বঙ্গ সোনাহাট স্থলবন্দর চালু হলে
বদলে যাবে কুড়িগ্রামের অর্থনৈতিক চিত্র
১৯৪৭ সালে বন্ধ হওয়া বঙ্গসোনাহাট স্থল বন্দর চালু হলে কুড়িগ্রামের ২০ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা পাল্টে যাবে। কেননা এই একটি মাত্র স্থল বন্দরই বদলে দেবে এ জেলার অর্থনৈতিক চিত্র। সর্বশেষ রংপুরে তত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টাদের মিটিং শেষে প্রধান উপদেষ্টার এ ঘোষনার পরও চালু হয়নি এই স্থলবন্দর। এখন দিনবদলের সনদ ঘোষনা দেয়া সরকারের কাছে এখন এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি এই বঙ্গসোনাহাট স্থল বন্দর দ্রুত চালু হবে। তাহলে মঙ্গাপীড়িত কুড়িগ্রাম জেলার মানুষ দারিদ্রতার কষাঘাত থেকে উঠে দাঁড়াতে পারবে।
প্রস্তাবিত সোনাহাট স্থলবন্দরটি কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী উপজেলার বানরকুটি মৌজায় অবস্থিত। জেলা শহর থেকে এর দুরুত্ব মাত্র ৫০ কিঃ মিঃ। ব্রিটিশ আমলে সোনাহাট ছিল বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম, মিজোরাম, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, অরুণাচল ও মেঘালয় রাজ্যের একমাত্র প্রবেশদ্বার। সে সময় এ পথে ধান, চাল, কয়লা, কৃষিপণ্য, কাঠ, পাট, কাপড়, গবাদিপশু আমদানি-রফতানি হতো। এখান দিয়ে তৈরি করা হয় আসাম-বেঙ্গল এক্্েরস রোড ও আসাম-বেঙ্গল রেলপথ।
১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হবার পর থেকে এ পথগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে আসাম তথা ভারতের পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্য থেকে উত্তরবঙ্গে মালামাল আনতে গেলে প্রায় ৩৫০ কিঃ মিঃ পথ অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কুচবিহার হয়ে বাংলাদেশের লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে আসতে হয়। এতে কয়লা প্রতি মেট্রিক টনে অতিরিক্ত প্রায় সাড়ে ৩ 'শ রুপি আমদানি খরচ পড়ে। অন্যান্য স্থান দিয়ে যেতে আরো আড়াই 'শ রুপি বেশি খরচ পড়ে। অথচ সোনাহাট স্থলবন্দর চালু হলে অতিরিক্ত এই খরচগুলো লাগবে না।
এখান থেকে মাত্র ৭০ কিঃ মিঃ মধ্যে ভারতের কয়লাখনি আছে। এ পথে বছরে ৭ থেকে ১০ হাজার টন কয়লা, চুনাপাথর, গরু, মহিষ ইত্যাদি আমদানি এবং ওষুধ, বিস্কুট, সাবান, কাগজ, তামাক, ব্রিকস, চিপস, প্রসাধনীসহ বিভিন্ন পণ্য রফতানি করা যাবে সহজেই এবং কম খরচে।
বঙ্গ সোনাহাট স্থল বন্দর চালু হলে ভারতের উত্তর পূর্ব অঞ্চলের সেভেন `সিষ্টার্স' খ্যাত ৭টি রাজ্য পণ্য আনা-নেওয়ার সুবিধা পাবে যা বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। বাংলাদেশের ভুখন্ডে ২৪কিঃ মিঃ পথ অতিক্রম করলে ঐ ৭টি রাজ্য থেকে পশ্চিমাঞ্চলে স্বল্প খরচে পণ্য আনা নেয়া করা যাবে। বর্তমানে ৩৫০ কিঃ মিঃ দূরুত্ব অতিক্রম করে এই যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে।
