প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি এক ময়াময়ী ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ ক্যাম্পাস। বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির আগমনে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আরো বহুগুনে বেড়ে গেছে। শহরের যান্ত্রিক জীবন থেকে কিছুনের জন্য হলেও রেহাই পেতে আপনিও আসতে পারেন পাখি দেখতে।
এখানে আপনার সবার জ্ঞাতার্থে আমি জাবির পাখি আসা সম্পর্কে কিছু তথ্য দিচ্ছি।
প্রতিবছর শীতের অতিথি পাখিরা অক্টোবর- নভেম্বর মাসেই চলে আসে। কিন্তু এবছর আগেভাগে না এসে ডিসেম্বর মাসে এসে বাংলাদেশীদের সাথে বিজয় দিবসের আনন্দ ও ক্যাম্পাসের প্রকৃতির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করেছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখন অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত। উপযুক্ত পরিবেশ আর নিরাপদ আশ্রয়ে ক্যাম্পাসের লেকগুলোতে এসব অতিথি পাখি নির্ভাবনায় কিচিরমিচির ডেকে ডানা মেলে ক্যাম্পাস জুড়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। কেউ আবার ডুব সাঁতারে ব্যস্ত।
লেকের কোথাও তারা জুটিবদ্ধ ভাবে নিজেদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। কখনো তারা চক্রাকারে উড়ে বেড়াচ্ছে ক্যাম্পাসের মুক্ত আকাশ জুড়ে, আবার কখনোবা এসব পাখি পানির মধ্যে ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছে খাবার জোগাড় করতে। এভাবেই দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছে তাদের। ক্যাম্পাসে ফুটন্ত লাল পদ্মার ফাঁকে অতিথি পাখির বিচরণ এক মোহনীয় পরিবেশের সৃষ্টি করে। দেখে মনে হয় লাল টুকটুকে শাপলার পাশে যেন নতুন জীবনের প্রাণবন্ত মেলা বসেছে।
অতিথি পাখির কলকাকলি আর কিচিরমিচির শব্দে ক্যাম্পাসে এখন মধুময় সুরের আবহ বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসের অধিবাসীরা দিনভর লেকের পাড়ে এসে অথিতি পাখিদের সৌন্দর্য অবলোকন করছে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য পাখিপ্রেমী পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছে ক্যাম্পাসে। মাঝে মাঝে বিদেশীরাও আসছেন পাখি দেখতে ।
অসম্ভব বন্ধসুলভ এ পাখিগুলোর বেশীরভাগই আমাদের দেশী হাঁস।
আমরা ভাল করে এদের চিনি না বলেই বিদেশী বলে থাকি। শীতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাওড় বাওড়, নদী-নালা শুকিয়ে গেলে খাবার আশ্রয়ের সন্ধানে এরা সমতলে দিকে ছুটে আসে। বর্ষকাল এদের প্রজনন ঋতু। তাই এসময় এরা জোড়ায় জোড়ায় থাকে। এদেশে বাসা বানাবার পর্যাপ্ত সুযোগ না থাকায় পাড়ি জমায় ভিনদেশে।
এশিয়ার আশেপাশের দেশগুলো বিশেষ করে ভাতর, মায়ানমার, সাইবেরিয়া, থাইল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া থেকেই এরা বেশী আসে। বরফের দেশ থেকে সামান্য উষ্ণতার ছোঁয়া এরা আমাদের দেশটাকে আপন করে নেয় পুরো শীতকালটা। তাই তাদের আমরা অতিথি না ভেবে দেশী পাখি বললেই যুক্তিযুক্ত হয়। বাংলাদেশের আসা পাখিদের ৮-৯% এই ক্যাম্পাসে আসে । মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই এরা এদেশে আসে।
তবে এবার বিভিন্ন কারণে এ কাম্পাসে এসেছে তারা ডিসেম্বরের প্রথম দিকে। আবার মার্চের শেষদিকে তারা তাদের আপন ঠিকানায় ফিরে যায়। যাযাবর এসব পাখি বাংলাদেশের মানুষ শখ করে নাম দিয়েছে মাইগ্রেটরী বার্ড/গেষ্ট বার্ড বা অতিথী পাখি। বাংলাদেশের যে কয়টি জায়গায় অতিথি পাখি আসে তার মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম। এখানে ছোট বড় প্রায় ২২টি লেক রয়েছে।
প্রতি বছরের মত এবারও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান তিনটি লেককে অভয়াশ্রম করা হয়েছে। পাখিদের সারাদিন অবিরাম ক্যাম্পাসজুড়ে উড়ে বেড়ানো আর লেকের পানিতে খুঁনসুঁটি খুবই উপভোগ্য হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি তাদের অবিরত ডুবসাঁতার পাখি প্রেমীদের আরও পুলকিত করে বার বার। এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে প্রায় ৫০ প্রজাতির অসংখ্য পাখির আগমন ঘটেছে বলে ধারন্ াকরা হচ্ছে। মূলত দুই ধরনের পাখির আগমন ঘটে এখানে।
এক ধরনের পাখি ডাঙ্গায় বা শুকনা স্থানে বা ডালে বসে বিশ্রাম নেন। আরেক ধরনের পাখি পানিতে থাকেন বা বিশ্রাম নেন। এদের বেশির ভাগই হাঁস জাতীয় ও পানিতে বসবাস করে। মুলত এরাই সবার নজরে আসে। এর মধ্যে সরালি, পচার্ড, ফাইফেচার, গার্গেনী, ছোট জিরিয়া, মুরগ্যাধি, কোম্বডাক ও পাতারী অন্যতম।
এছাড়া মানিক জোড়, কলাই, ছোট নগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি প্রভৃতি পাখি প্রতিবছর এদেশে অতিথি হয়ে আসে।
অতিথি পাখিদের আগমন উপলে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় ঐতিহ্যবাহী ‘পাখি মেলা’। ২০০১ সাল থেকে এ পাখি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এবারে ফেব্রয়ারীর মাঝামাঝিতে পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
সামহোয়ার ইন ব্লগের সবাইকে জাবিতে পাখি দেখার উষ্ণ আমন্ত্রণ রইল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।