কখনো চাই নাই দূরে থাকি...তবু দূরগুলো বারে বারে আসে...
অপারেশন ডাল-ভাতের টাকা মাইরা দেওনের অভিযোগটা যখন শুনি, তখন মনে হয় লাঠিয়ালরা এই দেশের সাধারন মানুষের না কেবল অধঃস্তন সহকর্মীগো নিয়া প্রবঞ্চনাটাও ডাল-ভাত বানাইয়া ফেলছেন...ছোটবেলায় আমরা যখন ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতাম তখন পরে আসা কনিষ্ঠ সদস্যটারে দুধভাত বানাইতাম তারে দুইদলেই রাখা হইতো...গুরুত্ব থাকতো কম। খেলাটায় আমরা যারা দুধভাত না, আমরা যারা নিজেগো আরো অন্য কিছু মনে করি তারাই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকি...প্রাত্যহিকতার মতো এইটারে নিয়ম হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
বিডিআর বাহিনী নিয়া অনেক আগের থেইকাই কিছু বিষয় জানতাম...যেরম এইখানে সাধারনত দুষ্ট সেনা অফিসারের ডিটেনশন দেওয়া হয়...যদিও এই ডিটেনশনে কেবল অবস্থানগত অবনমন আছে, অপমান আছে...অন্যদিকে তাগো অর্থনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধি হয় অনেক বেশী...সীমান্তরক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর অফিসারগো স্বল্প সময়ে আঙুল ফুইলা কলাগাছ হওনের উদাহরণটাও শুনছি বহু বন্ধু-বান্ধবের কাছে। এক পার্বত্য সীমান্তের পাহাড়ি বন্ধুর কাছে শুনছিলাম অফিসাররা জওয়ানগো দিয়া গাছ কাটাইয়া বিক্রী কইরা টাকা মাইরা দ্যায়...দুষ্কর্মের সহযোগি হইয়াও তারা লভ্যাংশ পায় না...জওয়ানরা দিনমজুরের মতোই মজুরী পায় অফিসারের নির্দেশ মোতাবেক চুরি কইরা। তখন মনে হইতো এরা বিদ্রোহ করে না ক্যান! বয়স যতোটা বাড়ছে বুঝতে পারছি সমাজে যেই অনিশ্চয়তাবোধের সম্প্রসারন হইছে পুঁজির চলন প্রক্রিয়ায়, বিডিআররা তো তার বাইরের কেউ না...ক্ষমতায় যারা থাকে তারা লাঠি ঘুরায়...আর ক্ষমতায় যদি লাঠিয়ালরাই থাকে তাইলে তারা লাঠির শক্তি প্রদর্শন করে।
ডাল-ভাত প্রক্রিয়ার টাকা না পাইয়া ফেব্রুয়ারি মাসের ২৫ তারিখ যখন বিডিআর বিদ্রোহ শুরু হয়, তখন আমার মনে পইড়া যায় ৭৫'এর ৭ নভেম্বরের কথা...যখন সেনা জওয়ানরা তাগো অফিসারগো নির্যাতনের বিরুদ্ধে ফুইসা উঠছিলো...প্রিয় কর্নেল তাহেরের মতাদর্শিক নেতৃত্বে...সেই প্রতিবাদে সেনাবাহিনীতে বিরাট কোন পরিবর্তন না হইলেও পারস্পরিক সম্পর্কে নাকি বেশ খানিকটা প্রভাবই ফেলছিলো...সবসময় আমূল পাল্টাইয়া যাওন সম্ভব হয় না বর্তমান দুনিয়ায়...ক্ষমতা নিজের স্থায়িত্বের লেইগা মাঝে সাঝে বিকেন্দ্রীকরন করে তার আওতারে...তার অপকৌশলে অনেক বিদ্রোহ সফল হয় না...তবুও তার ছাপ রইয়া যায়...বিদ্রোহ-বিপ্লব-মুক্তি...বিদ্রোহ গুলিতেই বিপ্লবের সম্ভাবনা জেগে থাকে...
গতোকাইল টেলিভিশনের রিপোর্টিং গুলি দেখতেছিলাম...বন্ধু-বান্ধবের সাথে সেলফোনে-অনলাইনে খবর দিতেছিলাম নিতেছিলাম...তারমধ্যেই যদি ভুল না শুইনা থাকি শুনলাম নায়েক শহীদ নামক কোন একজনের কথা...যারে একজন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্য quote করতেছিলো...নায়েক শহীদ নাকি তাগো দুরাবস্থা নিয়া কথা বলছে...জানি না কোথায় বলছে, জানি না এই বক্তব্য কি সংগঠিত কীনা, জানি না এই নায়েক শহীদ আদৌ অস্তিত্বশীল কি না...তবুও মনে হয় বঞ্চনার বোধ সকল মানুষের একইরকম...একমাত্র privileged অংশ ছাড়া...তারা বঞ্চনারে নিয়ম বানাইতে চায়...বঞ্চনারে তারা নিয়তি বলতে চায়...যার ঘোরে রাখে তারা বঞ্চিত মানুষের দলেরে...ঘোর কিন্তু চীরকাল থাকে না...ইতিহাস তাই কয়!
