আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্মৃতির গন্তব্য সলিমুল্লাহ হল / আবু সালেহ।

বাংলাদেশের মানুষ এখনও তার সম্পূর্ণ অধিকার পাইনি। এই সংগ্রাম যতদিন চলবে ততদিন ছড়ার সংগ্রাম চলবে

স্মৃতির গন্তব্য সলিমুল্লাহ হল আবু সালেহ। সলিমুল্লাহ হল প্রাক্তন ছাত্র সমিতির স্মরণিকায় লেখা চেয়ে øেহা¯পদ রওশন জাদিদ ওরফে আঙ্গুর বেশ কয়েকবার আমার কাছে এসেছিলেন। সমিতির সচনালগ্নের ২ বছর স্মরণিকা প্রকাশের দায়িত্ব আমার উপরেই বর্তিত হয়েছিল। লেখা সংগ্রহ করা থেকে প্রকাশ হওয়া পর্যš এমনকি বিতরণের েেত্র যে কি সমস্যায় পড়তে হয় তা আমার জানা।

বিশেষ করে যদি সেই স্মরণিকা সমিতির প্রাক্তণ ছাত্রদের স্মৃতিচারণমলক লেখা হয়। সাহিত্যের অন্যান্য শাখায় লেখা যতটা না সহজ স্মৃতিচারণমলক লেখা কঠিন। একজন পর্ণ বয়স্ক তথা প্রবীন লোকের প্েয স্মৃতিচারণ মুখে মুখে বলা সহজ হলেও লিখিতভাবে সহজ নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাঁরা প্রাক্তন ছাত্র বিশেষ করে সলিমুল্লাহ হলের যাঁরা প্রাক্তন ছাত্র তাঁরা সকলেই আজ সমাজে, রাষ্ট্রে এবং ব্যবসাস্থলসহ নানা স্থানে সু-প্রতিষ্ঠিত। আšর্জাতিকভাবেও প্রতিষ্ঠিত।

সে কারনে ছাত্র জীবনের স্মৃতিচারণ যতটা আবছা কুয়াশায় রয়ে যায় কর্মেেত্রর বেলায় তেমন নয় কর্মস্থলের নানা স্মৃতি অতীত দিনের স্মৃতিচারণে কখনো কখনো বাঁধা হয়ে দাড়ায়। প্রায় ৩৬ বছরের বেশী সময় আগে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছি। সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র ছিলাম। নির্দিষ্ট সময়েরও অধিককাল এই হলে কাটিয়েছি। এক সময়ে তো অনেকে বলতেন আমরা কতিপয় এই হলের ‘আদু ভাই’ ছাত্র।

সলিমুল্লাহ হলের ছাত্র থাকাকালে যতদিন বাস করেছি, বলা যায় তার প্রতিদিন ও ণ এখন আমার কাছে সব কিছুই স্মৃতির প্রাঙ্গণ। হলের আবাসিক ছাত্র হওয়ার অনুমোদনপ্রাপ্ত হওয়ার দিন, সিট পাওয়ার আগে ডাবলিং করে থাকা, প্রথম দিনের ইত¯তঃ ভাব সব কিছুই স্মৃতির পর্যায়ের পরে। সলিমুল্লাহ হলের মেধাবী ছাত্ররাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাতিমান করে তোলেন। যাঁরা এই খ্যাতির প্রবাদ পুরুষ, তাঁদের স¤পর্কে যখন আলোচনা হতো সে সবও ছিলো অন্য রকম। ছিলো স্মৃতি পাঠের বা শোনার প্রেরণামলক শিা।

সলিমুল্লাহ হলের কৃতিত্ব ও সু-খ্যাতি যাঁরা এনেছেন বা আজও আনছেন তাঁদের প্রত্যেকেই স্মরণীয় ও বরণীয়। তাঁদের স্মৃতিকথা নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে কোন গ্রন্থ যদি প্রকাশ পেতো তা হলে সেগুলো আমাদের জাতীয় জীবনে, শিােেত্র, মননের েেত্র, সংস্কৃতির েেত্র এবং সামাজিক েেত্র মল্যবান স¤পদ হিসেবে পরিগনিত হতে পারে। ছাত্র জীবনের বহু স্মৃতি রোমাঞ্চকরও। সে সব রোমাঞ্চকর স্মৃতির অšরালেও রয়েছে বহু মল্যবান তথ্য। সেগুলো ইতিহাসের উপাদান হতে পারে।

