আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বজিৎ ও অন্যান্য

বিশ্বজিৎকে যখন খুন করা হচ্ছিল তখন আমাদের গণমাধ্যমের বীর কর্মীরা মহা উৎসাহে ছবি তুলছিলেন আর ভিডিও করছিলেন। বিশ্বজিৎকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি কেউ। বিশ্বজিতের খুনিরা হয়তো আজ শাহবাগের ওই ভীড়ের কোথায় মিশে আছে। থাকুক, ওরা তো দেশপ্রেমিক, ওদের কি আর বিচার হবে ? আর বিশ্বজিৎ, সে আবার কে ? কোন একটা দোকানের ক্ষুদ্র এক কর্মী। ওর জন্য ভাবার, চোখের পানি ফেলার আমাদের সময় কই ? বিশ্বজিৎ তো আর আমাদের কারো ভাই নয়।

বিশ্বজিৎকে নিয়ে মাতামাতি করার আমাদের সময় কই ? কিংবা পরশু রাতে (হরতালের আগের রাত) উত্তরায় আগুন লাগিয়ে দেওয়া বাসে পুড়ে মারা যাওয়া ঐ যাত্রীর কথা আমরা ভাববো না। হ্যাঁ আমরা ময়লা ঘাটবো। তিরিশ বছরের পুরনো ময়লা ঘেটে আরো ষাট বছর পিছিয়ে পড়বো। নোংরা রাজনীতির গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিবো। নিজেদের দেশপ্রেমিক প্রমাণ করার জন্য শাহবাগে গলা ফাটিয়ে স্লোগান দেবো।

দেবোই তো, ওখানে তো আর পুলিশের লাঠি চার্জের ভয় নেই। কিন্ত বিশ্বজিৎ এবং আরো নাম না জানা নিরীহ মানুষেরা দিনে দুপুরে খুন হবে। সেই খুনের দৃশ্য ভিডিও হবে, পেপারে ছবি আসবে। আমরা সেগুলো দেখবো, আমাদের রক্ত গরম হবে না, অবহেলা অযতনে পেপার ছুড়ে ফেলবো, "ধুর বিশ্বজিৎ সে আবার কে ? " আমরা সুখে শান্তিতে ঘরে বসে থাকবো। বিশ্বজিতের জন্য কখনো রাস্তায় স্লোগান পড়বে না।

কেউ মিছিল নিয়ে বের হলেই তো পুলিশের বাড়ি খেতে হবে। কি দরকার সেসবের? তার চেয়ে শাহবাগে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেশপ্রেমিক ভেবে স্লোগান দেবো, না ওখানে পুলিশের বাড়ি খাবার ভয় নেই, আর হরতাল? সে তো আজ নেই। আজ মনের সুখে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেবো আর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেবো। নিজের উপর লজ্জা হয়, নিজেকে ঘৃণা করতে হয়। সাধারণ মানুষ বিনা বিচারে মরছে, না খেয়ে মরছে।

না সেসব ব্যাপারে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। আর মাথা ব্যাথা হওয়াওতো যাবে না। তাহলেই কপালে পুলিশের বাড়ি। আমরা খুব সুবিধাবাদী। নিজেদের সুবিধা বুঝেই সব করি।

এতো কথার পরে সবাই আমাকে দেশদ্রোহী ভাবা শুরু করসে জানি। কিন্তু সত্যিগুলো আসলে এমনই। রাজাকারের বিচার আমিও চাই, চাই ফাসি হোক। কিন্তু আমরা খুব হুজুগে জাতি। অতীত নিয়া অনেক ঘাটাঘাটি করি।

বর্তমানে যে আমাদের অবস্থা শোচনীয় তা ভাবার সময় আমাদের নেই। বিশ্বজিৎ তো কেবল একটা নাম। এরকম আরো শত সহস্র উদাহারণ ছড়িয়ে আছে। যুদ্ধপরাধীদের বিচার, আমাদের রাজনীতির একটা নোংরা খেলা ছাড়া আর কিছু না। তারপরেও আমরা সেটা নিয়ে মাতামাতি করবো।

কেন?? সেটার কারণ নোটের উপরে লিখেছি। একবার সত্যিকারেই নিজের বিবেক প্রশ্ন করে দেখো তো কথাগুলো আসলেই সত্যি কিনা ? বিশ্বজিতের খুনিরা সগর্বে ঘুরে বেড়াবে... শাহবাগের ভীড়ে আমরা তাদের সাথে গলা মিলিয়ে স্লোগান দেবো। বিশ্বজিৎ আমাদের কারো ভাই না, কারো বন্ধুও নয়। কিন্ত আমাদের মধ্যে কেউ যে কোনদিন বিশ্বজিৎ হয়ে যাবো না, সে নিশ্চয়তা কোথায় ? আমি কাউকে আন্দোলনের ব্যাপারে অনুৎসাহিত করছি না। শুধু একটাই অনুরোধ রাজাকারের ফাসির রায় যদি আমরা আন্দোলন করে বদলেই দিতে পারি তাহলে পরেরবার বিশ্বজিতের জন্য চলো মাঠে নামি।

আজ শাহবাগে যাইনি। রাজনীতির নোংরামির অনেক কিছু গত দুবছরে আমি দেখেছি। আর এসব ভাল্লাগে না। যদি কখনো বিশ্বজিৎ বা আরো অন্য কোন দুর্ভাগার খুনের দাবিতে আন্দোলন হয় কখনো পিছিয়ে যাবো না। প্রতিজ্ঞা করলাম।

জানি হবে না। কারণ পুলিশের বাড়ি খাবার ইচ্ছে কারো নেই। যাই হোক আর বলবো না। বলে লাভ নেই। বাঙালি উচিত কথা ভালবাসে না, সস্তা সেন্টিমেন্ট ভালবাসে।

এই পোস্টটা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। অন্যদের সাথে মতের মিল না হতেই পারে। কেউ নিজের উপরে চাপিয়ে না নিলে বোধহয় ভালো হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।