বিডিআর সদস্যরা যখন ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে পাঠানো পত্রে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু টাইপ সম্বোধন রাখতে শুরু করলো তখন বুঝলাম তারা স্পষ্টতঃ অনিশ্চয়তায় আছে...বিরোধটা সেনাবাহিনী'র সাথেই কেবল সরকারের লগে না এই ধরনের বিষয় বুঝাইতেই কেবল এই কৌশল অবলম্বনের সম্ভাবনা জাগে। কিন্তু একটা ব্যারকের দখলদারী নিয়া বিদ্রোহে নাইমা এই অনিশ্চয়তাবোধ আমার কাছে খুব বেশী অস্বাভাবিক লাগে না। তারা তো আসলে সরকারের অংশরে শত্রু ভাবতে শিখে না...নিজেরে সীমান্ত রক্ষার অংশ হিসাবে গুরুত্বপূর্ণও সে ভাবে...আর তাই ক্ষোভের উদগীরন থাকলেও অনিশ্চয়তাও আসে...
তবে বিডিআর বাহিনীর দাবী'র সন্নিবেশন যখন ঘটে তখন ক্যানো জানি আমার আর তাগো নেতৃত্ব শূণ্য কোন অংশ মনে হয় না...তাগো দাবী-দাওয়ায় ক্রমান্বয় আছে...তারা সাধারন ক্ষমাটাই আগে চায়...তারপর অন্য দাবীসমূহের বাস্তবায়ন...আমার ভালোই লাগে এই পরিকল্পিত অবস্থান। প্রায় ৫০ জন সেনা অফিসার মাইরা ফেলনের পর সাধারন ক্ষমা কিছুদিনের জন্য হইলেও তো তাগো নিশ্চয়তার সন্ধান দিতে পারে...মানুষ নিশ্চয়তার সন্ধানেইতো থাকে নিয়ত...
৫০টা খুনের পর তাগো সাধারন ক্ষমা করন যায় কি যায় না এইটা একটা সুশীলিয় প্রশ্ন মনে হয় আমার কাছে। অপরাধের সংজ্ঞা নিয়া কয়েকদিন ধইরা ভাবতেছিলাম বইলা প্রশ্নটারে স্বাভাবিকই মনে হয়, প্রাসঙ্গিক মনে হয়।
আইনের চোখে কি সকল দুষ্কর্মই অপরাধ বিবেচিত? নাকি উদ্দেশ্যমূখীনতার একটা ভূমিকা থাকে অপরাধে!? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়া আমি আরো কয়দিন ভাবনের...মানুষের লগে কথা কওনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি...রবিন হুড বড়লোক সমাজের চোখে অপরাধী হইলেও গরীবের কাছে তো নায়ক'ই ছিলো...তবে!?
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাঙালির সংগবদ্ধতার মূল প্রেরণা ছিলো বৈষম্য-বঞ্চনা আর নির্যাতন...কিন্তু শোষকের অপকৌশলী ভূমিকার কারনে ধর্ম একটা বিষয় হইয়া উঠে...আর তাই বৈষম্যটা যেনো ধর্মকেন্দ্রীকও না হইয়া যায় সেইটাও একটা প্রেরণা হিসাবে দাঁড়াইয়া যায়...বাঙালি সকল ধর্মের সহাবস্থানের পক্ষেই দাঁড়ায়...ইসলামতন্ত্রীরা বিরোধীতা করে...মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অতএব ধর্মীয় সেক্যুলারিটির বিষয়টা চইলা আসে। এই মুহুর্তে যদি আমি ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের কথা কই, তাইলে সেইটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থী হিসাবেই পরিগনিত হইবো...এই দেশের নাগরিক হিসাবে আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী থাকতে চাই...মুক্তিযুদ্ধের চেতনারে ভূলুন্ঠিত কইরা যদি কোন রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নিতে চায় শাসকেরা বা ক্ষমতাকেন্দ্রের মানুষেরা তাইলে সেইটা আমার কাছে অপরাধ মনে হয়। এই মুহুর্তে ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি তাই আমার কাছে যুদ্ধাপরাধের সামিলই লাগে...পাশাপাশি যারা নিজেগো ধর্মভিত্তিক না বইলা রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার করতে শুরু করে...তারাও এই দোষে দুষ্ট-অপরাধী...
বিডিআরগো বিদ্রোহ তাই আমার কাছে বিচ্ছিন্ন কোন কিছু মনে হয় না। তারা যখন নির্যাতন বঞ্চনার অভিযোগে কোন অফিসাররে খুন করে আমি তারে এককথায় সমর্থন না করলেও...তারে এককথায় অপরাধী ভাবতে পারি না। কারন প্রশাসনিক দুর্নীতিরেই উল্টা আমার অপরাধ মনে হয়...মনে হয় তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে আছে...ধর্ম শব্দ শুইনাই যেরম কইরা অনেক আতকাইয়া উঠেন আমি ঐ দলের লোক না...আমি জানতে চাই ধর্ম আর ধর্মভিত্তিকতা দুইটা আলাদা শব্দ কী না।
আর দুইটা আলাদা শব্দ জাননের পরে আমি যুদ্ধাপরাধীগো বিচারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ধর্মভিত্তিক রাজনীতিরও অবসান চাই! ঠিক তেমনই বিডিআর সদস্যরা ৫০ জন অফিসার মাইরা ফেলনের পর আমি খুন শব্দের মাজেজাটা বুঝতে চাই...আমি বুঝতে চাই, এই খুন কি ন্যায়ের পক্ষে? মানে, সাধারন মানুষের বঞ্চনাবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে?
আবারো কই বিদ্রোহ ছাড়া কখনো মুক্তির সম্ভাবনা জাগে না! বিদ্রোহ-বিপ্লব-মুক্তি!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।