আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপ্রকাশিত (ষষ্ঠ পর্ব)

মানুষের সবচেয়ে বড় ক্ষমতা কিংবা অক্ষমতা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত। তা হলো নিজের উপর নিয়ন্ত্রন

দশ ছুটির দিন গুলো চাইলেই অনেক সুন্দর হতে পারে। কিন্ত সুন্দর একটা দিন কাটাবার মন মানসিকতাটা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন শুধু মনে হয় দিন কেটে গেলেই হলো। শুয়ে বসে কেটে যায় একের পর এক দিন।

অন্য দিনগুলোর সাথে আজকের দিনের কোনো পার্থক্য নেই। তারপরো একটা অদ্ভুত আনন্দ কাজ করছে। খুব গান শুনতে ইচ্ছে করছিল। তাই অনেক পুরোনো প্লেয়ারটা বের করেছিলাম। ব্যবহার না করতে করতে আর চলছেই না।

বাধ্য হয়ে রেডিও চালালাম। এফ এম রেডিও। আজকাল রেডিও যে এত চমৎকার সার্ভিস দিচ্ছে সেটা জানা ছিল না। বেশ চমৎকার সব গানের সাথে রয়েছে টক শো। অনেকদিন পর মনের আনন্দ নিয়ে ঘরময় হেটে বেরাচ্ছি।

আমি সাধারনত ঘর দোর গোছানোর কাজ গুলো করিনা। আসলে মা কখনো আমাকে করতে দেন না। আজ নিজের ঘর গোছালাম। তারপর আরিফের রুমটাও গোছালাম। আরিফটা চোখের সামনে দিয়ে কখন যে বড় হয়ে যাচ্ছে টের ও পাচ্ছিনা।

ওর সাথে আমার একটা দুরত্ব হয়ে গেছে। অবশ্য এটা নতুন কোনো বিষয় না। আগে থেকেই ওর সাথে আমার একটা দুরত্ব ছিল। আমাকে ও বরাবরই একটু এড়িয়ে চলত। আরিফের প্রিয় মানুষদের একজন হলো ওর হাউস টিউটর।

লোকটাকে আমার অসহ্য লাগত। কিভাবে কি করলে এই অসহ্য ভাবটা পুরোপুরি প্রকাশ করা যাবে এটা নিয়ে এক সময় গবেষণা করেছি বলা যায়। ওই লোককে যে কেউ দেখলেই যে কয়টা শব্দ অবধারিত ভাবে বলবে সেগুলো হলো বোকা, হ্যাবলা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে নির্লজ্জ, গবেট......নাহ্‌ যুত সই শব্দ খুজে পাচ্ছি না। তবে আমার দৃষ্টি ভংগির ও কিছু সমস্যা ছিল যা ধীরে ধীরে পরির্বতন হয়েছে। এখন আমি জানি লোকটার একটা দৃঢ় ব্যক্তিত্ব আছে।

এই ব্যক্তিত্বে এত সহজে আঘাত করা যায় না। আরো কিছু ঝাপসা ধারনা আছে। যেমন লোকটা হয়তো তার মধ্যে একটা ভয়ংকর ব্যথা বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে যেটা কেউ জানেনা অথবা সে বেশ ভালো অভিনেতা। এসব নিয়ে খুব একটা মাথা ব্যথা কখনই করা হয় না। আসলে করার প্রয়োজন পড়ে না।

নিজের সমস্যারই কূল করতে পারছি না। তবে একটা প্রশ্নের উত্তর যে জানতে ইচ্ছে করে না তা না। এত দিন ধরে এই লোকটি কেন আমাকে পেছনে ছায়ার মতন অনুসরন করেছে? সেদিন ওর সাথে এমন অদ্ভুত আচরন করার ব্যাপারটা মাথায় ঘুরছে। না জানি লোকটা কি ভেবে বসে আছে? আসলে খুব বাজে প্রস্তুতি নিয়ে একটা চমৎকার পরীক্ষা দিয়ে এত আনন্দ লাগছিল। অনেকদিন পর এমন একটা অনুভূতি যেটাকে অগ্রাহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

