যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দোদারের স্মৃতিবিজড়িত অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী স্কুল রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছেন শতবর্ষী বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ঐতিহ্যবাহী এই দুইটি বালিকা বিদ্যালয় ভেঙ্গে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের যে উদ্যোগ নিয়েছে তার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার সকালে বিপ্লবী বিনোদ বিহারী স্কুলের সামনে প্রতীক অনশন করেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নেন নগরীর বিশিষ্ট নাগরিক এবং বিভিন্ন সংগঠনের কর্মিরা।
মূল ঘটনাটি কি? বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের দাবি উপেক্ষা করে মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী স্কুল দুটি ভেঙ্গে বহুতল ভবন ও কমপ্লেক্স ণির্মানের ঘোষণায় অটল রয়েছেন। তার ঘোষণা মতে এটা নাকি "শিক্ষাবান্ধব" বহুতল ভবন হচ্ছে! এ নিয়ে মেয়রের পক্ষ থেকে পত্র পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে।
সেই ঘোষণার এক জায়গায় মেয়র বলছেন..."আমি দৃঢ়তার সঙ্গে জানাতে চাই যে অপর্ণাচরণ ও কৃষ্ণকুমারী স্কুলের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষাবান্ধব ভবন ণির্মান হবেই। "
বিনোদ বিহারী এবং আন্দোলনে শরিক অপরাপর মানুষদের অভিমত; শুধুমাত্র বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণেই মেয়র এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন। তারা বলেছেন কর্পোরশনের টাকার জন্য অন্য আরো অনেক পথ তো খোলা ছিল! শেষে তারা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি রক্ষার জন্য প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সহযোদ্ধা বিপ্লবী প্রীতিলতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বিনোদ বিহারী বলেন; অপর্ণাচরণ স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম শহীদ বীর কন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। ১৯৩২ এই স্কুলে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ই প্রীতিলতা পটিয়া ধলঘাটে প্রথমবারের মত মাষ্টারদা সূর্য সেনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক খবর হচ্ছে, যে চট্টগ্রামের ঐতিহ্য বিদ্রোহ করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধো দাঁড়ানো, সেই চট্টগ্রামের মানুষ এই মহান বীর শহীদের স্মৃতি রক্ষার আন্দোলনে তেমন কেউ শরিক হয়নি! শহীদ জায়া বেগম মুশতারী শফি, বাসদ আহ্বায়ক মানস নন্দী, গণ সংহতি আন্দোলনের হাসান মারুফ রুমি, শিক্ষিকা ফৌজিয়া শফি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন ও চারণ নামের সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাড়া আর কোন বিবেকবান কে খুঁজে পাওয়া য়ায় নি!
এই কি সেই চট্টগ্রাম? তাহলে কি চট্টগ্রামের মানুষ পোর্ট আর পেনিনসুলাতেই বুঁদ হয়ে তাদের গর্ব তাদের ঐতিহ্য ধুলোয় মিশিয়ে দিলেও রা-কাড়বেন না? এই কি সেই মাষ্টারদা সূর্য সেন এর চট্টগ্রাম! শুনেছি চট্টগ্রামে শত শত মুক্তমনের মানুষের হাতে শত শত সংস্কৃতি বিকাশের কাগজ-টাগজ বেরোয়! "থিয়টারওয়ালা"র মত একটা উঁচুমানের প্রত্রিকাও বের হয় এই শহর থেকে! ভাবতে আরো অবাক লাগে বার আউলিয়ার দেশ বলার সাথে সাথে এই চট্টগ্রামকে বীর ভোগ্যা জনপদও বলা হতো একসময়! আজ সেই চট্টগ্রামে প্রীতিলতার স্মৃতি বাঁচাতে একজন শতবর্ষী মানুষকে অনশন করতে হচ্ছে!!
খবরটা দৈনিক সমকাল এ ছাপা হয়েছে,১ লা ফেব্রুয়ারী তারিখে।
ছবিঃ সমকাল থেকে নেওয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।