আমি ল্য করেছি ইতোপর্বে স্মরণিকায় যাঁরা লিখেছেন তাঁরা সে সব স্মৃতিচারণ করেছেন তা আমাদের অবয়ের দিকে নিয়ে যাননি। ছাত্রদের অনেকেই প্রেম করেছেন ঐ হলে থেকেই। সে সব প্রেমের কাহিনী যখন তারা অবলীলাক্রমে প্রকাশ করেছেন তাতে দেখেছি প্রেমের যে সংযোগ সেগুলো নিয়েও আমরা নিজেদের আলোকিত করতে পারি। সে সব প্রেমের মধ্যে শুধুই ‘তোমাকে পাওয়ার জন্যেই আমার সকল হৃদয়’ এ কথাই ব্যক্ত হয়নি। দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র, বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি স¤পর্কেও দিক নির্দেশনা জড়িয়েছিল।

সলিমুল্লাহ হলের অবকাঠামো এবঙ তার নান্দনিক পরিবেশ প্রতি ছাত্রকেই দিয়েছে বড় হবার তাগিদ। সেই ঝাঁউ বনের ঝোঁপগুলো এখন নেই। গন্ধরাজের ঝোঁপগুলো হয়তো মালির সুনিপুন হাতে এখনও যতœবান হচেছ। তবু কেন যেন ফাঁকা লাগে ঝাঁউগাছগুলো না থাকায়। আর অন্যান্য প্রাক্তন ছাত্রের মতো সলিমুল্লাহ হলের স্মৃতি আমারও রয়েছে।

তবে হিসেব করে এবং অনুসন্ধান করে দেখিছি এ’সব স্মৃতির প্রকৃতি সকলের মত আমারও প্রায়ই একই রূপের। এ থেকে মনে হয়েছে, সলিমুল্লাহ হল আমাদের স্মৃতির বলয়ে একই পথ নিদর্শন করেছে। সলিমুল্লাহ হলের প্রাক্তন ছাত্রদের স্মৃতির মনিকোঠায় প্রায় সকলের কাছে দেদিপ্যমান হয়ে জ্বলছে নাজু মিয়ার নাম। নাজু মিয়া হলের ছাত্র ছিলেন না। প্রহরী ছিলেন।

তাঁর উন্নত শরীর, পাগড়ী, ছাত্রদের সাথে তার মধুর স¤পর্ক সব যেন তাকে অপর্ব রূপে রাখতো। হলের কথা আসলেই সকলে একবার হলেও তার কথা স্মরণ করে। তার অভাব অনুভব করে। হলের বিশেষ করে ডায়নিং হলের ব্যবস্থাপনাটা তেমন সুখকর ছিলনা। খাওয়া দাওয়ার মানও ৭০ দশকের শেষে এসে নিুগামী হয়।

অবশ্য ডাল নিয়ে অনেক রসবোধ রয়েছে। ডাল মানে কেবলি হলুদ গোলানো পানি। ডালের দানার কোন চিহ্নই পাত্রে কেউ দেখেছেন কিনা আমার জানা নেই। তবু সে ডাল খাওয়ার জন্য ছাত্ররা উদ্গ্রীব ছিলো। মাসিক খাবারের মেন্যু একটু উন্নত মানের ছিল এ’কথা না বললে ঠিক কথাটি বলা হবেনা।

সলিমুল্লাহ হলের ছাত্ররা কেবলমাত্র পুঁথিপত্র, বই পু¯ক ইত্যাদি নিয়েই থাকতো না। খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বনভোজন, পর্ব হাউস ও পশ্চিম হাউসের মধ্যে একটু নিভৃত প্রতিযোগিতাও ছিল। পশ্চিম হাউস সব সময়ই কৃতিত্বের পরিচয় দিতো সকল েেত্রই। পর্ব হাউসের ছাত্ররাও কম যেতেন না। কিছু কিছু েেত্র তাদেরও কৃতিত্বময় ভূমিকা ছিল।