পরদিন ঘুম থেকে উঠে নিজেরই হাসি পাচ্ছিল নিজের হাস্যকর কাজের কথা মনে করে। তবে একথা সত্যি যে সময়টা অনেক চমৎকার ছিল। অনেকদিন মনে থাকবে। যে মানুষটার সাথে এমন সুন্দর সময় কেটেছে তাকে কতদিন মনে থাকবে সেটা বলতে পারছি না। তবে তাকে ধন্যবাদ দিতে এতটুকু কার্পণ্য বোধ করবো না।

শুধু সামনা সামনি হয়তো কখনো বলা হবে না। আমার খুব কাছের কোনো বন্ধু নেই। একজন খুব কাছের বন্ধু যে কতটা জরুরী এখন বুঝতে পারি। আমার যে অনেক আনন্দ হচ্ছে সেটাও ঠিক মতন উপভোগ করতে পারছি না। মনে হচ্ছে প্রাণ খুলে কারো সাথে অনেক কথা বলতে পারলে খুব ভালো লাগতো।

শুধু আনন্দের সময় না। যখন অনেক চাপে থাকি, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে থাকি, বুঝতে পারি না কি করা উচিত...খুব খুব মনে হয় আমার খুব কাছের একটা মানুষ যদি থাকত? যখন অনেক মন খারাপ থাকে, একা একা চুপি চুপি কান্নাকাটি করি...তখনো মনে হয় এমন কেউ যদি থাকত জড়িয়ে ধরে কাদঁতে পারতাম। সব কিছু কোথায় যেনো আটকে থাকে। আর চাপ বাড়তে থাকে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার নিজের জীবনের কিছু কি অবশিষ্ট রইল? আমিও তো একজন আলাদা মানুষ।

নিজস্ব চাহিদা বলেও তো একটা ব্যাপার থাকে। পরক্ষনে আবার মনে হয় আসলে বেচেঁ থাকার উদ্দেশ্য কি? শেষ পর্যন্ত আমার কিসের সাথে কেন লড়াই করে যাচ্ছি? মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্বটা কতটুকু? এর মাঝে কতটুকু না করলেই নয়? আমার চিন্তা ভাবনা গুলো এখানে এসে আটকে যায়। মানুষ হিসেবে আমি স্বশিক্ষিত নই। কোনো একটা প্রবন্ধে পরেছিলাম... সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। আমার অল্প জ্ঞানেও এই বাক্য বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পারি যখন নিজের মনে জেগে উঠা এই প্রশ্ন গুলোর কোনো উত্তর খুঁজে পাইনা।

তবে কখনও আফসোস হয় না। এখন পর্যন্ত আমি নিজের জীবন নিয়ে তৃপ্ত। শুধু মাঝে মাঝে নিজেকে খুব একা মনে হয়। একাকিত্ব সম্ভবত একটা ব্যাধি। এটা থেকে মুক্তি পাবার চেষ্টা করছি বেশ কিছুদিন হলো।

অবশ্য এটা সব সময় হয় না। যখন একটা মানুষ সারাক্ষন ছায়ার মতন সাথে সাথে চলে তখন চাইলেও একাকিত্ব বোধ করা যায় না। অনেক সময় এমনও হয়েছে... খুব একা থাকতে ইচ্ছে করছে, কিন্ত সেই উপায় নেই। তখন কিন্ত প্রচন্ড বিরক্ত লাগে। আমি যতই আলাদা কাঠিন্যে গড়া হই না কেন, আমার মূলতো সেই নারী।

তাই এধরনের ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন অনুভূতির মাঝে ভালো লাগার হাল্কা অনুভুতিটা এড়াতে পারি না। তবে শেষ পর্যন্ত সামলে নিতে পারি বলেই আমি একটু আলাদা। এই ব্যাপারটা অহংকারের নয় বাস্তবতা। আমাকে এভাবেই চলতে হবে। আজকে হঠাৎ কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে।

কিন্ত একা একা ঘুরতে যাওয়া ব্যাপারটা নিশ্চয় খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কিন্ত কার সাথে যাব? মাকে নিয়ে বের হওয়া যায়। কিন্ত মা আজকাল কেমন যেনো চুপসে গেছেন। ঘুরে বেরিয়ে দেখা যাবে প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। আরিফকে বললে দেখা যাবে চোখ কপালে তুলে ফেলেছে।

