আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি বিশ্বজিৎ বলছি!!!

কি যেন খুজি নিজেই জানিনা বিশ্বজিতের রক্ত থেকে জন্ম নেয়া আগামীর শিশির বিন্দুটি হয়তো বলবে কি দোষ ছিল আমার ?কোন অপরাধে জীবনটা চলে গেল ? কাস্টমার কে দোকান থেকে কাপড় দিতে গিয়ে আমি কি খুব বেশি কোন অপরাধ করেছিলাম ? রাস্তায় বের হয়ে জীবনের নিরাপত্তা পাব না এমন কোন কারণেই কি ৭১ এ এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল ? ধর্ষিত বোনের হাহাকারও কি আমাকে বাঁচাতে পারল না? পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা বিরোধী দলীয় চিপ হুইপকে পিটানো এডিসি হারুনও কি পারল না আমাকে বাঁচাতে? জীবন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে স্বল্প সময়ে কেন চলে যেতে হবে? সম্মানিত পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন কোন প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে এপ্রশ্ন গুলোর উদয় হতে পারে । গত ৯ই ডিসেম্বর বিরোধী জোটের হরতাল চলাকালীন সময়ে দুর্ধর্শ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সরাসরি নির্দেশে আমাদের সোনার ছেলেরা তাকে নয়াবাজারের কাছেই ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে হত্যা করে সকাল নয়টার দিকে তারপর ছাত্রলীগ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির জন্মদিন পালন করে তারা তাদের ভিক্টরি উদজাপন করে। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় তাদের সচিত্র কোপাকুপির সিনেমা স্টাইলে কসাইয়ের মত মাংস কাটার ছবি প্রকাশিত হওয়ার পরও দেশের প্রধান নির্বাহি বলে বসলেন এসব জামাত শিবিরের কাজ । কিন্তু তাদের ধরার জন্য কোন নির্দেশ জারি করলেন না । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগ বাড়িয়ে বললেন যারা এই হত্যা কাণ্ডে জড়িত তারা ছাত্রলীগের কেউ না।

কোন কোন মিডিয়া তাদের পারিবারিক জামাত-বিএনপি সংশ্লিষ্টতা খুজে বের করলেন । মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান (!) খুনিদের কথা না বলে চিকিৎসক ও পুলিশকে দুষলেন। এ কথা শুনে আকবর আলী খানের পরার্থপরতার অর্থনিতি বইয়ের একটি প্রবন্ধের কয়েকটি চুটকির কথা মনে পড়লো । যেখানে কিছু লোকের পরিচয় দেয়া আছে এভাবে—সাংবাদিক হলেন ওই ব্যাক্তি যিনি যা বুঝেন না তাই সবাইকে বুঝিয়ে বেড়ান এবং বুঝানোর প্রচণ্ড চেষ্টা চালান। –সমাজতত্তবিদ হলেন ওই ব্যাক্তি যিনি কোন অপরাধ সংঘটনের পরে অপরাধী ছাড়া আর সবার দোষ খুজে বেড়ান ।

বিশ্বজিতের হত্যাকারী শাকিলের বাবা ছেলের এই সৎকর্ম (!)দেখে স্ট্রোক করে পরপারে চলে গেলেন। হয়তো ভেবেছেন এমন ভালো (!)ছেলে মানুষ করে লাভটাই বা কি? খুনিদের পরিবারের সবাই বলল তাদের সন্তানেরা ছাত্রলীগের কর্মী আর মন্ত্রীরা বললেন না – এ হতেই পারে না । আমাদের সোনার ছেলেরা এসব কাজ করে না । তারা অনুপ্রবেশ কারী। যারা আটক হয়েছেন তারা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উৎসাহে এ কাজ করলেন কিন্তু সে কথা যেন সরকারের কাছে বিশ্বাসই হচ্ছে না ।

হবেই বা কেন ? কারণ তারা তো এমন কিছু করে না । যা একটু দুষ্টুমি করে ধর্শনের সেঞ্চুরি পালন করে,সাতক্ষিরায় গানের শিল্পীকে স্বামীর সামনেই আদর (!)করে, টেন্ডারের জন্য বড়দের সাহায্য করতে গিয়ে একটু কোপাকুপি করে, ইডেনের মেয়েদের দিয়ে একটু শারীরিক রোমাঞ্চ করে এই আর কি? এসব তো তেমন কিছুই না । সর্বদাই সংখ্যা লঘুদের পক্ষের সৈনিক হিশেবে দাবি করার পরও বিশ্বজিৎ যখন চিৎকার করে বলল আমি হিন্দু -তারপরও তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে অস্ত্রে শান দিল এই চেতনার বাহকেরা । কি চেতনা! মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সৈনিক বলে কথা! মুজিবিয় রনাংগনের সাহসী সৈনিকেরা আরও অনেক কিছুই পারে । সেসব কথা সবাই জানে ।

এতসব কিছুর পরও আবদুল মান্নানের মত শিক্ষাবিদদের থেকে তেমন কোন সারা পাওয়া যায় না । “তোমরা যারা শিবির কর” বলে উপদেশ দেয়া সেই মহান ব্যাক্তিটি একটি কলাম লেখেন না “তোমরা যারা চাপাতি দিয়ে কোপাকুপি কর”। জিল্লুর রাহমান সিদ্দিকির মত ব্যাক্তিরা কোন কথা বলেন না । বানির রাজা সাবেক ছাত্রনেতা ওবায়দুল কাদের ,মাহমুদুর রহমান মান্না, মাহফুজা খানমেরা যেন বাকরুদ্ধ । নাইমুল ইসলাম খানের মত সম্পাদকেরা একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে টকশোতে কথা বলতে হয়তবা “আনইজি ফিল” করেন।

তরুণ প্রজন্মের কর্ণধারেরাও চুপ । বিশ্বজিতের বাবা /ভাই মামলা করার সাহস পান না । তার মায়ের কান্না দুদিন পর থেমে যাবে । স্বাভাবিক ভাবেই সবকিছু আবার আগের মত চলবে। সাগর রুনি কিংবা জর্জ মিয়া নাটকের অন্য একটি রিহার্সেল হয়তো শুরু হবে কিংবা দুদিন পর বলা হবে এটা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্যই এ ষড়যন্ত্র ।

সাগর –রুনি,বেলাল, আহসানউল্লাহ মাস্টার কিংবা ইলিয়াসের গুমের যেখানে বিচার হয়না সেখানে কোথাকার কোন বিশ্বজিৎ! আবার নতুন বিশ্বজিতের রুপায়ন কে হবে, কার নির্দেশে ,কার হাতে সেজন্য বাংলার সব মানুষকে প্রস্তুত হয়তো থাকতে হবে । দেখা যাক সেই ভাগ্যটি কার হয়। আপনার না আমার! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।