সলিমুল্লাহ হলের প্রাক্তন ছাত্ররা প্রায় সকলেই ছিলেন একে অপরের প্রিয়জন। কালে কষ্মিনে মতবিরোধের চালাচালি হতো রাজনৈতিক বা হল নির্বাচনের সময়ে। কিন্তু কি আশ্চর্য অল্প সময়ের ব্যবধানেই তার কোন চিহ্নটিই আর দেখা যেতোনা। সে এক অপর্ব উদাহরণ। সলিমুল্লাহ হল কি এখন আর আগের মত আছে ? সমিতির একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে বর্তমানে তীখœ দৃষ্টি মেলে দেখি পরিবর্তন হয়েছে অনেক।

এ পরিবর্তনে আমাদের পর্বসরীদের নিষ্কলুষ ও স্বচছতার ছাপ দেখিনা। হলের বারান্দায় খালি গায়ে যাওয়া, উচচস্বরে চিৎকার করা অথবা রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অশোভন বিষয়াদি নিয়ে মন কষাকষি প্রায়ই খবরের কাগজে দেখে কষ্ট পাই। হয়তো এখন যারা আছেন নিশ্চয়ই অতীত ঐতিহ্যকে স্মরণ করে অনুতপ্ত হন। সলিমুল্লাহ হলের প্রাক্তন ছাত্ররা এই হলকে তাদের দ্বিতীয় বাড়ী বলে মনে করে থাকেন। গর্বভরে কর্মস্থলে বলেন, ‘আমরা সলিমুল্লাহ হলের ছাত্র’।

এই হলে থেকেই আমরা আজ এতদরে আসতে পেরেছি। তাই হলের কাছে আমাদের ঋণের কোনো শেষ নেই। সলিমুল্লাহ হল প্রাক্তন ছাত্র সমিতি গঠনের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অন্যান্যের সাথে আমিও ছিলাম। এখনও আছি। ভবিষ্যতে থাকব কিনা জানিনা।

তবে হলের থেকে বিছিন্ন হবো না কোন দিনও। এখান থেকে আমি যে শিা লাভ করেছি, মানবিকতার যে পাঠ শিখেছি, রাজনৈতিক জীবনের আলো পেয়েছি তাতো ভোলার নয়। আজ অনেক সাথিরা বেঁচে নেই। বেঁচে নেই আমাদের সেই হুমায়ন কবীর। কয়েক বছর আগে হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেছেন।

বলা যায়, সে-ই এই সমিতির প্রথম উদ্যোক্তা। তাঁর ¯ী ও ছেলে মেয়েরা এখন কেমন আছে, কিভাবে আছে সে খবর পাইনা। ঠিকানাও জানিনা। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং সলিমুল্লাহ হল প্রাক্তন ছাত্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দীন আহম্মদ-এর বঙ্গ ভবনের অফিসে আমি এবং সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ স¤পাদক জনাব রকীবউদ্দীন আহমদ হুমায়ন কবীরের পরিবারের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করার জন্য অনুরোধ করতে গিয়েছিলাম। বিষয়টি তিনি অত্যš গুরুত্বের সাথে নেন এবং কিছু একটা করবেন বলে আশ্বাসও দেন।

পরে কি হয়েছে আর তা’ জানতে পারিনাই। শত সহস্র স্মৃতির মধ্যে এই মুহুর্তে হুমায়ন কবীরই আমার কাছে এখন প্রধান স্মৃতি হয়ে উঠেছে। এজি অফিসের কমার্সিয়াল অডিটর হিসেবে সে চাকুরীরত ছিল। চিকন-কালোপনা এই হুমায়ন কবীর সারাদিন সমিতির জন্য কাজ করতেন। কাজ করতে গিয়ে অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন।