আর ভ্রু কুচকে বলবে “ মেয়ে মানুষ নিয়ে বাইরে যাওয়া খুবই বিরক্তিকর কাজ। ” কিন্ত মেয়ে মানুষটা বোন না হয়ে গার্ল ফ্রেন্ড হলে আর এই সমস্যা হবে না। আরতো কেউ নেই যাকে বলা যায় কিংবা আবদার করা যায়। কেনো জানি মাথায় একজনের চেহারা ভাসছে। কিন্ত এই চিন্তাটা দূর করে দিলাম।

এটা ঠিক হবে না। তার চেয়ে একা বের হওয়া যায়। অনেকদিন শপিং করা হয়না। একটা সুন্দর দেখে শাড়ি কিনতে হবে। আর সেটার সাথে ম্যাচ করে মাটির গহনা।

এগার আজ দুপুরে আমার দাওয়াত। স্বগত’র বাসায়। হরেক রকম ভর্তা, ছোট মাছ, কাচাঁ আমের ডাল, শুটকি ভুনা আরো কি কি জানি বলল...মনেও নেই। অনেকদিন পর আয়েশ করে খাওয়া যাবে। ওর বাসায়ও যাওয়া হয়না অনেকদিন।

কিছু একটা নিয়ে যেতে হবে। বুঝতে পারছিনা কি নিয়ে যাব? একা একা থাকতে থাকতে একটু অসামাজিক হয়ে গেছি। তাই সামাজিক সিদ্ধান্ত গুলো ঠিক মতন নিতে পারি না। খুবই বিরক্তিকর। বেশির ভাগ সময় উল্টা পাল্টা জিনিষ নিয়ে যাই।

পরে নিজেরই মেজাজ খারাপ হয়। অপ্রয়োজনীয় কিছু নেবার কোনো মানেই হয় না। হঠাৎ মনে হল স্বগত’র বাচ্চাটার জন্য কিছু নিয়ে যাই। আজকাল কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া তেমন সমস্যার ব্যাপার না। সুপার শপ গুলোতে সব কিছু পাওয়া যায়।

আমি সেরকম একটা দোকানে ঢুকে পড়লাম। দোকান বলাটা অন্যায় হচ্ছে। অনেক বড় আর এত সুন্দর করে সাজানো গোছানো। আমি আগে কখনো আসিনি। তাই ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম।

সার্ভিস সিস্টেম খুব চমৎকার। একটু পরপর একটা সুকন্ঠি মেয়ে বিশুদ্ধ বাংলায় কি সব জেনো বলছে। আমি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম আমি এখানে কেনো এসেছি। হঠাৎ একটা মহিলা কন্ঠে প্রায় চিৎকার। “ কিরে তুই এখানে কি করিস? ” আমি চমকে ঘুরে তাকালাম।

দেখি সেতু আপু। পরক্ষনেই সামলে নিয়ে হেসে জবাব দিলাম “ খুব বেশি গরম পড়ছেতো তাই একটু সাঁতার কাটতে এসেছি। ” “মানে? ” সেতু আপুর চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। আমি একটু হাসলাম। “কেমন আছেন? ” “ ভালো।

তুই কেমন আছিস? অনেকদিন তোকে দেখিনা। লাট হয়ে গেছিস না? দাওয়াত না দিলে আসিস না? ” আমি কোনো তর্ক করলাম না। শুধু হাসলাম। তর্ক করতে আমার বেশ ভাল লাগে। কিন্ত জায়গা বুঝে।

এখানে হেরে যাবার মাঝেও আনন্দ আছে। সেতু আপুর সাথে আমার এক সময় চমৎকার একটা সম্পর্ক ছিল। আমার খুব ভালো বন্ধু ছিলেন বলা যায়। এখন ব্যস্ততা আর বাস্তবতা মিলে কিছুটা দুরত্ব হয়ে গেছে। সেই পুরাতন বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম “ আচ্ছা আপনি এখনো বিয়ে করছেন না কেন? অনেক দিন শাহী খাবার খাওয়া হয় না।

আপনার বিয়েতে খাব বলে মজা জমা রাখছি। ” “ জমা রাখতে থাক। যতো বেশি জমা রাখবি তত মজা পাবি। ” “ একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি। ” “ অবশ্যই পারিস।

কিন্ত উত্তর দেবো এমন নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। ” “ রফিক ভাই দেশে ফিরছেন কবে? মানে আপনাদের বিয়েটা কবে নাগাদ হচ্ছে। ” “ হবে। দেশে ফিরলেই হবে। মাস দুয়েকের মধ্যেই ফেরার কথা আছে।

