http://joyodrath.blogspot.com/
বইমেলা থেকে নির্জন সেগুনবাগিচা ধরে ফিরছিলাম। হাতে "অপরবাস্তব-৩" সেখানে আবার আমার একখান গল্পজাতীয় জিনিসও আছে। মনে তাই বেদম ফূর্তি। রাত দশটার ঢাকা রাজপথগুলোতে দিনের মতই সরগরম হলেও পাড়ার রাস্তাগুলোর বেশ ঝিমানো দশা। রিক্সাঅলা খালি রাস্তা পেয়ে ভাটিয়ালি ধরল একটা।
গানের গলা ভালো। জিজ্ঞেস করতে যাবো "তিন চাকার তারকা"য় নাম দিয়েছিল কিনা, অমনি গলির ভেতর থেকে একটা কালো পাজেরো এসে হার্ডব্রেক করল রিক্সার ঠিক সামনে। ঝটপট নামল জনাচারেক লোক। আমি ভয় পাবার আগেই আমাকে পাঁজাকোলা করে গাড়িতে ভরে ফেলল।
দশাসই দুজন লোক আমার দুপাশে।
সামনে আরো দুজন। প্রত্যেকের চোখে সানগ্লাস, কানে কর্ডলেস ইয়ারফোন, হাতে ওয়াকিটকি জাতীয় কিছু। আমি খাবি খাইলাম। জিজ্ঞেস করলাম, আপনারা কে?
উত্তর নেই। চোখ বেঁধে ফেলা হল আমার।
আবার শুধালাম, আপনারা কি ভিনগ্রহের অজ্ঞান পার্টি নাকি?
দিল না উত্তর।
গাড়ি থামল এক পুরানা দোতলা বাড়ির সামনে। আমাকে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হল ভিতরে একটা ঘরে। একটা টেবিল সেই ঘরে, আর দুপাশে দুটা বেঞ্চ। মাথার উপরে একশ পাওয়ারের একটা বাল্ব।
বেশ খানিকটা নিচে।
"বসুন"।
বসলাম।
"আপনাকে আমরা বইমেলা থেকেই ফলো করছিলাম"।
"কেন বলুন তো?" আমি জিজ্ঞেস করলাম।
"কারণ আপনার হাতে", একজন আমার হাতের "অপরবাস্তব" বইটা দেখিয়ে দিল।
"এটার সাথে আমাকে ফলো করার সম্পর্ক কি"? আমি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম।
"আছে আছে", সবজান্তার ভঙিতে একজন বললেন. "আছে বলেই তো আপনি এখানে, মি: লোকালটক!"
"লোকালটক? কে লোকালটক? কি বলছেন এসব?" আমি রীতিমত বিমূঢ়!
আরেকটা ঘরে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল। সেখানে দেখলাম আমার পরিচিত কয়েকজন ব্লগারকে। পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে কৌশিককে।
শওকত হোসেন মাসুমের ডান চোখ অস্বাভাবিক রকম ফোলা। সিমু নাসের-এর সম্ভবত জ্ঞান নেই। একপাশে ব্লগার প্রত্যুৎপন্নমতি, পরিধেয় কাপড় প্রায়-শতচ্ছিন্ন। দূরে, জানলার পাশে ব্রাত্য রাইসু এবং আহমাদ মোস্তফা কামালকে দেখা যাচ্ছে।
"এবার বলেন তো দেখি, এদের মধ্যে কে লোকালটক? সত্যি কথা বললে আমরা আপনাকে ছেড়ে দেবো।
লোকালটক ছাড়া বাদবাকিদেরও সসম্মানে ছেড়ে দেবো। "
"লোকালটকের কি হবে?" জানতে চাইলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ।
"তাকে নিয়ে আমাদের বিশেষ পরিকল্পনা আছে। সে আপনার না জানলেও চলবে।
যত কম জানা যায় ততই ভাল। ভেবে দেখুন, আপনি কম জানলে এতক্ষণে বাসায় ফিরে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। বেশি জানার কারণে আজ এখানে"।
বললাম, আপনারা লোকালটককে চাচ্ছেন তো? ঠিকাছে, ছেড়ে দেন এদের সবাইকে।
একথা শুনে ব্লগাররা সবাই আমার মুখের দিকে তাকাল।
"ছেড়ে দেব? নিশ্চয়ই! আগে বলেন কে লোকালটক?"
এবার চালকের আসনে আমি।
"লোকালটক হচ্ছে ব্রিগেড সিক্সটিন"।
"ব্রিগেড সিক্সটিনটা কে?"
"ফিউশন ফাইভ"।
"ফাজলামির আর জায়গা পাস না! লোকটাকে চিনাতে হবে তোকে......র বাচ্চা! য়ু আর ইন আ রিয়েল ডেঞ্জার বেইবে! এইটা তোগো সামহোয়ার ব্লগ না, এইটা গুয়াতানামো ব্লক। য়ু হ্যাভ অনলি টেন সেকেন্ডস, বল লোকালটক কে?"
আমি একে একে আমার সহব্লগারদের দিকে তাকালাম।
ব্যথাক্লিষ্ট সব মুখ। আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
"হক মৌলা, আনাল হক!" আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
"কি হল?" রিভলভারের কক করার শব্দটি যেন কানে এল, মনে হল।
"আমিই লোকালটক"!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।