আমি সত্য জানতে চাই
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালনকারী অন্যতম ব্যক্তিত্ব সত্যেন সেন। প্রগতি লেখক সংঘের সংগঠক, উদীচী সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি বিপ্লবী, সাহিত্যিক, শ্রমিক সংগঠক, ঐতিহাসিক, সাংবাদিক এবং রাজনীতিবিদ সত্যেন সেনের জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা।
সাংবাদিক, ঔপন্যাসিক, ঐতিহাসিক এবং রাজনীতিবিদ সত্যেন সেন ১৯০৭ সালের ২৮শে মার্চ মুন্সীগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। সত্যেন সেনের পরিবারেই তার পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়। প্রাইমারী ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাও পরিবার ও গৃহ শিক্ষকের কাছেই সম্পন্ন করেছিলেন।
১৯১৯ সালে সোনারং হাইস্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শুরু হয়। ১৯২১ সালে তিনি যখন সোনারং হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র তখন থেকেই তার মধ্যে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ লাভ করে। ১৯২৪ সালে সোনারঙ হাই স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতায় কলেজে ভর্তি হন এবং সেখানকার একটি কলেজ থেকে এফএ ও বিএ পাস করেন। এর পর তিনি কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস বিভাগে এমএ শ্রেণীতে ভর্তি হন। কিন্তু বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে ১৯৩১ সালে কারাবরণ করলে জেলে থেকেই তিনি বাংলা সাহিত্যে এমএ পাস করেন।
১৯৩৮ সালে কারাগার হতে মুক্তি পেয়ে সত্যেন সেন বিক্রমপুর ফিরে আসেন এবং কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কমিউনিষ্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হন ও আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেয়ায় ১৯৪৯, ৫৪, ৫৮ এবং ৬৫ সালে কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। এই সময়ে সত্যেন সেন ১৮ বছর কারাগারে বন্দী ছিলেন। সত্যেন সেন ১৯৫৪ সালে দৈনিক সংবাদের সহযোগী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সত্যেন সেন প্রগতি লেখক সংঘের সংগঠক এবং উদীচি শিল্পী গোষ্ঠির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
সত্যেন সেনের সাহিত্যকর্ম সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার একটি নিদর্শন এবং বাংলা সাহিত্যের অনন্য পথিকৃৎ। সত্যেন সেন সাহিত্যচর্চা শুরু করেন পরিণত বয়সে এবং অতি অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ৪০টির মত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেন।
তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হচ্ছে: ভোরের বিহঙ্গী (১৯৫৯), রুদ্ধদ্বার মুক্ত প্রাণ (১৯৬৩), অভিশপ্ত নগরী (১৯৬৯), পাশের সন্তান (১৯৬৯), সেয়ান (১৯৬৯), পদচিহ্ন (১৯৬৯), পরুষমেধ (১৯৬৯), আলবেরুনী (১৯৭০), সাত নম্বর ওয়ার্ড (১৯৭০), বিদ্রোহী কৈর্বত (১৯৭০), কুমরজীব (১৯৭০), অপারেজয় (১৯৭০), মা (১৯৭০), উত্তরণ (১৯৭০), কুল ভাঙ্গে একুল গড়ে (১৯৭১) ইত্যাদি। ইতিহাস আশ্রিত ও অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে গ্রামবাংলার পথে পথে (১৯৬৬), আমাদের পৃথিবী (১৯৬৮), মসলার যুদ্ধ (১৯৬৯), এটোমের কথা (১৯৭০), অভিযাত্রী (১৯৭০), মানবসভ্যতার উষালগ্ন (১৯৭১), মনোরমা মাসিমা (১৯৭১), প্রতিরোধ সংগ্রামে বাংলাদেশ (১৯৭১), বিপ্লবী রহমান মাষ্টার (১৯৭৩), সীমান্ত সূর্য আবদুল গাফফার (১৯৭২), জীববিজ্ঞানের নানা কথা (১৯৭৭) ইত্যাদি। ছোটদের জন্যও গল্প লিখে গেছেন তার মধ্যে পাতাবাহার (১৯৬৮) অন্যতম।
সত্যেন সেন সাহিত্যচর্চার জন্য ১৯৬৯ সালে আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার এবং ১৯৮৬ সালে সাহিত্য মরণোত্তর একুশে পদক লাভ করেন
ব্যক্তিগত জীবনে চিরকুমার সত্যেন সেন চোঁখের চিকিৎসার জন্য মস্কোতে চলে যান। মস্কোতে চোখের চিকিৎসা খুব একটা উন্নতি না ঘটায় ১৯৭২ সালের প্রথম দিকে তিনি চলে আসেন স্বপ্নের স্বাধীন মুক্ত স্বদেশ বাংলাদেশে। দৃষ্টিহীন অবস্থায় তিনি কলম ধরেছিলেন।
কিন্তু ১৯৭৩ সালে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি চলে যান ভারতে।
আশ্রয় নেন শান্তি নিকেতনের মেজদিদি প্রতিভা সেনের কাছে। সাহিত্য চর্চা ও অসুস্থতার মাঝে চলে যায় তাঁর ৮টি বছর। শান্তি নিকেতনের গুরুপল্লীতে ১৯৮১ সালে ৫ জানুয়ারি তিনি মারা যান।
আজীবন সংগ্রামী কৃষক সংগঠক, শিল্পী, সাংবাদিক ও লেখক সত্যেন সেনের মানুষটির জন্মদিনে আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা, গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।