অনেকে বৈরী হয়েছেন। ছোট চাকরী করতেন বলে অনেকে একটু আভিজাত্য নিয়ে নাক সিটকাতেন। তাতে তার কোনো দুঃখ ছিলনা। দুপুর বেলায় সে প্রায়ই আমার বাসায় আসতো এবং সাধ্যমত তাকে আপ্যায়ন করার চেষ্টা করতাম। সমিতির অপর কর্মকর্তা এ.কে.এম. বারীও তার সকল কাজে উৎসাহ প্রদান করতেন, সহযোগিতা করতেন, কখনও কখনও আর্থিক সহযোগিতা করতেন।

তার সমিতিগত প্রান আমাদেরকে ইর্ষা জাগাতো। তাঁর স্মৃতি তাই ভুলে যাওয়া কষ্টকর। ছাত্র অবস্থায় এক সময়ে সে আমার রূমে ডাবলিং/ফোরিং এর সুযোগ পেয়েছিল। দর্শন শা¯ের ছাত্র ছিল সে। আমি তার আÍার মাগফেরাত কামনা করি।

সলিমুল্লাহ হল প্রাক্তন ছাত্র সমিতির সচনা লগ্ন আর বর্তমান লগ্নের মধ্যে অনেক পার্থক্য এখন। কুমারীত্বের এক ধরনের রোমাঞ্চ আছে। প্রথম সম্মিলনের আবেদনের মধ্যে যে আনন্দঘন রোমাঞ্চ অনুভব করতাম, সে অনুভব প্রায় হারিয়ে গেছে। ‘বহুদিনের পরে যেন বৃষ্টি এলো’। এই অনুভব পাওয়া যায়না।

প্রতি বছর বনভোজন করে যে বিনোদনের সময় কাটানো হয়, হয়তো ও রকম অনুভুতিই আমাদের হৃদয়ে এখন বাস করে। আগের মতো উতলা মন নেই, এ দেশে যা হয়ে থাকে তারই অনুসরণ হচেছ। এভাবে চলতে দেয়া যায়না। মিলন মেলায় বৈচিত্র আনা প্রয়োজন। প্রতি মিলন মেলায় নিশ্চয়ই কোনো ম্যাসেজ থাকা দরকার।

শিরোনামের প্রতিপাদ্য বিষয় থাকা দরকার। থিম থাকা দরকার। সলিমুল্লাহ হল চিরকালই অবয়ের বিরুদ্ধে। সšাসের বিরুদ্ধে, গণতাšিক ব্যবস্থার স্বপ,ে ভাষা রা ও উৎকর্ষের জন্য নিবেদিত, ট্যালেন্ট হওয়ার স্বপ্ন লালন করার সাধনার প,ে সা¤প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচচার হওয়ার উচচকণ্ঠের প,ে দেশীয় সংস্কৃতির ধারক, মুক্ত বুদ্ধি চর্চার প্রানকেন্দ্র, মনীষী ব্যক্তিবর্গকে সম্মান ও সম্মাননা প্রদানের গর্ব আহরণের প। ে এ’সব কি হারিয়ে যাবে ? সলিমুল্লাহ হল বহু বরেণ্য মনীষীদের আজীবন সদস্যপদ প্রদান করে ধন্য হয়েছে।

৪০ এর দশকে মহাকবি কায়কোবাদ-কে শেষ বারের মত হলের আজীবন সদস্য পদ দেয়া হয়। এরপর থেকে বন্ধ। কেন বন্ধ ? যে সব মনীষীবর্গ এই হলে পদার্পন করেছেন তাতে হল ধন্য হয়েছে। তাদের সান্নিধ্যলাভে অনেকে তাদের কাছ থেকে বড় হবার স্বপ্ন লাভ করেছেন। এই ধারাটি যদি আবার চালু হতো তা’হলে আবারো স্মৃতিধন্য হতো আমাদের দ্বিতীয় বসৎ, প্রানপ্রিয় সলিমুল্লাহ হল।

আমার এই এলোমেলো কথা কি সম্মিলনী অনুষ্ঠানে আলোচিত হতে পারে। যদি হয় সম্মিলনীর ধরনই হয়তো পজিটিভ হবে। নতুবা যে স্মৃতি, বা স্মৃতি নয় তাই নিয়েই বালখিল্য স্বরূপ বিনোদনই হবে মাত্র। ----

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।