জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়
পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় এসেছিলেন বারাক হুসেইন ওবামা। কিসের পরিবর্তন? বাইরের দেশের সাথে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক, ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার এবং যুদ্ধনীতির আমূল পরিবর্তনের অঙ্গীকার ইত্যাদি। নির্বাচনের আগে তিনি যুদ্ধনীতির সমালোচনা করে আমেকিার ভুক্তভোগী সৈন্যদের আত্মীয়- স্বজন এবং যুদ্ধকে ঘৃণা করে এমন মানুষের ব্যাপক সমর্থন পান।
কিন্তু দেখা গেল প্রথম বার থেকে শুরু কোরে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়ে তিনি ইরানের সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি অনবরত জিইয়েই রেখেছেন। এর আগে মানুষ ধরে নিয়েছিল ওবামার হাত দিয়ে মনে হয় আমেরিকার চরিত্রের যুদ্ধোন্মোদনার দিকটির অবসান হবে। কিন্তু বাংলা প্রবাদ বাক্য দেখা যাচ্ছে আমেরিকার জন্যও প্রযোজ্য হয়ে পড়ছে। বাংলার প্রবাদটি হচ্ছে, যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবণ। অর্থাৎ আমেরিকার রাষ্ট্রক্ষমতায় যে-ই যায় সেই যুদ্ধ যুদ্ধ নামক এক পাগলা ঘোড়ার উপর তাকে আরোহণ করতেই হয়।
আর হবেই না বা কেন? ক্ষমতার মসনদে আমরা যাদেরকে দেখি তারা তো অভিনেতা মাত্র। তাকে যতটা দাপুটে দেখা যায় বাস্তবে সে কি তিনি অতটা দাপুটে? পর্দার আড়াল থেকে পরিচালকরা তাকে যেভাবে ঈশারা করেন, তিনি তার প্রতিফলন ঘটান মাত্র। কথায় আছে, রাজা রাজ্য চালান- কিন্তু রাজাকে চালান রাণী। সুতরাং পর্দার আড়ালে থাকা কুশীলবরাই হচ্ছেন দেশের আসল পরিচালক। কারা আছেন আড়ালে থাকা ব্যক্তিরা? খোঁজ নিলে দেখা যাবে এই কুশীলবদের প্রায় সবাই দেশের অর্থনীতির বিরাট অংশের মালিক।
কেউ অস্ত্রের কারখানার মালিক কেউবা বহুজাতিক কোম্পানির মালিক। তাদের স্বার্থ বিবেচনা করেই দেশের নীতি নির্ধারিত হয়। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে টিকে থাকতে হলে অন্য দেশের তেল, গ্যাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদের খনির উপরে প্রভুত্ব ও দখল থাকতে হয়। আবার অস্ত্রের কারখার মালিকদের অস্ত্র বিক্রির জন্য যুদ্ধও প্রয়োজন। যুদ্ধ না থাকলে তো কেউ অস্ত্র কিনবে না।
কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়- এই নীতিতে প্রেসিডেন্টরা ক্ষমতা ভোগ করেন আর ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যবসার দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। নতুবা দেখা যাবে কোনভাবেই ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয়।
সিরিয়া এবং ইরানে দুই ধরনের জীবন-পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত থাকলেও তাদের মধ্যে আদর্শগত বেশ কিছু মিল রয়েছে। এর একটি হচ্ছে ইসরাইল উভয় পক্ষেরই শত্রু। অপরদিকে মার্কিন প্রশাসনে ইসরাইলের রয়েছে জোর লবিইং এবং প্রভাব।
সুতরাং ইসরাইল এবং আমেরিকার সম্পর্ক অঙ্গা-অঙ্গিভাবে একইরকম। ইসরাইলের স্বার্থে আঘাত এবং আমেরিকার স্বার্থে আঘাত একই ব্যাপার। ইসরাইলের লবিইংকে অগ্রাহ্য করলে আমেরিকা বসে যাবে এবং আমেরিকাকে ছেড়ে দিলে আরবের বুকে অবৈধভাবে জন্ম নেওয়া দখলদার ইসরাইলের অস্তিত্ত্ব দুই দিনও টিকবে না। সুতরাং কোথায় যাবেন ওবামা? সিরিয়া রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে কি করে নি তা মুখ্য বিষয় নয়। সিরিয়া গণতন্ত্র নেই সেটাও মুখ্য বিষয় নয়।
মুখ্য বিষয় হচ্ছে যুদ্ধ একটা বাধাতেই হবে। কারণ পাগলা ঘোড়ার চরিত্রই এটা। নতুবা মিশরে গণতান্ত্রিক সরকারকে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়ে উচ্ছেদ করলো, বিক্ষুব্ধ প্রায় ২২০০ মানুষ (্ইখওয়ানের মতে ২২০০, অন্যদের মতে প্রায় ১০০০) হত্যা করলো, সে ব্যাপারে আমেরিকা ভদ্রতাশুলভ সংযত হওয়ার বাণী দিয়েই দায়িত্বপূর্ণ করলো আর সিরিয়ায় ১৩০০ মানুষ যা অন্যদের মতে শ’তিনেকের মত রাসায়নিক অস্ত্রের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগে, যা আসলে সিরিয়া করেছে না কি বিদ্রোহী বাহিনীই কৌশলবশত বাশার সরকারকে নাস্তানাবুদ করার জন্য করেছে এ অপ্রমাণিত বিষয়ের উপর সিরিয়াকে দোষী সাব্যস্ত করে একেবারে নৌবহর নিয়ে আক্রমণ করতে দাঁতে শান দিচ্ছে কেন? আসলে স্বার্থ অন্যদিকে এবং স্বার্থ বহুমাত্রিক, যা আমাদের মত ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে না ধরারই কথা। সুতরাং রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার একটি অজুহাত মাত্র।
এখন যদি প্রমাণ হয় যে সৌদি আরবের গোয়েন্দা প্রধানই এই রাসায়নিক অস্ত্র ইসরাইলের মাধ্যমে বিদ্রোহীদের হাতে তুলে দিয়েছে- ওবামা এ সত্যের থোরাই কেয়ার করবে।
এ সত্যকে মানার মত মানসিকতা কিংবা ইচ্ছা ওবামার নেই, কিংবা মেনে নিয়ে পারবেও না। তার উপর চেপে ধরা কুশিলবদের তিনি কিছুতেই উপেক্ষা করতে পারবেন না। সুতরাং কোন যুক্তি আছে ওবামাকে থামায়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।