর্থ হল প্রশান্ত, প্রশান্তি বা শান্তি।
আর মুহাম্মাদ(সা) এর মায়ের নাম ছিল আমিনা। যার অর্থ হল প্রশান্ত বা শান্তি। (বিষ্ণুয়াস নিয়ে ১ নং….আলোচনা হরা হয়েছে)
@ ভবিষ্যবাণী ৫
কলি যুগে যখন রাজারা হবে ডাকাতের মত সেই সময় বিষ্ণুয়াসের ঘরে জন্মগ্রহন করবে কল্কি। (ভাগবত পূরাণ; খন্ড ১, অধ্যায় ৩, মন্ত্র ২৫)
মুহাম্মাদ(সা) এর সাথে মিলঃ
মুহাম্মাদ(সা) যে সময় আরবে জন্মগ্রহন করেন সেই সময়কে বলা হয় আইয়ামে জাহালিয়াত। সেই সময় কারো কোন অধিকার ছিল না, জোর যার মুলুক তার।
ক্ষমতা সম্পন্ন লোকেরা যা ইচ্ছা তাই করত। তাদের ছিল একচেটিয়া আধিপত্য। রাজারা ছিল ডাকাতের মতই। আর ইসলাম মানুষকে এই জন্যও আকৃষ্ট করেছিল যে গরিবেরা সমান অধিকার ও যাকাত পেত।
@ ভবিষ্যবাণী ৬
কল্কি মাধব মাসের দ্বাদশ দিনে জন্মগ্রহন করবেন।
(কল্কি পুরাণ; দ্বিতীয় অধ্যায়,মন্ত্র-১৫)
মুহাম্মাদ(সা) এর সাথে মিলঃ
আমরা জানি যে রাসুল(সা) রবিউল আউয়াল মাসের দ্বাদশ দিনে জন্মগ্রহন করেন।
@ ভবিষ্যবাণী ৭
ভাগবত পুরান, কল্কি পুরান এবং আরও অনান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে জানতে পারি যে কল্কি হলেন শেষ ঋষি বা নবী। তাঁর পর আর কোন ঋষি আসবেনা।
মুহাম্মাদ(সা) এর সাথে মিলঃ
আমরা জানি যে পৃথিবীতে আল্লাহ প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী বা দূত পাঠিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শেষ হলেন মুহাম্মাদ(সা)।
তাই এই ভবিষ্যবাণীও হুবহু মিলে যাচ্ছে।
@ ভবিষ্যবাণী ৮
কল্কি জ্ঞান প্রাপ্ত হবেন প্রথমবার রাতের বেলায় একটা গুহার ভেতরে। তারপর তিনি উত্তর দিকে রওনা হয়ে ফিরে আসবেন। (কল্কি পুরাণ)
মুহাম্মাদ(সা) এর সাথে মিলঃ
মুহাম্মাদ(সা) এর উপরই অহি নাযিল হয় অর্থাৎ তিনি জ্ঞান প্রাপ্ত হন হীরা নামক পাহারে রাতের বেলায়। যেমন সুরা দু’খান (৪৪ঃ২-৩) এবং সুরা ক্বদরে (৯৭ঃ১) বলা হয়েছে ‘নিশ্চয় আমি অবতীর্ন করেছি এই কুরান মহামাম্বিত রাতে’।
মক্কায় ধর্ম প্রচারের সময় মুহাম্মাদ(সা) ও তাঁর সাথীদের সাথে কাফেররা অন্যায় ও জুলুম শুরু করল। তখন মুহাম্মাদ(সা) মদিনায় হিজরাত করেছিলেন যেটা ছিল মক্কার উত্তরে। পরে তিনি আবার মক্কায় ফিরে আসেন।
@ ভবিষ্যবাণী ৯
কল্কি অবতারকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে দেবদূতরা সাহায্য করবেন। (কল্কি পুরাণ, দ্বিতীয় অধ্যায়, মন্ত্র-৭)
মুহাম্মাদ(সা) এর সাথে মিলঃ
কুর’আনের সুরা আল- ইমরানের ১২৩-১২৫ নং আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি যে বদর যুদ্ধে মুহাম্মাদ(স.) ও তাঁর সাহাবীদেরকে (রা.) যুদ্ধক্ষেত্রে দেবদুত বা ফেরেস্তারা সাহায্য করেছিলেন, পৃথিবীর সকল মুসলমানই একথা বিশ্বাস করেন।
আর ঐতিহাসিকরাও অবাক যে মাত্র তিনশ জন কিভাবে সহস্রাধিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন। দেবদুতদের সাহায্য ছাড়া এ কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
@ ভবিষ্যবাণী ১০
কল্কি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে তিনি অজ্ঞলোকদের পরিচালিত করবেন সরলপথে। (কল্কি পুরাণ)
মুহাম্মাদ(সা.) এর সাথে মিলঃ
আরবের সেই সময়কে আয়্যামে জাহিলিয়াত বা অজ্ঞযুগ বলা হত। মুহাম্মাদ(সা) আরবদের পথ দেখিয়েছিলেন।
তাদেরকে পৃথিবীর শ্রেষ্ট জাতিতে পরিচালিত করেছিলেন। কুর’আনে বলা হয়েছেন তিনি (মুহাম্মাদ সা.) হলেন পৃথিবীর সকল মানুষের পথপ্রদর্শক। (সুরা সাবা ৩৪ঃ২৮)
হিন্দু ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুলিতে কল্কি সম্পর্কে যে সকল ভবিষ্যবাণী করা হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করলাম। সেই সকল ভবিষ্যবাণীর সাথে মুহাম্মাদ(সা.) এর কতটা মিল আছে তাও আলোচনা করলাম। কোন সিদ্ধান্ত না দিয়ে আমরা ইসলামের আলোর প্রিয় পাঠকদের উপরই সেই গুরুদায়িত্ব অর্পন করলাম।
আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন যে আসলেই কি মুহাম্মাদ(সা.) হলেন কল্কি। নাকি কলিযুগ এখনো আসেনি এবং কল্কিরও আবির্ভাব হয়নি। কারণ বেশিরভাগ হিন্দুই বিশ্বাস করেন যে কলযুগ এখনো শুরু হয়নি। অপরপক্ষে কিছু হিন্দু পন্ডিত যেমন, জগতগুরু শঙ্কারাচার্য স্বরসতী, শ্রী শ্রী রবিশঙ্কার স্বীকার করেছেন হিন্দু ধর্মে মুহাম্মাদ(সা.) সম্পর্কে ভবিষ্যবাণীর কথা।
সুত্রঃ ১. হিন্দু আন্ড ইসলাম দ্য কমন থ্রেটস - শ্রী শ্রী রবিশঙ্কার
২. হিন্দু ধর্মের গোপন কথা - লেখা প্রকাশনি
৩. শেষ নিবেদন ও অনান্য – মাওলানা আবুল হোসেন ভট্টাচার্য
৪. বেদ পুরাণে আল্লাহ ও মুহাম্মাদ - সুশান্ত ভট্টাচার্য
৫. বেদ ও পুরানের ভিত্তিতে ধর্মীয় ঐক্যের জ্যোতি – ড. বেদ প্রকাশ উপাধ্যায় (এম.এ সংস্কৃত বেদ; রিসার্চ স্কলার, প্রয়াগ বিশ্ববিদ্যালয়।
আমার নিজস্ব ব্লগসাইট ভিজিট করার আমন্ত্রন রইলঃ http://www.islameraalo.wordpress.com ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।