http://www.myspace.com/423882880/music/songs/31785002
[শাহ্ আবদুল করিমের গান আমরা শহরে বসে শুনেছি। যেমন- দলছুটের করা 'গাড়ি চলেনা', হাবিবের করা ' কুলহারা কলংকিনী' ইত্যাদি গান শহুরে মিডিয়ায় প্রচারের আগে আমরা জানতামই না শাহ্ আবদুল করিমের গান এগুলো। আমার এক সিলেটি বন্ধু শাহ্ করিমের কিছু গানের ক্যাসেট সিলেট থেকে আমার জন্য পাঠিয়েছিলো। সেখানে আমি যে করিমকে পেয়েছি, শহরের কমার্শিয়াল করিমায়নে সেটা অন্যকিছু হয়ে গ্যাছে। আসলে ওনার গানের মতোই ওনার দর্শন নিয়েও আমার ছিলো অগাধ আগ্রহ।
আমি ইদানীং ওনার ওপর লেখা বিভিন্ন বই, ফিচার,ওনার সাক্ষত্কার সংগ্রহ করার চেষ্টা করছি। আসলে করিমকে জানতে হবে। কি করে উনি ভাবছেন, দেখছেন, লিখছেন ও গাইছেন সেটা জানতে হবে। মিডিয়া আসল করিমকে বাদ দিয়ে নকল করিমকে দেদারসে বিক্রি করে যাচ্ছে অনেকটা তাচ্ছিল্য ও সাংস্কৃতিক মূর্খতার কল্যাণে। মিডিয়ার উচিত শাহ্ আবদুল করিমের কর্ম, ধর্ম ও সৃষ্টিকে তাঁর জায়গা থেকে পেট্রোনাইজ ও হাইলাইটস করা।
গেল শুক্রবার দৈনিক প্রথম আলো সাহিত্য সাময়িকীতে শাহ্ আবদুল করিম এসেছেন। সঙ্গীত বিশ্লেষক যতীন সরকার করিমকে নিয়ে " সর্বহারার দুঃখজয়ের মন্ত্র" শীর্ষক একটি আর্টিকেল লিখেছেন। সেখান থেকে আমার ব্লগার বন্ধুদের জন্য করিমের গান ও ব্যক্তি জীবনের ধর্মচিন্তার অংশটি তুলে ধরলাম।
আশা করি ভালোলাগবে। ]
করিম সিলেট অঞ্চলের মানুষ।
তাই, স্বভাবতই, সিলেটের কবি-গীতিকারদেরই তিনি প্রত্যক্ষ উত্তরাধিকারী। তাঁর নিজের স্বীকৃতিতে - 'গান গাইলেন লালন, রাধারমণ/হাছন রাজা দেওয়ানা। / আরকুম শাহ্ ফকির শিতালং/ বলেছেন মারফতি গাও/ সৈয়দ শাহনূরের গানে/ শুকনাতে দৌড়াইলেন নাও/ করিম বলে প্রাণ খুলে গাও/ গাইতে যার বাসনা। '
এখানে যেসব কবি-গীতিকারের নাম করিম স্মরণ করেছেন, একমাত্র লালন ছাড়া সবাই সিলেট অঞ্চলের। সিলেটের সুনামগঞ্জসংলগ্ন নেত্রকোনার রশীদউদ্দীন, জালালউদ্দীন এবং নরসিংদীর দ্বিজদামের উত্তরাধিকারও করিম তাঁর ভাবনার বৃত্তে ধারণ করেছেন।
'লোককবি' নামে পরিচিত কবিদের ছাড়িয়ে,এমনকি রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের ভাবসম্পদেও করিম-মানস সমৃদ্ধ হয়েছে। "রবীন্দ্রনাথের লেখা, লালন সাঁইজির লেখা, নজরুলের লেখা, আপনাদের মতো সাধকদের লেখা- এক্ষেত্রে কার লেখা আপনার সব থেকে কাছের মনে হয়?"
