"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
একটা কথা আমার মনে উদয় হলো। তা আপনাদের না বলেই পারছি না। ছোটবেলায় আমি খুব যাত্রা বা পালাগান দেখতাম। যাত্রা চলাকালে অনেক সময় বিবেকের ভূমিকায় কেউ একজন গেরুয়া পোষাক পড়ে মঞ্চে অবতীর্ণ হতেন। তিনি গীতীবাক্য বা পালাগানের মাধম্যে মানুষের সুপ্ত বিবেক বা চেতনাকে জাগ্রত বা নাড়া দেবার চেষ্টা করতেন।
বিবেক রূপধারণকারী সেই চরিত্র বা ব্যক্তি যাত্রার মূল কাহিনী বা পালার কেন্দ্রীয় কোন চরিত্র নয়। কিন্তু তার উপস্থিতি স্বতঃসিদ্ধভাবে ধরে নেয়া হতো এবং তা পালাগানকে একটা অতিরিক্ত মাত্রা বা গতি দিত। যে ঐ চরিত্রে যে অবতীর্ণ হতো সে বাস্তবে একজন অতি সাধারণ ও আনইমপ্রেসিভ গোছের ব্যক্তি। কিন্তু সেই ব্যক্তিই গেরুয়া পোষাকে মঞ্চে অবতীর্ণ হলে নিঘর্াৎ বিবেকবান বা শ্রদ্ধেয় কেউ একজন মনে হতো। আসলে বিবেক বলে কোন চরিত্র মূল কাহিনী বা পান্ডুলিপিতে না থাকলেও যাত্রা বা পালাগানের রচয়িতা বা অধিকারী বা কোন কোন ক্ষেত্রে মঞ্চ নির্দেশক তাদের কাল্পনিক ভাব সম্বলিত কথা বা বাক্যগীত রচনা করে মূল পালাতে জুড়ে দিতেন।
এতে যাত্রা বা পালাগানের মূল ব্যঞ্জনা মোটেও ব্যাহত হতোনা বরং দর্শক নতুন কিছু চিন্তা বা চেতনার খোরাক পেত এবং নিজেদের বিশ্বাস ও আস্থার ভিত্তিটা কতটা মজবুত তা যাচাই করে নিত।
এখানে অপ বাক -এর ভূমিকাটা সেই বিবেকের মত। সে মূলধারার কেউ না অথচ মূলধারার চিন্তা ও চেতনাকে সে কোন না কোন ভাবে নাড়া দিচ্ছে, প্রভাব ফেলছে। আমার ঈশ্বর ভাবনায় মাঝে মধ্যে অপ বাক-এর মত বিবেকের প্রয়োজন দেখি পজিটিভ চিন্তা থেকে। ঈশ্বর স্বয়ং যদি কাউকে আমার ঈমান, ধর্ম, চিন্তা ও চেতনাকে পরীক্ষা করার জন্য উপস্থাপন করে থাকেন সেই বিবেকের বেশে তবে আমি তার সব কথা এবং ভাবনাকে পজিটিভ অর্থে নিয়ে বিশ্লেষণ করবো।
উপরন্তু আমার ধর্মচিন্তার কোন দুর্বল দিকে সে আঘাত করছে সেগুলো বের করে আনবো। সেই মোতাবেক আমি আমার দুর্বল দিকগুলোকে মজবুত করার চেষ্টা করবো। সে যতই এসব নিয়ে বলবে আমি ততই আমার দুর্বল দিকগুলো চিনতে পারবো। এখানে তার সাথে আমার তর্কে যাওয়া বৃথা। কারণ আমি জানি সে নাস্তিকের বেশে আমার চাইতেও অনেক বেশী আস্তিক।
কারণ সে ঈশ্বরকে আমার চাইতে বেশী চেনে। নইলে সে আমার চিন্তা চেতনার ফাঁকগুলো কোথায় খুঁজে পায়? আমাকে নাস্তিকতা কী সেটা চোখে আঙ্গুল দিয়ে সে কী ভাবে দেখিয়ে দেয়? আমার অজানাদিকগুলোকে সে তার নিরলস প্রচেষ্টায় সামনে তুলে ধরছে এটা কী আমার জন্য কম বড় পাওয়া নয়? যেদিন আমার সব জানা হয়ে যাবে সেদিন সে আর আমার ধারে কাছে আসবে না।
আমি জানি, ঈশ্বরকে বা ধর্মকে বিশ্বাস বা ধারণ করতে আমি যতটুকু শ্রম বা সময় ব্যয় করছি সে আমার বিবেককে জাগ্রত করার জন্য তার চাইতেও বেশী শ্রম বা সময় ব্যায় করছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে সে পরোক্ষভাবে আমার চেয়েও বেশী সময় শ্রষ্টার চিন্তায় নিয়োজিত। তাই নয় কী? তাহলে আমাদের ধর্ম ও ঈশ্বর, চিন্তা ও চেতনার ত্রাতা হিসেবে তার এই ত্যাগ ও শ্রমকে একটু না হয় অন্য চোখেই দেখি।
বলাতো যায়না ঈশ্বরের কোন ফেরেশতা কার বেশে আমাদের চারিপাশে ঘোরাঘুরি করছে। ঈশ্বর আমাদের চাইতে বেশী জানেন। তাই উনিই না হয় বিচার করুন কে আস্তিক কে নাস্তিক সবকিছু। ঈমানের নিধর্ারক আমরা নই। যে যা ধারণ করে সেটাই তার ধর্ম।
কেউ নিজেকে নাস্তিক বলে আমাদের বিভ্রান্তির মধ্যেও ফেলতে পারে। তাই আমাদের বিচার বিশ্লেষণের আরও গভীরতা থাকেতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।