” “আরে খুব বেশিতো দেরি নেই। ” “ হম্‌ম। ” “আপনিতো তাহলে বেশ আনন্দেই আছেন। ” “ আর আনন্দ। আনন্দ যে কাকে বলে।

কোথায় যে আনন্দ। আমরা নিজেরাও জানিনা। আচ্ছা তুই এখানে কেন এসেছিলি? কিছু নিবি? নাকি নিয়ে নিয়েছিস? ” “ আমি কি নেব তাই ভাবতে ভাবতে এখানে এসেছি। কিন্ত কি নেব বুঝতে পারছি না। ” “ এক কাজ কর পিচ্চিটার জন্য এটা নিয়ে নে।

” তাকিয়ে দেখলাম খেলনা জাতীয় একটা অদ্ভুত জিনিষ। আমার পছন্দ হলো না। কিন্ত সেতু আপুর কনফিডেন্স দেখে মনে হল এটা পিচ্চির পছন্দ হবে। তাই আর মাথা ব্যথা করলাম না। “ তুই নিশ্চয়ই আমাদের বাসায় যাবি এখন? ” “হম্‌ম।

কেন? ” “ তাহলে চল একটু ঘোরাঘুরি করে করে যাই। ” “ আমার কোনো সমস্যা নেই। চলেন যাই। কোথায় যাবেন? ” সেতু আপুকে কেমন যেন চিন্তিত দেখাচ্ছে। আমি কোনো কথা না বলে ওনাকে অনুসরণ করতে লাগলাম।

হাটতে হাটতে একটা খাবারের দোকানের সামনে এসে দাড়ালাম। “ চল তোকে জুস খাওয়াই। এখান কার জুস বেশ মজা। ” “ ঠিক আছে চলেন যাই। আমি কিন্ত আম খাব।

” আমরা দুজন সামনা সামনি বসে আছি। আমাদের সামনে খুব সুন্দর ডেকোরেশন করে জুস দেয়া হয়েছে। সেতু আপু স্ট্র তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্ত তাকে খুব অন্যমনষ্ক দেখাচ্ছে। আমি কি বলব খুজে পাচ্ছি না।

উনিই নীরবতা ভাঙলেন। “ কিরে কেমন লাগছে জুসটা? মজা না? ” “ অদ্ভুত লাগছে। জুস না, আপনাকে। আপনি আমাকে কিছু একটা বলতে চান। অথচ বলতে এত সংকোচবোধ করছেন।

এটা দেখে অদ্ভুত লাগছে, আপনার সাথেতো আমার এমন ফরমাল সম্পর্ক ছিল না, তাই না? ” “ কিছু কিছু সমস্যা এমনি হয় চাইলেও খুব সহজে বলা যায় না। ” “ আমার মনে হয় আমি আন্দাজ করতে পারছি আপনার সমস্যাটা কোথায়। আপনি এখনো সেই লোকের সাথে ফোনে কথা বলা ছাড়তে পারেননি তাই না। ” “ হম্‌ম। কিন্ত বিশ্বাস কর আমার কিন্ত অন্য কোনো সমস্যা নেয়।

ওর প্রতি দুর্বলতা বা... এমন কোনো ব্যাপার নেই। শুধু ফোনে কথা হয়। এমনকি ফোনে বেশির ভাগ সময় রফিককে নিয়ে কথা হয়। আমার আর রফিকের সম্পর্ক নিয়ে কথা হয়। ” “ কিছু মনে করবেন না সেতু আপু।

আপনি যেই কথা বলছেন সেটা আপনার কাছে সমস্যা মনে হচ্ছে না। কিন্ত আসল ব্যাপারটা হল এই কথা গুলো শুধু যুক্তি দেবার খাতিরে বলা। মনকে স্বান্তনা দেয়ার জন্য বলা। দুর্বলতা যদি নাই থাকতো তবে আপনি এতদিনে এই সম্পর্ক থেকে সরে আসতে পারতেন। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হল এর মাত্রা খুঁজে বের করা।