তিনি একটু সময় না নিয়ে বলেন- ' এদের সবার লেখাই কিছু কিছু ভালো আছে। আর আমিতো সবার লেখা থেকেই কিছু কিছু চিন্তা নিয়েছি। সেই বিচারে কারো লেখাকেই আমার দূরের মনে হয়না। '
[ সাইমন জাকারিয়া - প্রণমহি বঙ্গমাতা, তৃতীয় পর্ব ( ঢাকা ২০০৭), পৃষ্ঠা ১৬৪]
শাহ্ আবদুল করিম তাঁর পূর্বসূরি ভাবুকদের ভাবনার উত্তরাধিকার বহন করেছেন, বটে: কিন্তু কারও চিন্তারই চর্বিত চর্বণ করেননি কিংবা গতানুগতিক ভাবনার বৃত্তে ঘুরপাক খাননি।
হ্যাঁ, করিমের গান থেকে 'দেহতত্ত্ব'-এর অনেক নমুনা আহরণ করা যায়; বাঙালির লৌকিক ধর্মের বিদ্রোহী চেতনা যে তাঁর সৃষ্টির পরতে পরতে বিদ্যমান, প্রচুর উদাহরণ সহযোগে তার প্রমাণ করা চলে; করিমের সব রচনাতেই লৌকিক ঐতিহ্যের প্রতি তাঁর অকৃত্রিম নিষ্ঠা ও অকুণ্ঠ অনুরাগের পরিচয় মেলে।
ধর্ম শব্দটির গভীর ও বহুমুখী অর্থে নয়, 'রিলিজিয়ন' বোঝাতে আমরা যে 'ধর্ম' শব্দটি আমরা ব্যবহার করি, সেই অর্থে লৌকিক ধর্মও ( ফোক রিলিজিয়ন) আসলে 'বাস্তবের উদ্ভট প্রতিচ্ছায়াই'
(ফ্যান্টাসটিক রিফ্লেকশন অব রিয়েলিটি)। এই উদ্ভট প্রতিচ্ছায়ার মোহজাল ছিন্ন করে অতি সহজেই বেরিয়ে আসেন শাহ্ আবদুল করিম।
এখানে গড়পড়তা আর দশজন বাউল ফকির বা লৌকিক ধর্মের সাধক গীতিকারের থেকে করিমের স্বাতন্ত্র্য। করিম সোজাসুজি জানিয়ে দেন যে তিনি কখনোই আসমানী খোদাকে মান্য' করেন না।
,'মন্ত্র পড়া' কে তিনি ধর্ম বলেন না, লাখ লাখ টাকা খরচ করে 'হজ' পালনকেও তিনি ধর্ম বলে মানেন না। 'সম্প্রদায়গত বিদ্বেষ তৈরি দিয়েছে' যে ধর্ম, ' কতিপয় হীন মোল্লাপুরুতের' শয়তানিতে ' ভাইয়ে ভাইয়ে বিভাজন নিয়ে এসেছে যে ধর্ম', সেই ধর্ম সম্পর্কে তাঁর অতি কঠোর ও দুঃসাহসী মন্তব্য- " এই বিভাজন যদি ধর্ম হয়, সেই ধর্মের কপালে আমি লাথি মারি। 'সবার ওপর মানুষ সত্য' এ হলো আমার ধর্ম। নামাজ-রোজার মতো লোক দেখানো কর্মে আমার আস্থা নেই। কতিপয় কাঠমোল্লা ধর্মকে তার নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে।
"
শাহ্ আবদুল করিমও লৌকিক ধর্মসাধকদের সহযাত্রীরূপে লৌকিক মরমি তত্ত্বাশ্রয়ী অনেক গান রচনা করেছেন, তাঁদেরই কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ঈশ্বরকেও অভিযোগে বিদ্ধ করেছেন। যেমন- ' এই কি তোমার বিবেচনা/ কেউ যে খায় মাখন ছানা/ কেউর মুখে অন্ন জোটেনা/ ভাঙ্গা ঘরে ছানি নাই। '
(নির্বাচিত অংশ)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।