...
আমার বাসা থেকে কোনদিন ধর্মপালনের জন্য জোরাজুরি করা হয় নাই। বাবাকে দেখতাম রোজার সময় খুব নামাজ পড়তে আবার রোজা শেষে ঢিলেমি শুরু করতে। আদতে বাসার সবাই ধর্মবিশ্বাসী ছিল। তবে ধর্ম বিষয়ে আমাদের কারো বাড়াবাড়ি ছিল না। উদাহরন দেয়া যায়, আমার নানা হজ্জে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।
তার অতি কষ্টে জমানো সম্পদের সামান্য একটু খরচ করেও তিনি হজ্জে যেতে আগ্রহী ছিলেন না। সৌদিদের হজ্জ্ব ব্যবসার প্রতি তার এই ঘৃনা মোটামুটিভাবে ধর্মবিদ্রোহের সমান।
ক্লাস সিক্সের দিকে আমি নামাজ পড়া শুরু করি। বাসায় মাসিক মদীনা থেকে শুরু করে বেহেশতি জেওর- প্রচলিত সব ধর্মীয় বইই ছিল। আবহাওয়া বেশ অনুকূল ছিল।
কিন্তু তীর ছেড়ে সামান্য দূরে গিয়েই তরী ডুবে গেল। বেহেশতের তীরে আর আমি পৌছতে পারলাম না।
তরী ডুবা শুরু করার কোন একটা একক কারন নাই , সুতরাং একটা নির্দিষ্ট দিন থেকেই অবিশ্বাসের শুরু না। সেভেনে থাকার সময়ও নামাজ পড়ি নিয়মিত। মসজিদে ঈদের জন্য কেনা নতুন জুতা হারিয়েও আসি।
আমার ধারনা পিউবার্টি শুরুর সময় থেকেই আমার সন্দেহের সূত্রপাত।
প্রচুর হাবিজাবি বই পড়ি। নাইনে থাকতেই সেবা ছেড়ে দিয়ে ক্লাসিকে ঝুকে পড়ছি। রবি-শরৎ-বঙ্কিম শেষ। পড়াশুনার পরিধি বাড়ে সেই সাথে বাড়ে অবিশ্বাস।
ছোট ছোট প্রশ্ন আসে যার উত্তর পাই না। হুজুরদের চরিত্র দেখে ইসলাম সেরা জীবন ব্যবস্থা সেটা মানাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।
সত্যিকার অর্থে বিজ্ঞান-যুক্তি-গনিত এই সম্পর্কে আমাকে আগ্রহী করে তুলেন নটরডেমের নিমাই স্যার। তার স্পর্শে এসে আমি পুরা অবিশ্বাসের জগতে চলে আসি।
এরপর বুয়েটে এসে নাস্তিকতা ফলাই।
ক্লাসে হযরতকে নিয়ে একটা জোকস বলায় সবাই মিলে ঠিক করে আমাকে ক্যাফের সামনে পিটানো হবে। বড় ভাইয়েরা আমার ক্লাসমেটকে সতর্ক করে দেয় যেন আমার সাথে না মিশে। তাবলীগের হুজুরদের সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করি। দুই হুজুরকে সমকামি বলে সন্দেহ করি - সবাইকে সেটার জানান দেই।
একটা পর্যায়ে এসে আমি অনুভব করি- অনেক হইছে।
মানুষকে তাক্ত করে লাভ নাই। এরচে নিজেই ধর্ম প্রচারের কথা ভাবি। দিনের পর দিন, ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট করি প্ল্যান করে। ধর্মের মূল দর্শনটা ধরার চেষ্টা করি। বাইবেল, কোরআন সিরিয়াসলি পড়া শুরু করি।
একসময় ধর্মপ্রচারের সিদ্ধান্তও বাদ দেই। অবিশ্বাসের জগতে আমি ইতঃস্তত ঘুরি। কোন উদ্দেশ্য খুজে পাই না নাস্তিকতার বা ধর্মবিশ্বাসের। দুইটাই সমান মনে হয়। হুজরদের সুখী মুখ দেখে হিংসা হয়।
বিশ্বাস ঠকায় বটে তবে বিনিময়ে সে অনেক ভালো বস্তু দেয়।
আমি এরপর বিশ্বাসের জগতে ফিরে আসার চেষ্টা করি। কয়েকবার চেষ্টা করেছি। ফিরে আসতে পারি না। ভাবলাম নামাজ পড়া শুরু করি।
একসময় বিশ্বাস চলে আসবে... কাজ হয় নাই।
আমার সমস্যা হল জাকির নায়েককে দেখলে হাসি আসে, হুজুরদের অতি মাত্রায় স্বল্পজ্ঞানী মনে হয়- কাউকে পাই না যে আমাকে পাপ থেকে ফিরিয়ে স্বর্গে নিয়ে যাবে ।
আমি একা, আমার বিশ্বাসহীনতার জগতে। "কিছু নাই" - এরচেয়ে বড় সত্য আমি খুজে পাই নাই।
=====================================
Click This Link
এই পোষ্টের প্রেক্ষিতে ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।