এই ব্লগে মৌলবাদী, রাজাকার এবং জামাত শিবিরের প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
"মাসের ৬ তারিখ। ১০ মাসের ছেলের দুধ কিনতে পারছি না। প্রতিদিন বাসা ভাড়ার তাগাদা। স্কুল পড়–য়া চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে কীভাবে যে বেঁচে আছি, আল্লাহ ছাড়া তা আর কেউ জানে না।
"স্বামী আজ চার দিন হলো পিলখানার ভেতরে। সে কেমন আছে? বেঁচে আছে- না মরে গেছে? তারও কোনো খবর পাচ্ছি না। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামিও তো জেলখানায় তার স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে পারে। অথচ এখানে সে সুযোগও নেই। "
পিলখানার সামনে শুক্রবার সকালে বিডিনিউজ ২৪ ডটকমের কাছে বর্ণিত বিডিআরের ল্যান্স নায়েক জয়নাল হোসেনের স্ত্রী শিরিন বেগমের কথাগুলো যেন সেখানে সমবেত শত শত মানুষের ক্ষোভ আর অসহায়ত্বের প্রতিধ্বনির মতো কানে বাজে।
প্রদীপ চৌধুরীর কলমে বিস্তারিত।
শিরিন বেগম একা নয়, তার মতো অনেক বিডিআর সদস্যের স্ত্রী বা আত্মীয়-পরিজন প্রতিদিন ভিড় করছেন সদরদপ্তরের প্রধান ফটকে সরকারের নির্দেশে কাজে যোগ দেওয়া স্বজনদের খোঁজ নিতে।
হাবিলদার মো. কামাল হোসেনের স্ত্রী বুলবুলি বেগম। বিডিনিউজ ২৪ ডটকমকে তিনি বলেন, "সরকারের কথা মতো আমার স্বামী কাজে এসেছে। তাকে ৩ তারিখে ভেতরে ঢুকানো হয়েছে।
কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন খবর নেই। আমার তিন ছেলে-মেয়ে। প্রতিদিন এ গেইট থেকে ও গেইটে যাচ্ছি। কিন্তু স্বামীর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। বাবার চিন্তায় ১১ বছরের ছেলে পড়াশুনাও বন্ধ করে দিয়েছে।
"
সাত বছরের ছেলে ইস্তিয়াক আর পাঁচ বছরের মেয়ে ইসরাতকে নিয়ে স্বামী ল্যান্স নায়েক ইউনুসের খবর নিতে এসেছেন তার স্ত্রী। তাকে দেখা গেল প্রধান ফটকে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে তার স্বামীর খোঁজ নিতে। খবর জানতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে পড়েন কান্নায়। জানা সম্ভব হয়নি তার নামটিও।
সদরদপ্তরের ভেতরে বাসায় পরিাবার নিয়ে থাকতেন বিডিআর সদস্য মো. ওয়াদুদুর রহমান।
তার স্ত্রী মেরিনা বেগম বিডিনিউজ ২৪ ডটকমকে বলেন, "আমরা সবাই চাই এমন মর্মান্তিক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের বিচার হোক। কিন্তু নিরাপরাধ কাউকে শাস্তি দেওয়া উচিত হবে না। "
তিনি বলেন, "গত কয়েক দিন ধরে স্বামীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারছি না। ভেতরের বাসাতেও ঢুকতে দিচ্ছে না। আমরা গরিব মানুষ।
ছোট দুই বাচ্চা নিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় আছি। টাকার অভাবে গ্রামের বাড়িও যেতে পারছি না। "
গণমাধ্যমের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বিডিআরের দর্জি জামালের স্ত্রী কোহিনুর বেগম বলেন, "আমার স্বামী অল্প কয়েক হাজার টাকা বেতন পান। এমন অনেকেই এই বেতনে কোনোরকমে সংসার চালান। কিন্তু আমরা এখনো বেতন পাইনি।
এই খবর কোনো মিডিয়াতে আসছে না। আমরা কী অপরাধ করেছি। আমাদেরকে কেন কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। "
সেখানে অপেক্ষমান কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেন, "ভাই আপনারা দয়া করে আমাদের কষ্টের কথা একটু লিখেন। যারা নিরপরাধ তাদের বেতনের ব্যবস্থাটা সরকার করুক।
এই আমাদের সামান্য চাওয়া। "
বরগুনার বেতাগী উপজেলা থেকে মুজবুর রহমান পিলখানায় এসেছেন বিডিআরের কেরানি ছোট ভাই শামীমের খবর নিতে। চারদিন ধরে ভাইয়ের কোনো খবর না পেয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।
বিডিনিউজ ২৪ ডটকমকে তিনি বলেন, "গত ২ তারিখে সে সদর দপ্তরের ভেতরে ঢুকেছে। তারপর থেকে ভাইয়ের কোনো খোঁজ পাচ্ছি না।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। কিন্তু ভাইয়ের খবর পাই না। "
তিনি আরও বলেন, "পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা জবাব দেয়, জানি না। গেইটের আশেপাশেও দাঁড়াতে দেয় না তারা। এখন আমি কার কাছে গিয়ে আমার ভাইয়ের খবর পাবো?"
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ ২৪ ডটকম/পিসি/এজে/জিএনএ/১৪১৯ ঘ.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।