আর তার চেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হল আপনার মনের অস্থিরতা দূর করা। সেটা যেভাবেই হোক। ” “ তুই আমাকে কি করতে বলিস? ” “ আমি আপনাকে কিছুই করতে বলছি না। আমি শুধু বলছি ঝোকের মাথায় কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেয়াটা ঠিক হবে না। ” “ তুই যেভাবে ভাবছিস ব্যাপারটা ততটা সিরিয়াস না।

” “ কিন্ত আপনার বিচলিত মুখ বলছে ব্যাপারটা সেই দিকেই যাচ্ছে। আর যদি না যায় তবেতো ভালই। ” “ এখন আমার কাছে যেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা মনে হচ্ছে সেটা হল আমার একাকিত্ব। বেশির ভাগ সময় আমি একা একা থাকি। রফিকের সাথে একটা দুরত্ব হয়ে যাচ্ছে।

ও চাইলেও যে আমাকে সেভাবে সময় দিতে পারবেনা এটাও বুঝতে পারছি। কিন্ত কি করব বল? আমিওতো একটা মানুষ। আমারো ভালো কিছু সময় কাটাতে ইচ্ছে করে। ” “ আমি চাইলেই আপনার যুক্তি গুলো ভেঙে দিতে পারি। কারন আপনার যুক্তি গুলো আত্নপক্ষ সমর্থন করার জন্য যথেষ্ট।

কিন্ত বাস্তবতা থেকে বেশ দূরে। আপনার সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন সেটা হতে হবে স্বচ্ছ। একেবারে টলটলে পানির মতন। ” পরের কিছু সময় কেউ কোনো কথা বললাম না। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে জুস খাচ্ছি।

আসলেই সুস্বাদু। ফ্লেভারটা একেবারে আসল আমের। খুব অল্প অল্প খাচ্ছি। যাতে করে দ্রুত শেষ হয়ে না যায়। আমরা সবসময় চাই ভালো যেকোনো কিছু দীর্ঘ সময় আকড়ে ধরে রাখতে? জানিনা সেতু আপু এখন কি ভাবছেন।

কিন্ত তার সমস্যাটা আসলেই গুরুতর। এই ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে সঠিক বিবেচনা করা। আবেগের বিষয়ে বেশির ভাগ সময় আমরা আবেগি সিদ্ধান্ত নিই। আর আবেগের সিদ্ধান্ত সঠিক হয় না এমন বলব না।

কিন্ত একটা সম্ভবনা থেকেই যায় ভুল হবার। আমি বলি কি এত ভেবে কি হবে? আমাদের জীবনটাতো খুবই ছোট। এই স্বল্প সময়ের প্রতিটি মুহুর্ত আনন্দে কাটানো টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা যেভাবেই হোক না কেন। “ চল যাই। ওরা হয়তো আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।

” “হম্‌ম চলেন যাই। ” সেতু আপু মাথা নীচু করে আমার পাশে পাশে হাটছে। আমি আশা করছি উনি আমাকে একটা কিছু বলবেন। অন্তত এই ব্যাপারটা নিয়ে কারো সাথে কথা না বলার অনুরোধ উনি করবেনই। মনে হচ্ছে আমার কথা তাকে একটা ধাক্কা দিয়েছে।

জানিনা শেষ পর্যন্ত উনি কি সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এটুকু আশা করতেই পারি। জীবনের পরবর্তী সময়ে যেনো কোনো আক্ষেপে পুড়তে না হয়। ভালো থাকুক সুখে থাকুক সারাটি জীবন। “ এই বিষয়ে কারো সাথে কোনো কথা না বলাটাই ভালো।

তাই না? তোর কি মনে হয়? ” আমি কিছু বললাম না। শুধু একটু হাসলাম। “ জীবনের গন্তব্য কি জানেন? আমরা কেউ খুব ভালো ভাবে জানিনা। আর একটা সত্য আমরা সবাই জানি। কিন্ত কখনো মনে রাখতে পারি না।

সেটা হলো সব কিছুর শেষে ভালো থাকা। ভালো থাকবেন সব সময়, সেটা যে কোনো মূল্যে। ” সেতু আপু কিছু বললেন না। চিন্তিত মুখে আমার দিকে তাকালেন। আমি মুহুর্তে সেতু আপুর সমস্যা ভুলে গেলাম।

আবার আমার নিজের জগতে ফিরে গেলাম। আনন্দ নিতে লাগলাম নিজের মতন করে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।