রুপ নারানের কুলে জেগে উঠিলাম, জানিলাম এ জগত স্বপ্ন নয়। সিগনেচারটা কি আপনার?
জ্বি স্যার, আমার। জ্বি বলতে গিয়ে গলায় চি-হি-হি করে শব্দ হলো।
ফাইলটা আপনি কবে রিসিভ করেছেন?
আবার তাকালাম স্বাক্ষরটার দিকে। নিচে তারিখ লেখা।
চার মাস আগের তারিখ। একটু আগে গলায় শদ্ব ছিলো, এখন তাও নেই।
চার মাসে আগের তারিখ, চার চারটা মাস হয়ে গেল; এই তবু ফাইল আমার টেবিলে আসলনা কেন? Why? Why? Why?
শেষোক্ত Why টির অতি উচ্চ শব্দ ঢাকা-বাংলাদেশ-পৃথিবী ছাড়িয়ে গিয়ে সাতআসমানের দিকে রওয়ানা হলো।
জানেন এটা নিয়ে কত কি হয়েছে? এই প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক বরাবর আমি তিনটা চিঠি পাঠিয়েছি এই ফাইলটা পাঠানোর জন্য। তারা শেষমেশ রিসিভ কপি পাঠিয়েছে, এবং রিসিভি কপিতে আপনার সাইন, ঠিক কিনা বলুন।
আরে শালা গাধা নাকি; একবারতো চি-হি-হি করে বললাম যে সাইনটা আমার।
তারপর উনি ইংরেজিতে যা বললেন তার মানে নিম্নরুপ।
“আমি এক্ষুনি বিগবসের কাছে যাচ্ছি। আমি আপনার নামে অভিযোগ করবো। আমি আপনার ১২ টা বাজাবো।
”
কিঞ্চিত লেখাপড়া জানা থাকার কল্যাণে আমি কথা গুলোর মানে বুঝতে পারলাম এবং লেখাপড়ার আবির্ষ্কতাকে মনে মনে অতি-কুতসিত ভাষায় গালি দিলাম।
হয়তো এখনই আমার প্রতি নির্দেশ আসবে চলে যাওয়ার, যেভাবে সত্যিকারের আদমকে স্বর্গ ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়েছিল
চারপাশের সবাই বিষয়টা খুব ইনজয় করছে। এই মূহুর্তে প্রত্যেকে এত মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে যে, বাংলাদেশের ১% লোকও যদি এই মনযোগ দিয়ে কাজ করত তাহলে বাংলাদেশটা এতদিনে আমেরিকা হয়ে যেত। আসলে মনটা আমার দিকে, চোখটা টেবিলের দিকে।
আমি নিশ্চিত “S” আপা আজকে লাঞ্চের সময় ঘটনাটা তার সখিগণকে রসিয়ে-কষিয়ে বলবে।
“K” ভাই বিড়ি খাওয়ার অবসরে অফিসের আর সব বিড়িখোরদের বলবে “আদম শালা খাইছে আইজকা ঠেলা, ওরে যে কতবার নিশেদ করছি, কে হুনে কার কতা”।
“M” সাহেব নিশ্চয় এতক্ষণে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বসে আছে “office a ganjam, Adam shes”(অফিসে গ্যানজাম, আদম শেষ)।
আমার অনুমানকে সঠিক বিবেচনা করে সবাইকে মনে মনে এ্যাডভান্স অভিশাপ দিলাম। এ এক কঠিন অভিশাপ। যদি তোরা এই নিয়ে আলোচনা করিস তাহলে তোদের শরীরের এমন জায়গায় ফোড়া হবে যে, না পারবি কইতে, না পারবি সইতে।
আমিও ছাড়ার পাএ নই; হুম।
চাকরিটা চলে গেলে কি হবে তাই ভাবছিলাম। আমার সামনে এক সমুদ্র অন্ধকার, এক পৃথিবী দুশ্চিন্তা, এক আকাশ স্বপ্ন ভঙ্গের নিনাদ।
উষ্ঠা মারি তোর চাকরির কপালে। সোজা গ্রামে গিয়ে হাল চাষ করবো।
আর যাই হোক ফাইল তো আর খুজতে হবে না। সকাল-সন্ধ্যা মাঠে কাজ করবো, দুপুর বেলা আমার বউ বাটিতে করে পানতা ভাত নিয়ে মাঠে এসে লাজুক গলায় বলবে “মেলা বেলা হইছে, খাইয়া লন” । আমিও কাতল মাছের মত হা-আ-আ করে বলব “খিলায়া দেও”।
এমন সময় ক্রি-ই-ই-ই-ইং। আমার মধু-ভাবনায় ছেদ পড়লো।
ফোনের পর্দায় ইন্টারকমের ১২৭ নম্বর। ওই ফাইলওলা বুড়ো হাবড়াটা ফোন করেছে।
ফাইলটা নিয়ে এক্ষুনি আমার রুমে আসুন।
ফাইল!! কিসের ফাইল!! কার ফাইল!! চার মাস আগে কোথায় রেখেছি কে জানে। ফাইলটার চেহারাই তো আমার মনে নাই।
ঘড়ির কাটায় সকাল ১০.৩০ টা। আমি আবারও ঝিম ধরে যাই। আমার হাতে থাকা সকালের নাস্তার প্যাকেট থেকে পোড়া ডিমভাজা-পেয়াজের গন্ধ পৃথিবীর বায়ু মন্ডলে মিশে যায়।
বিকাল ৪ টা নাগাদ ফাইলটা পাওয়া গেল। ছাই রঙের খামে মোড়ানো কিছু কাগজের সমাবেশ।
ওপরে লেখা BLRI । আহ কি মধুর লেখা। সবার চোখ এড়িয়ে ফাইলটাকে একটু আদরও করলাম।
স্যার, আপনার ফাইল।
এ্যা ।
কিসের ফাইল?(বুইড়াটার মনেই নাই) ও আচ্ছা ঠিকাছে। ধন্যবাদ।
তারমানে চাকরিটা !!!!
আমার সামনে এখন এক সমুদ্র আলো , এক পৃথিবী আশা, এক আকাশ স্বপ্ন । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।