তাই স্থল বন্দরটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় ভারতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অগ্রগতি ঘটাবে। এই স্থলবন্দরটি চালু হলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের আমদানী-রপ্তানি ব্যয় হ্রাস পাবে। পিছিয়ে পড়া এ এলাকার অর্থনীতিতে সৃষ্টি হবে নতুন দিগন্তের।
সংশ্লিষ্ট বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বাংলাদেশের স্থল ও অভ্যন্তরীণ জলপথে আমদানি ও রফতানি পণ্যের উপর শুল্ক ও কর আরোপের উদ্দেশ্যে অন্যান্য স্থানের ন্যায় বঙ্গ সোনাহাট স্থলে শুল্ক ষ্টেশন স্থাপনের ঘোষণা সংবলিত প্রজ্ঞাপন জারি করে। এই প্রজ্ঞাপনে সোনাহাট, গোলকগঞ্জ-দুবড়ি রুটকে বিভিন্ন শ্রেণীর মালামালের জন্য অনুমোদিত রুট হিসাবে স্থল ও অভ্যন্তরীণ জলপথের জন্য নির্দিষ্ট করা হয়।
এই স্থল শুল্ক ষ্টেশন থেকে অভ্যন্তরীণ জল ও স্থলপথে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্তপথে আগমন ও বহির্গমনের ব্যবস্থার অনুমোদন দেয়া হয়। স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয়ের সীমান্ত শাখা-২, ১৯৯৬ সালে মেসার্স গ্রিন অ্যান্ড হোয়াইট লিঃ ঢাকা নামের একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে এই শুল্ক ষ্টেশন দিয়ে ২ লাখ ঘনফুট কয়লা, ১৯৯৮ সালে ইনডিয়ান বোল্ডার, রেলওয়ে ব্যালাষ্ট ও কুচিপাথর এবং ২০০৩ সালে কুড়িগ্রামের ব্যবসায়ী জহুরুল হক দুলাল ৫০ মেঃ টনঃ কয়লা আমদানির অনুমতি পেলেও সে সময় ধরলা নদীতে সেতু না থাকায় শেষ পর্যন্ত এগুলো এ রুটে আমদানি করা সম্ভব হয়নি। সেতু চালু হওয়ার পর সোনাহাট শুল্ক ষ্টেশনকে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দরে পরিণত করায় আর কোনো বাঁধা নেই।
সরেজমিন উক্ত এলাকায় গিয়ে দেখা যায় স্থলবন্দর চালুর জন্য অনেক সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে স্টাফ সংবলিত কাষ্টমস অফিস।
বিডিআর ক্যাম্প, ওপারে বিএসএফ ক্যাম্প, পরিত্যক্ত রেলপথ-যা সড়ক হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। সোনাহাট পর্যন্ত পাকা সড়ক, প্রয়োজনীয় পরিমাণ সরকারি জমি। এছাড়াও আছে মোবাইল নেটওয়ার্ক। পুলিশ ক্যাম্প। বর্তমান কাজ না থাকায় এদের প্রেষণে কুড়িগ্রাম সদরের ফোর্সের সঙ্গে কাজ করানো হচ্ছে।
এছাড়াও নোম্যান্স ল্যান্ড এলাকায় একটি কালভার্ট নির্মাণ করছে ইনডিয়ান বিএসএফ। যা বাংলাদেশ অংশের বঙ্গসোনাহাট রোডের সাথে এসে মিলেছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক জানান, সোনাহাট স্থলবন্দর কুড়িগ্রামবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবে। শুধু তাই নয়, এ স্থল বন্দর চালু হলে ব্যবসায়ীক দৃষ্টিকোন থেকে গোটা বাংলাদেশ লাভবান হবে। এ স্থলবন্দরটি একটি সম্ভাবনাময় স্থল বন্দর।
এটি হতে পারে দেশের একমাত্র রপ্তানী মুখি স্থল বন্দর। এখাতে প্রতিদিন প্রায় ৩০ হাজার মানুষের কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।